মার্কেটিং এর দিক থেকে জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া

এই পর্যায়ে আমরা আলোচনা করবো মার্কেটিং এর দিক থেকে সম্ভবনাময় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে।

মার্কেটিং এর দিক থেকে জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া 

ফেসবুক :

সোশ্যাল মিডিয়া ফ্ল্যাটফর্মের কথা চিন্তা করলে সর্ব প্রথম নাম আসবে ফেসবুকের । স্প্রাউট সোশ্যাল ইনডেক্সের মতে, মার্কেটার এবং কনজিউমারের দিক থেকে পৃথিবীতে এখন ও ফেসবুক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়া ফ্ল্যাটফর্ম। কিছু গুরুত্বপূর্ন কি-নোট সংযুক্ত করেছি এখানে- 

 

বিশ্বের ৮৯% মার্কেটার- মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে।

৮৩% ভোক্তা (ব্যবহার কারী) এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকে।

৬৬% ব্যবহারকারী তাদের পছন্দের ব্র্যান্ড কে ফেসবুকে ফলো করে থাকে। 

গড়ে মাসে ২.৫ মিলিয়ন মানুষ ফেসবুকে একটিভ থাকে।

বর্তমানে লাইভে এসে মার্কেটিং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। যার সবচেয়ে বেশি বুমিং হয়েছে ফেসবুকে। প্রায় ৪২% মার্কেটার তাদের লাইভ প্রোগ্রামের কন্টেন্ট রেডি করেন মূলত ফেসবুক লাইভ করবেন বলে। 

গড়ে প্রতিটি ব্রান্ড ফেসবুকে তাদের পন্য শেয়ার করেন ০.৯৭ টি। প্রায় সপ্তাহে ৬ টির ও অধিক সংখ্যক পোস্ট প্রচার করে থাকেন মার্কেটাররা। এঙ্গেইজ রেইট অর্থাৎ পোস্টের বিপরীতে মানুষের রিয়েক্টের সংখ্যা প্রায় ০.০৯ শতাংশ। 

এই সব তথ্য উপাত্ত দেখে আমরা মার্কেটের পরিসর সম্পর্কে ধারনা পাবো। কোন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে মানুষ কত সংখ্যক সময় ব্যয় করে আর কৎ পার্সেন্ট এংগেইজিং রেইট। এই সম্পর্কে একজন মার্কেটারের ধারণা রাখা প্রয়োজন। 

 

ইন্সটাগ্রাম :

খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এমন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইন্সটাগ্রাম । এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত এর ডায়ানামিকতার জন্য। তুন নতুন ফিচার সংযুক্ত করতে বেশ পটু এই কমিউনিটি। এরা খুব অল্প সময়ের মাঝে ইউজারদের জন্য মজাদার ফিচার নিয়ে আসায় ব্যবহারকারীদের মধ্যে খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর ইউজার যত বেশি সংখ্যক হবে, মার্কেটিং এর দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্ল্যাটফর্ম এর গ্রহনযোগ্যতা তত বৃদ্ধি পাবে। তেমনই একটি গ্রোয়িং সোশ্যাল মিডিয়া ফ্ল্যাটফর্ম এটি। মার্কেটারদের ২য় পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই ইন্টাগ্রাম। 

 

ইন্সটাগ্রামে মাসে গড়ে একটিভ ইউজারের সংখ্যা বর্তমানে ১ বিলিয়নের ও অধিক। যা ২০১৭ সালের দিকে ছিলো ৭০০ মিলিয়নের কাছাকাছি। গত ৩ বছরে এর বিপুল পরিমানে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।  

এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা বেশির ভাগ তাদের পছন্দের ব্রান্ড কে ফলো করে থাকেন ইন্টাগ্রামে। পরিসংখ্যান বলে, একজন ইউজার যত সংখ্যক আইডি ফলো করে থাকেন তার ৯০% এর মত তারা ফলো করেন তাদের পছন্দের ব্রান্ডকে। সেই দিক থেকে মার্কেটিং এর দৃষ্টিকোনে ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। 

ইন্সটাগ্রাম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর জন্য। ৮৯% ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটার মনে করেন ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। আমাদের আগামি কোন পোস্টে আমাদের আলোচনার বিষয় বস্তু হিসেবে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কে রাখবো ইনশাল্লাহ। 

৭৮% ভাগ লোক মনে করে থাকেন ইনস্টাগ্রামে কন্টেন্ট বুস্টিং এর জন্য কার্যকর ইনস্টাগ্রাম 

