গাধার পিঠে চড়ে লোকটা যাচ্ছিল। অনেক জরুরি কাজ তার। গাধা পথে যেতে যেতে পড়ে গেল গর্তে। গাধা তো গাধাই-বেচারা আর উঠতে পারে না। লোকটাও অনেক চেষ্টা করল গাধাটাকে ওঠানোর। কাজ হল না।
লোকটার তখন মেজাজ খারাপ।
সে গাধাটাকে যা-তা বলে গালাগালি শুরু করল। সময় যাচ্ছে আর লোকটার রাগও বাড়ছে। কে রাজা কে প্রজা, কে শত্ৰু, কে মিত্র-সবাইকেই
সে একধারসে গালি দিচ্ছে।
মানুষ রেগে গেলে তার কাণ্ডজ্ঞান লোপ পায়। লোকটারও তাই হল।
এমন সময় ঐ-পথ দিয়ে যাচ্ছিল সেই দেশের বাদশাহ। লোকটার কাণ্ড দেখে বাদশাহ খুব অবাক হলেন। গাধা কাদায় পড়েছে। কিন্তু লোকটা সেই রাগে সবাইকে গালাগালি করছে কেন?
বাদশাহ’র সহচররা ভয়ানক উত্তেজিত। তরবারির এক কোপে লোকটার মুটা ধড় থেকে নামিয়ে দেয়া দরকার। মৃত্যু দণ্ডই ওর একমাত্র শাস্তি।
বাদশাহ এসব কথায় কর্ণপাত করলেন না। তিনি বিবেচনা করে দেখলেন, লোকটা আসলেও খুব বেকায়দা অবস্থায় পড়েছে। এ অবস্থায় কারও মেজাজ ঠিক থাকার কথা নয়। বাদশাহ কোমলস্বরে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন—ব্যাপারটা কী?
লোকটা তখন সবিস্তারে সব বলল।
বাদশাহ বললেন—তাহলে আমাদের উচিত তোমাকে সহযোগিতা করা।
বাদশাহ তার সহচরদের সঙ্গে নিয়ে গর্ত থেকে গাধাটিকে উদ্ধার করলেন।
লোকটি যারপরনাই প্রীত হল।
বাদশাহ কিছু অর্থ সাহায্য করলেন লোকটিকে।
তারপর বললেন—আমি হচ্ছি এই দেশের বাদশাহ। আমার রাজ্যে কেউ বিপদে পড়ে আমাকেই গালাগালি করবে, এ হতে পারে না। বাদশাহ হয়েও আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তোমার বিপদে আমি সমব্যথী।
বাদশাহের কথা শুনে লোকটা মাটির সঙ্গে প্রায় মিশে গেল। তার রাগ, ক্ষোভ কমে গেছে। সে এখন সুস্থ মানুষ। বরং লজ্জায় সে কাতর হয়ে উঠল। বাদশাহ’র সামনে মাথা নত করে সে বলল—আপনি মহৎ মানুষ।
আপনি উত্তেজিত না-হয়ে আমার সঙ্গে যে আচরণ করলেন তা একমাত্র আপনার পক্ষেই সম্ভব। তাই আপনি একজন মহৎপ্রাণ শাসক। আমি সামান্য একজন প্রজা।