০৬-১০. নিকষকালো আঁধার

নিকষকালো আঁধার-ঘেরা রাত্রি।

দুই দিকে দুইজন বন্দুকধারী সৈনিক এডমন্ডের হাত ধরে

নিকষকালো আঁধার-ঘেরা রাত্রি।

 

দুই দিকে দুইজন বন্দুকধারী সৈনিক এডমন্ডের হাত ধরে একখানা ঘোড়ার গাড়ির ভিতর টেনে তুললো। গাড়ি চলতে আরম্ভ করলো।

 

এডমন্ড গাড়ির জানালার দিকে তাকালো। প্রত্যেক জানালায় লোহার গরাদে। কয়েদীবাহী গাড়ি। এই গাড়িতে উঠেও কিন্তু এডমন্ডের মনে হলো যে মাসিয়ে ভিলেফোর্ট তাকে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবেন। মঁসিয়ে ভিলেফোর্ট দয়ালু। তিনি তো স্পষ্টই বলেছেন, আমাকে কেবল কয়েকদিনের জন্য পুলিশের হেপাজতে থাকতে হবে।

 

সমুদ্রের ধারে এসে গাড়িখানা থামলো।

 

এডমন্ড উঁকি মেরে দেখলো, সামনেই রয়েছে একদল সৈনিক। একজন সৈনিক বন্দুক কাঁধে করে গাড়ির সামনে এগিয়ে এসে বন্দীকে নামিয়ে আনতে বললো।

 

গাড়ি থেকে নামতে নামতে এডমন্ড অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো–এত সৈন্য কেন এখানে?

 

সৈন্যেরা তাকে নিয়ে একটা জেটির ধারে গিয়ে পঁড়ালো। সেখানে একখানা নৌকো বাঁধা ছিল। সেই নৌকোয় তোলা হলো এডমন্ডকে। নৌকো ছেড়ে দিল। সমুদ্রের ঠাণ্ডা হাওয়ায় এডমন্ডের তপ্ত মাথা খানিকটা ঠাণ্ডা হলো। কৌতূহলী হয়ে একজন রক্ষীকে সে জিজ্ঞাসা করলো–আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

 

–একটু পরেই দেখতে পাবে।

 

–তবু…

 

–উপরওয়ালার নিষেধ, তোমার সঙ্গে আমরা কথা কইতে পারবো না।

 

এরপর কিছুক্ষণ আর কারো মুখে কোন কথা নেই। নৌকো এগিয়ে চলেছে ধীর গতিতে। একটা বাতিঘর দেখা গেল। সেটাকে পিছনে রেখে নৌকো চলতে লাগলো।

 

আবার কৌতূহল জাগলো। এডমন্ড আবার জিজ্ঞাসা করলো –এখনি যা জানতে পারব তা একটু আগে আমাকে জানালে এমন কি ক্ষতি হবে? আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

 

এডমন্ডের এই প্রশ্নের উত্তরে রক্ষীদের ভিতর থেকে একজন বলে উঠলো–শুনেছি তুমি নাবিক। মার্সেঈ-এ থাকো। এখনো কি তুমি বুঝতে পারছ না, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তোমাকে?

 

–না।

 

–সে কি! তুমি কি অন্ধ নাকি? ভালো করে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখ দেখি।

 

মিটমিটে তারকাকিরণে রহস্যময় নিশ্চন্দ্র আকাশ! খুব কাছেই অন্ধকারের মধ্যে সাগর-দানবের মত মাথা উঁচু করে পঁড়িয়ে একটা পর্বত-দুর্গ। স্যাতো-দ্য-ইফ। দুৰ্গটাকে এখন কারাগারে পরিবর্তিত করা হয়েছে। এডমন্ড জানতো যে ঐ কারাগারে যাদের রাখা হয়, তারা আর জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। বহু হতভাগ্যের বন্দী-জীবনের অবসান ঘটেছে ঐ কুখ্যাত কারাগারে।

 

মনে মনে শিউরে উঠে এডমন্ড বললো–স্যাতো-দ্য-ইফ! ওখানে আমায় নিয়ে যাচ্ছো কেন? আমি তো কোন অপরাধ করিনি।

 

রক্ষীরা মুখ টিপে হাসলো।

 

–এখানে কি আমার বিচার হবে? এখানে কি কোন বিচারক আছেন?

 

–না। এখানে আছে শুধু কারাধ্যক্ষ, প্রহরী ও তোমার মত কয়েদীর দল–আর আছে খুব চওড়া পাথরের প্রাচীর।

 

–আমাকে কি এখানে বন্দী করে রাখা হবে?

 

–তাই তো মনে হয়।

 

–সে কি কথা! আমাকে যে মঁসিয়ে ভিলেফোর্ট আশা দিলেন…

 

–কে তোমাকে কি আশা দিয়েছে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাবার দরকার নেই। এখন নেমে পড় দেখি। নৌকো ঘাটে এসেছে!

 

অন্ধকারের ভিতর থেকে কয়েকটি ছায়ামূর্তি এগিয়ে এলো নৌকোর দিকে! তাদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করলো– বন্দী কোথায়?

 

রক্ষীরা বললো–এই যে!

 

–ওকে নিয়ে এসো!

 

যন্ত্রচালিতের মত প্রহরীবেষ্টিত হয়ে এডমন্ড চলতে লাগলো কারাগারের দিকে। কিছুক্ষণ চলবার পর সেই লোকটা বললো–দাঁড়াও!

 

এডমন্ড সভয়ে লক্ষ্য করলো, তার সামনেই কারাগারের বিরাট লৌহকপাট।

 

সেই লোকটির আদেশে লৌহকপাট খুলে গেল। এডমন্ডকে ঠেলে ভিতর ঢুকিয়ে দিতেই আবার বন্ধ হয়ে গেল সেই বিরাট কপাট। যেন


Rx Munna

447 Blog posts

Comments