এই কাহিনী টা ঘটেছে এই তো গত কুরবানি ঈদের পরেই। আমাদের ইয়াং পোলাপানদের আড্ডা খানা চাটমোহর অগ্রণী বাংক এর পিছনে একটু ফাকা জায়গাজমি, পাশেই একটা পুকুর আর তার আসে পাসে সব হিন্দুদের বসবাস। আর এই ফাকা যায়গা তেই সুখ চাদের চায়ের দোকান অবস্থিত। সবাই জানে যে হিন্দুদের বসবাস স্থানে নাকি এটা অটা ঘটে থাকে বা আজকাল আমরা লোক মুখে শুনে থাকি। কিন্তু আমরা সবাই তো ইয়াং পোলাপান আমাদের মধ্য এই জায়গায় সব সময় দেখা যেতো তখন - আতিক(আমি নিজে), বকুল ভাই, মিলন, গিয়াস ভাই, শাকিল, সুমন ভাই, সুজন ভাই, মাঝে মধ্য আমাদের পাসের গ্রামের রবিন ভাই, হারুন ভাইও এই জায়গাতে আসতো। আমাদের কাজ কাম নাই তাই সারাটা দিন এই সুখ চাদের চায়ের দোকানে চা খেয়ে সময় কাটাই আর হাসি তামাশার গল্প করি। ঈদ চলে গেছে তার পরেও আমাদের ঈদ কখনো ফুরায় না।
তো একদিন এই জায়গায় উল্লেখিত নামের সবাই আসছে তো সেদিন সবাই ব্রেঞ্চে বসে গল্প করছি তো রবিন আর হারুন ভাই কোথা থেকে যেনো বাইক নিয়ে হাফাতে হাফাতে আসলো আমাদের কাছে. এসেই সুখ চাঁদ কাকাকে বলছে ও কাকা তারাতারি এক মগ পানি দিয়ে যাও কইলজে জায় জায় অবস্থা। আমরা সবাই দেখে বললাম কি হয়েছে? সুখ চাঁদ কাকা পানি নিয়ে এসেই বলতেছে কিরে রবিন কুন ছেরির বারিত থাইক্যা এই ভরা সন্ধাত তারা খায়্যা আইলু। হারুন ভাই বলতেছে আরে কিছু না কাকা আপনি জান সবার জন্য চা বানান। সুখ চাঁদ কাকা সেখান থেকে চলে গেলো চা বানাতে। বকুল ভাই জিজ্ঞেসবাদ করলো রবিন ভাই তো কথাই বলতে পারছে না। সুমন ভাই বল্লো কিরে হারুন কি হয়েছে তখন হারুন ভাই বলতেছে আর ঘামছে আমি বললাম ভাই ঘামতেছেন কেনো? ভুত দেখছেন নাকি? বল্লো হ্যা হবে হয়তো
সবাই হাসাহাসি করতে লাগলাম.. ভুতের কথা শুনে শাকিল বাসায় চলে গেলো। তার পরে রবিন ভাইয়ের অবস্থা দেখে হাসি থামালাম সবাই পরে হারুন ভাই বলতেছে তাইলে শুনো। বাসা থেকে আমি আর রবিন বাইক নিয়ে এখানে আসার জন্য বের হলাম আস্তেছি খুব ধিরে ধিরে তখন বিকেল ৫ টা বেজে ১৭ মিনিট বোয়ালমারী এর মাঝ ব্রিজ এ এসে বাইক আর চলে না এখন কি করি টাংকি ঝাকিয়ে দেখি তেল আছে তবুও চলছে না.... প্লাগ টাও ঠিক আছে তবুও বিদ্যুৎ তৈরি হয় না.... দেখতে দেখতে সন্ধ্যার আজান দিয়ে দিলো আর তখনি প্যাডেল মারতেই বাইক স্টার্ট নিলো আমি রবিন কে বললাম বাইকে উঠতে আর তখনি
এক অজানা অচেনা কি অদ্ভুত বিস্রি চেহারার এক জন এসে বলতেছে এখন বেচে গেলি আল্লাহর নির্দেশে। কিন্তু তোদের আমি ছারবো না
এটা দেখে দু জন ভয় পেয়ে যাই। আর রবিনের এই অবস্থা। বকুল ভাই বল্লো আচ্ছা বুঝলাম তোমাদের আজ বারি জাবার দরকার নেই তোমরা আজ আমাদের বাসাতেই থাকবা। এই বলে উঠতেই গিয়াস ভাই বলে ফেল্লো কিরে বকুল তোদের বাসায় না রাত্রে কে যেনো ঢিল ছুরে.. বকুল ভাই বলে এমনিতেই দুজন ভয় পেয়েছে আর তুই থামতো। গিয়াস ভাই আর সুজন ভাই বলতেছে সত্যি কথাই তো এদিকে সুখ চাঁদ কাকার চা বানানো শেষ কাকা এসে বলতেছে কিরে সবাই যে ভুত নিয়ে মজেছিস আজ তা তুরা কি জানিস (কাকা আমাদের সবার সাথে এভাবেই কথা বলতে ভালোবাসে) এই পুকুর পারের কাহিনী?
