ঋতুর ঠোঁট পল্লবের সাথে সমরের উষ্ণ ঠোঁটজোড়া যত গভীরভাবে মিশে যেতে লাগল, তত ঋতু যৌন উদ্দীপনায় ছটপট করতে লাগল।
...ইস!..এই কদিনেই সমর শরীরটাই এত জোর সঞ্চয় করে ফেলেছে!
ঋতু তার ভূবুক্ষু শরীরটা পুরোপুরি সমরের দুহাতের বেষ্টনে ছেড়ে দিয়ে প্রতিক্ষণের রোমাঞ্চ সারা লোমকূপ দিয়ে আস্বাদন করতে লাগল।
সমরের গরম নিশ্বাস ধীরে, ধীরে ঋতুর ঘাড় থেকে নেমে বুক ছুঁয়ে নাভির উপর দিয়ে অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুতে গিয়ে আটকে গেল।
মাতাল...মাতাল। আজ সমর কী যৌনতার নেশায় মাতাল হয়ে পড়ল?
আজ একবছর হয়ে গেল এভাবে তো কোনদিন সমর একাজ করেনি?
তবে আজ কেন?
যদিও ঋতু উত্তেজনার চরম সীমায় এসে কাটা ছাগলের মত ছটপট করতে লাগল।
অপার সুখের আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে ঋতু।
তবু এটা ঠিক না। ওরাল ইনফেকশনের ভয় থাকে।
ঋতু চোখ বুজেই নিজের দুহাত দিয়ে সমরকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করল।
কিন্তু...একি!!
তার হাত দুটো তো নড়ছে না। অবশ কেন হয়ে আছে?
মুহুর্তের মধ্যে তার সমস্ত যৌন উত্তজনা লোডশেডিং-এর মত ঝুপ করে নিভে গেল।
চোখদুটো মেলে সমরকে দেখতে চাইল।
একি?
সে চোখজোড়া মেলতে পারছে না কেন?
কে তার পেলবে এমন আঠা লাগিয়ে দিল?
রোমাঞ্চর বদলে এবার ঋতুর সারা গা ভয়ে কাঁপতে শুরু করল।
তবে...কী...তবে... কী? ..তার উলঙ্গ শরীরটাকে যে লেহন করছে লালায়িত জিভ দিয়ে...সে কী পরপুরুষ?
একটু আগেই সে এই উপর্যোপরি ঢেউ-এর আনন্দে নিশ্বাস পর্যন্ত বন্ধ করে ফেলেছিল।
এখন যেন তার সেই দম জোর করে বুকের পাঁজরে আটকে পড়েছে।
চিৎকার করে উঠল, সমর...সমর।
সমর ফট করে খাটের পাশে বেড লাইটের সুইচটা অন করে দিল।
ঋতুর চেহারা দেখে আঁতকে উঠল।
সারা গা ঘামে একেবারে জবজব করছে। রাত পোশাকটা জড়ো হয়ে গলার কাছটাই পেঁচিয়ে গেছে।
বুক থেকে পা অব্দি সম্পূর্ণ নিরাভরণ।
সমর চট করে পোশাকটা ঋতুর সারা গায়ে মেলে দিয়ে তাকে দুহাত দিয়ে ঝাঁকাতে লাগল।
---কী হল? ..কী হল ঋতু? ..এত জোরে, জোরে চিৎকার করছিলে কেন?
সমরের ঝাঁকুনি খেয়ে ঋতু ধড়মড় করে বিছানায় ওঠে বসল।
তারপর ভয়ার্ত চাউনিতে চারিদিক তাকিয়ে দেখল। কেউ আছে কী নেই?
এইটুকু তো কামরা!
আলোয় তার প্রত্যেক কোণা ঝকঝকে দেখা যাচ্ছে।
তবু সে ওঠে দাঁড়াল। খাটের নিচটা, জানলার পাল্লাগুলো আলমারির কোণাটা ভাল করে দেখে নিল।
কোথাও কেউ নেই।
তাহলে এতক্ষণ ধরে কী সে স্বপ্ন দেখছিল?
কিন্তু স্বপ্ন বলে তো তার মনে হল না।
তারসাথে যেন সত্যি, সত্যিই সবকিছু ঘটছিল।
এবার ঋতু একটু ধাতস্ত হয়ে বিছানায় আবার বসে পড়ল।
সমর ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, কী হয়েছে বলবে তো? ...নিশ্চয়ই কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে...তাই তো?
