মায়াবী টান

একটু পর বাসায় পৌছে গেলাম,বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিলাম,তারপর আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো,ভিতরে ঢুকতেই আম্মুর প্রশ্ন..! <

মাহফুজ,আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন বাসায় যাও,আর আমি জারাকে ঠিক করি বলে আমি বাসার দিকে রওনা দিলাম,

 

একটু পর বাসায় পৌছে গেলাম,বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিলাম,তারপর আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো,ভিতরে ঢুকতেই আম্মুর প্রশ্ন..!

 

আম্মু,কিরে মাহফুজ জারার সাথে তোর কি হইছে..? জারা বাসায় এসে কাদতে কাদতে উপরে চলে গেলো..!

 

মাহফুজ,কিছু হইনি আম্মু,সাধারন একটা ব্যাপার নিয়ে রাগ করছে,ও ঠিক হয়ে যাবে,

 

আম্মু,ওহহ ঠিক আছে,

 

তারপর আমি রুমে চলে গেলাম,গিয়ে দেখি জারা রুমে শুয়ে আছে,আমি কিছু না বলে ফ্রেস হতে চলে গেলাম,তারপর নিচে গিয়ে খেয়ে আসলাম,

 

খাওয়ার পর্ব শেষ করে আবার রুমে চলে আসলাম,পাগলিটা এখোনো একইভাবে বিছানায় শুয়ে আছে,এতোক্ষন আমি বাসায় এসেছি একবারও আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি,

 

বুঝলাম পাগলিটা আমার উপর অনেক রাগ করে আছে,আমিও পাগলিটার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম,আমি শোয়ার পরে জারা আমার থেকে একটু দুরে সরে গেলো,বাব্বাহহহ এতো অভিমান আর রাগ একসাথে জমা করে রেখেছে..?

 

থাক এখন আর ওকে বিরক্ত করবো না,একটু পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে,এভাবে ওর পাশে শুয়ে থাকলাম,এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেলো,তারপর শোয়া থেকে উঠে বসলাম,দেখি পাগলিটা ঘুমিয়ে গেছে,তাই ওকে আর ডাকলাম না,

 

তারপর ফ্রেস হয়ে বাইরে গেলাম একটু ঘুরতে,কিন্তু ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে না আজকে,প্রত্যেকদিন জারাকে নিয়ে ঘুরতে যায় তো,আজ জারা নাই তাই ভালো লাগছে না,অনেকসময় আনমনে ঘুরলাম, তারপর সন্ধ্যার দিকে বাসায় চলে আসলাম,

 

বাসায় এসে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম,কিন্তু জারাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না,কই গেলো মেয়েটা,বেলকনিতে গেলাম কিন্তু সেখানেও নাই,

তারপর মনে পরলো জারার মন খারাপ থাকলে ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে,

 

তারপর আমিও ছাদে গেলাম জারা আছে নাকি দেখতে,ছাদে গিয়ে দেখি জারা ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে,

তখন আমিও জারার কাছে গেলাম,গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম,

 

জারা পিছন ঘুরে আমাকে দেখে ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো,

 

জারা,তুই কোন সাহসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস..? যা গিয়ে ওই মেয়েটাকে জড়িয়ে ধর,আমার কাছে এখন কেনো এসেছিস..?

 

মাহফুজ,জারা তুমি ব্যাপারটা ভুল বুঝতেছো,মেয়েটা শুধু মাত্র আমার বন্ধু,

 

জারা,হা এখন তো আমাকে এসবই বুঝাবি,আমিই ভুল করে ছিলাম তোকে ভালোবেসে,

 

মাহফুজ,ঠাসসসস ঠাসসস করে জারাকে দুইটা চড় মেরে দিলাম,ওই তোকে কতোবার বলবো যে আমি কোনো রিলেশনে নাই,মেয়েটা আজই কলেজে নতুন এসেছে,তাই ওর সাথে কথা বলতেছিলাম,তখন থেকে একই কথা বলে যাচ্ছিস,আমাকে কি তোর একটুও বিশ্বাস হয় না..? এতোটায় খারাপ ভাবিস আমাকে,

 