আমরা কেউ শুনতে চাইলাম না এদিকে ফট করে মিলন বলে ফেল্লো বলেন কাকা আমি আর আতিক শুনবো। আমরা বাধা দিলেও কাকা বলতোই (সে এক রোখা)
কাকা বলতে লাগ্লো তখন ১৯৮০ সাল তোদের অনেকেরেই জন্ম হয়নি তখন থেকে এই পুকুর আর তখন হিন্দুদের এই সকল জায়গা ছিলো কিছু মুসল্লিও ছিলো। একদিন এই পুকুরে সোনার নৌকা ভেসে উঠে। হিন্দুরা সহ মুসলিম রাও নৌকা ধরতে গেলে সবাইকে তলিয়ে নিয়ে যায়, তার পরের দিন টা তেই সবাই এই এলাকা ছেরে চলে যায়। গল্প বলতে বলতে রাত ১১:৩০ বেজে গেসে কাকা বল্লো তুরা কি থাকবি নাকি আমি বাসায় জাবো কাকা চলে গেলো আর বলে গেলো সবাই চলে যা অনেক রাত হয়েছে। সুমন ভাই কাকার সাথেই চলে গেলো.. গিয়াস ভাই আর সুজন ভাই এক সাথে চলে গেলো। বকুল ভাই রবিন ভাই আর হারুন ভাই বকুল ভাইদের বাসায় থাকবে তাই তারাও চলে যাবে.. আমি আর মিলন জিরো পয়েন্ট জেতে হবে আমি বাসা ভারা থাকি তো আমি আর মিলন ভাবতেছি ইস যদি সোনার নৌকা টা পেতাম
তাই বসে রইলাম বকুল ভাই রবিন.হারুন ভাইকে বাসায় নিয়ে জাবার সময় রুচি হোটেলের সামনে জেতেই দমকা হাওয়া বয়ে যেতে লাগ্লো রবিন ভাই চিৎকার দিয়ে দিলো আমি আর মিলন সেখানে যাবার আগেই পুকুরের মধ্য থেকে কে যেনো বলে উঠলো কিরে তোরা কই জাস তোরা দুজনে না সোনার নৌকা নিবি.. আমি আর মিলন থমকে দারালাম অই দিকে আর কনো সারা শব্দ পেলাম না তাই পুকুর পারে দুজন দারিয়ে রইলাম আর বললাম কোথায় তুমি আর কে তুমি? ভেবেছো গল্প শুনেই কি আমরা ভয় পেয়েছি? যদি ভাবো তবে ভুল
আমাদের ভয় দেখাতে পুকুরের অপর প্রান্তে তাকাতেই দেখি এক দল ঘোড়া এদিকে আসছে কিন্তু পা নেই
মিলন কে বললাম মিলন তুই বসেক তো আমি আর মিলন বসে পরলাম আর বললাম.... ওকে দেখি ভয় দেখানো র জন্য আর কি করতে পারো
দেখি আকাশ থেকে বৃষ্টি পরছে পানিতে চারিদিকে খুব ঝর হইতেছে কিন্তু আমাদের গা ভিজছে না।
পরে দেখি এক ড্রাগন এসে আমাদের আগুন দিয়ে পুরিয়ে দেবার চেস্টা করছে কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না.... পুকুরের মধ্য তাকিয়ে দেখি সেই কাকার গল্পের সোনার নৌকা মিলন ধরতে যেতে চাইলে আমি বাধা দিলাম মিলন আমায় ধাক্কা দিলে মিলন কে আমি ঝাপ্টে ধরি
মিলন আমার বাধা আর পেরুতে পারে না
পুকুর থেকে আমায় উদ্দেশ্য বলে কিরে প্রেম কুমার অকে বাধা দিলি কেনো? ওকে আস্তে দে তোরে আমি সুন্দরী রমনি দিবো অই যে পাসের পুকুরের ঘাটে স্লান করছে যা দেখে আয়... আমি আর মিলন বললাম চলতো দেখি
পাসের পুকুরে যেতে এক গলি দিয়ে যেতে হয় সেখানে এক বাগান আর হিন্দুরা পুজা করে। সেই গলি দিয়ে যেতেই দু পাসের ইট জেনো আমাদের আটকিয়ে দিলো এবার একটু ভয় পেলাম সামনে তাকাইলাম দেখি অসংখ্য রমনি স্লান করছে। আমাদের পিছন থেকে আকাশ ছোয়া এক ভয়ংকর মানুষ এসে দারালো আর সামনে দেখি সব কিছু অন্য রকম হয়ে গেছে রাত বেজে গেসে ৩:০৩ মিনিট
