সেবার অনেক দিন পর কুরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছি। আর বাড়ি যাওয়া মানেই বাড়িতে থাকি বা না থাকি সুকচাঁদ চাচার দোকানে প্রতিদিন যেতেইই হবে। বিশেষ করে আমি আর আমার এক জ্যাঠাতো ভাই "রবিন" প্রতিদিন বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে চাচার দোকানে চলে আসতাম। তারপর সারা বিকেল, সন্ধ্যা বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ছোট ভাইদের সাথে গল্প গুজব করে রাত আটটা-নটা নাগাদ বাসায় চলে যেতাম। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে সুকচাঁদ চাচার চা-ষ্টলে আসা-যাওয়ার পথে একটা বিল পাড়ি দিতে হত। বিলের মাঝখানে এই রাস্তাটা প্রায় দেড়-দুই কিলো। পুরাটাই ফাঁকা, আসে পাশে কোন বসত বাড়ি নাই, যেদিকে তাকানো যায় শুধু বিস্তীর্ণ ফসলী জমি। আর পাকা রাস্তার দুপাশে মাঝারি গোছের লাটিম গাছ, কোথাও কোথাও দু একটা শিশু কিংবা বট গাছ সমস্ত রাস্তাটাকে একটা আকর্ষনীয়, দর্শনীয় স্থানে পরিনত করেছে। তবে বিশেষত বর্ষা কালে এই জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠে। তখন সমস্ত ফসলী জমি পানির নিচে চলে যায়, বিল বর্ষার পানিতে ভরে উঠে। যে দিকে তাকাবেন শুধু পানি আর পানি। পশ্চিমা দিগন্তে অস্তগামী লাল সূর্যটা কিভাবে বিলের পানিতে হারিয়ে যায়, তাই দেখতে বিকেল বেলা ছেলে-বুড়ো সহ সকল বয়সী লোকজন এসে এই খানে ভীর করে। বিলের অপার সৌন্দর্য দুচোখ ভরে অবলোকন করে। তারপর সন্ধ্যে বাড়ার সাথে সাথে একে একে ফাঁকা হয়ে যায় সব।
আমাদের চলনবিলের লোকজন এই জায়গাকে বলে "মিনি কক্সবাজার"। যাদের কক্সবাজার দেখার সামর্থ্য নেই, তারা এই চলনবিলের মধ্যেই কল্পনায় কক্সবাজার দেখে নেই।
কিন্তু এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে কোথাও কোথাও লুকিয়ে আছে অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনা, তা অনেকেই জানেন না। ছোটবেলায় দাদার মুখে এ বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু ভুতুরে গল্প শুনে এসেছি। কিন্তু নিজের চোখে তা দেখবো কিংবা আরেকটা নতুন ঘটনার স্বাক্ষী হবো, তা কোনদিন ভাবিনি।
যাই হোক, কুরবানির ঈদের বেশ কয়েকদিন পরের ঘটনা এটা। সেদিন আমি আর আমার জ্যাঠাতো ভাই সুকচাঁদ চাচার দোকানে যাওয়ার জন্য বের হলাম। বের হতে হতেই বেশ দেরী হয়ে গেছে। কিন্তু সন্ধ্যা হোক আর যাই হোক চাটমোহরে না এলে আর সুকচাদের দোকানের চা না খেলেই নয়। বাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়ে বিলের মধ্যে আসতে আসতে প্রায় বেলা ডুবা ডুবা ভাব। একেবারে ভরা সন্ধ্যে বেলা তখন। হালকা শীত শীত লাগছে, তার মধ্যে দুভাই মোটর সাইকেল চালিয়ে আসছি। গাড়ির গতিবেগ ৪০-৫০ কিমি/ঘন্টা।
হঠাৎ
ধানকুনিয়া পার হয়ে যে একটা গোরস্থান আছে সেই গোরস্থানের কাছে আসতেই তীব্র গরম এক বাতাসের হলকা এসে লাগলো। আমি আর রবিন দুজনেই খুব ভালো ভাবে অনুভব করলাম।
