ক্ষুদ্র গুহা

ক্ষুদ্র গুহার মধ্যে নেফার হামাগুড়ি দিয়ে মিনটাকার কাছে গেল এবং তাকে তার বাহুতে টেনে নিল। সে তার

ক্ষুদ্র গুহার মধ্যে নেফার হামাগুড়ি দিয়ে মিনটাকার কাছে গেল এবং তাকে তার বাহুতে টেনে নিল। সে তার সাথে কথা বলার ও তাকে সান্ত্বনা সাহস দিতে চেষ্টা করল। কিন্তু দুজনেরই মাথা কাপড়ে ঢাকা এবং বাতাসে সব শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে। মিনটাকা তার মাথা নেফারের কাঁধে রাখল এবং তারা একে অপরকে আঁকড়ে ধরল সজোরে। গর্জনরত অন্ধকারে তারা যেন সমাহিত। প্রত্যেকটি গরম শ্বাস তারা কাপড়ের মধ্য দিয়ে হেঁকে টানছে এবং প্রতিবারে একটু করে দম নিচ্ছে তারা, যা সাদা সুন্দর বালি তাদের ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে যাওয়াটা প্রতিরোধ করছে।

 

কিছুক্ষণ পর বাতাসের গর্জন তাদের বধির করে দিল এবং তাদের অন্য অনুভূতিগুলো ভোঁতা করে দিল। কোন বিরতি বা ক্লান্তি ছাড়াই তা বয়ে চলল অবিরত। সময়ের আবর্তন পরিমাপ করার জন্য তাদের কোন পথ ছিল না, শুধুমাত্র তাদের চোখের পাতার মধ্যে দিয়ে আলো ও আধারের ন্যূনতম সচেতনা ব্যতীত। দিনের আগমন নির্দেশ করতে সেখানে একটা ক্ষীণ আলোর আভা ছিল; যখন রাত নামত তখন তা ঘোর অন্ধকারে বিলীন হয়ে যেতো। নেফার কখনোই এমন পূর্ণ ও অসীম অন্ধকারকে সহ্য করতে পারেতো না যদি সে মিনিটাকার দেহের খুব কাছে থাকতো। অন্য সময় হলে ভাবতো সে হয়তো পাগল হয়ে গিয়েছে।

 

প্রতিবার যখন দীর্ঘ সময়ের জন্যে মিনটাকা তার দিকে ঝুকতো তখন সে তার নিজের বাহু দিয়ে তার বাহু চাপ দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করতো। হয়তো কখনও নেফার ঘুমিয়ে পড়তো কিন্তু সেখানে কোনো স্বপ্ন থাকতো না, শুধুমাত্র খামসিনের গর্জন ও অন্ধকার ছাড়া।

 

আরো অনেকক্ষণ পর সে তার পা নড়াতে চেষ্টা করল, কিন্তু সে পারল না। অজানা আতংকে সে ভাবল সম্ভবত সে তার দেহের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ সে দুর্বল ও মারা যাচ্ছে। সে তার পুরো শক্তি দিয়ে আবার চেষ্টা করল এবং কোনভাবে তার পা ও পায়ের পাতা নড়াল, তখন সে বুঝল সে বালির ফাঁদে পড়েছে যা তাদের আশ্রয়ের জেবরা দেয়ালের ছোট ছোট ফুটো দিয়ে ঢুকেছে। এরই মধ্যে তা তার কোমর সমান উঁচু হয়ে গেছে। তারা ধীরে ধীরে জীবন্ত সমাহিত হতে যাচ্ছে। ঐ কুচক্রী মৃত্যুর চিন্তা তাকে ভয়ে পূর্ণ আতংকিত করে তুলল। তার নগ্ন হাত দিয়ে সে তার পা নাড়নোর মতো সামর্থ হওয়ার জন্য যথেষ্ট বালি সরাল এবং মিনটাকার জন্যে একই কাজ করল।

 

সে বুঝল অন্যরাও জানাকীর্ণ গুহার ভিতরে একই কাজ করছে, বালি দূরে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তা পানির মতো চুয়াচ্ছে। এটা তাদের উপর ঘূর্ণায়মান ধুলার ঘন মেঘ হয়ে ন্যস্ত হয়েছে যেন।

 

এবং ঝড় বেড়েই চলল।

 

দুই দিন তিন রাত ধরে ক্লান্তহীন ভাবে বাতাস বয়েই চলল। এই সময়টাতে নেফার কোনো রকমে তার মাথা ও হাত নড়ানোর মতো যথেষ্ট বালি সরাতে পারল, কিন্তু তার দেহের নিমাংশ শক্ত ভাবে বন্দী হয়ে গেছে। বালি খনন করে সে নিজেকে করে বের করতে পারল না, কারণ সেখানে এমন কোন স্থান ছিল না যে সে বালি সরিয়ে রাখবে।

 

সে একটা হাত তুলে তা বাড়িয়ে আঙুল দিয়ে শক্ত পাথরটার অবস্থান বুঝার চেষ্টা করল এবং বুঝল এটা একটু গম্বুজাকৃতির। ইতোমধ্যে বালি গুহার প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছে যার ফলে আর বালি ঢুকছে না। কিন্তু সে তখনো শুনতে পেল ঝড়টা সীমাহীন ভাবে গর্জন করছে।