প্রচন্ড রাগের জন্য এক নিঃশ্বাসে সব গুলো কথা বললাম,জারার দিকে তাকিয়ে দেখি মুখে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,মুখটা একদম লাল হয়ে গেছে,আসলে রাগের জন্য বোধ হয় চড়টা জোড়েই মারা হয়ে গেছে,

 

মাহফুজ,জারা আমার দিকে তাকাও,

 

জারা,কান্না করে দিছে,

 

মাহফুজ,এই জারা আমার দিকে তাকাতে বলছি কিন্তু..? না হলে কিন্তু এবার খারাপ হয়ে যাবে,

 

জারা,এবার সোজা আমাকে জড়িয়ে ধরলো,কেদে কেদে বলছে মাহফুজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও,আমি বিষয়টা বুঝতে পারি নাই,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তাই তুমি যখন ওর হাত ধরে ছিলে আমি সেটা মেনে নিতে পারি নাই?

 

মাহফুজ,আমি সেটা বুঝতে পারছি আমার পাগলিটা,হা এখন আর একটুও কাদবে না,জারার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিলাম? হা এবার একটু হাসো তো দেখি,জানো তো তোমার হাসি আমার অনেক ভালো লাগে?

 

আমার কথা শুনে জারা হেসে দিলো,আর তখন আমি ওর হাসি দেখে অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম,একটু মেয়ের হাসিতে যে এতটা মাদকতা থাকতে পারে, সেটা জারাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না, তারপর জারাকে কোলে করে নিয়ে রুমে চলে আসলাম,

 

তারপর রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম,কারন কালকে আবার কলেজে যেতে হবে,জারার সাথে খুনসুটি করতে করতে রাতে ঘুমিয়ে গেলাম,

 

সকালে জারার ডাকে ঘুম ভাংলো,তারপর ফ্রেস হয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসলাম,ল্যাপটপ টা অন করতেই তো আমার চোখ খুশিতে জলজল করে উঠলো,কারন আমি বিদেশে যে ভার্সিটিতে পড়ার জন্য আবেদন করেছিলাম,সেখানে আমাকে সিলেক্ট করে নিয়েছে,

 

আসলে আমার অনেক দিনের ইচ্ছা যে আমি দেশের বাইরে গিয়ে স্টাডি করবো,আর আজকে সেই সপ্নটা পুরন হলো আমার,কি যে খুশি লাগতেছে কি আর বলবো,

 

যাই হোক তারপর সকালের নাস্তাটা সেরে জারাকে নিয়ে কলেজে চলে গেলাম,কলেজে গিয়ে দেখি তায়েবা একা একা বসে আছে,তারপর জারাকে তায়েবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম,ভালো কথা হলো তায়েবাও জারার সাথে একই ইয়ারে পরে,আর ডিপার্টমেন্ট টাও এক,

 

তারপর ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আমি ক্লাসে চলে আসলাম,আজকে স্যার এসে সবাইকে কিছু নোট দিলে গেলেন,২ টা ক্লাস করে বাইরে চলে আসলাম,তারপর দেখি মাঠের মাঝখানে জারা আর তায়েবা বসে গল্প করতেছে,

 

আমিও ওদের সাথে যোগ দিলাম,অনেক্ষন কথা বার্তা বলে দুপুরে বাসায় চলে আসলাম,তারপর রুমে গিয়ে শাওয়ার নিলাম,খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম,

 

ঘুম একেবারে বিকালে ভাংলো,উঠে দেখি জারা আমার বুকের উপর শুয়ে আছে,তারপর জারাকে ডাক দিতেই ঘুম থেকে উঠে গেলো,তারপর দুজনে ফ্রেস হয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসলাম,

তারপর রুমে চলে গেলাম,

রাতে খাবার জন্য আম্মু এসে ডেকে গেলো,

তারপর দুজনে মিলে খেতে চলে গেলাম,সবাই মিলে খেতে খেতে আমি স্টাডির কথাটা বললাম

 

মাহফুজ,আব্বু আমি দেশের বাইরে একটা ভার্সিটিতে আবেদন করছিলাম,আর আজকে ওরা আমাকে সিলেক্ট করছে,কিছুদিন পরেই আমাকে দেশের বাইরে চলে যেতে হবে,আমার কথা শুনে জারাকে দেখলাম মুখটা মলিন করে ফেলছে,

 

আব্বু,সে কিরে এসব কি বলতেছিস তুই,আমাদের ছেড়ে ওই বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করবি..?

