১৬-২০. মার্সেঈ শহর

মার্সেঈ শহরের মেয়রের আফিস।

বড় একখানা টেবিলের পিছনে বসে মেয়র

মার্সেঈ শহরের মেয়রের আফিস।

 

বড় একখানা টেবিলের পিছনে বসে মেয়র আফিসের কাগজপত্র সই করছেন, এই সময় আদালী একখানা কার্ড এনে তার হাতে দিলো।

 

কার্ডখানার উপরে একবার চোখ বুলিয়ে মেয়র বললেন– সাবকো সেলাম দো।

 

একটু পরেই একজন সুবেশ ইংরেজ যুবক সেই কক্ষে প্রবেশ করে মেয়রকে অভিবাদন করলো।

 

মেয়র বললেন–বসুন। আপনিই এসেছেন ‘টমসন অ্যান্ড ফ্রেঞ্চ’ কোম্পানি থেকে?

 

–হ্যাঁ।

 

–কি দরকার বলুন?

 

–আমি এসেছি এখানকার ‘মোরেল অ্যান্ড সন’ নামক জাহাজী কোম্পানি সম্বন্ধে খবরাখবর নিতে। ঐ কোম্পানির দেনা-সংক্রান্ত সব দলিলপত্র আমরা কিনে নিতে চাই।

 

–মোরেল কোম্পানির মত দেউলে প্রতিষ্ঠানের দেনা কিনে কোন সুবিধে হবে আপনাদের?

 

–তা বলতে পারি না। আমার মনে হয় ব্যবসার ক্ষেত্র থেকে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করাবার উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে। যাই হোক, আমরা খবর পেয়েছি যে, আপনার কাছে মঁসিয়ে মোরেল কিছু ধারেন। যদি ইচ্ছা করেন ঐ দেনার দলিলপত্র আমাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন আপনি। মেয়র খুশি হয়ে উঠলেন যুবকের কথা শুনে।

 

তিনি বললেন–কি দাম দিতে চান!

 

–দেনার পুরো টাকা, আর তার উপরে শতকরা ছ’ টাকা হারে সুদ।

 

–বেশ, আমি রাজী আছি। কবে দিতে পারেন টাকা?

 

–আজই। প্রয়োজন হলে এখুনি।

 

যুবকের এই কথায় মেয়র বললেন–বেশ, কিন্তু দলিলপত্রগুলো তো এখানে নেই। আপনি যদি দয়া করে বিকালের দিকে আমার বাড়িতে যান, তাহলে বড় ভাল হয়। যুবকটি তখন মেয়রের বাড়ির ঠিকানা লিখে নিয়ে আর একবার অভিবাদন জানিয়ে চলে গেল।

 

.

 

ঐ দিনই বিকালে।

 

মেয়রের বাড়িতে বসে কথা হচ্ছিল, সেই যুবক আর মেয়রের মধ্যে। মেয়র তার দলিলখানা তখন ‘টমসন অ্যান্ড ফ্রেঞ্চ’ কোম্পানির নামে হস্তান্তরিত করে দিয়েছিলেন।

 

কথায় কথায় মেয়র বললেন–আপনারা আরও দলিলপত্র কিনতে চান কি?

 

যুবকটি আগ্রহের সঙ্গে বললো–নিশ্চয়ই। আমার উপর সেই রকম নির্দেশই দেওয়া আছে কোম্পানির।

 

–বেশ! আমি তাহলে আর একজন ভদ্রলোকের কাছে পাঠাচ্ছি আপনাকে। মোরেল কোম্পানির কাছে মোটা টাকা পান তিনি।

 

–কি নাম ভদ্রলোকের?

 

–মঁসিয়ে-দ্য-বোভাইল। ইনি এখানকার কারাগারসমূহের ইনসপেক্টর-জেনারেল। যদি বলেন তো আমি একখানা চিঠিও লিখে দিতে পারি তার কাছে।

 

যুবকটি খুশি হয়ে বললো–তাহলে তো খুবই ভাল হয়।

 

মেয়র তখন ব্যক্তিগত ভাবে মঁসিয়ে-দ্য-বোভাইলকে একখানা চিঠি লিখে যুবকটির হাতে দিয়ে বললেন–এই চিঠিখানা তাঁকে দিলেই কাজ হবে।

 

যুবকটি মেয়রকে অশেষ ধন্যবাদ দিয়ে চিঠিখানা নিয়ে চলে গেল।

 

পরদিন দুপুরের একটু আগেই যুবকটি মঁসিয়ে-দ্য-বোভাইলের সঙ্গে দেখা করলো। বলা বাহুল্য, তাঁর আফিসেই সে গিয়েছিল।

 

মেয়রের চিঠি পড়ে আর যুবকটির মুখে মোরেল কোম্পানির দেনা কিনে নেবার প্রস্তাব শুনে মঁসিয়ে বোভাইল যেন হাতে স্বর্গ পেয়ে গেলেন। তিনি তখনই বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দিলেন দলিলগুলো নিয়ে আসতে। মোরেল কোম্পানির কাছ থেকে টাকা আদায়ের আশা তিনি একরকম ছেড়েই দিয়েছিলেন। টাকা বড় কম নয়, দু’ লাখ ফ্ৰাঁ। দু’ লাখ ফ্রাঁ ডুবে যাবার কথা চিন্তা করে তার মনে শান্তি ছিল না। তা ছাড়া তার মেয়ের বিয়েও ঠেকে যাচ্ছিলো টাকার অভাবে। এই সব কারণে যুবকটিকে তিনি ছাড়তে চাইলেন না। তার ইচ্ছা, ঐ দিনই দলিলগুলো হস্তান্তরিত করবেন, কারণ যুবকটি বলেছিল যে সুদ-সহ পুরো টাকা দিয়ে দলিলখানা কিনবার মত নগদ টাকা তার সঙ্গেই আছে।

 

দলিল আসতে দেরি হচ্ছে দেখে যুবকটি তাঁর সঙ্গে গল্প গুজব আরম্ভ করলো। কথায় কথায় সে বললো–আচ্ছা, স্যা-দ্য-ইফ কারাগারের রেকর্ড আপনার এখানে আছে কি?

 

–নিশ্চয়ই আছে, কেন বলুন তো?

 

–না, মানে ফারিয়া নামে এক ধমর্যাজকের রেকর্ডটা দেখবার আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে।

 

–বেশ তো! দেখুন না। আমি এক্ষুণি আনিয়ে দিচ্ছি, স্যাটু দ্য-ইফ কারাগারের রেকর্ড-বই।

 

এই বলেই একজন আর্দালী ডেকে স্যাটু-দ্য-ইফ কারাগারের রেকর্ড-বইখানা নিয়ে আসতে হুকুম দিলেন তিনি।

 

আৰ্দালী বইখানা নিয়ে এলে সিয়ে-দ্য-বোভাইল বললেন– এই নিন স্যাটু-দ্য-ইফ কারাগারের রেকর্ড-বই। আপনি ইচ্ছামত দেখুন।

 

যুবকটি তখন সেই রেকর্ড-বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা জায়গায় এসে হঠাৎ থেমে গেল। সেই পৃষ্ঠার মাথায় লেখা ছিল–

 

“এডমন্ড দান্তে, অপরাধ রাজদ্রোহ ও ষড়যন্ত্র!

 

নেপোলিয়ানের সঙ্গে গুপ্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। ভূগর্ভস্থ নির্জন কারাকক্ষে রাখতে হবে একে।”

 

যুবকটি তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে


Rx Munna

447 Blog posts

Comments