আঁধারে আলো

সংবাদ লেস্ট্রেড জানাল সেটা এতই গুরুতর এবং অপ্রত্যাশিত যে আমরা তিনজনই প্রায় হতবাক হয়ে

সংবাদ লেস্ট্রেড জানাল সেটা এতই গুরুতর এবং অপ্রত্যাশিত যে আমরা তিনজনই প্রায় হতবাক হয়ে গেলাম। গ্রেগসন চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে অবশিষ্ট হুইস্কি ও জল ঢেলে ফেলল। তার ঠোঁট ঠোঁটের উপর চেপে বসেছে। দুই ভুরু চোখের উপর নেমে এসেছে।

 

‘স্ট্যাঙ্গারসনও!’ সে অস্ফুট স্বরে বলল, ‘ষড়যন্ত্র ঘণীভুত হচ্ছে।’

 

একটা চেয়ার টেনে নিয়ে লেস্ট্রেড বলল, ‘আগেই যথেষ্ট ঘণ ছিল। আমার তো মনে হচ্ছে কোন সমর-পরিষদে ঢুকে পড়েছি।’

 

গ্রেগসন তো-তো করে বলে উঠল, ‘তুমি-তুমি নিশ্চিত জান খবরটা ঠিক?’

 

লেস্ট্রেড জবাব দিল, ‘এইমাত্র তার ঘর থেকে আমি আসছি। ঘটনাটা আমিই প্রথম আবিষ্কার করি।’

 

হোমস বলল, ‘এবিষয়ে গ্রেগসনের মত আমরা এতক্ষণ শুনছিলাম। তুমি কি দেখেছ বা করেছ, সেটা আমাদের জানাতে কোন আপত্তি আছে কি?’

 

চেয়ারে বসে লেস্ট্রেড জবাব দিল, ‘কোনই আপত্তি নেই। খোলাখুলিই স্বীকার করছি, আমি ভেবেছিলাম ড্রেবারের মৃত্যুর সঙ্গে স্ট্যাঙ্গারসন জড়িত। বর্তমান পরিণতি অবশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে আমার সম্পূর্ণ ভুল হয়ে—ছিল। ঐ ধারণঅ নিয়েই আমি সচিবের খোঁজে বেরিয়ে ছিলাম। ওরা সন্ধ্যা সাড়ে আটটা নাগাদ তাদের দুজনকে ইউস্টন স্টেশনে দেখা গিয়েছিল। রাত দুটোয় ড্রেবারকে পাওয়া গেল ব্রিক্সটন রোডে। কাজেই আমার কাছে প্রশ্ন হল, ৮টা ৩০মিঃ থেকে ঘটনার সময় পর্যন্ত স্ট্যাঙ্গারসন কি করছিল এবং তারপরেই বা সে কোথায় গেল—সেটা বের করা। লোকটির বিবরণ দিয়ে লিভারপুলে তার করে দিলাম।তাদের বলে দিলাম, মার্কিন নৌকাগুলোর উপর নজর রাখতে । তারপর ইউস্টনের কাছাকাছি সবগুলি হোটেলও লজিংহাউসে খোঁজ করলাম। দেখুন, আমি চিন্তা করলাম যে ড্রেবার এবং তার সঙ্গী যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে, তাহলে তার সঙ্গী কাছাকাছি কোথাও রাতটা কাটিয়ে পরদিন সকালে আবার স্টেশনে হাজির হবে—এটাই স্বাভাবিক।’

 

হোমস মন্তব্য করল, ‘আগে থেকেই একটা কোন সাক্ষাতের জায়গা হয়তো তারা স্থির করেছিল।’

 

‘তাই। গতকাল সারাটা সন্ধ্যা এই খোঁজেই কাটালাম। কিন্তু কোন ফল হল না। আজ খুব ভোরেই আবার আরম্ভ করলাম। আটটার সময় লিটল জর্জ স্ট্রীটের হ্যালিডেস প্রাইভেট হোটেলে পৌঁছলাম। মিঃ স্ট্যাঙ্গারসন সেখানে আছেন কিনা জানতে চাইলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই সম্মতিসূচক জবাব দিল।

 

তারা আরও বলল, নিশ্চয়ই আপনারই আসবার কথা ছিল। দুদিন যাবৎ তিনি একজন ভদ্রলোকের জন্য অপেক্ষা করে আছেন।’

 

‘তিনি কোথায় আছেন?’ আমি প্রশ্ন করলাম।

 

‘তিনি উপরতলায় শুয়ে আছেন। ন’টায় ডেকে দিতে বলেছেন।’

 

‘উপরে গিয়ে আমি এখনই তার সঙ্গে দেখা করব,’ আমি বললাম।

 

