সুন্দরবনের ভয়ংকর

আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি হতে চললো, তবু এবার খুব একটা বৃষ্টি হচ্ছে না। আমি আমাদের ছাদের ঘরে বসে বাইরে আকাশ দেখছিলাম।

আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি হতে চললো, তবু এবার খুব একটা বৃষ্টি হচ্ছে না। আমি আমাদের ছাদের ঘরে বসে বাইরে আকাশ দেখছিলাম। এমন সময় সিঁড়িতে দুপদাপ শব্দ শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, দেখি পুহুল ঘরে ঢুকছে। সে হাজির হয়েই বলল “ঝটপট চল। অরন্যদাদু এসেছেন। তোকে ডাকতে বললো আমায়। ” অরন্যদাদু আসলে পটাই এর দাদু। পেশায় ছিলেন একজন ফরেস্ট রেঞ্জার। দীর্ঘ চাকরিজীবনে ঘুরেছেন অনেক জায়গায়। মাস চারেক পর পর আসেন পটাইদের বাড়ি আর তখন আমাদের দারুন দারুন গল্প বলে শোনান। এর আগে যখন এসেছিলেন তখন সমুদ্রগড়ের এক জমিদারবাড়ির দারুন এক ভৌতিক অভিজ্ঞতা আমাদের শুনিয়েছিলেন। 

 

পটাইদের বাড়ি পৌছতে না পৌছতেই বড়ো বড়ো ফোঁটায় বৃষ্টি নেমে গেল। বাড়ির সামনের বারান্দাটায় ইতিমধ্যেই বাকিরা এসে উপস্থিত হয়েছে। সজনে খুব খেতে ভালোবাসে, এবং যথারীতি একটা চিপসের প্যাকেট থেকে চিপস বার করে খেতে লাগলো। একটা চেয়ার আছে যেটায় দাদু এসে বসবেন। আমি আর পুহুল দুজনে বসার সাথে সাথেই কফির কাপ হাতে নিয়ে অরন্যদাদু এসে বসলেন। বসার পর, আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তারপর। খবর কি সবার? পড়াশোনা কেমন চলছে? ’ 

 

‘ভালো চলছে দাদু’ 

 

 ‘বাঃ! বাঃ! বেশ, তারপর সজনে তুই কি নতুন কোনো খাবার খেলি? নাকি পুরনো গুলোই জাবর কাটছিস। ’

 

সজনে চিপস চিবোতে চিবোতেই বললো, ‘আমি কি গরু যে জাবর কাটবো’। পটাই এইসময় পিছন থেকে কিছু একটা বলে সজনে কে রাগিয়ে দেওয়ার তাল করছিলো, কিন্তু আমরা ওকে মানা করলাম। 

 

অরন্যদাদু কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘চল, তাহলে তদের আজ একটা অন্য গল্প শোনাই

 

‘তখন আমার পোস্টিং ছিলো সুন্দরবনে। চামটায় আমার অফিস। জানিস তো, আমাদের ভারতবর্ষে সুন্দরবনের মতো সুন্দর জিনিস আর একটাও নেই। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন সুন্দরবনে বাঘের উপদ্রব এখনের থেকে অনেক বেশি। আমার এলাকায় শুধু বাঘ নয়, তার সাথে চোরাশিকারিরাও ভীষণ জ্বালাচ্ছে। কিছুদিন আগেই এখানের একটা বেশ পরিচিত পুরনো বাঘের মৃতদেহ আমরা পেয়েছিলাম। 

 

চোরাশিকারিদের গুলিতে বাঘ টা মারা যায়। কিন্তু গার্ডরা এসে যাওয়াতে ওরা দেহটা ফেলেই পালিয়ে গেছিলো। তা, একদিন অফিসে বসে বিকেলে কাজ করছি; এমন সময় একজন গার্ড এসে বললো, ‘স্যার। আপনার ফোন এসেছে। বড়োসাহেব ফোন করেছেন’। ‘ চামটা অঞ্চলের বড়োকর্তা অসীম গাঙ্গুলি বেশ রাশভারি মানুষ। কাজে একটু গাফিলতি দেখলে ভীষণ খুঁতখুঁত করেন। আমি তড়িঘড়ি গিয়ে ফোন ধরলাম। ফোনে বড়োসাহেব আমাকে জানালেন যে দলটা সেদিন ওই বাঘ টাকে মেরেছিল চর মারফত খবর এসেছে যে তারা আজ তেঁতুলবাঁকির চরে থাকবে সবাই। আমি যেন একদম দেরি না করে সেখানে পৌঁছে যাই। আর ওদের গ্রেফতার করি। আমি জানিয়ে দিলাম যে একটু পরেই বেরচ্ছি। ’দাদু এই পর্যন্ত বললেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই একটা কানফাটানো আওয়াজ করে বাজ পড়লো কাছেই কোথাও। আর পটাইদের সি এফ এল লাইটটা দপ করে নিভে গেল। লোডশেডিং। মেঘের জন্যে অনেক তাড়াতাড়ি অন্ধকার নেমে এসেছে আজকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পটাই এর দিদি এসে একটা বড়ো বাটিতে করে মুড়িমাখা আর একটা দেওয়ালগিরি রেখে গেলেন। দাদুও চেয়ার থেকে নেমে এসে একমুঠো মুড়ি মুখে দিয়ে আবার শুরু করলেন। 

