আজকে যে কথা টা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি এখন কাহিনী টা লিখার সময় রাত ২ টা বেজে ৫ মিনিট ।
সেটা হলো
এই তো আমি সবার সাথে গল্প গুজব করেই ঘুমিয়ে পরলাম,,,
হঠাৎ দেড়টা বাজতেই আমার মোবাইল টা ক্রিংক্রিং করে বেজে চলছে,,
ঘুম ভেঙে গেলো,,,
দেখি পাসের কোথা থেকে যেনো বিড়াল ডাকছে,, ঘরির কাটা কুট-কিট করে বাজছে আলো জালিয়ে চারিদিকে তাকালাম কোথাও কিছুই নেই,,
জানালার পাসে মনে হলো কিছু একটা আছে, জানালাটা খুলবো কি ?
খুলেই থ....... মেরে গেলাম,,
একি?
দুইটা গরু একটা সাদা আর একটা কালো ষাঁড় লড়াই করছে,,,
কিন্তু অবাক হলাম তাদের পা মাটিতে নেই,,,
আমি ঘেমে গেলাম ভাবলাম কাউকে কি ডাক দিবো?
ভাবলাম না,,
আমার মত সাহসী ছেলে এমন চিৎকার দিলে সারা গ্রামের সবাই ভয় পেতে থাকবে,,,
তো লড়াই দেখছি,,,
কিছুক্ষন পরে লড়াই থেমে গেলো আর গরু দুটা চলে গেলো,,,
আমি জানালার পাল্লা হাত দিয়ে টান দিতেই আমার হাত খপ করে ধরে ফেল্লো কে জেনো,,
কালো রঙের আকাশ ছোয়া এক মানুষ,,
তার পাসেই আবার সাদা রঙের আকাশ ছোয়া মানুষ,, সাদাটা কালো রঙের মানুষ কে আমার হাত টা ছারাতে লাগছে,, আর বলছে,, এর হাত তুই ছেরে দে, এই ছেলে তোরি তো উপকার করে চলছে,
আমি ঠিক বুঝলাম না, পরে মাথায় বিষয় টা ধরলো যে,,
মিথ্যা আর সত্য কথা নিয়ে ভৌতিক গল্প লিখে অন্যকে ভয় দেখাইতেছি,
যেটা কিনা আমাদের চির শত্রুরা
মুসলমান দের ধ্বংস করার আর তাদের ইমান হারা করার জন্য এই কাজ গুলি করতো,,,
সাদা লোকটি বল্লো আমরা সবাই জানি এই ছেলে ভিতু নয়, আর মাথায় বেশ বুদ্ধিবল আছে,,
আজ তোমায় আমি বাচালাম,
আশা করি
তুমিও তোমার প্রিয় নবিজীর উম্মতদের জন্য ভালো কাজ করবে,
এই বলে সাদা লোকটা কালো লোকটিকে নিয়ে চলে গেলো,,
এদিকে খেয়াল করলাম, লারার শব্দ (খের) পাশের চুলা থেকে আসছে,,, জানালা বন্ধ করে, ফ্যান বন্ধ করে শব্দ শুনলাম,,
দেখি পাসের বারির ভাবী ধান সিদ্ধ করতে চুলায় আগুন দিতেছে,,,
একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম,, আর ভাবতে লাগলাম, সাদা আর কালো এই দুইটা কে,,,
পরে মনে হলো,, সাদা টা হলো আমার পথ পদর্শক, আর কালো টা হলো আমাকে খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে সব সময়।।
আমার সাথে দুএকটা অতি অলৌকিক ঘটনা না ঘটলে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে, জ্বিন-ভূত বলে কিছু আছে।
এখনো মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে চাইনা। আর এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে ভূত-প্রেতে বিশ্বাস একেবারেই বেমানান। তবে এই পৃথীবিতে এখনো অনেক বিষয় আছে যা অমীমাংসিত। যার কোন সদুত্তর কেউ দিতে পারেনি।