‘ভেবেছিলাম, আমি হঠাৎ উপস্থিত হলে তিনি ঘাবড়ে গিয়ে মুখ ফসকে কিছু বলে ফেলতেও পারেন। ঘর দেখিয়ে দেবার জন্য পরিচারক আমার সঙ্গে গেল। ঘরটা তিনতলায়, একটা ছোট করিডোর ধরে যেতে হয়। ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে পরিচারক নীচে নেমে যাচ্ছিল, ঠিক সেইসময়ে আমি কিছু দেখতে পেলাম যাতে বিশ বছরের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও আমার কেমন মাথা ঘুরে গেল। দরজার নীচ দিয়ে রক্তের একটা লাল ফিতা এঁকে বেঁকে এসে প্যাসেজটা পার হয়ে অপরদিকে দেওয়ালের নীচে বেশ খানিকটা জমে আছে। আমি চিৎকার করে উঠতে পরিচারকটি ফিরে এল। সব দেখে তারও মূর্চ্ছা যাবার উপক্রম। দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। কিন্তু আমরাও কাঁধ লাগিয়ে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লাম। ঘরের জানালা খোলা, আর তারই নীচে নৈশ-পোশাক পরা একটি লোকের দেহ দলা পাকিয়ে পড়ে আছে। লোকটি মৃত। বেশ কিছুক্ষণ হল মারা গেছে, কারণ হাত-পাগুলো শক্ত এবং ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাকে উল্টে দিতেই পরিচারক চিনতে পারল, এই লোকটিই জোসেফ স্ট্যাঙ্গারসন নামে ঘর ভাড়া নিয়েছেন। বাদিকে একটা গভীর ক্ষত হৃৎপিন্ড বিদীর্ণ করে ফেলেছে। তার ফলেই লোকটির মৃত্যু ঘটেছে। তারপরই আসছে এব্যাপারের সবচেয়ে বিস্ময়কর অংশ। নিহত লোকটির উপর কি ছিল আন্দাজ করুন তো।’

 

শার্লক হোমস উত্তর দেবার আগে আসন্ন বিভীষিকার কল্পনায় আমার শরীর শিরশির করে উঠল।

 

সে বলল, ‘রক্তের অক্ষরে লেখা ‘RACHE (রাসে) শব্দটি।’

 

আতংকগ্রস্ত গলায় লেস্ট্রেড বলল, ‘ঠিক তাই।’ কিছুক্ষণ সকলেই চুপ করে রইলাম।

 

এই অজ্ঞাত আততায়ীর ক্রিয়া-কলাপের মধ্যে এমন একটা শৃঙ্খলা অথচ দুর্বোধ্যতা আছে যাল ফলে তার অপরাধ আরও ভয়াবহ রুপ পরিগ্রহ করেছে। আমার যে স্নায়ু রণক্ষেত্রে যথেষ্ট শক্ত ছিল, তাও যেন এই অপরাধের চিন্তায় শিরশির করতে লাগল।

 

লেস্ট্রেড বলতে লাগল ‘লোকটি চোখেও পড়েছিল। হোটেলের পিছনের আস্তাবল থেকে যে গলিটা চলে গেছে সেই পথ ধরে গোশালার দিকে যাচ্ছিল একটি গোয়ালা ছেলে। সে দেখতে পায়, ওখানে সাধারণত যে মইটা পড়ে থাকে সেটা তিনতলার একটা জানালার সঙ্গে লাগানো। জানালাটা খোলা। একটু এগিয়ে ফিরে তাকাতেই সে দেখতে পায় একটা মই বেয়ে নামছে। সে এত শান্তভাবে ও প্রকাশ্যে নেমে এল যে ছেলেটি ভাবল, লোকটি হয় তো ছুতোর বা হোটেলের কোন যোগানদার। সে আরও ভাবল, লোকটা এত সকালে কাজে এসেছে কেন। এ ছাড়া তার সম্পর্কে আর কিছুই তার মনে আসে নি। তার মোটামুটি মনে আছে যে লোকটি লম্বা, তার মুখ লালচে পরনে লম্বা বাদামী কোট। খুনের পরেও কিছুক্ষণ সে ওই ঘরে ছিল, কারণ বেসিনে রক্ত মেশানো জলের দাগ আমরা দেখতে পেয়েছি, সেখানে সে নিশ্চয় হাত ধুয়েছে, আর চাদরে রক্তের দাগ, যাতে সে ইচ্ছা করে ছুরিটা মুছেছে।

 

খুনির বিবরণ শুনে আমি আড়-চোখে হোমসের দিকে তাকালাম, কারণ তার নিজের বিবরণের সঙ্গে এটা হুবুহু মিলে গেছে। তার মুখে কিন্তু উল্লাস বা সন্তুষ্টির চিহ্নমাত্র নেই।

 

সে প্রশ্ন করল ‘খুনিকে ধরবার সূত্র পাওয়া যায় এরুপ কোন কিছুই কি ঘরের মধ্যে দেখনি?’

 

‘কিচ্ছু না। ড্রেবারের টাকার থলিটা স্ট্যাঙ্গারসনের পকেটে ছিল। এটা তো খুবই স্বাভাবিক। কারণ দেনা-পাওনা সব সেই করত। তার মধ্যে আশি পাউন্ড ছিল, কিছুই খোয়া যায়নি। এইসব অসাধারণ অপরাধের উদ্দেশ্য আর যাই হোক ডাকাতি নয়। নিহত লোকটির পকেটে কোন কাগজপত্র বা স্মৃতি-


Rx Munna

447 Blog posts

Comments