 

 ‘তারপর ফোন পাওয়া মাত্রই তো আমি দু জন ফরেস্ট গার্ড সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। একটা খাল ধরে মিনিট খানেক চলার পরেই আমাদের লঞ্চ এসে কালিন্দী নদীতে পড়লো। এইসময় নদীতে বেশ জল থাকে, তাই আমাদের লঞ্চ জলের ঢেউয়ে বেশ দুলতে লাগলো। ততক্ষণে সন্ধে হয়ে গেছে, চাঁদের হালকা আলো এসে পড়েছে নদীর জল আর দু পাশের ঝোপ ঝাড়ের ওপর। এরকমভাবে, প্রায় মিনিট কুড়ি চলার পর একটা অপেক্ষাকৃত সরু খালে আমরা ঢুকলাম। এটাই কুমিরমারির খাল। তেঁতুলবাঁকির চর এর শেষেই। এই তেঁতুলবাঁকির চরের খুব একটা সুখ্যাতি নেই। এখানে বাঘের উপদ্রব বেশ ভালোই। দিনের বেলা এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়ই দেখা যায় কোন না কোন দ্বিপে পতপত করে উড়ছে এই বাদা অঞ্চলের সবথেকে ভয়ানক নিশান, একটা লাঠির ডগায় আটকানো একটা ছেঁড়া শার্ট বা গেঞ্জির টুকরো। ’ 

 

 আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদু, এই চিহ্ন টা কেন সবথেকে ভয়ানক। ’ দাদু বললেন, ‘আসলে কি জানিসতো ওখানের মানুষদের জীবন খুব একটা সহজ নয়। এই নিশানটা একদিকে যেমন ভীষণ কষ্টের সেরকম আবার সাবধানের ও। আসলে কি বলত; যদি কোন মানুষকে কোন দ্বিপে বাঘে নিয়ে যায় বা মেরে ফেলে তাহলে তার দলের সাথীরা তার একটা কাপড়ের টুকরো লাঠির ডগায় আটকে সেটাকে পুঁতে দেয়। তার মানে এখানে বাঘে মানুষ মেরেছিল, ’  

 

 ‘তা শোন তারপর, সুন্দরবনের অনেক দ্বীপেই অনেক ভাঙ্গাচোরা কুঠিবাড়ি আছে জানিস। বেশিরভাগই হ্যামিলটন সাহেবের আমলে তৈরি। এই তেঁতুলবাঁকির চরেও একটা আছে। চোরাশিকারিদের সেইখানেই পাওয়া যেতে পারে এই আশায় আমরা সেটার দিকেই এগোলাম। চারিপাশে বুনো হেতাল, গরান এর ঝোপ তার ভেতরেই, সন্ধের অন্ধকারে একটা প্রাচীন জন্তুর মতো দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা। দরজা-টরজার কোন বালাই নেই। আমরা খুব সাবধানে, যথাসম্ভব শব্দ না করে ভেতরে ঢুকলাম। কিন্তু, বাড়িটা পুরো ফাঁকা। চোরাশিকারি কেন কয়েকটা ইঁদুর, চামচিকে ছাড়া আর কিছু নেই। আমরা এটা দেখে বেশ একটু দমে গেলাম। তাহলে কি আমরা যে আসবো এটা ওরা আগের থেকে জেনে গেল। যাকগে, এতটা এসেছি যখন অপেক্ষা করেই যাই। 

 

