ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন মার্কিন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট, যিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত ও প্রভাবশালী নেতাদের একজন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি রিয়েল এস্টেট মুঘল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন এবং "দ্য অ্যাপ্রেন্টিস" নামে জনপ্রিয় টেলিভিশন শোতে তার ভূমিকার জন্যও পরিচিত হন। ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবন, ব্যবসা এবং তার সৃষ্ট বিভিন্ন বিতর্ক বিশ্বজুড়ে তাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
ট্রাম্পের জন্ম ১৯৪৬ সালে নিউ ইয়র্কে। তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্পও একজন সফল রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ছিলেন, এবং সেই পেশায় তার অনুপ্রেরণা আসে পারিবারিকভাবেই। ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি "ট্রাম্প অর্গানাইজেশন" পরিচালনা করেন, যা আবাসিক এবং বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে বিশেষায়িত। তার ব্যবসার মধ্যে নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ার এবং একাধিক ক্যাসিনো ও হোটেল অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তিনি বেশ ধনী হয়ে ওঠেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনকুবের হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
টেলিভিশনের মাধ্যমে ট্রাম্প আরও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। "দ্য অ্যাপ্রেন্টিস" রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে তিনি জনসাধারণের কাছে সরাসরি পরিচিত হন, যেখানে তিনি তার বিখ্যাত সংলাপ "You're fired!" দিয়ে প্রার্থী ছাঁটাই করতেন। এই অনুষ্ঠান তাকে মার্কিন জনগণের মাঝে আরও পরিচিত করে তোলে এবং তার খ্যাতি বাড়ায়।
২০১৫ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন এবং তার প্রচারণার মূল স্লোগান ছিল "মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন"। তার প্রচারণা চলাকালে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক নীতিতে কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি উল্লেখযোগ্য হন। ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে অভিবাসী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেন, যা মার্কিন রাজনীতিতে বিভেদমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে তিনি হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার প্রশাসনের সময়ে কর হ্রাস, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামরিক শক্তির বিস্তার এবং বিচার বিভাগের কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়। তিনি চীনের সাথে বাণিজ্যিক যুদ্ধ শুরু করেন এবং "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতিতে অটল ছিলেন।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন বহুমুখী বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। তার অভিবাসন নীতি এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির জন্য ট্র্যাভেল ব্যান তার প্রশাসনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্তের কারণে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার সমালোচনা হয়।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুইবার ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমবার, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে বাইডেন পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগে এবং দ্বিতীয়বার, ক্যাপিটল হিলে হামলার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে। যদিও উভয়বারই তিনি সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হননি, এই ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া তাকে মার্কিন রাজনীতিতে চিরস্মরণীয় করে রাখে।
২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে ট্রাম্প পরাজিত হন। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করে ট্রাম্প "নির্বাচনে কারচুপি"র অভিযোগ তোলেন এবং তার সমর্থকদের প্রতিরোধ করতে আহ্বান জানান, যার পরিণতিতে ক্যাপিটল হিলে এক নজিরবিহীন সহিংস হামলা ঘটে। এই ঘটনার ফলে তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবার ঘটে।
ট্রাম্পের জীবন, তার রাজনৈতিক কৌশল, এবং তার কর্মকাণ্ড মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে গেছে। প্রেসিডেন্ট পদে থেকে তার কাজ এবং সিদ্ধান্তগুলো মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। যদিও তিনি এখন আর প্রেসিডেন্ট নন, তবুও তার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনও বিদ্যমান। তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং আগামী দিনে তার রাজনৈতিক ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে এখনো বিশ্বব্যাপী আলোচনা অব্যাহত।
ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত। তার কৌশল এবং বক্তব্যের কারণে তিনি এমন এক নেতায় পরিণত হয়েছেন, যাকে নিয়ে মার্কিন জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিছু মানুষ তাকে মার্কিন অর্থনীতি এবং অভিবাসন নীতির উন্নয়নের জন্য প্রশংসা করে, আবার অনেকেই তাকে বিভেদমূলক এবং বিতর্কি
ত নেতারূপে দেখে।