রবিন আমাকে বলল, "চাচাতো ভাই, গাড়ির স্পীড আরেকটু কমা। "
আমি ওর কথার তাৎপর্য বুঝতে পারলাম। সঙ্গে সঙ্গে হালকা ব্রেক করে বিলের প্রথম মোড়টা পার হলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমি রবিনকে বললাম, "কি রে, হঠাৎ এ গরম বাতাস কই থেকে আইলো? "
ও আমতা আমতা করে কিছু বলল না। প্রথম ব্রীজটার কাছে এসে গাড়ি দাড় করালাম।
শরীরটা কেমন যেন ভার ভার লাগছে। হাত পা ঠিক উঠেও উঠতে চাচ্ছে না। আমি রবিনকে বললাম, "তোর কাছে সিগারেট আছে? "
ও কোন কথা না বলে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো। দুজন পাশাপাশি দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি। হঠাৎ রবিন বলল,
গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে দে। আমি নীচে নেমে প্রস্রাব করে আসি। "
মুখে সিগারেট লাগিয়েই ও নীচে নেমে গেলো প্রকৃতির ডাকে। তখন আমি ব্রীজের সাইডে একা দাড়িয়ে। মনের মধ্যে হালকা ভয় কাজ করছে, কিন্তু ঠিক পাত্তা দিচ্ছি না।
বরং সিগারেটে জোড়ে করে দুইটা টান দিয়ে ফেলে দিলাম।
ততক্ষণে রবিন ওর কাজ সেরে উপরে চলে এসেছে। ওর মুখে এখনো সিগারেট। গাড়িতে উঠে বসতেই আমি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগুতে শুরু করলাম।
গাড়ির হেডলাইট এর তীব্র আলোয় পোকা গুলো সাৎ সাৎ করে চোখে মুখে এসে লাগছে। কিন্তু একটু দূরে যেতেই গাড়ির হেডলাইট হঠাৎ ডাউন হয়ে গেলো। কিন্তু ইঞ্জিন যথারীতি চলছে।
আরেকটু সামনেই বড় ব্রীজটা। সামান্য উচু। কিন্তু আমার গাড়িটা কিছুতেই যেন উপরে উঠছে না। মনে হলো, কেউ একজন পেছন থেকে টেনে ধরে আছে। আমি ভাবলাম, উচু জায়গা তাই বোধহয় এমন হচ্ছে। ক্লাস ধরে ঘ্যাট ঘ্যাট গিয়ার কমিয়ে দুই গিয়ারর নিয়ে আসলাম। কিন্তু তবুও যেন ইঞ্জিন ঠিক শক্তি পাচ্ছে না। আমার ডান হাতে পিক আপ ফুল টানা। সাইলেন্সারের পেছন দিয়ে সাদা ধোয়া বের হচ্ছে। কিন্তু গাড়ি যেন এগুতেই চায় না। অনেক কষ্টে গাড়ি বড় ব্রীজটার উপরে উঠে থেমে গেলো। আর ঠিক সঙ্গে সঙ্গে আবারো সেই গরম বাতাস অনুভব করলাম। যেন এখনই আমাদের দুজনকে গাড়ি সমেত ব্রীজ থেকে নীচে ফেলে দেবে!
হার্ট বিট প্রচন্ড বেড়ে গেছে। সামনে পিছনে তাকিয়ে কোন জনমানুষের চিহ্ন দেখতে পেলাম না। রবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর পাংশুটে মুখ দেখে আমি আরো ঘাবরে গেলাম। কি করি আর কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
এদিকে চরম বাতাস হচ্ছে। যেন এই সময়েও কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে বিলের মধ্যে। আমি তো হেডলাইটের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার কারন খুজলাম। টাংকি ঝাঁকিয়ে দেখলাম, নাহ, যে তেল আছে তাতে অনায়াসে একশ কিলো রান করা যাবে। স্পার্কিং প্লাগ টান দিয়ে খুললাম। রবিন কে বললাম, মোবাইলের লাইট ধর।
ও গ্যাস ম্যাচ বের করে লাইট ধরলো। নাহ! সব ঠিক আছে। স্পার্কিং চেক করলাম কিন্তু প্লাগে স্পার্ক হচ্ছে না!