আমার জীবনে তেমনি একটা অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমি অনেককেই এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু কোন যুক্তিসংগত উত্তর পাইনি। আজ তাই সবার কাছে আমি সেই প্রশ্নটা আরেকবার করতে চাই।
তার আগে ঘটনাটা বলি,
মাঘ মাসের কনকনে শীতের রাত। আমি সেদিন রাতের ট্রেনে বগুড়া থেকে বাড়ি ফিরছি। রাত দশটা বিশে রংপুর এক্সপ্রেসে উঠলাম। যেহেতু চাটমোহর স্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস দাড়ায় না তাই বাধ্য হয়ে বড়ালব্রীজের টিকিট কাটতে হলো। বগুড়া থেকে বড়ালব্রীজ পৌছাতে রাত আড়াইটে বেজে গেলো।
ছোট্ট একটা স্টেশন। দু একটা দোকান খোলা আছে। দেখে শুনে এক চায়ের দোকানে বসলাম। আর মনে মনে ভাবলাম, আজ আর বাড়ি যাবো না। স্টেশনেই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তাই আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছি। প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেলো এভাবে বসে থাকতে থাকতে। এদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চারদিকে ঢেকে আসছে। নিজের অযাচিত বোকামির জন্য নিজের কাছেই রাগ হচ্ছে!
মনে মনে ভাবলাম,
দুর! কাল সকালে বের হলেও পারতাম। কি দরকার ছিল অযথা এই রাতে ট্রেনে আসার! না হয় কালকের কাজটা একটু দেরীতেই হত। তবুও তো এই কনকনে শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে এভাবে বসে থাকতে হত না।
এসব ভাবছিলাম, আর নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছিলো। কাউকে গাড়ি নিয়ে আসতেও বলিনি। এমনকি কোন আত্মীয়কে ফোন দেব তারও উপায় নেই। ফোনের ব্যাটারি সারা রাস্তায় ফেসবুক চালাতে চালাতেই ডেড হয়ে গেছে।
অগত্য নিরুপায় হয়ে বসে থাকা আর চা সিগারেট খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্লাটফর্ম এ কিছুক্ষন বসে থেকে সারে তিনটা নাগাদ নীচে বাজারের দিকে নামলাম ঘুরে দেখার জন্য।
কিছুদূর এগুতেই দেখলাম আমার বাড়ির পাশের এক পরিচিত জ্যাঠা এক দোকানে দাঁড়িয়ে পান খাচ্ছে। কাছে যেতেই বলল,
ক্যা বারে, তুমি এত রাতে কোনে থেইক্যা?
আমি কাছের একজন মানুষ পেয়ে কিছুটা উচ্ছাসিত হলাম। যাক তাও নিজের একটা মানুষ আছে।
আমি বললাম, জ্যাঠা, বগুড়া থেকে আসতেছি। আপনি এখানে ক্যা?
জ্যাঠা বলল, আমার মেয়ে আর জামাই আসার কথা ছিল এই ট্রেনে। কিন্তু ওরা তো কেউ আসে নাই দেখতেছি। আমার ফোনডাও বাড়িত রাইখ্যে আইছি তাই ফোন দিবের পারি নাই।
কেবলে দোকানদারের কাছ থেকে ফোন দিয়ে শুনি, ওরা নাকি গাড়ি ফেল করিসে। দেইখসেও রে বা, ক্যাবা কথা হইলো! যাই হোক, ভালোই হইলো তুমাক পায়া।
তা তুমি, বাড়ি যাইবে লায়?
আমি বললাম, হু যাবো তো, কিন্তু এত রাতে গাড়ি পাবোনে কই?
