বাদশাহ’র মন ভালো নেই। বৃদ্ধ বয়স। যে-কোনোদিন তিনি মারা যাবেন। তিনি মারা গেলে কে বাদশাহ হবেন? কারণ তার কোনো সন্তান নেই।
বাদশাহ ঘোষণা করে দিলেনঃ কাল ভোরবেলা এই রাজধানী শহরে প্রথম যে-ব্যক্তি প্রবেশ করবে তাকেই আমি পুত্র হিসেবে গ্রহণ করব। সেই হবে এই বিশাল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী।
পরদিন ভোরবেলা। সকলে উদগ্রীব। রাজকর্মচারীরা নগরদ্বারে প্রস্তুত। তাদের উৎসুক দৃষ্টি, কে হবে সেই ভাগ্যবান?
এমন সময় দেখা গেল একজন দীনহীন ভিক্ষুক, পরনে তার শতচ্ছিন্ন পোশাক, আপনমনে সে প্রবেশ করছে নগরে। রাজকর্মচারী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভিক্ষুককে ধরে নিয়ে হাজির হল রাজদরবারে। একেবারে রাজার সামনে।
বাদশাহ তাকেই গ্রহণ করলেন।
ভিক্ষুক হল তার পোষ্যপুত্র। সে হবে রাজ্যের উত্তরাধিকারী। ভিক্ষুকের আর আনন্দ ধরে না। দুবেলা ভাতের জনো তাকে ঘুরে বেড়াতে হত মানুষের দরজায় দরজায়। হঠাৎ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। সে আজ অগাধ ধনসম্পদের মালিক।
সমস্ত রাজ্য তার।
কোষাগারের সমস্ত অর্থ তার।
এই সুখ! এই স্বাচ্ছন্দ্য! ভিক্ষুকের মাথা খারাপ হয়ে উঠল। সে ভোগবিলাসে, আনন্দ-উৎসবে জীবন কাটাতে লাগল।
বাদশাহ একদিন মারা গেলেন।
ভিক্ষুক বসল সিংহাসনে।
সকলেই তাকে বাদশাহ বলে মেনে নিল। কিন্তু বাদশাহ হওয়ার পরেই রাজ্যজুড়ে দেখা দিল অশান্তি। নতুন বাদশাহর কোনো জ্ঞানগম্যি নেই।
রাজ্য পরিচালনার মতো বুদ্ধিও তার নেই। মন্ত্রীরা তাই এই নতুন বাদশাহকে খুব ভালোভাবে মেনে নিতে পারল না। তারা বাদশাহর হুকুম পালন করতে অপারগ।
রাজ্যজুড়ে শুরু হল অরাজকতা।
অন্যান্য দেশের বাদশাহরা ভাবলেন, এইতো সুযোগ। দখল করতে হবে রাজ্য।
নতুন বাদশাহ পড়লেন মহাভাবনায়। দিনরাত তার দুশ্চিন্তা। নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, চোখে তার ঘুম নেই।
এমন সময় ভিক্ষুকের এক পুরনো বন্ধু এল তার সঙ্গে দেখা করতে। বন্ধু এখন বাদশাহ হয়েছে। এ আনন্দ তারও। বন্ধুকে সে বলল—তুমি বাদশাহ হয়েছ। এর চেয়ে সুখ জীবনে আর কী হতে পারে! একদিন তুমি এই রাজ্যের পথে পথে ঘুরে বেড়াতে।
আজ পুরো রাজ্যটাই তোমার। তোমার কোনো অভাব নেই। টাকা-পয়সার চিন্তা নেই। তোমার মতো সুখী আর কে আছে ভাই।
নতুন বাদশাহ তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললঃ বন্ধু, তুমি যদি আমার মনের আসল অবস্থা বুঝতে পারতে তবে হয়তো এই কথা আর বলতে না। যখন পথে পথে ঘুরে বেড়াতাম, একবেলা খেতাম, আরেকবেলা খেতে পেতাম না—সেই জীবনই আমার ভালো ছিল।
খাবার চিন্তা আজ হয়তো আমার নেই। কিন্তু প্রতিমুহূর্তে, প্রতিক্ষণে নানা দুশ্চিন্তায় দিন কাটে আমার। রাজ্য চালানো যে কী কঠিন কাজ সে তোমাকে কীভাবে বোঝাই। এই বিত্তের চেয়ে নিঃস্ব জীবনই আমার ভালো। বন্ধু
, আমি সেই পুরনো জীবনেই ফিরে যেতে চাই।