পোস্ট আর ৭৩ শতাংশ মানুষ মনে করে থাকেন ইনফ্লুয়েন্সিং মার্কেটিং এর জন্য ইনস্টাগ্রাম স্টোরি বেশি কার্যকর। 

 

শুধুমাত্র ২০১৯ সালে ইন্সটাগ্রামের ফলোয়ার বেড়েছে ৯-১৬% এর মত। তার মানে বিশাল এক জনগোষ্ঠি এই ফ্লাটফর্মে নিয়মিত সংযুক্ত হয়ে চলেছে। 

৫০০ মিলিয়নের মত মানুষ দৈনিক ইন্সটাগ্রামে স্টোরি চেক করেন। 

২০১৮ সালে ইন্সটাগ্রামে মার্কেটিং এর জন্য ব্যয় করা হয়েছে ২৩ বিলিয়ন ডলার। একবছর পর সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলারে। ২০২০ সালে এটি গিয়ে ঠেকেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। বিশাল পরিমানের টাকা এই ইনস্টাগ্রামে মার্কেটিং পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে। 

ভিডিও মার্কেটিং এর স্ট্যাটিস্টিক আরো বেশি পরিমানে কার্যকর এই ফ্ল্যাটফর্মে। পরিসংখ্যান বলে থাকে- ছবি পোস্টের তুলনায় ভিডিও এংগেজমেন্ট এর হার ৪৯ শতাংশ বেশি। 

যারা ডিজিটার মার্কেটিং করবেন বা যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার ইচ্ছে আছে তাদের জন্য ইন্সটাগ্রাম বেশ জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। 

 

টুইটার :

টুইটার বরাবরের মত বিশাল এক এলিট শ্রেনীকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এখনো পর্যন্ত। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তিত্ব যারা আছেন, তারা সকলে সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে টুইটারকে ব্যবহার করে থাকেন। তাই এখানকার মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতিতে হবে এবং ব্যয় বহুল হবে সেটা আগে থেকে অনুমান করা যায়। টুইটারে পোস্ট করার লিমিটেশন থাকা সত্বেও এর গ্রাহক সংখ্যার কমতি নেই। ওবারলো এর হিসেব মতে, টুইটারে মান্থলি একটিভ ইউজার রয়েছে ৩৩০ মিলিয়ন। এবং প্রতিদিন একটিভ থাকে ১৪৫ মিলিয়ন সংখ্যক জনসংখ্যা। এবং টুইটার ব্যবহার কারী বেশিরভাগ মানুষ প্রবীন। যাদের বয়স ৩৫-৬৫ বছরের মত। এদের সংখ্যা মোট ব্যবহার কারীর ৬৩ শতাংশ। 

 

৭৯ শতাংশ মানুষ টুইটারে ‘What’s new” ফিচার উপভোগ করার জন্য একবার হলেও ঢুঁ মারেন। যেই ফিচারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে আলোচিত বিষয় গুলো খুব সহজে বের করে নেওয়া যায়। 

৩৩০ মিলিয়ন সংখ্যক মানুষ প্রতিমাসে একবার হলেও টুইটার খুলে দেখেন।

২৬% মানুষ টুইটারে এড দেখতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করে থাকেন। 

প্রতিটি ব্রান্ড গড়ে পোস্ট করে থাকেন ০.৮৬ টি। সপ্তাহে ৫ টির অধিক পোস্ট করে থাকেন তারা নিয়মিত।

পোস্টে এনগেজমেন্ট এর হার ০.০৪৮%। 

টুইটারের রেভিনিউ প্রতি বছর গড়ে ৯% করে বৃদ্ধি পায়। শুধু মাত্র ২০১৯ সালের তৃতীয় কোয়াটারে এর আয় বেড়েছে ৮২৪ মিলিয়ন ডলার। 

টুইটারের রেভিনিউর ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে শুধু মাত্র যুক্তরাষ্ট্রে আর সারা বিশ্বে গড়ে ১২ শতাংশ করে এর আয় বেড়ে চলেছে। 

পিন্টারেস্ট :

বর্তমান সময়ে মার্কেটিং এর দিক থেকে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে পিন্টারেস্ট । এদের বেশির ভাগ গ্রাহক হ’লো বাইং ইন্টেশন, অর্থাৎ কোন পন্য কেনার উদ্দেশ্যে বেশির ভাগ ইউজার পিন্টারেস্ট ব্যবহার করে থাকেন। পাঠকের সুবিধার্থে আমরা আরেকটু কথা বাড়িয়ে নিচ্ছি। বাইং ইনটেনশন হচ্ছে যখন কেউ কোন প্রোডাক্ট কিনার উদ্দেশ্যে ইনটার্নেটে সার্চ করে থাকে, সেটি বাইং ইনটেনশন। যেমন পিন্টারেস্টে বেশির ভাগ মানুষ সার্চ করে থাকেন – হোম ডেকর রিলেটেড প্রোডাক্ট, ইউনিক রেসিপি, গিফট, এবং ডাই ক্রাফট। এগুলো বেশির ভাগ বাইং ইন্টেনশন সার্চ। চলুন জেনে নেওয়া যায় পিন্টারেস্টের কিছু চমকপ্রদ তথ্য।

