জীবন-মৃত্যু

অতি বৃদ্ধ এক লোক। কঠিন তার অসুখ। এই বুঝি তার প্রাণ যায় এরকম অবস্থা। মৃত্যুশয্যায় সেই বুড়োলোকটা গোঙাতে লাগ??

বয়স তার প্রায় একশো বছর।

 

অতি বৃদ্ধ এক লোক। কঠিন তার অসুখ। এই বুঝি তার প্রাণ যায় এরকম অবস্থা। মৃত্যুশয্যায় সেই বুড়োলোকটা গোঙাতে লাগল। বিড়বিড় করে সে কথা বলছে ফারসিভাষায়।

 

কিন্তু বুড়োর মৃত্যুশয্যায় যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের কেউই অবশ্য একবর্ণ ফারসি বোঝে না। ভারি মুশকিল। মৃত্যুশয্যায় মানুষ অনেক প্রয়োজনীয় কথা বলে। 

 

এইসব কথা না-বুঝলে চলবে কী করে! লোকজনেরা ছুটে গেল কবি শেখ সাদীর কাছে। কারণ শেখ সাদী একজন জ্ঞানী মানুষ। তিনি কবিতা লেখেন। একজন বলল,

 

—কবি, শিগগির চলুন। এক বুড়ো মৃত্যুশয্যায় কী বলছেন তা কেউই বুঝতে পারছে না।

 

শেখ সাদী দ্রুত এসে উপস্থিত হলেন বুড়োর রোগশয্যায়। বুড়ো তখন কবিতা আবৃত্তি করছেন। সেই কবিতার অর্থ হলঃ হায়রে জীবন! এই জীবনে কত কিছু দেখার ছিল। 

 

কিছুই না-দেখে আমাকে মৃত্যু বরণ করতে হচ্ছে। বাগানে ঘুরে ঘুরে একটা গোলাপের পাশেই মরে গেলাম। পুরো বাগানটা আমার দেখা হল না।

 

বুডোর বেঁচে থাকার আগ্রহ দেখে কবি শেখ সাদী ভারি অবাক হলেন। সকলে কবিতার অর্থ শুনে একেবারে চোখ কপালে তুলল। একশো বছর বেঁচে থেকেও বুড়ো আরো বাঁচতে চাইছেন।

 

কবি তাকে প্রশ্ন করলেন—আপনি কেমন আছেন? এখন কেমন লাগছে আপনার?

 

বুড়ো মৃদুস্বরে জবাব দিল—এই জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কী আছে? একটা দাঁত তোলার ব্যথা সারাজীবনে ভোলা যায় না। কিন্তু আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে—এই যন্ত্রণার কথা আমি কী করে বর্ণনা করি।

 

শেখ সাদী তখন বললেন—আপনি শান্ত হন। মানুষ কখনও চিরদিন বাচে না। একদিন-না-একদিন মানষকে মরতে হবেই। শরীর থাকলে অসুখবিসুখ থাকবেই। আমরা চিকিৎসক ডেকে আনি। তিনিই ব্যবস্থা করবেন।

 

তখন বুড়ো বললেন অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। যে বাড়ির দেয়ালের রং নষ্ট হয়ে গেছে, চুন-সুরকি খসে গেছে, সেই বাড়ির চুনকাম করার কোনো মানে হয় না। 

 

আজ আমি বুড়ো হয়েছি, জীবনের শেষপর্যায়ে এসেছি, চিকিৎসক এনে আর লাভ কী! চিকিৎসক কি আমার যৌবন ফিরিয়ে দিতে পারবে?

 

বলেই বুড়ো হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।

 

শেখ সাদীর মুখে সান্ত্বনার কোনো ভাষাই নেই। বুড়োর মৃত্যুশয্যায় তিনি স্থিরভাবে বসে রইলেন।


Md Nafiz

136 Blog posts

Comments