 

সে অপেক্ষা করল। মাঝে মাঝে সে অনুভব করল মিনটাকা তার পাশে নিরবে কাঁদছে। নেফার তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল তার বাহুতে আলতো চাপ দিয়ে। যেহেতু বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে ফলে স্থানটি দূষিত, গন্ধময় ও জীর্ন হয়ে গেল। ভাবল শীঘ্রই তারা আর জীবিত থাকবে না, কারণ প্রতিটি নিশ্বাস এখন একটি লড়াই এ পরিণত হয়েছে, তবুও তারা এখন পর্যন্ত জীবিত।

 

পানির থলেতে যতোটুকু অবশিষ্ট ছিল তা তারা পান করে ফেলেছে, তলায় এখন একটু রয়েছে। সবাই এখন প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত। এ গদাগদির মধ্যেও তারা এতটুকু ঘামছিল না, কারণ গরম-শুষ্ক বালি ও বাতাস দ্রুত শুষে নিচ্ছিল তা। নেফার অনুভব করল তার জিভ ধীরে ধীরে মুখের তালুর সাথে আটকে যাচ্ছে। তারপর তা শুষ্ক হতে শুরু করল ফলে তার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াটা কষ্ট সাধ্য হয়ে প্রায় অম্ভব হয়ে পড়ল, বিশাল স্পঞ্জের মতো যেন কিছু তার মুখ পূর্ণ করে রয়েছে।

 

ভয় ও তৃষ্ণায় সে সময়ের বহতা হারিয়ে ফেলল; এবং মনে হল বছর পার হয়ে গিয়েছে। নেফার নিজেকে ইন্দ্রীয় সচেতনহীন অবস্থা থেকে টেনে তুলল যা তাকে ক্রমশ গ্রাস করে ধরেছিল। সে বুঝল কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে। সে বুঝার চেষ্টা করল ওটা কি। কিন্তু তার মনটা ছিল অসাড় ও প্রতিক্রিয়া হীন। মিনটাকা তার পাশে স্থির হয়ে বসে আছে। নেফার তাকে ভয়ার্ত ভাবে চাপ দিল। জবাবে সে নড়াচড়া ও মৃদু কম্পন অনুভব করল।

 

সে এখনো জীবিত। তার দুজনেই জীবত, কিন্তু সমাহিত, শুধুমাত্র নিজেদের দেহের কিছু ছোট অংশ নড়াচড়া করতে সক্ষম।

 

নেফার অনুভব করল আবার তাকে ঘিরে ফেলছে যেন কোন জল কুন্ডলী, বিশাল উন্মুক্ত নদীর মাঝে যার অবস্থান। সে নিজেকে অন্ধকার থেকে জোর করে টেনে তুলল এবং শোনার চেষ্টা করল। কিন্তু সে কিছুই শুনল না যা তাকে জাগিয়েছে। কোন শব্দ ছিল না। খামসিনের হুংকারের উচ্চশব্দ গভীর নিরবতা দিয়ে গেছে। একটা বদ্ধ কবরের নীরবতা, সে ভাবল, এবং ভয় পূর্ণ শক্তিতে ফিরে এল আবার।

 

সে আবার লড়াই করতে শুরু করল, বালি থেকে বের হবার রাস্তা তৈরির চেষ্টা করল। অবশেষে কোন রকমে সে তার ডান হাত মুক্ত করে হাতটা বাড়াল এবং মিনটাকার ঢাকা মাথাটা খুঁজে পেল। সে তার মাথায় হাত বুলালো এবং নীরবতার মাঝেও তার কাতর কণ্ঠের কান্না শুনল। তাকে আশ্বস্ত করতে সে কথা বলার চেষ্টা করল। কিন্তু তার স্ফীত শুষ্ক জিভ তাকে কোনো শব্দ বের করতে দিল না। এর পরিবর্তে সে তখন হাত সরিয়ে হিল্টোকে স্পর্শ করার উদ্দেশ্যে সামনে বাড়ালো, যে তার অপর পাশে বসে আছে। হয় হিল্টো চলে গেছে অথবা তার হাতের সীমার বাইরে আছে, কারণ সে কিছুই স্পর্শ করল না।

 

একটু সময় বিশ্রাম নিয়ে আরেকবার নিজেকে টেনে তুলল নেফার এবং গুহার প্রবেশ মুখের বালি পরিষ্কার করার চেষ্টা করল। কিন্তু ভেতরে অল্প স্থানই ছিল বালুগুলো সরিয়ে রাখার জন্যে। প্রতি বারে এক মুঠো করে সে তা সরাল এবং ধাক্কা দিয়ে তাদের ক্ষুদ্র কক্ষের এক কোনায় রাখল। শীঘ্রই সে তার ডান হাতের সীমার সবচেয়ে দূরে পৌঁছে কাজ করতে


Rx Munna

447 Blog posts

Comments