 তিনজন মিলে একটা ঘরে বসলাম ঘাপটি মেরে। আমার সঙ্গে যে দুজন গার্ড ছিল তাদের একজনের নাম বিকাশ প্রামানিক আর একজনের নাম ইসমাইল। বিকাশ আগে ছিল বাউলে, তার একমাত্র ছেলে কে বাঘে নিয়ে যায়। তারপর সে ফরেস্টের চাকরিতে যোগ দেয়। ইসমাইল আমাদের লঞ্চ এর ড্রাইভার। সন্ধে গভীর হতেই জঙ্গলের চেহারা পাল্টে গেলো। বাইরের গাছপালার ভিতর থেকে নানা পোকামাকড় আর ঝিঁঝিঁর শব্দ আমাদের কানে আসছে। দূরে কোথাও হরিণ ডেকে উঠলো শুনতে পেলাম। টর্চ জ্বেলে ঘড়িটা দেখলাম একবার, আটটা বাজে। 

 

এই পর্যন্ত বলে দাদু একটু থেমে জল খেলেন কিছুটা। আমরা তখন সবাই ঘন হয়ে বসেছি। ভেজা ঠাণ্ডা হাওয়া দেওয়ালগিরির আলোটাতে একটু কাঁপন ধরিয়ে দিল সাথে আমাদের ছায়াগুলো কেঁপে গেলো। দাদু একটা মৌরি লজেন্স মুখে দিয়ে আবার বলা শুরু করলেন, 

 

‘আমরা তো বসে আছি আর বিকাশ মাঝে মাঝে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে বাইরেটা দেখছে। আমি টাকে মানা করতে যাচ্ছিলাম তখন আমার মনে হোল বাইরেটা বড্ড বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। সব পোকামাকড় এর আওয়াজ যেন চলতে চলতে দুম করে বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিক সেই সময় আওয়াজটা শুনতে পেলাম আমিও। বাইরের খালের জলের ছলাত ছলাত শব্দ ছাপিয়ে আমাদের কানে এলো একটা অস্পষ্ট ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর, কে যেন হাহাকার করে ডেকে যাচ্ছে, ‘ বাবা ! এই তো আমি। তোমার গদাই। আমার কাছে এসো বাবা। 

 

যেন আমাদের আশেপাশের হেঁতাল, গরানের ঝোপের ভিতর থেকে হাওয়া সেই আওয়াজ কে আমাদের কাছে ঠেলে পৌঁছে দিচ্ছে, যেন টাকে দিতেই হবে না দিয়ে তার একদমই উপায় নেই, ইতিমধ্যে বিকাশের দেখি মুখচোখের ভাব বদলে গেছে। সে একবার বাইরের দিকে তাকিয়ে কাকে যেন খোঁজার চেষ্টা করলো তারপরেই, ‘দাঁড়া গদাই আসছি’ বলে ছুটে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে। সঙ্গে সঙ্গে দেখি ইসমাইল ও ‘সর্বনাশ, স্যার শিগগির আসুন’ বলে বেড়িয়ে গেলো। আমি বাইরে এসে দেখি অন্ধকার অনেক বেড়ে গেছে। সমস্ত দ্বীপের সব কিছুর মধ্যে থেকে যেন ওই অশরীরী কণ্ঠস্বর তার সেই ডাক আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, বাবা ! এই তো আমি। আমার কাছে এসো বাবা, এসো। 

 

বিকাশের পিছনে যেতে যেতে আমি ইসমাইল কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গদাই কে? আর বিকাশ ওরকম ভাবে বেড়িয়ে গেলো কেন? ’ ইসমাইল বললো, ‘স্যার, গদাই বিকাশদার ছেলে, ওকে বড়ো মামু নিয়েছিল গতবছর। এ বেগো ভূত স্যার। তাড়াতাড়ি চলেন, নইলে বিকাশদারে বাঁচানো যাইব না। ’ কথাটা শুনে আমার সমস্ত শরীর বেয়ে যেন একটা আতঙ্কের স্রোত নেমে গেলো। যাকে বাঘে মেরে ফেলেছে সেই ছেলে আবার ডাকে কি করে? 

