জীবনে কোন ঘটনা

এন্ডলেস নাইট – আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ

আমাদের জীবনে কোন ঘটনা যে কি পরিণতি নিয়ে আসবে তা কি আগে থেকে কেউ বলতে পারে, না বুঝতে পারে!

 

কখন দুর্দৈব নেমে আসবে কিংবা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে এর কোনটাই আমাদের জানার সীমানায় থাকে না। আমারও হয়েছে তাই।

 

এই ঘটনাকে দুটো পর্বে ভাগ করা চলে, এবং বলতে হলে যে কোন দিক থেকেই শুরু করা যায়। তবে আমি জিপসি একর থেকেই শুরু করব।

 

হ্যাঁ, জিপসি একর।

 

সেদিন হাতে বিশেষ কাজ ছিল না। কিংসটন বিশপের প্রধান সড়ক ধরে খেয়াল খুশিমত হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম। এদিকটায় সচরাচর আসা হয় না। আজ কি মনে হতে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছিলাম।

 

হঠাৎ জর্জ অ্যাণ্ড ড্রাগনের দেয়ালের নোটিশ বোর্ডে চোখ পড়ল। টাওয়ার নামে একটা পুরনো বনেদী বাগানবাড়ি নিলামে বিক্রির কথা লেখা রয়েছে তাতে।

 

টাওয়ারের বিশদ বিবরণও দেওয়া হয়েছে।

 

বেশ কয়েক একর জায়গা জুড়ে বাগান বাড়ি। প্রাকৃতিক পরিবেশও মনোরম। প্রায় একশ বছরের পুরনো বাড়ি।

 

বিবরণ পড়ে বুঝতে পারলাম, একদিন যে বাড়ি লোকজনের সমাবেশে গমগম করত, এখন সেই গৌরবময় অতীত স্মৃতি বুকে আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে একটা ধ্বংসস্তূপ।

 

এই যে আচমকাই ঘটনাটা ঘটল, অর্থাৎ টাওয়ার বিক্রির নোটিশটা আমার চোখে পড়ল এটা কোন দুর্দৈব না ভাগ্যের প্রসন্নতা, সেই মুহূর্তে বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছি, দুদিক থেকেই ব্যাপারটাকে অনায়াসে নেওয়া যায়।

 

প্রসিদ্ধ স্থপতি স্যানটনিক্সের সঙ্গে আমার আলাপ পরিচয়ের প্রসঙ্গটাও এই প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য। কেননা ভদ্রলোকের সঙ্গে প্রথম আলাপ পরিচয়ের দিন থেকেই এই কাহিনীর সূত্রপাত এমন মনে করলেও অযৌক্তিক হবে না।

 

স্যানটনিক্সের শীর্ণ, পাণ্ডুর গাল, অত্যুজ্জ্বল চোখ এই চেহারাটা চোখ বুঝলে এখনো পরিষ্কার দেখতে পাই।

 

দক্ষ হাতে তিনি কাগজের ওপরে নানান ছাঁদের বাড়ির নক্সা আঁকেন, আর সেসব বাড়ি বাস্তবে রূপদান করেন তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তার মধ্যে বিশেষ একটা বাড়ি আবার এমনই সুন্দর যে দেখলে মনে হয়, এরকম একটা স্বপ্নময় বাড়ির মালিক না হতে পারলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাই নিরর্থক।

 

মনের মত একটা বাড়ির মালিক হব এই সাধ আমার আবাল্যের। তাই আশা করতাম, আমার সেই স্বপ্নের সৌধ একদিন স্যানটনিক্সই বানাবেন আর ততদিন অবশ্যই বেঁচে থাকবেন।

 

নিলামের নোটিশ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে যখন বাইরে তাকালাম মনে হল আমার চোখের সামনে যেন স্বপ্নরাজ্যের সেই অসম্ভব সুন্দর বাড়িটা দেখতে পাচ্ছি।

 

সুপ্ত বাসনার কি মৃত্যু হয় না? তা না হলে যা অবিশ্বাস্য অসম্ভব কল্পনা তা বারে বারে ঘুরে আসে কেন? বুকের ভেতর তার শেকড় কি এতই গভীর?

 

রাস্তার মোড়ে একটা লোক বিশাল একটা কাঁচি দিয়ে পথের ধারের ঝোপঝাড় কেটে হেঁটে পরিষ্কার করছিল। সম্ভবত স্থানীয় পৌরসভারই নিম্নপদস্থ কর্মচারী।

 

পায়ে পায়ে তার কাছে এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা ভাই টাওয়ার নামের বাগান বাড়িটা এদিকে কোথায় বলতে পার?

 

আমার প্রশ্ন শুনে লোকটার মুখের চেহারা মুহূর্তে কেমন বদলে গেল। তার মুখের সেই ছবি আজও আমি ভুলতে পারিনি।

 

আমার দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকাল। কি ভাবল। পরে বলল, ওই নামে আজকাল আর কেউ ডাকে না। পুরনো দু চারজন মনে রেখেছে। অনেক বছর আগে যারা ওখানে বাস করত তারাই বাড়িটার টাওয়ার নাম রেখেছিল।

 

–তাহলে জায়গার এখন কি নাম হয়েছে? জানতে চাইলাম আমি।

 

প্রৌঢ় লোকটার চোখ মুখ কেমন থমথমে হয়ে উঠল লক্ষ্য করলাম। সে যেন যথেষ্ট বিরক্তির সঙ্গেই বলল, এখন সকলে বলে জিপসি একর।

 

–ভারী অদ্ভুত নাম তো? এরকম নামকরণ হল কেন?

 

-আমি অবশ্য সঠিক বলতে পারব না। নানান জনের কাছে এ নিয়ে নানান কাহিনী শোনা যায়। সেগুলো বড় অদ্ভুত।

 

–কি রকম বল তো ভাই। আমি কৌতূহল প্রকাশ করি। লোকটা যেন ক্রমশই কেমন রহস্যময় হয়ে উঠছিল।

 

রকম কিছুই না, জায়গাটাতেই বেছে বেছে দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটে।

 

–মোটর অ্যাকসিডেন্ট নাকি?

 

–কেবল মোটর অ্যাকসিডেন্ট হলে তবু রক্ষা হত, অনেক রকমের অ্যাকসিডেন্টই ঘটে। তবে মোটর অ্যাকসিডেন্টের সংখ্যাই বেশি।

 

-কারণটা কি?

 

একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন, রাস্তাটা ওখানে বিশ্রী বাঁক নিয়েছে। বিপজ্জনক ওই পাহাড়ী বাঁকে অ্যাকসিডেন্ট হবে না তো কি?

 

এতটুকু বাড়িয়ে বলেনি লোকটা।

 

পাহাড়ী রাস্তাটা আচমকা বাঁক নিয়েছে এমন ভাবে যে একটু অসাবধান হলেই দুর্ঘটনার মুখে পড়া স্বাভাবিক।

 

চোখে পড়ল, বাঁকটার আগেই স্থানীয় পৌরসভার নোটিশ বোর্ড। বেশ বড় বড় করে বিপজ্জনক কথাটা লেখা রয়েছে।

 

লোকটি বলল, ওই বোর্ড কোন কাজ দেয় না। দুর্ঘটনা যে


Rx Munna

447 Blog posts

Comments