রহস্যহীনা মহিলা

কোনো এক অপরাহ্নে কাফে দি লা পেইক-এর বাইরে বসে পারস্যের বিলাসবহুল আর দুঃখভারাক্রান্ত

কোনো এক অপরাহ্নে কাফে দি লা পেইক-এর বাইরে বসে পারস্যের বিলাসবহুল আর দুঃখভারাক্রান্ত জীবনযাত্রার মিছিল দেখছিলাম, আর মদের গ্লাস মুখে নিয়ে অবাক হয়ে। ভেবেছিলাম কেমন করে দম্ভ আর দারিদ্র্য এভাবে পাশাপাশি নিজেদের অস্তিত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে বজায় রাখতে পারে। এমন সময় কে যেন আমার নাম ধরে ডাকল। পেছন ফিরে দেখি লর্ড মাচিশন। কলেজ ছাড়ার পরে আর আমাদের দেখা হয়নি; সেও প্রায় বছর দশেক হবে। তার সঙ্গে দেখা হতেই আমি খুব খুশি হয়ে উঠলাম; করমর্দন করলাম দুজনে। অক্সফোর্ডে আমাদের মধ্যে বেশ একটা বন্ধুত্ব ছিল। মানুষটি দেখতে সুন্দর, সাহসী, আর সম্ভ্রান্ত। তাকে আমার খুবই ভালো লাগত। আমরা সবাই বলাবলি করতাম সব সময় সত্যি কথা না বললে সে যশের শিখরে উঠতে পারবে। আমার ধারণা তাকে যে আমরা অত প্রশংসা করতাম তার একমাত্র কারণ হচ্ছে সে সব খোলাখুলিই বলত। সেদিন দেখলাম তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন। দেখা দিযেছে। কেমন যেন উদ্বিগ্ন হতচকিত দেখাচ্ছে তাকে। কোনো একটা বিষয়ে তার যেন একটা সন্দেহ জেগেছে। আমার মনে হল এর পেছনে আধুনিক নৈরাশ্যবাদ নেই। সেই জন্যেই আমি নিশ্চিন্ত হলাম যে নিশ্চয় কোনো নারীঘটিত ব্যাপারে সে জড়িয়ে পড়েছে। তাই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম–তুমি বিয়ে করেছ?

 

সে বলল–মেয়েদের আমি ভালোভাবে বুঝতেই পারি নে।

 

বললাম–বৎস জিরাল্ড, মেযেদের জন্মই হয়েছে ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে, বোঝার জন্যে নয।

 

যাকে আমি বিশ্বাস করতে পারি নে তাকে আমি ভালোবাসতে পারি নে।

 

বললাম-তোমার জীবনে নিশ্চয় কোনো রহস্য রয়েছে, জিরান্ড। আমাকে সব খুলে বল।

 

সে বলল–চল, মোটরে করে একটু বেরিয়ে পড়ি। এই জায়গাটি বড়োই জনবহুল। নানা ওই গাড়িটা নয–অন্য রঙের কোনো গাড়ি নাও-ওই ওখানে যে ঘন সবুজ একটা গাড়ি রয়েছে–ওতেই হবে।

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বুলেভার্ডের পাশ দিয়ে মেদেলিনের দিকে ছুটতে লাগলাম।

 

কোথায় যাবে?

 

সে বলল–যেদিকে তোমার ইচ্ছে। বয়-এর কোনো রেস্তোরাঁয় চল। সেখানে ডিনার খেযে তোমার কাহিনি বলবে।

 

বললাম-তোমার কাহিনি আমি প্রথম শুনতে চাই। তোমার গোপন কথাটা কি বল।

 

রুপোর ঢাকনি দেওয়া একটা মরক্কো চামড়ার ব্যাগ বার করে সেটি সে আমার হাতে দিল। খুলে দেখলাম তার ভেতরে একটি মহিলার ফটো রয়েছে। মহিলাটি দীর্ঘাজিলী, ক্ষীণতন্বী: তাঁর সেই ভাষা-ভাষা চোখ আর খোলা চুলে অপরূপা দেখাচ্ছিল তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি অতীন্দ্রিয় জগতের; দামি পশমে ঢাকা ছিল তাঁর দেহ।

 

সে বলল–মুখটা দেখে কী মনে হয় তোমার? সত্যবাদিনী?

 

বেশ ভালোভাবেই পরীক্ষা করলাম আমি। মনে হল এ মহিলার মধ্যে কোনো গাপন রহস্য রয়েছে, কিন্তু সেটা ভালো কি মন্দ তা আমি বুঝতে পারলাম না তাঁর সৌন্দর্য অনেক রহস্য মিশিয়ে অনেকটা মনস্তাত্ত্বিক বাস্তুব নয; এবং তাঁর ঠোঁটের ওপরে হাসির যে মৃদু রশ্মিটি ছড়িয়ে পড়েছে সেটি অনেক গভীর, সত্যিকার মিষ্টি বলে চিহ্নিত হওয়ার পথে যথেষ্ট বাধা। রয়েছে তার।

 

সে একটু অস্থির হয়ে প্রশ্ন করল–কী দেখছ বল?

 

বললাম-রহস্যময়ী রমণী। এঁর সম্বন্ধে সব কথা আমাকে বল।

 

সে বলল–ডিনারের পরে।

 

ডিনার শেষ হলে হোটেলের চাকর যখন কফি আর সিগারেট দিয়ে গেল তখনই আমি জিরাকে তার প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। চেয়ার থেকে উঠে ঘরময় দু’চার বার পায়চারি করে একটা চেযারের ওপরে বসে পড়ল সে; তারপরে বলে গেল তার


Rx Munna

447 Blog posts

Comments