 

 বিকাশ দৌড়েছিল কুঠিবাড়ির পিছন দিকটায়। এ দিকে জঙ্গল বেশ গভীর। সে জঙ্গলে ঢুকে যাওয়ার কিছুটা আগেই ইসমাইল জোরে দৌড়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমি তাদের কাছে যাওয়ার মধ্যেই ইসমাইল বিকাশ কে মাটিতে ফেলে তার ওপর চড়ে বসেছে আর বিকাশ ছটফট করছে। আমি বিকাশ কে জিজ্ঞেস করতে যাব এই সময় আমার চোখ পড়লো সোজাসুজি। আমরা যে জায়গাটায় দাঁড়িয়েছিলাম সেখান থেকে একটু দুরেই গভীর জঙ্গলের শুরু। 

 

 জায়গাটায় অনেক ঝোপঝাড় আর পুরো হাকুচ অন্ধকার। সেদিকে চোখ পড়তেই আমার সমস্ত শরীর যেন আতঙ্কে হিম হয়ে গেলো। ওই অন্ধকারের মধ্যেও স্পষ্ট দেখলাম একটা সুন্দরি গাছের নীচে যেন অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে। ঘন মিশকালো অন্ধকার দিয়ে তৈরি একটা আদিম, ক্রুর অপার্থিব ছায়ামূর্তি আমাদেরকে দেখছে। আমাদের আশেপাশের সেই ডাক কিন্তু তখন ও অবিরাম ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। ইসমাইল ও মনে হয় সেই মূর্তিকে দেখে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল সে সুযোগে বিকাশ তাকে এক ঘুষিতে ছিটকে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি তখন নড়তেই পারছি না। পা দুটোকে অসম্ভব ভারী মনে হচ্ছে। যেন এ আমার নিজের পা নয়। আমার ইচ্ছেতে এ কিছুতেই নড়বে না। বিকাশের আর হাতখানেক মতো বাকি মূর্তিটার কাছে পোঁছতে এইসময় বাঘের গর্জনে পুরো দ্বীপটা কেঁপে উঠলো, আর মুহূর্তের মধ্যে ওই মূর্তিটার পাশ থেকে একটা প্রকাণ্ড বাঘ এসে বিকাশের ঘাড়ে পড়লো আবার পলক ফেলার আগেই তাকে নিয়ে উধাও হয়ে গেল। আর আমার ও চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এল। ’

 

আমরা সবাই তখন এ ওর গায়ে ঘেঁষে বসেছি পুরো। দাদু থেমে যেতেই সবাই বলে উঠলাম, ‘তারপর! তারপর!’ 

 

‘তারপর জ্ঞান ফিরলে দেখি ইসমাইল খাল থেকে জল এনে আমার মুখে চোখে জল দিচ্ছে। ওর হাত ধরে উঠে বসলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছিলো। মূর্তিটা যেখানে ছিল সেদিকে তাকিয়ে দেখি কিছু নেই ফাঁকা, আর ঝিঁঝিঁ ও পোকামাকড়ের ডাক আবার শোনা যাচ্ছে। আমরা বিকাশের দেহ টা অনেক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না কিছু আর। তারপর ফিরে এলাম। ’ 

 

এই পর্যন্ত বলে দাদু চুপ করলেন। বৃষ্টি পড়লেও তার তোড় সেরকম বেশি নয় এখন। হালকা বিদ্যুতের আলোয় এক ঝলক পটাইদের রঙ্গন ফুলের গাছটা দেখতে পেলাম। পটাই জিজ্ঞেস করলো, ‘দাদু বাঘ টা ওখানে ছিল যে তোমরা টের পাও নি? ’ দাদু একটু হাসলেন, বললেন, ‘ তোদের বলেছিলাম তো কিছুদিন আগে আমার এলাকায় একটা বাঘের মৃতদেহ পাওয়া গেছিল। ’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ বললে তো। ’ 

 

‘সেই বাঘটার মৃতদেহ আমি দেখেছিলাম। বাঘটার লেজ ছিল না। হয়তো কোন লড়াই তে বা চোরাশিকারি রাই হয়তো কেটে নিয়েছিল। ’ তারপর একটু চুপ করে থেকে বললেন, যে বাঘটা বিকাশ কে সেদিন তুলে নিয়ে গেলো সেই বাঘটারও লেজ ছিল না। ’ 

 

দাদুর কথা শেষ হতে না হতেই আবার জোরে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো আর কোথা থেকে জানি দমকা একটা হাওয়া এসে নিভিয়ে দিয়ে গেল দেওয়ালগিরিটা। 

পরী আজকাল রাতে ওর একার রুমে ঠিকঠাক ঘুমাতে পারে না, শুধু মনে হয় কেউ যেন সবসময়ই ওর ঘরের মধ্যে বিচরণ করছে, কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ পাই রাতে ঘুমানোর সময়, সেই সময় ঘরের লাইট অন্ করলে কাউকে দেখতে পাই না শুধু অনুভব করা যায়। এতে খুব ভয় করে ওর কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারে না। ..

