আমরা প্রায়শই পদার্থের তিনটি অবস্থা - কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় - সম্পর্কে শুনি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আরও একটি অবস্থার কথা জানেন, যাকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলা হয় - প্লাজমা। প্লাজমা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পদার্থের পরমাণুগুলি আয়নিত হয়, অর্থাৎ তাদের ইলেকট্রনগুলি মুক্ত হয়ে যায়। এই আয়নিত পরমাণু ও মুক্ত ইলেকট্রন মিলে প্লাজমা গঠন করে।
প্লাজমা মহাবিশ্বে সবচেয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সূর্য, নক্ষত্র, উত্তরদীপ্তি, বিদ্যুৎচমকের মতো প্রাকৃতিক ঘটনায় প্লাজমা দেখা যায়। এমনকি ফ্লোরোসেন্ট লাইট, নিয়ন সাইন, প্লাজমা টিভি ইত্যাদি মানবসৃষ্ট বস্তুতেও প্লাজমা ব্যবহৃত হয়।
প্লাজমার বৈশিষ্ট্য
চার্জিত কণা: প্লাজমায় মুক্ত ইলেকট্রন এবং ধনাত্মক আয়ন থাকে। এই চার্জিত কণাগুলোর উপস্থিতির কারণে প্লাজমা বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়।
উচ্চ তাপমাত্রা: প্লাজমা তৈরি করতে অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। এই তাপমাত্রায় পরমাণুগুলি এতটাই শক্তিশালী হয় যে তারা ইলেকট্রনকে নিজেদের থেকে আলাদা করে দিতে পারে।
চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব: প্লাজমা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। চৌম্বক ক্ষেত্র প্লাজমার চার্জিত কণাকে এক জায়গায় আটকে রাখতে বা তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।
প্লাজমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
ফিউশন শক্তি: বিজ্ঞানীরা প্লাজমাকে ব্যবহার করে নতুন ধরনের শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করছেন, যাকে ফিউশন শক্তি বলা হয়। সূর্যে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তাও ফিউশন প্রক্রিয়ার ফলাফল।
প্লাজমা কাটিং: প্লাজমা ব্যবহার করে ধাতু কাটা, গলানো এবং জোড়া লাগানো হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি: প্লাজমা ব্যবহার করে জীবাণু নিধন এবং পানি পরিশোধন করা হয়।
আলোকসজ্জা: নিয়ন সাইন, ফ্লোরোসেন্ট লাইট ইত্যাদিতে প্লাজমা ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান: প্লাজমা ব্যবহার করে ক্যান্সার চিকিৎসা, জীবাণু নিধন ইত্যাদি কাজ করা হয়।
প্লাজমা সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য-
মহাবিশ্বের ৯৯% পদার্থ প্লাজমা অবস্থায় রয়েছে।
প্লাজমাকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলা হয় কারণ এটি কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় অবস্থা থেকে আলাদা।
প্লাজমা গবেষণা মহাকাশ বিজ্ঞান, নভোযান প্রকৌশল, এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্লাজমা বিজ্ঞান এখনও অনেক রহস্যে ঘেরা। বিজ্ঞানীরা প্লাজমার বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার চেষ্টা করছেন এবং এর নতুন নতুন ব্যবহার আবিষ্কার করছেন। প্লাজমা সম্পর্কে আরও জানতে গবেষণা করে চলার মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্বের অনেক রহস্যের উত্তর খুঁজে পেতে পারি।