মাস্টারমশাই মাস্টারমশাই....
ছুটতে ছুটতে এসে এইটুকু বলেই হাঁফাতে থাকে ইসমাইল।
সবাই বলে স্কুল মাস্টারী সবথেকে সুখের চাকরি। সে যে কত সুখের চাকরি, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন হলধরবাবু। ইউনিট টেষ্ট, মিডডে মিল, তারপরে এটা আবার বোর্ডিং স্কুল; সবসময়েই কাজের চাপ। সামনের সপ্তাহে ছেলের বিয়ে তাও ছুটি পাননি। ফোনেই গিন্নির সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরে নিচ্ছিলেন। কথার মাঝে ইসমাইল এসে পড়ায় বাধ্য হয়ে কথা থামাতে হল।
হেডস্যার যে যথেষ্ট রাগী সে কথা সব ছাত্ররাই জানে। হলধরবাবু তাঁর রাগী গম্ভীর গলাতে ইসমাইলকে শুধান,
-কি হলো, মাঠে বাঘ বেরিয়েছে নাকি! এমন ছুটতে ছুটতে আসার কি হলো?
তখনও হাঁফাচ্ছে ইসমাইল। দুটো ঢোক গিলে মুখ কাঁচুমাচু করে বলে,
-নতুন ছেলেটা....
এইটুকু বলেই থেমে যায় ইসমাইল।
-নতুন ছেলেটা কি করেছে?
এক ধমক লাগান হলধরবাবু।
এবার আঙুল তুলে পুরনো হোস্টেলবাড়িটার দিকে আঙুল তোলে ইসমাইল। বলে,
-ওখানে ঢুকেছে ছেলেটা।
আঁতকে ওঠেন হলধরবাবু।
-তোরা ছেলেটাকে বলিসনি, ওখানে কারও ঢোকা বারণ আছে।
-আমরা কেমন করে জানব মাস্টামশাই যে ও ওখানে ঢুকবে। আমরা সবাই মাঠে ফুটবল খেলছিলাম। হঠাৎ দীনেশ খেয়াল করে ছেলেটা দোতলার বারান্দাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সবাই ওকে ওখান থেকে চলে আসতে বললাম কিন্তু ও ভেতরে ঢুকে গেল। এখনও বেরিয়ে আসেনি!
হলধরবাবু আজ প্রায় উনিশ বছর আছেন এই স্কুলে। তখন ঐ বিল্ডিংটাই ছাত্রদের হোস্টেল ছিল। সেবার এক কালবৈশাখী ঝড়ের রাতে বাজ পড়ে হোস্টেলের একটা অংশ পুরো ভেঙে পড়ে। কয়েকজন ছাত্র মারাত্মক রকমের আহত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল একজন ছাত্র। মুখটুকু বাদে শরীরের একটা অংশ বিশ্রীভাবে ঝলসে গিয়েছিল।
আজ বারো বছরের বেশি হয়ে গেল, এখনও সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে শিউড়ে ওঠেন হলধরবাবু।
তারপর বছর খানেক ঐ বিল্ডিং অমন অবস্থাতেই পড়ে না। হোস্টেলের ছেলেদের স্টাফ কোয়াটার্সে সরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর থেকে যতবার ঐ বিল্ডিং সংস্কারের চেষ্টা হয়েছে, একটা না একটা অঘটন ঘটেছে। দোতলা অবধি তো কেউ পৌঁছাতেই পারেনি। শেষ অবধি ভূতুড়ে বিল্ডিং নাম নিয়ে বিল্ডিংটা ভাঙাচোরা অবস্থাতেই পড়ে আছে।