 

না না এ কোনো রূপকথার গল্পের পরী নয়, আবার কোন আঠেরো বছরের যুবতীও নয়। এ হল একটা বছর পাঁচকের ছোট্ট দুষ্টুমিষ্টি মেয়ে পরিনীতা রায়চৌধুরী। বাড়ির সবাই ওকে পরী নামেই ডাকে। শুধু যে নাম পরী তা নয়, ওই বছর পাঁচেকের ছোট্ট মেয়ে রূপ সৌন্দর্যে অতুলনীয়, কোন রূপকথার গল্পের পরীর থেকে কম নয়। যেন মনে হয় কোনো স্বর্গের অপ্সরী জন্ম নিয়েছে। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ, টিকালো নাক, টানা টানা বড়ো বড়ো চোখ আর মুখে সুন্দর মায়াবী মিষ্টি হাসি। একটু হাসলেই যেন খুব আদর কর

 

কিন্তু পরিনীতার ঠাকুমা মৃনালিনী দেবী, পরিনীতার জন্মানোর পর ওকে দেখে একটুও খুশি হননি। কারণতাঁর একমাত্র ছেলে-বৌমা, পবন আর নীলিমার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়েছে বলে, তিনি একটা নাতি পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু যায় ই হোক অন্যদিকে মৃনালিনী দেবীর মনে একটু খটকা লেগেছিল, পরিনীতার জন্মের পর ওকে দেখে। তিনি ভেবেছিলেন এতো ফর্সা সুন্দরী মেয়ে ওদের বাড়িতে কীভাবে জন্মানো সম্ভব? কারণ ওনাদের বাড়ির প্রত্যেকের গায়ের রঙ এমনকি পরিনীতার বাবা পবনেরও গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ আর মা নীলিমা ফর্সা হলেও এতোটা ফর্সা নয়। কিন্ততার ভাবনাই ছেদ্ পড়ে, নবজাতক শিশু পরিনীতাকে দেখতে আসা কিছু প্রতিবেশীর কথায়তারা এতো সুন্দরী বাচ্চা পরিনীতার প্রশংসা করেন। এইসব দেখে মৃনালিনী দেবীর মন গলে যায় নাতনীর প্রতি। তিনি ধীরে ধীরে পরীকে ভালোবাসতে শুরু করেন। এবং তিনিই তাঁর ছেলে-বৌমার নাম মিলিয়ে অপ্সরী নাতনীর নাম রাখেন "পরিনীতা"। এই ছোট্টো পরী ধীরে ধীরে বাড়ীর সবার প্রাণ হয়ে ওঠে। পরীর জন্মের পর থেকেই রায়চৌধুরী বাড়ি আর্থিক দিক দিয়ে বিরাট উন্নতিকরতে থাকে, পবনের চাকরিতে প্রমোশন হয়। এই জন্য পরীর প্রতি ওর বাবার ভালোবাসা আর বেড়ে যায়, পবন সবসময়ই পরীকে "আমার পরীরানী" বলেই ডাকত। মা-বাবা, ঠাকুমা এবং বাড়ির অন্য সকলের আদরে পরীর শিশু জীবন আনন্দেই কাটতে থাকে। .........এমনি করেই পরী যখন তিন বছরের তখন ওর ভাই ঋতমের জন্ম হয় আর ওর খুশিময় জীবনে ছেদ্ পরে। ঋতমের জন্মের পর থেকেই আদরের পরী সবার এমনকি ওর মা-বাবারও চক্ষুশূল হয়ে উঠতে থাকে দিসবার মুখে শুধু ঋতম আর ঋতম। ওই তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে পরিনীতার ওপর কোনো নজরই নেই কারুর। অযত্নে পরীর সুন্দরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল আর ও ক্রমেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছিল। সবাই দেখেও না দেখার ভান করত পরীকে। শুধু টাইমটা মেনেই খাবারটা খাইয়ে দেয় পরিনীতাকে আর সবসময়ই পরিনীতা উদ্দেশ্য করে বলে, " কেন যে এই মেয়েটা জন্মেছিল কে জানে? ? ফেলে দিতেও পারি নাযে মেয়েটা একদিন মা-বাবার মাঝখানে


Tanvir Arafat

93 Blog posts

Comments