দুজনেই এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম মিলনের হাতে মেসের কাঠি ছিলো সেটা জালাতেই সব থেমে গেলো পরে সুখ চাদের চায়ের দোকানে আস্তেই আলো নিভে গেলো তখন দেখি আমাদের আসে পাসে সাপ.ব্যাঙ বাঘ ভাল্লুক সিংহ ভয়ংকর দৌত্য আর পুকুরের মাঝ খানে সোনার নৌকা। সবাই জেনো আমাদের কাছে ডাকছে কিন্তু কেউ আমাদের সামনে আস্তে পারছে না আর এভাবে ভোরের সুর্য্য দেখা দিলো। আমি আর মিলন সেখানেই বসে ছিলাম.।
সুখ চাঁদ কাকা সকালে এসে বলতেছে কিরে তুরা দুজন কি এখানেই ছিলি নাকি
বল্লাম হ্যা এখানেই ছিলাম
কাকাকে রাতের সব ঘটনা বললাম
কাকা বল্লো আমি আগেই জানতাম এমন কিছু হবে একটা অনেক বছর পর।
এই ঘরে আসার পর কিছুই হয়নি তাই না?
বললাম এটাই এখন রহস্যময়
কাকা বল্লো সুনেক এই ঘরটা কতা দিয়ে বন্দি করা আচে তাই কিচু হয়নাই
নালি তুরা দুজন আজ স্যাস হয়্যা গেলুনু
এদিকে কিছুক্ষন পর রবিন ভাই আর হারুন ভাই আসলো বললাম কাল কি হইছিলো বল্লো রুচি হটেলের সামনে বাতাশ আর চামচিকার কানে বারি খেয়ে পরে বুঝতে পারলাম তাই বকুল দের বাসায় গিয়ে ঘুমালাম
কিন্তু সেখানে আসলেই টিনের চালের উপর ঢিল ছুরে কে জেনো তিন জন থাকায় আর ভয় পাইনি।
আমাদের কাহিনী টা বললাম সবাইকে এই সুনে রবিন ভাই আর হারুন ভাইকে সুখ চাদের চায়ের দোকানে বেশ কিছুদিন দেখা জায়নি।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তবে মানুষের সকল কাজই কিন্তু সেরা হয় না। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে যারা পৃথিবীকে আলোকময় করেছে আবার এমন কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব পৃথিবীতে ঘটেছে যাদের কাজ ও কর্ম দ্বারা পৃথিবী কলঙ্কিত হয়েছে। তবে সুখের সাথে একথা বলা যায় যে, তাদের সংখ্যা খুব বেশী নয়। যে সকল ব্যক্তির কর্মে মানবতা কলঙ্কিত হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ যেমন আছে তেমনি আছে নারী। আর তেমনই একজন নারী হচ্ছেন ইলচ কোচ। এই নারী এতটাই জঘন্য ছিলেন যে, তাকে সম্বোধন করা হয় বুখেন ওয়ার্ল্ডের ডাইনি হিসেবে। ইলচ কোচ ছিল জঘন্যতম একজন খুনি মহিলা। সে কারাগারে বন্দীদের হত্যা করতো এবং তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করতো। ইলচ কোচ ১৯০৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে জার্মানির ডেরেসডেনে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ছিল কারখানার একজন কর্মচারী। তিনি শৈশবে একজন সদা হাস্যোজ্জল বালিকা ছিলেন। জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে ১৯৩২ সালে তিনি নাজি পার্টিতে যোগদান করেন। কোচের স্বামীর নাম ছিল কার্ল ওট্টো। যিনি পেশায় ছিলেন একজন কারারক্ষী। কোচ নিজেও ছিলেন ক্যাম্পের একজন সুপার ভাইজার। ১৯৩৬ সালে বার্লিনে তিনি এক ক্যাম্পের সুপার ভাইজার ও নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি কার্ল ওট্টোকে বিবাহ করেন। ১৯৪০ সালে কোচ একটি ইনডোর ক্রীড়া কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় পর্যন্তই