ঋতু বলতে গিয়েও কথাটা ঘুরিয়ে নিল।
----সত্যিই বীভৎস স্বপ্ন ছিল।
সমর এক গ্লাস জল ঋতুর দিকে বাড়িয়ে বলে উঠল, খেয়ে নাও। নতুন জায়গা তো তাই এরকম একটু, আধটু হয়। যতই হোক এটা নিজস্ব বাড়ি। বাবার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল। নিজের বাড়িতে থাকার। তাই রিটারমেন্টের পুরো টাকাটা দিয়ে এই ছোট্ট বাংলাটা কিনেছে। কোলকাতা থেকে একটু দূরে হল এই যা। তাছাড়া এই দামে এত সুন্দর একটা বাড়ি পাওয়া যেত না। আমারএকটা টাকাও বাবা নেয়নি। সমস্ত টাকাটা নিজেই ইনভেস্ট করেছে। বাবার সোজা উক্তি, নিজের যখন স্বপ্ন তখন নিজের টাকাতে পূরণ করাই ভাল। তোমার যখন স্বপ্নপূরণের সময় আসবে, তখন তুমি নিজের টাকায় করো।
আমার আর কী স্বপ্ন? ... এখন শুধু একটাই স্বপ্ন। কখন তুমি মা হবে? আমাদের স্বপ্ন তো তাকে ঘিরেই বাড়বে ঋতু। তাই না?
ঋতু এতক্ষণ ধরে সমরের কোন কথাই ভাল করে শোনেনি।
তার মন এখনো সন্দিহান। কারণটা একমাত্র সেই জানে।
তাই সে বলে উঠল, একবার বাথরুমে যাব আমি।
সমর বলল, চল আমি সাথে যাচ্ছি।
ঋতুর সন্দেহটা এবার আরো জোরাল হয়ে উঠল, তার যোনি পথ তাহলে পিচ্ছিল কেন হল? ঠিক যেন পুরুষের বীর্য!
সাদাস্রাব নয় তো?
তা কী করে সম্ভব? ...আগে তো কখনো তার এই সমস্যা ছিল না। এখন হঠাৎ করে হয় নাকি?
সাদা রঙের আঠালো পদার্থটা আঙুলে নিয়ে বার, বার পরীক্ষা করে দেখল। তার ধারণা ভুল কী করে হবে? আজ একবছর ধরে সে এই জিনিসটাকে চিনে আসছে। আজ ভুল কী করে হয়?
আর ভুল যদি নাই হবে...তাহলে এটা এল কোত্থেকে?
ঋতুর দেরি হচ্ছে দেখে সমর ডাক পাড়ল, কী করছ কী এতক্ষণ ধরে? ..এসো। ঘুমবে তো নাকি? ... এই সবে সাড়ে বারোটা। সকাল হতে ঢেড় বাকি।
ঋতু ঝটপট হাত ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।
আয়নার সামনে মুখটা মুছে, হেয়ার ব্যান্ডটাই করে চুলগুলো বেঁধে খাটে বসে পড়ল।
তারপর সমরের উদ্দেশ্যে বলল, শুয়ে পড়লে যে!...যা করছিলে তা কী আর করবে না?
সমর পাশ ফিরেই উত্তর দিল, তাই তো করছি।
ঋতু এবার সমরের উপর সোহাগটুকু ওজাড় করে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল, সত্যি করে বলো তো...তুমি আমার সাথে একটু আগে কিছু করোনি?
----মাথা খারাপ হয়েছে তোমার? ... এ যেমন, তেমন জ্বর নয় ঋতু। মারাত্মক ধরণের টায়ফয়েড। ডাক্তার যেচে বলেছেন। এখন একমাস যেন কোন পরিশ্রমের কাজ না করি। এমনকি সেক্স পর্যন্ত না। আর তাছাড়া আমি তোমার সাথে কিছু করলে তুমি জানবে না কেন? ...তোমার কাছ থেকে লুকিয়ে যৌন স্বাদ কেন নিতে চাইব ঋতু? তুমি কী আমার পর কেউ?
এর উত্তর তো ঋতুরও জানা নেই। যদিও সে এটা সিওর হওয়ার জন্যই সমরকে প্রশ্নটা করে ছিল।
তাহলে তার পরীক্ষাটা কী ভুল?
