এক দরিদ্র ভিক্ষুক সারাদিন পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছে। ক্ষুধায় পিপাসায় কাতর হয়ে সে এল এক ধনী লোকের বাড়ির দরজায়।
—ও ভাই আমাকে একটু ভিক্ষা দিন। আমি খুব ক্ষুধার্ত।
ধনী লোকটি বলল—না হে, এখানে কোনো ভিক্ষাটিক্ষা দেয়া হয় না। তুমি অন্য কোথাও দ্যাখো।।
ভিক্ষুক তবুও দাঁড়িয়ে রইল। মালিক তখন তার বাড়ির কাজের ছেলেটাকে পাঠাল। যাও ওকে বিদায় করো।
কাজের ছেলেটি গিয়ে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ভিক্ষুককে বিদায় করল। ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক বেচারা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে চলল অন্য দরজায়।
এই ধনী লোকটি ছিল খুবই অত্যাচারী, অহংকারী। মানুষকে সে মানুষ বলেই মনে করে না। কিছুদিন পরে তার কপালে নেমে এল দুর্ভোগ। ব্যবসা করতে গিয়ে সব টাকা লোকসান করে লোকটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল। এখন সে পথের ভিক্ষুক।
চাকর ছেলেটিও কাজ নিয়ে চলে গেল অন্যত্র আরেক ধনী ব্যক্তির বাড়িতে। সেই ধনী ব্যক্তিটি ছিল খুবই ভালো। হৃদয়বান এবং মানুষের মর্যাদা দিতে জানত সে।
একদিন এক ভিক্ষুক এসে হাজির হল এই ধনী ব্যক্তিটির বাড়িতে। ভাই, আমি খুব ক্ষুধার্ত। কিছু খাবার চাই।
ধনী ব্যক্তিটি সঙ্গে সঙ্গে ভিক্ষুকের খাবারদাবারের ব্যবস্থা করলেন। রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করলেন। আর প্রভুভক্ত চাকরটিকে বললেন, লোকটির
আদর-আপ্যায়নে যেন কোনো ত্রুটি না হয়।
চাকরটি খাবার নিয়ে ভিক্ষুকের কাছে পৌছতেই অবাক হয়ে গেল। আরে, এ যে তার পুরনো প্রভু! মানুষের ভাগ্য কত দ্রুত বদলে যায়। চাকরটির চোখে পানি এসে গেল। জল ছলছল করতে লাগল চোখে।
ধনী ব্যক্তিটি জিজ্ঞেস করল—ব্যাপার কী? তোমার চোখে পানি কেন?
—হুজুর, আমি একদিন এই লোকটির বাসায় কাজ করতাম। কিন্তু লোকটি ছিল খুবই অহংকারী। আজ সে পথের ফকির।
ধনী ব্যক্তিটি তখন বলল—তাইতো বলি, লোকটিকে তো আমারও চেনা-চেনা মনে হচ্ছে। একদিন আমিও ভিক্ষুক ছিলাম। পথে পথে ঘুরে বেড়াতাম। ঐ ব্যক্তির বাড়িতে ভিক্ষা চাইতে গিয়েছিলাম।
গলাধাক্কা দিয়ে আমাকে বের করে দেয়া হয়। আজ দিন বদলে গেছে। ভাগ্য ফিরেছে আমার। আমি আজ ধনী ব্যক্তি। আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল যে-ব্যক্তি সে আজ পথের ভিক্ষুক।
সে আজ আমার অতিথি।
এই হচ্ছে মানুষের জীবন। মানুষ যদি কোনো অন্যায় কাজ করে সে তার কর্মফল পায়। আজ যে আমির কাল সে ফকির, আজ যে ফকির কাল সে আমির—এই হচ্ছে পৃথিবীর নিয়ম।