ঐ নতুন ছেলেটা তো সদ্য কদিন হলো ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছে। ওর বাবা-মা দুজনেই কিভাবে যেন মারা গেছে। জ্যাঠা এসে ভর্তি করে দিয়ে গেছেন। উনি বলেছিলেন অবশ্য, ছেলেটি বড়ো দুরন্ত। কিন্তু এই ক'দিনে তো ছেলেটিকে বেশ চুপচাপই মনে হচ্ছিল। আর ভেবে কি হবে! এখন ভালোয় ভালোয় ঐ ছেলেকে ভূতুড়ে বিল্ডিং থেকে বের করে আনতে পারলে হয়। নাহলে কি কৈফিয়ত দেবেন ওর বাড়ির লোকের কাছে! শুধু কি বাড়ির লোক! পান থেকে চুন খসলেই পার্টি থেকে মিডিয়া, কেউ ঝাঁপিয়ে পড়তে বাকি থাকবে না।
স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন বিকালেই তো ছেলেরা ঐ মাঠে খেলা করে। ঐ ছেলের এই সন্ধের মুখে ঐ ভাঙা বিল্ডিংএ ঢোকার কি দরকার পড়ল কে জানে! আজকালকার ছেলেপিলেগুলোই বড্ড বেয়ারা। আর দেরি না করে ইসমাইলের সাথেই ঐদিকে পা বাড়ায় হলধরবাবু।
অন্য ছেলেরা সব মুখ কাঁচুমাচু করে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। হলধরবাবু বিল্ডিংএর দিকে এগোতে গিয়েও থমকে যান। গতবার এক মিস্ত্রি জোর করে ঢুকেছিল বিল্ডিংএ, ঘরের জিনিসপত্তর বের করে আনবে বলে। কিন্তু কি হলো, সবার চোখের সামনে সুস্থ মানুষটা মুখে রক্ত উঠে মরে গিয়েছিল। ডাক্তার ডাকার সময়টুকু অবধি পাওয়া যায়নি।
খানিক পিছিয়ে আসেন হলধরবাবু।
-যা তো, স্টাফ কোয়াটার্স থেকে স্যারদের ডেকে নিয়ে আয়।
হলধরবাবু ছাড়াও আর দুজন স্যার থাকেন এখানে। একা কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার থেকে সবাই মিলে ভেবে কাজটা করাই ভালো। হলধরবাবুর মুখ থেকে কথাটা বের হতে না হতে দুজন ছেলে ছুট লাগায়। হলধরবাবু হাঁক পাড়েন,
-রামদীনকেও ডেকে আনবি।
স্কুলের দারোয়ান কাম নাইট গার্ড রামদীন। পেটানো চেহারা, ভয়ডরও খুব একটা নেই। এমন সমস্যায় তো রামদীনের মতো মানুষকেই সাথে দরকার।
ছেলেটা ভিতরে কি করছে কে জানে! সাড়াশব্দও তো নেই। মরে ফরে গেল না তো!
-না স্যার মরিনি, এই তো আমি।
চমকে ওঠেন হলধরবাবু। আরে ভূতের মতো দুম করে এ ছেলে উদয় হলো কোথা থেকে? এখনি তো সামনে কেউ ছিলনা। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ধমক দিয়েই জিজ্ঞাসা করেন,
-এই বিল্ডিংএ কেন ঢুকেছিলে! তুমি জানো না এখানে ঢোকা বারণ?
-কেন স্যার কি হয়েছে এই বিল্ডিংএ?
ছেলেটার কথায় কি ছিল কে জানে, কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না হলধরবাবু। তার বদলে সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা ব্যাখ্যা করতে লাগেন।
-ছেলেটা সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল স্যার?
বারো বছর আগের সেই ঝলসানো মৃতদেহটা আবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে হলধরবাবুর। এতো বছর পরেও যেন ভয়ে শিউড়ে ওঠেন উনি।
সামনে দাঁড়ানো নতুন ছেলেটাকে হাসতে দেখে মাথায় আগুন জ্বলে যায় হলধরবাবুর। বাজখাঁই গলাতে জিজ্ঞাসা করেন,
-হাসির কি হলো?