ঋতু নিজেই নিজের পরাজয় স্বীকার করে বলে উঠল। হয়ত তাই।
আর কোন প্রশ্ন না করে এবার সে সমরকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।
(2)
একটানা ঠক ঠক শব্দ শুনে বিপিনবাবুর ঘুমটা মাঝরাতে ভেঙে গেল।
চশ্মাটা এটে চপ্পল জোড়াটা গলিয়ে আস্তে করে কামরার ছিটকানিটা নামিয়ে ব্যালকনিতে বেরিয়ে এলেন। যতদূর সম্ভব শব্দটা মেন গেট থেকেই আসছে।
কেউ যেন ধাতব কোন দন্ড দিয়ে গেটটাকে আঘাত করছে।
গেটের কাছটাই আলোটা জ্বলছে। তবে সামনে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ থাকাতে একটা হাল্কা ছায়া পড়ে গেছে।
ওই ছায়ার মধ্যে কী কোন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে?
বিপিনবাবু চশ্মাটা ভাল করে চোখে বসিয়ে আর একবার যাচাই করলেন।
মানুষের মতই তো আকৃতি!
তাহলে তার তো একটা মাথা থাকবে?
তার মাথাটা তো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
সাথে, সাথেই তার মনে পড়ে গেল। চার্জার লাইটের কথাটা।
রিটারমেন্টের সময় তার এক কলিগ গিফ্ট করেছিলেন। যতদূর চোখ যায়, ঘন অন্ধকারেও সব পরিস্কার দেখা যাবে। একবার আনলেই বোঝা যায়।
পিছন ঘুরতেই ঝুপ করে সারা ঘর অন্ধকার হয়ে উঠল।
বাইরে তাকিয়ে দেখলেন। একটু পাশেয় ঘোষবাবুদের বাংলোয় আলো জ্বলছে। তারমানে লোকটাই কী কিছু করল?
বদ মতলবের ধান্দায়?
তার বুকটা একটু বেজে উঠল।
এত অন্ধকার যে দরজা কোনদিকে, জানলা কোনদিকে বোঝা যাচ্ছে না।
আন্দাজেই টেবিলের দিকে হাতড়ে যেতেই কিছু একটা পড়ে গেল।
আওয়াজ পেয়ে শিলাদেবী চেঁচিয়ে উঠলেন, কে..কে ওখানে?
বিপিনবাবু বলে উঠলেন, আমি। ভয় পেয়ো না। হঠাৎ বাড়িটার আলোগুলো নিভে গেল কেন সেটাই ভাবছি?
হাত বাড়িয়ে দেখো তো চার্জার লাইটটা নাগাল পাও কিনা?
---তুমি ওখানেই দাঁড়াও। আমি দেখছি।
শিলাদেবীও এটা, সেটা ফেলার পর কোন রকমে নাগাল পেলেন লাইটটার।
সুইচ টিপে দেখলেন চার্জ শেষ। --একি!...চার্জ শেষ? প্লাগেই তো ভরে রেখেছিলাম। বিপিনবাবু বিরক্তগলায় ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, একটাও কাজ ঠিকমত করতে পার না। সুইচ দিয়েছিলে? না শুধু ভরলেই চার্জ হয়ে যাবে? কালকে প্রথম কাজ হল একটা ইনভার্টারের ব্যবস্থা করা। দেখো তো মোবাইলটা পাওয়া যায় কিনা? তখনি একটা প্রকান্ড আর্ত চিৎকারে সারা বাড়ি কেঁপে উঠল। বিপিনবাবু সঙ্গে, সঙ্গে পকেট থেকে মাচিশটা বের করে জ্বালালেন। তারপর মোবাইলটা খুঁজে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে দৌঁড়ে গেলেন সমরের কাছে। ঋতুর সারা শরীর ভয়ে, আতঙ্কে কাঁপছে। চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে আছে। বিপিনবাবু শক্ত গলায় বলে উঠলেন, কী হল বউমা তুমি এমন কেন করছ? --বাবা...বাবা...আ...আ..মি...ও...ও.খানে দে...এ..খলাম। একটা মু..মু..ন্ডু হীন কঙ্কাল দাঁড়িয়ে আছে। সমর জোর গলায় বলে উঠল, তুমি ভুল দেখেছ ঋতু। এই তো এমারজেন্সি আলোটা জ্বেলে রেখেছি। দেখাও কোথায় সেটা? ...তুমি এখানে আসার পর থেকেই আতঙ্কে আছো। সেই কারণেই হয়ত এসব ভুল দেখছ। বিপিনবাবু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। তিনিও কিন্তু ছায়ামূর্তীটাকে দেখেছিলেন। সেটা এই মুহূর্তে বলা ঠিক হবে না। তাই তিনি আশ্বাস দিয়ে বলে উঠলেন, একদম ভয় পেয়ো না বউমা। আজ আমরা সবাই এখানেই ভুই বিছানা করে একসাথে শোব। দখি কোথা দিয়ে কী আসে? তাতে ঋতু অনেকটা বল ফিরে পেল।