পৃথিবীতে অনেক কিছু আশ্চর্য জিনিস দেখা যায় কিন্তু পিতা ও পুত্র দুজনেই বড় সাহিত্যিক হয়ে উঠেছেন এটা বড় একটা শোনা যায় না। এ ঘটনারও ব্যতিক্রম দেখা যায় আলেকজাণ্ডার ডুমার জীবনে। তাদের দুজনের নামও এক। এখানে বাবার কথাই বলব। তিনিই ‘কাউন্ট অব মন্টিক্রিষ্টোর’ বিখ্যাত ফরাসী লেখক।
১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জুলাই এই লেখকের জন্ম হয়। তাঁর জন্মের চার বৎসর পরেই দুর্ভাগ্যবশত তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। কাজেই অতিশয় দুঃখ কষ্টের ভিতর দিয়েই তার বাল্যজীবন কাটে। কিন্তু এই দুঃখ কষ্টের অনুভূতি তার বাল্যকালেই সাহিত্যরচনার অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রথম জীবনে তিনি নাটক রচনা করতে শুরু করেন, পরে উপন্যাস রচনায় হাত দেন। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে তার যুগান্তকারী রচনা ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ প্রকাশিত হয়।
ডুমা তার জীবদ্দশাতেই অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। লোকে তার লেখা পড়বার জন্য ব্যগ্র উৎসুক হয়ে থাকত। তিনি একবার এক ভ্রমণ কাহিনী লেখার বায়না হিসাবে এক কাগজওয়ালার কাছ থেকে বিস্তর টাকা আগাম নেন। স্থির হল তিনি সিসিলি যাবেন বেড়াতে এবং সেখান থেকেই যেমন যেমন দেখবেন, তেমনি তেমনি লিখে পাঠাবেন। কথা ছিল তার সঙ্গে তার শিল্পী বন্ধু জাদিন যাবেন।
আর যাবে জাদিনের নিত্য সঙ্গী কুকুর। কিন্তু কোন কারণে সেই বন্ধুর যাওয়া হল না। ডুমাকে একাই রওনা হতে হল। ডুমা পড়লেন মহা বিপদে। তিনি কাগজওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন শব্দের সংখ্যা হিসাবে। যত বাড়িয়ে লিখতে পারবেন ততই তাঁর লাভ। ডুমা আর কি করবেন, শিল্পী বন্ধুকে ও তাঁর কুকুরকে কল্পনা করেই তিনি দিনের পর দিন মনগড়া ভ্রমণ কাহিনী লিখে পাঠাতে লাগলেন।
সেই কাহিনী খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠল। কিন্তু এদিকে শিল্পী বন্ধু জাদিন পড়লেন মহা বিপদে। কেউ তাকে আর জাদিন বলে স্বীকার করে না। কারণ সবাই জানে জাদিন ডুমার সাথে সিসিলিতে আছেন।
এমন শক্তিশালী ছিল আলেকজাণ্ডার ডুমার রচনা। কল্পনাকে তিনি বাস্তবের চেয়েও সত্য করে তুলতেন লেখনীর গুণে।
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজাণ্ডার ডুমার মহাজীবনের অবসান ঘটে।
*
কাউন্ট অব মন্টিক্রিষ্টো
১.
মার্সেঈ বন্দর।
লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে সেদিন বন্দরটা।
বিদেশ থেকে কোন বাণিজ্য জাহাজ ফিরে আসবার দিন এরকম ভিড় হয়েই থাকে।
খবর এসেছিল, মোরেল অ্যান্ড সন-এর ফারাওঁ নামে জাহাজখানা বন্দরে আসবে ঐদিন। তাই অতো লোকজন। জাহাজের মালিক মঁসিয়ে মোরেলও ছিলেন সেই জনতার মধ্যে। তাঁর আগ্রহাকুল দৃষ্টি তখন দূর সমুদ্রের দিকে প্রসারিত। কখন বন্দরে ঢুকবে জাহাজ–তার মনে কেবল সেই চিন্তা।
কিছুক্ষণ পরেই জাহাজখানা দেখতে পাওয়া গেল।
ধীরে ধীরে জেটির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো ফারাওঁ। জাহাজ তীরে এসে নোঙর ফেলবার আগেই মঁসিয়ে মোরেল জেটির কিনারে গিয়ে