 

মাহফুজ,আব্বু আমার অনেক দিনের ইচ্ছা যে আমি দেশের বাইরে লেখাপড়া করবো,তোমরা অবশ্যই না করবে না,

 

আব্বু,সেটাতো বুঝলাম কিন্তু জারা মা এতোদিন কিভাবে একা একা থাকবে,

 

আব্বু কথাটা বলার পর জারা মন খারাপ করে রুমে চলে গেলো,

 

আব্বু,দেখলি তুই জারা তোর কথা শুনে চলে গেলো,তুই তো দেশে থেকেই ভালো ভার্সিটিতে পরতে পারিস..?

 

মাহফুজ,দেখো আব্বু আমি যা বলেছি সেটাই ফাইনাল,আর জারাকে আমি বুঝিয়ে বলবো বিষয়টা,

 

আব্বু,ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস,

 

তারপর খেয়ে দেয়ে রুমে চলে আসলাম,জারাকে রুমে দেখতে পাচ্ছি না,নিশ্চয় ছাদে গেছে,তাই আমিও গেলাম,গিয়ে দেখি জারা মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে,তখন আমি গিয়ে জারাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম,

 

জারা,দেশের বাইরে কি না গেলে হয়না..? আমি এতো দিন কিভাবে একা থাকবো,

 

মাহফুজ,মাত্র তো তিনটা বছর,দেখতে দেখতে চলে যাবে,আর আমি তো তোমাকে প্রতিদিন এই ফোন করবো,কোনো সমস্যা নাই,

 

জারা,না তারপরও আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না,তুমি বিদেশে যাবে না এটাই ফাইনাল,

 

মাহফুজ,জারা আমাকে যেতেই হবে,কারন এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছা,

 

জারা,তুমি যাবে না,আমি তোমাকে যেতে দিবো না,আর এটাই ফাইনাল,না হলে আমি কিছু একটা করে ফেলবো,

 

মাহফুজের প্রচন্ড রাগ হয়ে যায় জারার কথা শুনে,আমি বিদেশে যাবো আর এটাই ফাইনাল, বলে মাহফুজ পিছনে সরে যেতেই ছাদ থেকে পিছলে যায়........

 

 

#পর্ব_৮_এবং_শেষ

 

মাহফুজ,জারা আমাকে যেতেই হবে,কারন এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছা,

 

জারা,তুমি যাবে না,আমি তোমাকে যেতে দিবো না,আর এটাই ফাইনাল,না হলে আমি কিছু একটা করে ফেলবো,

 

মাহফুজের প্রচন্ড রাগ হয়ে যায় জারার কথা শুনে,আমি বিদেশে যাবো আর এটাই ফাইনাল, বলে মাহফুজ পিছনে সরে যেতেই ছাদ থেকে পিছলে যায়,

 

মাহফুজ নিচে পরে যেতে গেলে জারা মাহফুজের হাত ধরে ফেলে,তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,

(পাঠকরা তো কতো কিছু ভেবে ফেলেছেন,যে মাহফুজ মরে যাবে,এই সেই? আরে ভাই আমি মারা গেলে গল্প লিখবো কে?)

 

জারা,আমি তোমাকে কখোনোই আমার জীবন থেকে হারাতে দিবো না,সব সময় আগলে রাখবো,আর আমি বুঝতে পারছি যে তুমি বিদেশে পড়ালাখা করবে,সো আমি তোমাকে যেতে দিবো,তবে অনেক গুলা শর্ত আছে,

 

মাহফুজ,তো আমার কলিজাটা,শর্তগুলো একটু শুনি?

 

জারা,১ ঘন্টা পর পর আমাকে ভিডিও কল দিতে হবে,সবসময় আমার কথা মনে করবে,কোনো মেয়ের দিকে ভুলেও তাকাবে না,মাথা সবসময় নিচু করে রাখবে,ভালো করে লেখাপড়া করবে,

 

মাহফুজ,আর কোনো শর্ত বাকি আছে নাকি?

 

জারা,হা আছে মনে পরলে বলবো?