জ্যাঠা হাসি মুখে কইলো, দুর ব্যাটা, আমি একটা সি এন জি লিয়ে আইছি। চল, যাই।
আমি মোটামুটি আনন্দে আত্মহারা। যাক বাবা, বাঁচা গেলো।
নদী পার হয়ে পশ্চিম পাশের বটগাছের কাছ থেকে সি এন জি তে উঠলাম। বিশ্বাস করবেন না, সি এন জি তে উঠে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
এক ঘুম দেয়ার পর কারো ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। দেখি আমার ওই জ্যাঠা।
আমাকে বলল, ব্যাটা, তোমারে বাড়ি পায়া গেছি। নামবা? না হয় আজ আমারে বাড়িতে যাই চল?
আমি চোখ খুলে দেখলাম, আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় সি এন জি দাড়িয়ে আছে। আমি জ্যাঠাকে বললাম,
না, জ্যাঠা, বাড়ি যখন চলে এসছি তখন আর যাবো না। অন্যদিন যাবো।
জ্যাঠা বলল, আচ্ছা বাজান, ভালো থাইকো তালি। আর তোমার আব্বা মাকে বইলো আমার বাড়িতে বেড়ায়ে আসতে।
আমি হ্যা বলে বাড়ির উঠোনে উঠতে শুরু করলাম। ততক্ষণে, সি এন জি মুখ ঘুড়িয়ে বড় রাস্তার দিকে চলা শুরু করেছে।
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে বুঝলাম সবাই ঘুমিয়ে আছে। আমি আম্মার ঘরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে আস্তে আস্তে আম্মাকে ডাকলাম।
আম্মা ঘুম থেকে উঠে এত রাত্রে আমাকে দেখে তো অবাক!
তারপর নানা প্রশ্ন, কিভাবে আসলাম? কই থেকে আসলাম? কার সাথে আসলাম ইত্যাদি।
আমি ঘরে যেয়ে মাকে সব খুলে বললাম।
হঠাৎ করে ঘরের দেয়াল ঘড়িটা বেজে উঠলো। চারটার ঘন্টা শুনে আমি হকচকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম।
কেবল চারটা বাজলো!
আমি দেয়াল ঘড়িতে ভুল আছে ভেবে হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম। চারটা এখনো বাজেনি। কয়েক সেকেন্ড এখনো বাকি আছে!! আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম।
এটা কিভাবে সম্ভব? বড়ালব্রীজ থেকে চাটমোহরে আসতেই যেখানে ৪৫ মিনিটের উপরে সময় লাগে, সেখানে আরো সাত-আট কিলো বেশি রাস্তা মাত্র পনেরো মিনিটে কিভাবে আসলাম? ?
তারপর মা যখন সব কিছু শুনে বুকে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বললেন, আল্লাহর মাল, আল্লাহই হেফাজত করেন। তখন একটু অবাক হয়েছিলাম বটে কিন্তু যখন শুনলাম আমি যে জ্যাঠার সাথে এতটা পথ এসেছি, তিনি গত পাঁচ দিন আগে মারা গেছেন তখন স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
কিন্ত কিভাবে আমি এত অল্প সময়ে এতটা পথ এলাম?
আর
একজন মৃত মানুষ আমাকে কেন সাহায্য করলেন?
তা আজো আমার কাছে অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা!!
কেউ এর সদুত্তর জানলে অবশ্যই জানাবেন। কৃতজ্ঞ থাকবো।
সুমনের মায়ের আত্মাকে যে রাতে হাজির করেছিলাম, সে রাতের মত ভয়াবহ রাত আমার জীবনে ২য় টি আসে নি। এখনো সে কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে।
এই এখনি লোম গুলো খাড়া হয়ে ঊঠেছে। আপনাদের যদি দেখাতে পারতাম, তবে দেখতেন।
নাহ, থাক। আজ সে গল্পটা করবো না। গল্পটা শোনার পর আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে! আর সত্যি বলতে কি, আমারো কেমন কেমন যেন লাগছে! ইচ্ছেই হচ্ছে না সে কথাগুলো আবারো মনে করি! আবার গল্পটা শেষ না করে উঠতেও ইচ্ছে করছে না। যত ভয়ংকরই হোক না কেন, আমার মত তো সবাই এত ভীতু না!