কোচের ভাল সময় এবং এর পরের গল্পগুলো শুধুই অন্ধকার জগতের। কোচ যখন ক্যাম্পের সুপারভাইজার ছিল তখন সে এক হৃদয় বিদারক ও নির্মম খেলায় মেতে উঠে। কোচের দায়িত্বে থাকা ক্যাম্পে যখন কোন নতুন বন্দী আনা হতো তখন সে সেই বন্দী গুলোকে সুন্দরভাবে পরখ করতো এবং দেখে রাখতো। কোচ সকল বন্দীদের দেখে যে সকল বন্দীদের শরীরে ট্যাটু অংকিত থাকতো এবং যাদের গায়ের রং ভাল তাদেরকে আলাদা করে রাখতো। এরপর এক সময় কোচ মেতে উঠতো পৈশাচিক নেশায়। তার দেখা যেসকল বন্দীদের শরীরে ট্যাটু ছিল তাদেরকে সে নির্মম ভাবে হত্যা করতো এবং তাদের চামড়া সমূহ তাদের গা থেকে ছাড়িয়ে নিত তারপর এই বর্ণিল চামড়াগুলো তার কাছে সংরক্ষণ করতো। এছাড়াও সে যে সকল বন্দীদের চামড়া সুন্দর তাদের সে হত্যা করতো এবং তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগ ুলো সে সংরক্ষণ করতো। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় শখ ছিল সুন্দর চামড়া ওয়ালা বন্দীদের হত্যা করে তাদের শরীরের চামড়া দিয়ে কুশন কভার, সাইড ল্যাম্প, বালিশের কভারসহ অনন্যা জিনিস তৈরি করা। সে এই সকল বন্দীদের শরীরের চামড়া দিয়ে বালিশের কভার, বিছানা চাদর, টেবিলের কাপড়, কুশন কভার ইত্যাদি তৈরি করেছিল। কোচ নিজে ক্যাম্পের সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা এবং তার স্বামীও একই ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকায় সে এই জঘন্য কাজগুলো সহজেই করতে পেরেছিল। দীর্ঘ দিন এভাবে নির্মমতার পর কুখ্যাত এই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৪৩ সালের ২৪ অগাস্ট। কিন্তু তার এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের কোনও প্রমাণ তখন পাওয়া যায়নি। ফলে সঠিক প্রমাণের অভাবে জেল থেকে ছাড়া পায় কোচ কিন্তু তার স্বামী দোষী বিবেচিত হন এবং তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে কোচ চলে যায় লুদুইগবার্গ শহরে। সেখানে বসবাস করার সময় আমেরিকার সৈন্যরা তাকে আবার গ্রেফতার করে ১৯৪৫ সালের ৩০ জুন। পুনরায় গ্রেফতার হবার পর আবার বিচারের মুখোমুখি করা হয় কোচকে। দ্বিতীয়বার বিচারের সময় প্রকাশিত হতে থাকে তার নানান কুকীর্তির কথা। তিনি স্বীকার করেন তার নানান লোমহর্ষক কাহিনীর কথা। পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি তার বিভিন্ন প্রকারের জিনিস সমূহ। বিচারে কোচ দোষী বিবেচিত হওয়ায় ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু নিজের প্রতি অভিমান ও জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা হয়ে জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন রোচ। আর এভাবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় নরপিশাচ বুখেনওয়ার্ল্ডের ডাইনি।
