সাহিলা অন্যান্য দিনের মত আজও খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠেছে। ওযূ সেরে ফজরের ছালাত আদায় করে কিছুক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত করেছে। এরপর সে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। তখনও আকাশ ফর্সা হয়নি। চারিদিক থেকে পাখির কলরব ভেসে আসছে। সকালের শীতল হাওয়ায় তার মন ফুরফুরে হয়ে ওঠে। সে এখন দেশের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত। সে প্রাথমিক জীবনে মাদরাসার ছাত্রী ছিল। ছোটবেলা থেকেই সে পর্দার বিধান মেনে চলত। কিন্তু তার বাবা মাথা ঢাকা, ঢিলা-ঢালা পোশাক পরা ও পর্দার বিধান মেনে চলাকে পসন্দ করতেন না। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথীরাও পর্দা করে না। পর্দা করলে শিক্ষকরাও কটূক্তি করেন।
একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তার এক শিক্ষিকা তাকে নেকাব খুলতে বাধ্য করেন। এভাবে ছেলেদের সামনে নেকাব খোলায় সে খুব লজ্জা পায়। শিক্ষিকার এ অন্যায় আচরণে সে ধৈর্য ধারণ করে। বাবাকে বললে বাবা উল্টা তাকেই ধমকায়। সে কেবল আল্লাহ্র কাছে বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হকের উপর অটল থাকার তাওফীক দাও। সে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে কথা বলে না। এমনকি সে তার প্রতিবেশী ছেলেদের সাথেও কথা বলে না। কারণ সে জানে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে কথা বললে এবং তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলে এক পর্যায়ে মন দেয়া-নেয়া হবে; যা এক পর্যায়ে অবৈধ সম্পর্ক পর্যন্ত গড়াতে পারে। এজন্য অনেকে তাকে সেকেলে বলে।
কিন্তু তার ছোট বোন দানিয়া একেবারে তার বিপরীত। সে ছোট থেকেই পর্দা করাকে অবহেলা করত। পর্দা করার ব্যাপারে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন চাপও ছিল না। সে ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার গ্রামের এক লম্পট ছেলে শাদীদ বন্ধুদের নিয়ে তার স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে ছোট হওয়ায় কিছু বুঝত না। সে তার বোন মালিহাকে বললে সে হেসে উড়িয়ে দেয়। সেও পর্দার বিষয়কে গুরুত্ব দিত না। শাদীদ এভাবে রাস্তায় প্রায়ই তাকে বিরক্ত করে। এক পর্যায়ে দানিয়ার কিশোর মনে দাগ কাটতে শুরু করে এবং তার মনে লম্পট শাদীদ স্থান করে নেয়। সে দানিয়ার বাবার মোবাইলে ফোন করে দানিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। তার বাবা বুঝতে পারে যে, কোন লম্পট ছেলে তার মেয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। মেয়ের চালচলনে পরিবর্তন দেখেও দানিয়ার বাবা মেয়েকে কিছু বলেনি।
এদিকে শাদীদের সাথে দানিয়ার সম্পর্ক গভীর হ’তে থাকে। একথা জানতে পেরে বড় বোন সাহিলা বাবা-মা সহ পরিবারের সবাইকে দানিয়ার বিষয়ে জোর পদক্ষেপ নিতে বলে। দানিয়া যাতে পূর্ণ পর্দা করে চলে সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়। কিন্তু পরিবারের কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিল না। দানিয়ার মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসল। সে রাত জেগে বই পড়ে। পরিবারের সবাই যখন ঘুমিয়ে যায় তখন বাবার মোবাইল নিয়ে ভিন্ন এক রুমে গিয়ে বন্ধুর সাথে কথা বলে। অসচেতন বাবা-মা বুঝতে পারে না কী হ’তে যাচ্ছে। সে পরীক্ষা দিতে যায় দূরের একটি শহরে। সে বান্ধবীদের সাথে অবস্থান করে একটি ছাত্রী নিবাসে। পর্দার ব্যাপারে অসচেতন বাবা মেয়ের ব্যাপারে তেমন খোঁজ-খবর নেয় না। তিনি মনে করেন তার মেয়ে খুব ভালো।
এদিকে দানিয়া তার বন্ধুর সাথে প্রতিদিন সাক্ষাৎ করে। তার সাথে পার্কে, বাজারে ও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বান্ধবীরা দেখলেও তাকে বা তার পরিবারের কাউকে কিছু বলে না। কারণ তারা তার প্রতি হিংসাপরায়ণ। তাছাড়া সমাজে তার পরিবারের সুখ্যাতি ছিল। তার বান্ধবীরা চেয়েছিল তাদের পরিবারের ইয্যত-সম্মান বিনষ্ট হোক। পরীক্ষা শেষ করে দানিয়া বাড়ি আসল। বাবা-মা তার মধ্যে আরো পরিবর্তন লক্ষ্য করল। সাহিলাও গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। বাবা-মা দানিয়ার বিষয়ে সাহিলার সাথে আলোচনা করল। সাহিলা পরামর্শ দিল ভালো পাত্র দেখে তার বিবাহ দিয়ে দিতে। কিন্তু বাবার আকাঙ্খা মেয়েকে আরো পড়াশুনা করাবে। সে বড় চাকুরী করবে। সাহিলার পরামর্শ তার বাবা গ্রহণ করল না।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হ’ল। সে ভালো ফলাফল নিয়ে ঊত্তীর্ণ হ’ল। বাবার আকাঙ্খা আরো বহুগুণ বেড়ে গেল। দানিয়াকে মহিলা মাদরাসায় ভর্তি করার জন্য