তাহলে শুরু করি, কি বলেন?
১৩ জুন ২০০৯ সাল। তারিখটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আর বার সম্ভবত সেদিন শনিবার ছিল। শনি ও মঙ্গলবার আত্মাদের হাজির করার মোক্ষম দিন। বিশেষ করে এই দুই দিন এরা স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ পেলেই লোকজনকে ভয় দেখায় কিংবা বড় কোন অঘটন ঘটায়।
ছোট বেলা থেকেই আমার দাদীর কড়া নিষেধ ছিল শনিবার আর মঙ্গল বারে যেন বেশি রাত বাহিরে না থাকি। তাছাড়া আমার বাড়ির প্রায় পাশেই ছিল কবিরাজ মালু জ্যাঠার বাড়ি। তিনিও বারবার নিষেধ করতেন। আর নিষেধ করার বড় কারন ছিল, আমার ভূতুরে রাশি।
আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা কিন্তু ভূতুরে রাশির লোকই থাকে আলাদা। হয়ত একই সাথে দুজন রাতের বেলায় হাটছেন, আপনি অনেক কিছুই দেখছেন কিন্তু আপনার সঙ্গী কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এমনও হয়।
আর নিজে এই ভুতুরে রাশির হওয়ায় এইসব আজে-বাজে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে বহুবার।
আর তাই, বাড়ি থেকে কঠিন নির্দেশ ছিল,
ইলিশ, কই কিংবা পুটি মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে ভর দুপুরে বাহিরে যেন না যাই! অথবা তেল পিঠা খেয়ে পানি না খেয়ে বাহিরে বের হওয়া ছিলো অসম্ভব। এত কড়াকড়ির পরেও কখনো সখনো মিসটেক হয়ে যেত।
যাই হোক,
সেই ১৩ জুন, শনিবার ছিল এমনই একটা ভয়ঙ্কর রাত। ভয়ঙ্কর মানে শুধু ভয়ংকর নয়, এ এক বিভিষিকাময় কালো রাত।
ঠিক সেদিন থেকে একবছর আগে সুমনের মা, সুমনের বাপের উপর রাগ করে বিষ খেয়ে মরেছিল। সন্ধ্যার সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলো আর সারা রাত বাড়ি আসে নাই। পরেরদিন নূরুর পুকুরের পাশের এক জমিতে পরে ছিল মহিলার নীল হয়ে যাওয়া লাশ। আর সেদিন থেকে ঠিক উনত্রিশ দিন পর পিয়াঙ্কার মা নাকি একবার সুমনের মাকে পুকুর পাড় দিয়ে হেটে যেতে দেখেছিলো!