আরো বেশিই ঘাবরে গেলাম। এই প্রায় শীতের মধ্যেও দুজন ঘেমে অস্থির।
শেষ পর্যন্ত সব আশা ছেড়ে দিয়ে রবিনের কাছে আবার সিগারেট চাইলাম। ও সিগারেট বের করে জ্বালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এত বাতাসে কিছুতেই মেসলাইট জ্বলছে না।
এদিকে আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন বারবার আমার মুখ থেকে সিগারেট টান দিয়ে ফেলে দিতে চাইছে! আর আমিও দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলাম।
তারপর, বাতাসকে আড়াল করে অনেক কষ্টে সিগারেট টা জ্বালাতে পারি। আর সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় যখনই সিগারেট টা জ্বলে উঠলো ওমনি চারপাশের উত্তাল হাওয়া শান্ত হয়ে গেলো। বাইকের প্যাডেলে কিক করার সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট, হেডলাইটও একেবারে ফকফকা।
মৃত শরীরে যেন আত্না ফিরে পেলাম দুজন।
সঙ্গে সঙ্গে গাড়তে উঠে দিলাম টান। গাড়িতে বসার পর আরেকবার ওই গরম বাতাস টা একটা ধাক্কা দিল। আর কানের কাছে কেউ যেন ফিসফিস করে বলল, "তোর মা লাউয়ের পাতায় জাউ বিলাইছিলো দেইখ্যা বাইচ্যা গেলি"।
আমরা দুভাই স্পষ্ট সে কথা শুনতে পারলাম। সেই ফিস ফিস আওয়াজ টা।
গাড়ি ছুটিয়ে শুকচাঁদ চাচার দোকানে এসে হাজির হলাম। রবিন আর আমার দুজনের সারা শরীর ঘেমে একাকার। শুকচাঁদ চাচা রবিনকে দেখেই বলল, " বউমার ঘরে চুরি করতে গেছিলে নাকি? "
কি আর বলবো তখন! বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম সবাইকে। সবাই শুনে এবং আমাদের অবস্থা দেখে তো থ! বকুল, গিয়াস, ইমরান, মিলন সবাই বলল, ভাই আজ আর বাড়ি যাওয়া লাগবি না। আজ চাটমোহরেই থাকেন।
বকুল বলল, "চল, আমার বাড়িতে আজ থাকিস তোরা। "
কি আর করা! অগত্য সে রাত বকুলের বাসাতেই থাকতে হলো।
কয়েকদিন হলো রাতে ঠিক ঘুম হচ্ছে না। চোখ বন্ধ করলেই কি সব বিভৎস চেহারাগুলি ভেসে উঠে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? ?
দুই তিনবার ডাক্তারের কাছে গেলাম সমস্যাটা নিয়ে। ডাক্তার নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন,
"নীলকান্ত সাহেব, কোথায়? আপনার তো কোনই সমস্যা নেই। আপনি তো একে বারে ফিট আছেন। "
ডাক্তারকে বললাম, "ডাক্তার, তাহলে আমি যেসব দেখি, সেগুলো? "
ডাক্তার হাসতে হাসতে বললেন, "আপনি সম্পুর্ন সুস্থ আছেন মি. নীলকান্ত। ওসব আসলে কিছুই না। আপনি অত্যাধিক ঘোষ্ট স্টোরি পড়েন আর মিস্ট্রিয়াস বই পড়েছেন একসময়, তাই হয়ত সামান্য হ্যালিসুলেশন। তবে আমার ঠিক তা মনে হয়না। "
ডাক্তারকে বললাম, "তাহলে কি করবো ডাক্তার? "
তিনি হাসতে হাসতে বললেন, "কিচ্ছু করা লাগবে না। বাসায় গিয়ে দিব্যি রেষ্ট নেন কিছুদিন। অথবা সম্ভব হলে সপ্তাহ খানেক কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। "
আর হ্যা, এসব হরর মুভি আর বই পড়া থেকে পারলে একটু দুরে থাকবেন আপাতত। "
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে বেশ প্রফুল্ল লাগছিল। যাক, তেমন কোন সমস্যা নেই তাহলে।