ছেলেটা তার পুলওভারটা খুলে ফেলে। দেখুন তো স্যার, এর থেকেও বেশি পুড়েছিল?
চমকে ওঠেন হলধরবাবু। কি বীভৎসভাবে পোড়া শরীরের বামদিকটা। এতো সেই বারো বছর আগের বাজ পড়ে ঝলসে যাওয়া ছেলেটাকে দেখছে মনে হচ্ছে। আকাশে মেঘ তো ছিল না, তবু খুব জোরে বিদ্যুতের চমক আর মেঘের গর্জন। কাছাকাছি কোথাও বোধহয় বাজ পড়ল।
ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে হলধরবাবুর। উনি পিছন দিকে জোরে ছুটতে লাগেন। ঐ তো বঙ্কিমবাবু আর দয়ালবাবু আসছেন।
দয়ালবাবুই জিজ্ঞাসা করেন,
-ছেলেরা কি বললো, কিছুই তো বুঝতে পারলাম না। কে ঢুকেছে ঐ ভূতুড়ে বিল্ডিং এ?
বঙ্কিমবাবু বলছেন,
-ওরা বলছে নতুন ছেলেটা নাকি ঐ ভূতুড়ে বিল্ডিংএ ঢুকেছে। কিন্তু ওর জ্যাঠা আমার মোবাইলে ফোন করেছিলেন, ওর ঠাকুমা অসুস্থ তাই ওকে নিতে আসবেন আগামীকাল। ছেলেটাকে আমার ঘরে ডেকে পাঠিয়ে সেই কথাটাই বলছিলাম। ওতো আমার ঘরেই ছিল।
আপনি নিজে দেখেছেন? এই ছেলেদের কথার কোন ঠিক আছে নাকি কি দেখতে কি দেখেছে।
-আকাশে এমন মেঘ করেছে এখনও খেলা! খেললেই হবে, পড়তে বসতে হবে না! এখনি যে যার ঘরে গিয়ে ইংরাজী বই নিয়ে বসো। আমি দশ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছি।
দয়ালবাবুর বকুনিতে ছেলেরা সবাই হৈহৈ করতে করতে ফিরে যাচ্ছে হোস্টেলের দিকে।
ছেলেরা কি দেখতে কি দেখেছে হতে পারে। কিন্তু হলধরবাবু একটু আগে নিজে যা দেখেছেন, তা ভুলবেন কি করে! কিন্তু সেকথা বলতে গেলে কেউ বিশ্বাস করবে না। কাউকে কিছু না বলে ধীর পায়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ান হলধরবাবু। মনে মনে ঠিক করে ফেলেন, ছুটি না পেলেও কাল সকালেই মেডিকেল লিভ নিয়ে বাড়ি চলে যাবেন।
আর মাত্র তিনবছর চাকরি আছে। গিন্নীর কথা মতো, এবার বাড়ির কাছাকাছি ট্রান্সফার নেওয়ার চেষ্টাটা করতেই হবে।
আজকে যে ভৌতিক ঘটনা বলবো সেটা আমার নিজ চোখে দেখা। কোনো দিন ভাবতেও পারি নাই এমন কোনো ঘটনার সম্মুখীন হবো, কখন কার কোন বিপদ আসে তা কেউ বলতে পারে না। শহর ছেড়ে আমার মেজো চাচা গ্রামে বাড়ি করেছে, আমার চাচার দুই ছেলে এক মেয়ে, মেয়ে টা সবার ছোট। বড় ছেলের নাম রাফি ছোট ছেলের নাম শাফি, রাফি আমার থেকে ৩-৪ বছরের ছোট তবে ছোট হলেও আমাদের বন্ধুর মত সম্পর্ক।
আমি চাচার বাড়িতে মাসে একবার হলেও বেড়াতে যায়। আমার গ্রাম খুব ভালো লাগে, রাতের বেলা চাঁদের আলোয় গ্রামের রাস্তায় ঘুরতে মজা করতে আমার খুব ভালো লাগে, তাই আমি গ্রামে ছুঁটে যেতাম। একবার শীতে চাচার বাড়ি বেড়াতে গেলাম তখন আমি ইন্টার এ পড়ি সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। আর রাফি তখন ক্লাস নাইন এ পড়ে।