যা হোক, সুমনের মা বিষ খেয়ে মারা যাবার তেতাল্লিশ দিনের দিন সুমনের বাবা নতুন একটা বউ নিয়ে এলো। কিন্তু সেই নতুন বউ যে সংসারের শান্তির কাল হয়ে যাবে তা সুমনের বাপ ভাবতেও পারে নি। প্রথম কয়দিন ভালোই চলল। তারপর শুরু হলো নতুন বউয়ের আসল চেহারা প্রদর্শন। ছোট্ট সুমনটা তখন কেবল ছয়-সাত বছরের। কিন্তু ওই ছোট্ট বাচ্চা ছেলেটার সাথে সৎ মা নানাভাবে অত্যাচার করা শুরু করল। সৎ মায়ের আচরনে ক্ষুব্ধ সুমন অভিমান করে বাড়ির বাহিরে তাল গাছ গুলোর নীচে গিয়ে বসে থাকত। আর তেমনি একদিন ভর দুপুর বেলা সুমন তাল গাছের নীচে বসে আছে। এমন সময় পশ্চিমের বাগানটার কাছ দিয়ে ওর আপন মাকে আসতে দেখলো (সুমনের ভাষ্যমতে)। মাকে দেখে আনন্দে আটখান সুমন কিছুদূর দৌরে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে সৎমা আর বাবার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ একে একে তুলে ধরল, কিভাবে তার নতুন মা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে!, কিভাবে বাবা আর আদর করে না, সব সব কথা। ছোট্ট সুমনের কথা শুনে ওর হারিয়ে যাওয়া মা নাকি কেঁদে ফেলল। আর সুমনকে বলেছিল,
"যা বাপ, বাড়ি যা। আমি একটু পরে আসতেছি। "
মহা খুশি সুমন দৌড়ে বাড়িতে এসে সবাইকে ডেকে ডেকে মায়ের সাথে দেখা হওয়ার কথা বলল। কিন্তু কেউই ওর কথায় কর্ণপাত করলো না।
আমার কাছে এসে আমাকে জাপটে ধরে বলল, "ও কাকা, আমি না মাক দেখিছি। "
আমি ওকে কাছে বসিয়ে খুটে খুটে সব জিজ্ঞাসা করলাম। কি দেখেছি, কিভাবে দেখেছে, আর কি কি কথা হইছে, সব কিছু। সাত বছরের ছোট্ট সুমন গটগট করে সব কথা বলে গেল।
আমি ওর কথা পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও একেবারে উড়িয়ে দিলাম না। এমনকি ছোট্ট সুমনকেও কিছু বললাম না। থাক না বেচারা মায়ের ফিরে আসার শান্তনা নিয়ে! তাও যদি ও একটু ভালো থাকে!!
সেদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছিলো উৎপাত। সুমনের নতুন মা যেখানেই যাল, সেখানেই ভয় দেখাত। এমনকি একবার তো, কাঁচা পায়খানার মধ্যে উপর করে পুঁতে ফেলতেও চেয়েছিল। ভাগ্যিস সেদিন হুজুরের বউ(বাড়ির পাশের এক মহিলা) পায়খানা ভাঙার শব্দে এগিয়ে এসেছিলো। তা না হলে সেদিনই সৎমায়ের কেল্লা ফতে!!
তারপর থেকে সৎমা একা একা টিউবওয়েল পারেও যেত না।
কিন্তু কদিন আর এভাবে থাকা যায়। ভয়ে ভয়ে মহিলাটা বাপের বাড়ি গেল কয়েকদিনের জন্য। আর সেই কয়েকদিন আর কেউই কিছু দেখলো না। সুমনের সৎমা কবিরাজের কাছ থেকে তেল, মাদুলি, পানি পড়া প্রভৃতি নিয়ে কয়েকদিন পর আবার এই বাড়িতে ফিরে এলো।
আর কবিরাজের উপর দৃঢ় ভরসায় সব কিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করা শুরু করলো। কিন্তু কথায় আছে, পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে!