 

তারপর জারার সাথে রুমে চলে আসলাম,রাত অনেক হয়ে গেছে তাই শুয়ে পরলাম,

সকাল বেলায় জারার ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেলো,তারপর ওয়াসরুমে গেলাম ফ্রেস হতে,

 

ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসলাম,তারপর ইন্টারনেটে ঢুকে দেখি সেই ভার্সিটি থেকে আমার ফর্ম টা পুরন করে দিয়েছে,আগামি মাসেই আমাকে চলে যেতে হবে দেশের বাইরে,মনটাও ভালো হয়ে গেলো কারন অনেক দিনের স্বপ্ন পূরন হবে?

 

তারপর খাবার খেতে নিচে গেলাম,দেখি সবাই বসে আছে,আমি যেতেই খাওয়া শুরু করলো,

খাওয়ার এক পর্যায়ে আব্বু বললো,

 

আব্বু,মাহফুজ তোর ভার্সিটির কি খবর,যেটাতে তুই এপ্লাই করছিলি,

 

মাহফুজ,হা আব্বু ওরা ফর্ম পূরন করে দিয়েছে,আগামী মাসেই আমাকে চলে যেতে হবে,

 

আব্বু,ওহহহ ঠিক আছে,তাহলে এই কদিনে সবকিছু ঠিকঠাক করে নে,সময় তো আর বেশি নাই,

 

মাহফুজ,হা আব্বু

 

তারপর খাবার শেষ করে রুমে চলে গেলাম,আমার পিছু পিছু জারাও আসলো,রুমে এসে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলাম,জারাও তৈরি হয়ে নিলো,

 

তারপর দুজনে মিলে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম,কিছুক্ষন পর কলেজে চলে আসলাম,তায়েবাকে দেখলাম কলেজ গেট দিয়ে ঢুকছে,জারাকে ওর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ক্লাসে চলে গেলাম,

 

প্রথম ক্লাস টা করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে চলে গেলাম,

 

মাহফুজ,মে আই কাম ইন স্যার..?

 

প্রিন্সিপাল,হা মাহফুজ ভিতরে আসো,তো বলো কি প্রয়োজনে আসলে,

 

মাহফুজ,আসলে স্যার আমি দেশের বাইরে পরতে চলে যাচ্ছি,তাই এই কলেজে থেকে টিসি এর সার্টিফিকেট লাগবে,আমি আগামী মাসেই চলে যাচ্ছি,

 

প্রিন্সিপাল,অভিনন্দন তোমাকে,আমি অনেক খুশি হলাম যে তুমি দেশের বাইরে চান্স পেয়েছো,আমি তোমার টিসির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি,

 

মাহফুজ,ধন্যবাদ স্যার বলে বাইরে চলে আসলাম,তারপর জারাকে ফোন করে ক্যাম্পাসে আসতে বললাম,

 

একটু পর জারা আর তায়েবা একসাথে আসলো,তারপর সবাই মিলে একসাথে বসলাম,

 

তায়েবা,ভাইয়া আপনি বলে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন..?

 

মাহফুজ,হা যাচ্ছি বাট তোমাকে কে বললো,

 

তায়েবা,কে আবার জারা বলছে আমাকে,

 

মাহফুজ,জারার দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি আর কয়জনকে বলেছো বলবে আমাকে?

 

জারা,মাত্র তায়েবাকেই বললাম?

 

তারপর আরো কিছুক্ষন গল্প করে কলেজ থেকে বাসায় চলে আসলাম,বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলাম,তারপর একটানা ঘুম দিলাম,

 

বিকালে ঘুম ভাংলে ল্যাপটপ নিয়ে ভর্তির কাজ করতে লাগলাম,এভাবেই আমার সময় কাটতে লাগলো,দেখতে দেখতে ১ মাস পার হয়ে গেলো,এই ১ মাসের মধ্যে জারা আমাকে অনেক কেয়ার নিয়েছে,সবসময় আমার পাশে পাশে থেকেছে,

 

আমার যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেই জন্য জারা সবসময় দেখভাল করছে,এভাবেই কখন যে সময় ফুরিয়ে যাওয়ার দিন চলে এসেছে বুঝতেই পারিনি,

 

হা আজকে দুপুরেই আমার ফ্লাইট,সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে আমাকে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য,জারা তো সেই রাত থেকে আমাকে উপদেশ দেওয়া শুরু করছে,আমি কখন খাবো,কখন গোসল করবো,কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না? তারপর আরো কতো কিছু যে বললো অতো মনে নাই?

