বণিকদল–…এবং ফাউণ্ডেশনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পুরোভাগ ছিল বণিকেরা। পেরিফেরির দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছিল তাদের প্রভাব-বলয়। কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর লেগে যেত তাদের টার্মিনাসে ফিরে আসতে। তাদের শিপগুলো অবশ্যি আহামরি কিছু ছিল না, এখানে সেখানে দেখা যেত অদক্ষ মেরামতির ছাপ, তাৎক্ষণিক জোড়াতালির চিহ্ন। তাদের সততাও যে একেবারে বিতর্কের উর্ধ্বে ছিল তা নয়। আর তাদের সাহস…
এসবের সাহায্যেই তারা চার রাজ্যের ঐ ছদ্ম-ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্রের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলল।…
বণিকদের সম্পর্কে যে কত গল্প-কাহিনী প্রচলিত আছে তার কোনো লেখাজোখা নেই। কিছুটা সচেতনভাবে এবং কিছুটা উপহাসভরে তারা স্যালভর হার্ডিনের একটি সারগর্ভ উক্তিকে তাদের মটো হিসেবে গ্রহণ করেছিল: তোমার নীতিবোধ যেন কখনো ন্যায্য এবং সঙ্গত কাজ করা থেকে তোমাকে বিরত রাখতে না পারে! এসব গল্পের কোনটি সত্য আর কোনটি মনগড়া তা এখন বলা কষ্টসাধ্য। তবে সম্ভবত প্রতিটিতেই কিছু না। কিছু অতিরঞ্জন রয়েছে।…
–ইনসাইক্লোপীডিয়া গ্যালাকটিকা
.
লিমার পনিয়েটসের রিসিভারে যখন কল-টা পৌঁছল, সে তখন আকণ্ঠ সাবান ফেনায় ডুবে আছে। গ্যালাকটিক পেরিফেরির অন্ধকার, নিঃসীম মহাশূন্যেও টেলিমেসেজ আর বাথটাবের অস্তিস্কের যেসব পুরনো গল্প শোনা যায়, সেগুলো যে মিথ্যা নয় এ-ঘটনাটাই তার প্রমাণ।
ফ্রী-ল্যান্স শিপটির যে অংশে বিভিন্ন ধরনের মালপত্র ঠাসাঠাসি করে রাখা নেই সৌভাগ্যক্রমে সেটি যথেষ্ট আধুনিক এবং উন্নত। এতটাই যে, ঠাণ্ডা এবং গরম পানির শাওয়ারটি কন্ট্রোল প্যানেল থেকে মাত্র দশ ফুট দূরে দুই-বাই-চার ফুট মাপের একটি ছোট্ট, চমৎকার স্থানে অবস্থিত। রিসিভারের ঝনকার পরিষ্কারভাবে কানে এল পনিয়েটসের।
সাবানের ফেনা আর খিস্তি ছড়াতে ছড়াতে বেরিয়ে এল সে। এডজাস্ট করল ভোকাল। ঠিক তার তিন ঘণ্টা পর দ্বিতীয় একটা ট্রেড শিপ চলে এল প্রথমটার পাশে। দুই শিপের মধ্যবর্তী এয়ার টিউব গলে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি নিয়ে এক যুবক ঢুকল ভেতরে।
সবচেয়ে ভাল চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে নিজে পাইলট-সুইভেল-এ গিয়ে বসল পনিয়েটস।
তুমি করছিলেটা কী, বলতো, গোর্ম? গম্ভীর মুখে শুধোল সে। ফাউণ্ডেশন থেকে আমাকে তাড়া করে এসেছ নাকি এ পর্যন্ত?
লেস গোর্ম একটা সিগারেট ধরিয়ে দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়ল। আমি? মোটেই না। মেইল-এর পরদিনই ঘটনাক্রমে গ্রিপটাল ফোর-এ ল্যাণ্ড করে এ অধম। ওরা আমাকে এটাসহ তোমার কাছে পাঠিয়ে দিল।
ছোট্ট, চকচকে একটা গোলাকার বস্তু পনিয়েটসের হাতে তুলে দিল সে। বলল, জিনিসটা গোপনীয়। সুপার-সিক্রেট। সাব-ইথার বা ঐ জাতীয় ব্যাপারের ওপর ভরসা করা যায়নি। অন্তত আমার তাই ধারণা। পার্সোনাল ক্যাপসুল বলা যেতে পারে এটাকে। তুমি ছাড়া আর কারো হাতে খুলবে না ওটা।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে ক্যাপসুলটার দিকে তাকাল পনিয়েটস। সেটা বুঝতে পারছি। এও জানি, হতচ্ছাড়া এই জিনিসগুলোতে কখনো কোনো সুখবর থাকে না।
তার হাতের ওপর খুলে গেল ক্যাপসুলটা। বেরিয়ে এল পাতলা, স্বচ্ছ একটা টেপ। ত্বরিত চোখ বুলিয়ে মেসেজটা পড়ে নিল পনিয়েটস। দ্রুত পড়ার কারণ হচ্ছে টেপের শেষাংশটা বের হতে হতে প্রথম অংশটা ধূসর হয়ে কুঁচকে গেছে। দেড় মিনিটের মাথায় সেটা কালো রঙ ধারণ করল। তারপর গুঁড়ো হয়ে ঝরে পড়ল।
হাহাকার বেরিয়ে এল পনিয়েটসের কণ্ঠ থেকে, ওহ গ্যালাক্সি!
লেস গোর্ম শান্তভাবে জিগ্যেস করল, আমি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি? নাকি ব্যাপারটা তার চেয়েও গোপনীয়?
তুমি যেহেতু বণিক সংঘে আছ, তাই তোমাকে বলা যেতে পারে। অ্যাসকোনে যেতে হবে আমাকে।
অ্যাসকোনে কেন?
ওরা একজন ট্রেডারকে আটক করেছে।