খুশি মনে মেডিক্যাল থেকে বের হয়ে সোজা সাত মাথায় এসে চা-টা খেলাম। তারপর রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সি এনজি ধরে বাসায় চলে এলাম। আমার বাসা, আই মিন মেসটা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের পেছনে, জহুরুলনগর। এ পাশটা কলেজের উত্তর দিক। মোটামুটি ফাঁকা একটা সুন্দর এলাকা। কলেজের দুটো হল, "তিতুমীর "ও "মুন" হল আজ প্রায় বছর সাতেক হলো বন্ধ পড়ে আছে। হলের জানালা, দরজা গুলো ভেঙে গেছে, দুএকটা যাও বা জানালা দরজা আছে তাও কোন মত লুলা হয়ে জানালার চৌকাঠের সাথে আটকে রয়েছে কোনমত।
গভীর রাতে ও দিকে তাকালে পোড়া বাড়ির মত লাগে। মনে হয় কখন বা জানালা দিয়ে কোন বিভৎস মুখ বেড়িয়ে আসে! তারপর গলা কাটা কোন মাথা দেয়াল বেয়ে নেমে আসে নীচে, রাস্তায়। আমি পারত পক্ষে রাতের বেলা ওই দিকে তাকাইই না। আজো বাসায় আসার সময় কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে এসেছি।
যাই হোক,
রুমে এসে দেখি আমার বন্ধু আপেল রুমে নেই। মেইন গেটের দরজার সাথে একটা চিরকুট ঝুলানো রয়েছে। তাতে লিখা, "আজ রাতে আর আসতে পারবো না। কষ্ট করে আজ রাত একাই থাক। "
নাহ! একা থাকায় আমার কোন আপত্তি ছিল না। এর আগে মাসের পর মাস একা একা একবাসায় থেকেছি। ওটা কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু সমস্যা টা হয়েছে ইদানীং। মেসে সবাই থাকতেও একা এক রুমে আজকাল ভয় লাগে! সেখানে পুরো মেসে আজ আমি একা। সম্ভবতই গা টা ছমছম করে উঠলো।
কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম, আমি ঘামছি। শুধু ঘামছি তা না, শরীরটাও বেশ ভারী ভারী লাগছে। এ কেমন যেন অন্যরকম অনুভুতি।
রাত কেবল এগারোটা। আর রাত এগারোটা এসব এলাকায় কিছুই না। ছেলে-মেয়েরা রাত বারোটা একটা পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে। তবে আমি কেন ভয় পাচ্ছি?
দূর! এটা কোন কথা হলো! নিজের মনে নিজেই বলে উঠলাম।
বাসার অন্যান্য রুমের দরজা জানালা লাগানো আছে কিনা দেখে নিজের রুমে এলাম। নাহ! খুব ক্ষুধা লেগেছে মনে হচ্ছে। কিন্ত আজ ডাক্তারের কাছে যাওয়ায় রান্না-বান্না কিছুই করা হয়নি। ভাবলাম, পাশেই মাহাবুব মামার ছোট্ট হোটেল টা থেকে কিছু খেয়ে আসি। আসার সময় হোটেল খোলাই ছিলো, এখনো থাকার কথা।
বাসার গেটে তালা মেরে আমি হোটেলের দিকে হাটা ধরলাম। খুব বেশি দূর না। আমার বাসা থেকে এক মিনিটের পথ। কিন্তু একটা মোড় থাকায় দোকান খোলা আছে কিনা ঠিক বুঝা গেল না। আমি হাটা ধরলাম।
কিন্তু আজ কেন জানি, রাস্তাঘাট সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ছেলে পেলে কাউকে দেখছি না। ব্যাপার কি? মনে মনে ভাবলাম। হয়ত আজ একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া তাই কেউ বাহিরে নেই।
রাতও অবশ্য কম হয়নি। এখন রাত ১২ টা ১৩ বাজে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তা সুনসান হওয়ার কথা। এবং তাই হয়েছে।
এদিকে রাস্তার মোড়ের কাছে আসতে না আসতেই রোড লাইট হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল! দূর কারেন্ট টাও গেল বোধ হয়।
চার পাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেছে। কোথায় পা ফেলছি ঠিক বুঝতে পারলাম না। কিছুক্ষন পর চোখ আপনা আপনি আধার সয়ে নিলো। এখন বেশ দেখা যাচ্ছে। মোড় টা পার হতেই দেখলাম, মাহবুবের হোটেল বন্ধ। ধুর! এটা একটা কাম হলো!