 

পিন্টারেস্টে মাসে গড়ে একটিভ ইউজার প্রায় ৩০০ মিলিয়ন।

এই একটিভ ইউজার গড়ে ২০০ বিলিয়নের অধিক পোস্ট পিন করে থাকে। যা অন্য সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক বেশি। 

৭৭ শতাংশ মানুষ পিন করা থেকে সপ্তাহ পর পর নতুন নতুন ব্রান্ড এবং প্রোডাক্ট খুঁজে পান। এজন্য পিন্টারেস্ট তাদের নিয়মিত ইউজার ধরে রাখতে পারে সবচেয়ে বেশি পরিমানে। 

৯৮% রিপোর্ট তৈরি কারীরা পিন্টারেস্ট নতুন কিছু খুঁজে পেতে ব্যবহার করে থাকে। 

পিন্টারেস্টে প্রতি বছর গড়ে ৩০% এর অধিক ইউজার যুক্ত হচ্ছে। যা এই কমিউনিটিকে আরো বেশি শক্তিশালী করে তুলেছে দিন দিন। ২০১৯ এর দ্বিতীয় কোয়াটারে এর রেভিনিউ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬১ মিলিয়ন ডলারে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে পিন্টারেস্টের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ফ্লাট ফর্ম দিন দিন প্রচুর পরিমানে অডিয়েন্স তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমানের অধিকাংশ ক্লায়েন্ট চান তাদের প্রোডাক্টটি পিন্টারেস্টে পোস্ট করতে। 

 

লিংকডইন:

লিংকডইন সম্পূর্ন একটি ভিন্ন ধর্মী সোশ্যাল মিডিয়া। এটি ব্যবহার করে থাকে প্রফেশনাল যারা রয়েছে তারা। এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে থাকেন বিটুবি মার্কেটার, এমপ্লইরা, এবং যারা জব খুজছেন তারা। তাই এই সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মটির ও মার্কেটিং দিক থেকে যথেষ্ট ভালো গুরুত্ব রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যায় আরো কিছু তথ্য-

লিংকডইনে রেজিস্টার্ড ইউজার সংখ্যা ৬৬০ মিলিয়ন এবং এর মাসিক এক্টিভ ইউজার সংখ্যা ৩০৩ মিলিয়ন।

৯০ মিলিয়ন ইউজার সিনিয়র-লেভেল ইনফ্লুএন্সার এবং ৬৩ মিলিয়ন ডিসিশন মেকিং ইউজার। 

লিড জেনারেশনের জন্য সবচেয়ে ভাল ওয়েব সাইট এই লিংকডইন। বলা হয়ে থাকে, ফেসবুকের থেকে লিংকডইন এর লিড ২৭৭ শতাংশ বেশি কার্যকর। 

৪৫ শতাংশ মার্কেটার তাদের কাস্টমার পেয়ে থাকেন এই লিংকডইন ফ্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। 

লিংকডইনে ৬৫% বিটুবি কোম্পানি পেইড এড চালায় কাস্টমার টার্গেট করার জন্য। 

৯৫% বিটুবি কন্টেন্ট মার্কেটার লিংকডইন ব্যবহার করে থাকেন অর্গানিক কন্টেন্ট মার্কেটিং এর জন্য। 

২০১৮ সালে এই কোম্পানির রেভিনিউ ছিলো ৫.২ বিলিয়ন ডলারে। একবছর পর তা এসে দাঁড়িয়েছে ৬.৭ বিলিয়ন ডলারে। 

এই সকল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মার্কেটিং করা হয় সবচেয়ে বেশি। কারণ এই গুলোই সবচেয়ে মেজর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। আজকের পোস্ট এখানেই সমাপ্ত করছি। আশা করি আপনাদের সামান্য তম উপকারে আসতে পারে আমাদের এই কন্টেন্টটি। ভালো খারাপ যাই লাগুক কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আজকের মত এখানেই বিদায়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। 


Md Masom Mia

10 Blog posts

Comments
Adeel Hossain 16 w

Yes

 
 
Salamsheikh00001111 16 w

হেবি