থেকে যখন এই স্টেশনে নামি রাত তখন ঠিক একটা। যাত্রিদের স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে রেল গাড়িটি আবার চলতে লাগলো। সঙ্গে থাকা ব্যাগটা কাঁদে ঝুলিয়ে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে গেলাম। ভিতরে ঢুকতে দেখি সেখানে একজন লোক বসে আছে। উনি হয়তো স্টেশন মাস্টার। তাকে গিয়ে জিগাস করলাম এখান থেকে রসুলপুর কত দূর? তিনি উত্তর দিলেন এখান থেকে রসুলপুর ৬ কি:মি রাস্তা। কিন্তু এত রাতে এখান থেকে রসুলপুর যাওয়ার কোন ভ্যান পাওয়া যাবেনা। তাই রাতটা কষ্ট করে এখানে কাটাতে। তার সাথে কথা শেষ করে ঐ রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বাহিরে এসে দেখি চারপাশটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা কোন মানুষ-জন নেই। পাশে যাত্রিদের ওয়েটিং রুম। সেখানে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলাম। তারপরে চিন্তা করলাম কোন মতে আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে কাল সকালের দিকে রসুলপুরের উদেশ্যে রওনা হব। দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দেড়টা বেজে গেছে। চোখে একটু একটু ঘুম ঘুম ভাব। তাই চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। হঠাত্ এমন সময় একজন লোক এসে উপস্থিত। এসে বলে স্যার কৈই যাইবেন? -রসুলপুর যাব। কিন্তু তুমি কে? -আমার নাম মতি এই এলাকায় ভ্যান গাড়ি চালাই। -ও তাই নাকি। আচ্ছা তুমি কি রসুলপুর যাবে? -হ যামু স্যার চলেন। মনে মনে চিন্তা করলাম কষ্ট করে স্টেশনে রাত কাটার চেয়ে গন্তব্যে চলে যাওয়া ভালো। তাই ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলি চল মতি। হাটতে হাটতে মতির ভ্যান গাড়ির সামনে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একজন লোক আগে থেকে ভ্যানের উপর বসে আছে। লোকটি সমস্ত শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। চেহারাটা পর্যন্ত ভাল করে দেখা যাচ্ছে না। আমি কোন কথা না বলে লোকটার পাশে গিয়ে বসলাম। তার পরে মতি ভ্যান গাড়ি চালাতে শুরু করে। কিছু দূর আসার পরে আমরা একটি মাটির রাস্তায় উঠলাম। সেই রাস্তার দুই পাশে ছিল বিস্তৃত ধান ক্ষেত। যত দূরে চোখ যায় শুধ হলুদ পাকা ধানের হাসি। মাঝে মাঝে রাস্তার দুই পাশে হালকা কিছু গাছ দেখা যাচ্ছে। আর খরা মৌসুমে চাষাবাদের জন্য এক পাশে একটি খাল খনন করা আছে। আকাশে হালল্কা চাদের আলো তার পরে ও চারপাশটা বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে কোন জনবসতি নেই তাই চারদিকে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছেনা। মাঝে মাঝে দূর থেকে একটি খেঁক শেয়ালের ডাক কানে ভেসে আসছে। কার্তিক মাসের শেষের দিকে তাই হালকা একটু শীত পড়ছে। মাঝে মাঝে হিমেল হাওয়া শরীলে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। তাই ব্যাগ থেকে জ্যাকেট নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। একটু পরে মতি জিগাস করে "স্যার রসুলপুর আপনার কে থাকে? -রসুলপুর আমার এক বন্ধুর বাড়ি। কিছুদিন