সে বার চাচাদের গ্রামে একটা বড় মেলা হচ্ছিলো, আমি আর রাফি বিকেলে মেলায় ঘুরতে গেলাম। অনেক বড় মেলা অনেক কিছু মেলায় পাওয়া যাচ্ছে, আমরা নাগর দোলা তে উঠলাম অনেক কিছু খেলাম, কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে রাত হয়ে যাবে ভাবতেও পারি নাই। এশার নামাজের যখন আজান পড়লো তখন রাফিকে বললাম রাত হয়ে গেছে এখন চল বাড়ি যাই, রাফি বললো কি যে বলো কেবল এশার আজান দিলো বাড়ি যাওয়া এখনো দেরি আছে, চলো আমরা সার্কাস দেখি। আমিও ওর কথায় কিছু না ভেবে বললাম চল আজকে সার্কাস দেখবো।
কিন্তু সার্কাস দেখা শেষ হলে যে রাত ১২ টা বাজবে তা কল্পনায় করি নাই। মেলা থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করলাম, তখন আমার মনে কেমন যেন ভয় ভয় লাগতে ছিলো কারণ চাচা বাড়ি যে পথ দিয়ে যাবো সে পথে একটা স্মশান ঘাট আর একটা পুরোনো কবর স্থান আছে, বুকটা ভয়ে দুরু দুরু করতে লাগলো। রাফিকে বললাম তোর কারণে এতো রাত হয়ে গেলো ...শীতের রাত আকাশে জোসনার আলোয় দুজন পথ চলছি।
কাঁচা রাস্তার দুপাশে খেজুর গাছ, গাছে রসের হাড়ি ঝুলছে, ধুলো ভরা রাস্তা টা চাঁদের আলোয় চক চক করছে। একেবারে হাটতে খারাপ লাগছেনা আবার কিছুটা ভয় ভয় ও করছে সামনে কি হয়। শ্মশান গেট আর কবর স্থান না পেরুনো পর্যন্ত ভয় কাটছে না। মনে মনে দোয়া পড়ছি আর হেটে চলছি, কিছুটা দূর থেকে শ্মশান গেটের ছোট্ট একটা বাতির আলো চোখে পড়লো, তখন বুঝতে পারলাম সামনে শ্মশান গেট।
আমার ভয় টা আরো বেশি কাজ করতে লাগলো, জীবনে প্রথম এমন ভাবে রাতে শ্মশানএর সামনে দিয়ে যাচ্ছি। দোয়া পড়তে পড়তে শ্মশান এর গেট ভালো ভাবে পার হলাম কিন্তু শ্মশান পার হবার পর পেছনে দেখি একটা বড় কালো কুচকুচে বিড়াল আমাদের পিছু নিয়েছে। আমাদের পিছু পিছু আসছে আর মিঁউ মিঁউ ডাকছে। বিড়াল টা এত কালো ছিল যে শুধু তার চোখ দুটো দেখতে পাচ্ছিলাম, অনেকক্ষণ ধরে বিড়াল টা পিছু লেগে থাকলো।
রাফি ক্ষেপে গিয়ে রাস্তা থেকে কয়েক টা মাটির ঢিল নিয়ে বিড়াল এর দিকে ছুড়তে লাগলো কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম ঢিল একটাও বিড়ালের গায়ে লাগলো না। তখন আরো বেশি ভয় করতে লাগলো আর মনে হলো ইটা হয়তো কোনো বিড়াল না অন্য কিছু, হটাৎ দেখি বিড়াল টি আর আমাদের পিছনে নেই, আর আমরাও তখন পুরোনো কবর স্থান পার হয়ে চলে এসেছি তখন মনে একটু সাহস ফিরে পেলাম।