একদিন এই নব্য পাখনা যুক্ত মহিলারও শেষ দিন চলে এলো। সুমনের সৎমা এ বাড়িতে এলেও প্রায় মাস খানেক আর কিছুই দেখলেন না। ভাবলেন, সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু এক মাস পর থেকে শুরু হলো নতুন উপদ্রব।
রাত-বিরাতে হঠাৎ করে ঘরের বাহিরে গরুর হেটে চলার শব্দ পাওয়া গেল, কখনো খুব কাছ থেকে কেউ যেন ফিসফিস করে কিছু বলছে এমন শোনা যেত। মনে হত, এই জানালার ও পাশে দাঁড়িয়ে দুজন মানুষ নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে।
এমনকি সৎমা দু একদিন সে কথা শোনার চেষ্টা করল না, তাও না। জানালার সাথে কান পেতে থাকল কিন্তু কিছু বুঝতে পারলো না। বরং ফিসফিসানি শব্দ শোনা যেত শুধু। এভাবে চলতে চলতে একদিন ঝড়-বাতাস ছাড়াই সৎমায়ের গায়ের উপর আম গাছের ডাল ভেঙে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল।
তারপর একদিন দুপুর বেলায় হঠাৎ করে বাড়ির পাশের আম গাছটা কেউ একজন যেন জোরে জোরে ঝাঁকাতে শুরু করলো। সেকি এই ঝাঁকি না সেই ঝাঁকি! না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেন না।
যা হোক, এত কিছু এক বছর ধরে চলতে থাকলো।
একদিন বিকেলে সুমন এলো আমার কাছে। এসে বলল, "ও কাকা, কাকা! মা তো আর আসলো না? "
আমি ওকে কোন উত্তর দিতে পারলাম না। শুধু বললাম, "দূর ব্যাটা! এত ভাবতেছিস ক্যান? মা আসবিনি। "
ভাতিজা সুমন যেন একটু আশা খুঁজে পেল। ওর চোখ মুখ চকচক করে ঊঠলো। তার পর ভো দৌড় দিয়ে বাড়িতে।
সুমন চলে যেতেই আমার একটা চিন্তা মাথায় এলো।
আচ্ছা, সুমনের মা কি চায়? কেন এমন করছে?
আমি জানি এর উত্তর একমাত্র সুমনের মাই দিতে পারে। মাথার মধ্যে দুষ্ট বুদ্ধি চলে এলো। প্লানচেট করবো বলে স্থির করলাম। কিন্তু কিভাবে?
এর আগে একটা কথা বলে রাখি। আমি যখন এস এস সি তে পড়তাম তখন আমার এক বন্ধু সুজন কবিরাজি শিখত। ও আমাকে কয়েকটা কবিরাজির বইও দিয়েছিলো। আর সেই বইয়ের নিয়ম অনুযায়ী সে বয়সে কিছু আমলও করেছি।
স্মশান থেকে পয়সা, হাড় এসব সংগ্রহ করেছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু তার ব্যবহার করার সাহস কখনো হয়ে উঠেনি। আর আমার মা একদিন সেই সব কবিরাজীর বই, ডায়রি খুঁজে পেয়ে নিষ্ঠুর ভাবে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। আর তা পুড়িয়েছে আমার ভালোর জন্যই। সেই পুড়ানোর হাত থেকে দু একটা বই রক্ষা পায়। তেমনি একটা বই নিয়ে আমি আবার পড়া শুরু করলাম। খুব মনযোগ সহকারে পড়ে পড়ে করনীয় কাজ গুলো লিখে রাখলাম।
প্লানচেট করতে অন্তত আরো দুজনকে দরকার। যারা আমাকে শক্তি দিতে পারবে। অনেক ভেবে চিন্তে আমার বাল্য বন্ধু সফিকুল আর জাকির কে সব কিছু খুলে বললাম। ওরা রাজি হয়ে গেল।
তারপর কিছু আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সোয়া সের আতপ চাল, আগরবাতি, শ্মশ্মানের পৌনে দুই টাকা, মরা মানুষের বিছানার চাদরের টুকরা, সুমনের মায়ের কাপড়ের টুকরা ইত্যাদি খুব গোপনে সংগ্রহ করলাম।
তারপর এলো কাঙ্খিত রাত,
১৩ জুন ২০০৯, শনিবার। ঘুটঘুটে কালো এক রাত।