পরে তার বড় ভাইয়ের বিয়ে তাই যাচ্ছি। -ও আচ্ছ মাঝ পথে আসার পরে মতি বলে স্যার আপনারা বসেন আমি একটু আসি। বুঝতে পারলাম সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছে। মতি পিঁছনের দিকে একটু দূরে গিয়ে রাস্তার থেকে নিচে নেমে গেল। তাকে আর দেখা যাচ্ছেনা। অনেকক্ষন বসে থেকে আমার কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে। তাই ভ্যান গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার মধ্যে হাটাচলা করতে লাগলাম। অনেক সময় হয়ে গেছে কিন্তু মতি এখনো ফিরে আসছে না। আমি তখন তার নাম ধরে ডাকতে দিলাম কিন্তু উত্তর পেলাম না। আমার মাঝে কেমন একটা টেনশন কাজ করছে। কিন্তু আমার পাশে বসা লোকটি কোন সাড়া-শব্দ নেই, চুপচাপ বসে আছে। ব্যাগ থেকে তখন টর্চলাইটটা নিয়ে আস্তে আস্তে ঐ দিকে গেলাম, কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না। আস্তে আস্তে আরো একটু সামনে গেলাম। হঠাত্ লক্ষ্য করলাম খালের পাশে কার যেন লাশ পড়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি এটি মতির লাশ। কে যেন তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে। আর তার রক্ত গড়িয়ে খালের জলে মিশে সেটি ও লাল হয়ে গেছে। এমন সময় লক্ষ্য করলাম ধান ক্ষেতের মাঝখান থেকে কিছু একটার শব্দ হচ্ছে। একসময় শব্দের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বুঝতে পারলাম ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে কিছু একটা এদিকে আসছে। ভয়ে তখন দৌড় দিয়ে ভ্যান গাড়ির সামনে চলে আসি। কিন্তু এখানে এসে দেখি চাদর গায়ে দেয়া সে লোকট নেই। আমি চারপাশ ভাল করে দেখলাম কিন্তু কোথাও লোকটিকে দেখা পেলাম না। হঠাত্ লক্ষ্য করলাম দূর থেকে কতগুলো কুকুর শব্দ করতে করতে এদিকে ছুটে আসছে। কুকুর গুলোকে দেখে আমি দূত ভ্যানের উপর উঠে গেলাম। কুকুর গুলো ভ্যান গাড়ির সামনে এসে কান্নার সুরে ডাকেতে শুরু করে। মনে হচ্ছে কুকুর গুলো কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে। তাই ঐ দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম ঐ দিকে নিচ থেকে কেউ একজন রাস্তার উপরে উঠেছে। হাতে থাকা টর্চলাইটটি সে দিকে ধরলাম। দেখি রাস্তার উপর এক মধ্যে বয়সী মানুষ দাড়িয়ে আছে। মুখে আর পোষাকে রক্ত মাখা দাগ। চোখ যেন জ্বল জ্বল করছে আর এক দৃষ্টিতে এদিকে তাকিয়ে আছে। লোকটিকে দেখে কুকুর গুলো ভয়ে সামনের দিকে দৌড় দিল। আমি তখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চিন্তা করলাম ভাগ্যে যা থাকে থাকুক ব্যগটা নিয়ে সামনের দিকে দৌড় দেব। তাই ব্যগটি হাতে নিয়ে দিলাম একটা দৌড়। কিছু দূর আসার পরে খেয়াল করলাম সামনে দিয়ে একজন লোক হেটে যাচ্ছে। দূত তার কাছে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখি এটি ভ্যানের সেই চাদর গায়ে দেয়া লোকটি। তাকে দেখে মনে কিছুটা সাহস পেলাম। লোকটিকে বললাম"ভাই