এদিকে পেটে যেন রাক্ষস ঢুকেছে। খুব ক্ষুধা পাচ্ছে। যে করেই হোক কিছু খেতেই হবে। তবে এত রাতে আর রান্নার ঝামেলা করতে চাই না।
মাহবুবের দোকানের সামনে দাড়িয়ে ভাবছি, কি করা যায়? কই যাই?
এমন সময় হঠাৎ তিতুমীর হল থেকে একটা চিৎকার শোনা গেল। আমি আসে পাশে কাউকে দেখলাম না। একটু সামনে এগিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম ঘটনা কি! যদিও মনের মধ্যে একটা দুরুদুরু ভাব রয়েছে তবুও এগিয়ে গেলাম।
বলা যায় না, এমনও তো হতে পারে যে, কেউ হয়ত কাউকে মারছে কিংবা এরকম কোন কিছু!!
আওয়াজ লক্ষ্য করে সামনের দিকে একটু এগুতেই হলের তিনতলার একটা জানালা ধপাস করে মাটিতে আছড়ে পড়লো। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম পূর্বের রুমটার দুইটা জানালার মধ্যে একটা জানালা মাটিতে পড়েছে। আর অন্যটা ঝুলছে!
আমি আর ওখানে দেরী করলাম না। তাড়াতাড়ি বাসার দিকে হাটা ধরলাম। আর বাসায় গিয়ে পাশের মেসের কাউকে ডেকে নিয়ে যাবো এইটাই স্থির করলাম।
বলতে গেলে একটু দৌড়েই "নামহীনের" সামনে এলাম। মেসের দরজায় টোকা দেব কিন্তু কোথা থেকে যেন একটা কালো বিড়াল এসে পথ আটকে ধরলো। আমি এগুতে চাইলেই বিড়ালটা আমার দুপায়ের মধ্যে আসতে চাইছে। কিন্তু আমি জানি,
রাতের বেলায় দুপায়ের ফাক দিয়ে বিড়াল যাওয়া ভালো লক্ষন না। এতে মৃত্যুও নাকি হয়। এদিকে ভয়ে আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। আমি যে চিৎকার করবো তাও করতে পারছি না। কেউ যেন আমার কন্ঠ রোধ করে রেখেছে। গলা থেকে যে আওয়াজ বের হচ্ছে তা অন্য কেউ তো দূরের কথা নিজেই শুনতে পাচ্ছি না।
আমার সারা গা থরথর করে কাঁপছে। ঘেমে অস্থির হয়ে যাচ্ছি, যেন এই মাত্র বৃষ্টি হয়েছে আর আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজছি।
বিড়ালটা কিছুতে পথ ছাড়ছে না। বরং সুযোগ পেলে যেন আমার কন্ঠনালী ছিড়ে নেয়। বারবার দাঁত বের করে আমার দিকে দৌড়ে আসছে, আর আমি হাত পা ছুড়ে লাত্থি দিচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
হাত ঘড়িতে ১টা বাজার এলার্ম হলো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। প্রচুর পানি তৃষ্ণা লেগেছে। এদিকে এই নির্জন পথে আমি একা অসহায় হয়ে আছি। বুক ফেটে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছি না।
নিজের জানা যত দোয়া দরুদ ছিল, সব একে একে শেষ করেছি প্রায়। এবার চোখ বন্ধ করে জোড়ে করে আল্লাহকে ডাকলাম!
হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করো।
তারপর চোখ খুলতেই দেখি সামনে কিছু নেই।
ঘরের এনার্জি বালবটা জ্বলছে। মাথার উপর স্ববেগে সিলিং ফ্যানটা বনবন করে ঘুরছে। কিন্তু আমি ঘেমে অস্থির। পিঠের নিচে বিছানা ভিজে চুপসে গেছে। আর হার্ট বিট এতটাই দ্রুত ও জোড়ে জোড়ে হচ্ছে যে, নিজেই নিজের হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছি।
হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে জগ ভর্তি পানি ঢকঢক করে গিলে খেলাম।
যাক বাবা, বাঁচলাম!!!
কিন্তু মোড়টা এখনো পাচ্ছি না কেন?
ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে শুয়ে আছি।