আমরা কজন রাত ১২ টা নাগাদ জাকিরের ঘরে বসলাম। ( জাকিরের বাড়িতে সেদিন কেউ ছিলো না। )
সবাই পুত পবিত্র হয়ে মাটিতে প্লানচেট ছক আকালাম। তারপর বইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যা যা করতে হবে, সবই করলাম। রাত একটা নাগাদ তিনজন মুখোমুখি বসে আছি। আমি প্লানচেটের জন্য কালি ষষ্ঠী মন্ত্র জপ করলাম, তারপর আত্মামাং মন্ত্র।
মন্ত্র জপ করতে করতে নাকে তীব্র ঝাঁঝালো এক গন্ধ পেলাম। তারপর,
সারা ঘর যেন কাঁপতে থাকলো। আমি আগেই ওদের বলেছিলাম, যেন কেউ ভয় না পায়। ভয় পেলে নির্ঘাত মৃত্যু। কিন্তু তারপরেও আমারই ভয় ভয় লাগতে শুরু করতেই নিজের দূর্বলতা টের পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে জাকিরের হাত জোরে করে ধরলাম। আমার অন্যহাত শ্মশ্মানের হাড়টার উপর।
আমি জানি, যতক্ষন আমি দূর্বল না হবো ততক্ষণ আমার কিছুই হবে না।
একটা জোরে করে নিশ্বাস নিয়ে চোখ খুললাম।
একটা ছায়া-মূর্তি দাড়িয়ে আছে আমাদের থেকে একটু তফাতে।
আমি বললাম, "কে? "
ছায়া-মূর্তি হাসতে হাসতে বলল, " কিরে, আমাকে চিনতে পারিস নাই? আমি তোর ভাবি। আমাকে ডাকতেই তো এসব করা, তাই না? হা হা হা "
আমি বললাম, "হ্যা। "
সুমনের মা বলল, " আমি অনেক সুযোগ খুঁজছিলাম, তোর সাথে দেখা করার কিন্তু সুযোগ পাই নাই। আজ পেলাম। "
আমি বললাম, "ভাবি, আসলে তুমি এমন করলা কেন? আর এখনই বা এমন করতেছো কেন? "
এবার সুমনের মা একটু গর্জন করে উঠে বলল, "ক্যান, তুই জানিস না? কেন আমি এমন করেছিলাম? আর কেন করতেছি? "
"সুমনের বাপ ওই মাগীর জন্য আমার গায়ে হাত তুলিছিলো। তাই রাগ কইরে আমি বিষ খেলাম। আর ওই মাগী আমি মরতে না মরতে আমার ঘরে ঢুকিছে! "
"আমার ছোট্ট সাওয়ালের সাথে কি খারাপ ব্যবহারই না করেছে! আমার ছাওয়ালডা আমার জন্যি কাঁদে।
আমি কিছুতেই ওই মহিলাকে থাকতে দেব না। এমন কি কোন মহিলাকেই না। "
দৃঢ় কন্ঠে সুমনের মা কথাটা বলল। রাগে তার কন্ঠ থেকে সাপের মত ফোস ফোস শব্দ হচ্ছে। আমি কিছু একটা বলতে যাবো, ওমনি সুমনের মা বলল,
"তুই আর এসব করিস না। তোর এসব কিছুই না। আমি এমনিই তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, একটা সংবাদ দিতে। "
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কিসের সংবাদ? "
সুমনের মা এবার ফুফাতে ফুফাতে বলল, "আমি আমার ঘরে কাউকে থাকতে দেব না। এমনকি দুনিয়াতে না। "
"ওই মহিলার সময় শেষ হয়ে গেছে। আম ওকে পানির মধ্যে চুবায়া আসিছি। হা হা হা "
"যাহ! আর এসব করিস না কখনো। "
আমি হব্ব-তব্ব লেগে গেলাম। কি? সত্যিই নাকি? ঘর আবার কাঁপতে শুরু করলো। তারপর আর কিছুই নেই। জাকির আর শফিকুল তো ভয়ে চুপসে আছে। শফিকুল কি যেন বলতে চেয়েও বলতে পারলো না!
সুমনদের বাড়ি থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। কি যেন হয়েছে সেখানে!
কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করলাম। যা শুনতে পেলাম, তারপর তিনজন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেলাম ঘটনার আকষ্মিকতায়।। এত দ্রুত সব ঘটে গেল ভাবতেই পারছি না তখনও।