 

সময় দেখতে দেখতে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো,এখন আমার পরিবার সহ এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে আছি,আস্তে আস্তে আমার যাওয়ার সময় হয়ে আসছে,

 

আব্বু আম্মুর থেকে এখন বিদায় নিয়ে জারার কাছে আসতেই, আমাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেদে দিলো,

 

জারা,আমি এতোদিন তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো,

 

মাহফুজ,আরে পাগলি আমি তো মাত্র কয়েকদিনের জন্য যাচ্ছি,আর তাছাড়া আব্বু আম্মু তো তোমার সাথেই থাকবে,আমাকে যখন দেখতে ইচ্ছে করবে তখন ভিডিও কল দিবে,তাহলেই তো হয়ে গেলো,

 

জারা,আমাকে এখোনো জরিয়ে ধরে কাদছে,

 

মাহফুজ,আরে পাগলি এখোনো কাদছো কেন,আমাদের জীবনটাকে সুখি করার জন্যই তো লেখাপড়া করতে যাচ্ছি,তুমি যদি অতো কাদো তাহলে তো এখন যেতেই পারবো না আমি,ওই দেখো বাবা মাও কাদছে,এবার তো একটু হাসো,আমার সময় হয়ে যাচ্ছে,

 

তারপর জারার মাথা উপরের দিকে উঠালাম,চোখের পানিতে পুরো মুখে বন্যা হয়ে গেছে,চোখের কাজল লেপ্টে গেছে,

 

মাহফুজ,এবার একটু হাসো তো তুমি, তোমার হাসি না দেখলে আমি যেতে পারবো না,

 

জারা,তখন হেসে দিলো,সত্যি তখন হাসিতে মুক্তা ঝরতেছিলো,

 

তারপর সবাইকে শান্তনা দিয়ে বিদায় দিয়ে চেকিং পোর্টে চলে আসলাম,সবকিছু চেক করা শেষ হলে বিমানে উঠে গেলাম,কিছুক্ষন পরে আমাদের বিমানটি দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো,

 

বিমানের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি নিচের সবকিছু ছোট ছোট পিপড়ার মতো লাগতেছে?

কম্পিউটার স্ক্রীনে দেখলাম এখন এক হাজার ফুট উপরে আছি,

এই জায়গা থেকে এখন পরে গেলে আপনাদেরকে গল্প লিখে দিতে পারবো না?

 

ইয়ারফোন কানে গুজে দিয়ে গান শুনতে লাগলাম,কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না,হঠাৎ একজন বিমানবালার ডাকে ঘুম ভাংলো,

 

বিমান থেকে নেমে আমার ভাড়া করা হোটেলের দিকে রওনা দিলাম,একটা কার নিয়ে হোটেলে পৌছে গেলাম,সত্যি বলতে শহরটা একদম আমার মনের মতো,হোটেল টাকেও অনেক পছন্দ হলো,

 

যাই হোক হোটেলে নিজের রুমে চলে গেলাম,রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো,তারপর ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসলাম,এখন জারাকে ফোন দিতে হবে,অনলাইনে গিয়ে দেখি জারা আছে,তখন জারাকে ভিডিও কল দিলাম,

 

জারা আমার সাথে কথা বলতে পেরে তো প্রচন্ড আাকারে খুশি,তারপর আব্বু আম্মুর সাথেও কথা বললাম,একটু পর হোটেল থেকে রাতের খাবার খেয়ে এসে শুয়ে পরলাম,

 

সকাল বেলা ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাংলো,ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখি জারা ফোন দিয়েছে,

 

মাহফুজ,হা জারা বলো,

 

জারা,তুমি এখোনো ঘুমিয়ে আছো..? যাও তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নাও,তারপর আবার আমাকে ফোন দিবে,

 

মাহফুজ,ওকে

 

তারপর উঠে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলাম,এখন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনার দিবো,তাই ড্রেস পরে নিলাম,তারপর রওনা দিবো আবার জারার ফোন,

 

জারা,কি করো..?