কিন্তু তার কিছু দূর যেতেই দেখলাম সেই বিড়াল টা আবার আমাদের সামনে এবার আমার খুব ভয় পেলো কারণ এবার বিড়াল টা অনেক বড় দেখতে পেলাম এতো বড় বিড়াল আমি আগে কোনোদিন দেখি নাই, রাফি তখন বুঝে গেছে এটা বিড়াল না অন্য কিছু। রাফি বললো ভাই কোনো দিক তাকাবে না সোজা হাটতে থাকো ভয় করোনা ভাই, হটাৎ যা দেখলাম যা আমার চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারলাম না।
দেখলাম বিড়াল টা সামনের একটা বড় শিমুল গাছে উঠে পড়লো আর অনেকটা বড়ো আকৃতি ধারণ করলো। আমার দৃশ্য টা দেখার পর সারা শরিল কাঁপতে শুরু করলো, রাফিও ভয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে না, মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি আর বলছি আল্লাহ বিপদ টা দূর করে দাও। দুজন পথে দাঁড়িয়ে আছি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছি না যদি বিড়াল টা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে।
বিড়াল টা আমাদের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে, কাছে পেলে যেন আমাদের খেয়ে ফেলবে। হটাৎ কিছু দূর থেকে একটা টর্চ লাইটের আলো দেখতে পেলাম, কে যেন আমাদের দিকে আসছে। লোকটি আমাদের কাছে আসতেই আমাদের দিকে টর্চের আলো মেরে বললো কে ওখানে রাফিরা নাকি, রাফি বললো হ্যা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এলো, দেখলাম আমার চাচা আমাদের খুঁজতে বের হয়েছে।
চাচা রেগে গিয়ে বললো এতো রাতে কোথায় ছিলি তোরা, চাচা কে বললাম ওই দেখো শিমুল গাছে কি,,, চাচা গাছের দিকে টর্চের আলো মারলো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না, চারপাশে টর্চের আলো দিয়ে কোথাও সেই বিড়াল কে দেখতে পেলো না। হাফ ছেড়ে বাচলাম চাচার সাথে বাড়ি তে এসে সব ঘটনা খুলে বললাম।
চাচা সব কথা শুনে বললো আজকে তোমরা অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছো আল্লাহ কে অনেক ধন্য বাদ। এরপর থেকে চাচা বাড়ি গেলেও রাতে শ্মশানআর কবর স্থানের রাস্তার দিকে যাইনা। আল্লাহ কে অনেক শুকরিয়া যে সেদিন চাচাকে আমাদের খুঁজতে পাঠিয়েছিল। ঘটনাটি আজও আমায় ভীত করে।
মামী আজ আসি আবার একদিন আসবো'' এসব বলে আমি আমার মামার মেয়েকে নিয়ে আমার বাড়ি ফিরতে যাবো এমন সময় মামি পিছু ডেকে বললেন '' তোর দাদা কে পাঠাচ্ছি দাড়া। "
-" না গো মামি লাগবে না। " বললাম আমি কিন্তু ওটাই হলো আমার কাল। আমি আর বোন হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি আমার বাড়ি। বেশি দূর নয়। কিন্তু কিভাবে পথ টা বেড়েই চলেছে বুঝতে পারছি না। আমার বোন আমার থেকেও বুদ্ধিমতী সেও কিছু বুঝতে পারছে না।
"কি হবে এবার? " মনে মনে বললাম। জানি না আর কোনো উপায় আছে কিনা।
-"ওই দেখ দিদি সিংহ দুয়ার এর মত কিছু দেখি। " সামনের দিকে আঙুল তাক করে বলছে।
-" কি বলিস সিংহ দুয়ার? আবার এখানে? কই দেখি? " বলে ওর আঙ্গুল অনুসরণ করে দেখতে দেখি সত্যি একটা সিংহ দুয়ার কিন্তু এখানে কি করে এলো। কিছু না ভেবে আমরা ঢুকে গেলাম সিংহ দুয়ার এর মধ্যে। ঢোকার ইচ্ছা ছিলো না, তবুও ঢুকে গেলাম। ঢুকতে দেখি যা ভেবছিলাম সেরকম নয় ভিতর টা। ভেতর টা পুরো ভাঙ্গা কোথাও বলি খসে পড়েছে। আবার কোথাও দেখি উপরে ছাদ এর কোথাও কোথাও ভাঙ্গা।
"কি ওটা? দেখ দিদি কি ওটা? " বোনের কিছু চোখে পড়েছে যেনো। সেই দিকে আমিও তাকায়।
"সত্যি তো! কেমন উপরে ছাদের কিছুটা অংশ কাঠের তৈরি। ওটা খোলা যাবে ওটা? আবার সামনে দেখছি আর পথ নেই। " সব কিছু দেখে আমি বলি।
"ওই দেখ দিদি একটা সিড়ি দেখছি ওটা দিয়ে ওঠা যাবে কি? "বোন সিড়ির দিকে তাকিয়ে বলে।
"হ্যাঁ তাইতো! দেখ তো ওটা দিয়ে ঠেলা দিলে উপরের রাস্তা টা খোলা যায় কিনা? " আমি বোনের চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখে বলি। তারপর আমরা ওই সিড়ি দিয়ে জোরে জোরে কাঠেতে মারলাম। দেখি কিছুক্ষন পর দেখি খুলে গেছে। আমরা সিড়ি টা দার করাই। ভাবছিলাম ওটা দার করানো যাবে না তবু দেখি দিব্যি দাড়িয়েছে। সিড়ি দিয়ে বোন আগে উঠেগেলো আমিও ওঠার চেষ্টা করলাম করলাম। আমার হাত পা কাপছে। ভয় লাগছে এই বুঝি পরে গেলাম। দেখি আমি উঠে যেতে পারলাম। উপরে উঠে দেখি আরও একটা ঘরে চলে এসেছি। কিন্তু এটা তো বাইরে দিয়ে চোখে পড়েনি। ভালো করে লক্ষ্য করতে বুঝলাম ওটা আমারই বাড়ির আমার দাদার ঘর। কিন্তু এভাবে কীকরে এলাম।
"এই দিদি দেখ তোর বাড়ি চলে এলাম। " ভালো করে দেখে বুঝতে পারে বোন। তবু আমার মনের খিটকা গেলো না। হটাৎ আমরা শুনতে পাই খুব জোড়ে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ। পেছনে ঘুরে তাকায়। দেখি দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দৌড়ে যায় দরজার কাছে। দেখি আর সেটা খুলছে না। আমরা জানলার কাছে যাই। আমি জানলা দিয়ে খুব জোড়ে জোড়ে চেঁচিয়ে পাশের বাড়ির লোক কে ডাকছি দরজা খুলে আমাদের মুক্তি দিতে। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। হঠাৎ জানলার ধার থেকে দুটো শিখল এসে বেধে যায় বোনের হাত। আমার হাতেও বাঁধতে আসছে কিন্তু তার আগেই আমি সরে যায়। তখন দেখি শব্দ করে দরজা খুলে যায়। আমি দৌড়ে এ ঘর থেকে ও ঘরে যাই কোথাও হাত দিচ্ছি না ভয়ে যদি আমিও বন্দী হয়ে যায়। এমন সময় মার গলা শুনি। কিন্তু কোথায় মা আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমাকে সজোরে কেউ ঠেলছে। তারপর আমার চোখ খুলে যায়। বুঝতে পারি ওটা দুষ স্বপ্ন। তবু সেই ভয় এখনও কাটছে না আমার।