 

মাহফুজ,এইতো ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছি,

 

জারা,ওকে বায়

 

তারপর একটা ট্যাক্সি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,একটু পর আমার গন্তব্য স্থলে পৌছে গেলাম,ভার্সিটির গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে গেলাম,কারন এতো বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আগে দেখিনি,

 

এরপর প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে সব কাজপত্র জমা দিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করলাম,এরপর কলেজ ক্যাম্পাসে এসে কিছু বাংলাদেশি বন্ধুদের সাথে বন্ধুতব হয়ে গেলো,

 

তারপর সবার সাথে ক্লাসে চলে গেলাম,স্যার আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন,তারপর ক্লাস শুরু করলেন,

 

এভাবেই আমার স্টাডি চলতে লাগলো,দেখতে দেখতে দুবছর পেরিয়ে গেলো,এরমধ্যে সব প্রায় সবসময় পরিবারের সাথে কথা বলেছি,বিশেষ করে জারার সাথে অনেক কথা বলতাম,জারা আমারকে সবসময় উপদেশ দিতো কখন কি করতে হবে,

 

সময় অতিবাহিত হয়ে চলেছে,আমার স্টাডি কম্পিলিট করতে আর মাত্র কয়েক মাস আছে,তারপরেই পরীক্ষা,

 

তবে এতোদিনে এই বিদেশি পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারলেও, মনটা সেই দেশের মাটিতেই পরে আছে,এদেশকে আর ভালো লাগছে না,এখন শুধু নিজের দেশে ফিরে যেতে মন চাচ্ছে,

 

বাবা মা এমনকি জারাও আমাকে ফোন করে দেশে চলে যেতে বলে,কিন্তু এখন কিভাবে যাবো.? গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করার আর মাত্র কয়েক মাস এই আছে,একবারে স্টাডি কম্পলিট করে তারপর দেশের মাটিতে পা রাখবো,

 

দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষা চলে আসলো,আমার পড়াশুনা আগে থেকেই শেষ করে রাখছিলাম,তাই পরীক্ষাতে সব কিছুই সহজভাবে পেয়েছি,একে একে সবগুলো পরীক্ষায় শেষ হয়ে যায়,

 

কিছুদিন পর আমারদের রেজাল্ট প্রকাশ হয়,রেজাল্ট দেখে তো আমি খুশিতে জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা,আমি টপ ১০ জনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছি,

 

আমি তখন এই ফোন করে বাবা মা আর জারাকে জানিয়ে দিলাম,ওরাও অনেক খুশি হয়েছে,এখন সবাই মিলে চাপ দিচ্ছে দেশে ফিরে যাবার জন্য,তারপর সবাইকে জানিয়ে দিলাম যে আমি একমাস পরে দেশে ফিরবো,জারা আমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো,

 

আসলে আমি আগামিকাল এই দেশে যাবার জন্য বিমানের টিকিট কেটে রাখছি,সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ওই কথা বললাম?

 

অনেক আনন্দের মধ্যে দিয়ে আজকের দিনটা কেটে গেলো,সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তাটা করে সবকিছু প্যাকিং করলাম,তারপর এয়ার পোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম,এয়ার পোর্টে পৌছে চেকিং শেষ হলে বিমানে গিয়ে বসলাম,তারপর বিমান দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো,

 

দুপুরের দিকে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে পৌছে গেলাম,এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম,কিছুক্ষন পর বাসায় পৌছে গেলাম,ভাড়া মিটিয়ে বাসার গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম,এই তিন বছরে চারপাশের পরিবেশ অনেকটা পাল্টে গেছে,সব কিছু প্রায় নতুন নতুন লাগছে,

 

বাসার গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখি অনেক সুন্দর একটা ফুলের বাগান করা হয়েছে,সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটেছে গাছ গুলোতে,হঠাৎ পানি পরার আওয়াজ পেলাম,নিশ্চয় গাছগুলোতে কেউ পানি দিচ্ছে,

 

তারপর আস্তে আস্তে সামনে আগাতেই দেখি আম্মু গাছে পানি দিচ্ছে,আস্তে করে পিছন থেকে আম্মুর চোখ ধরলাম,

 

আম্মু,এই জারা এখন এসব করার সময় নয়,প্লিজ ছেড়ে দে,

 

মাহফুজ,আমি তো মনে মনে হাসতেছি☺

 

আম্মু,এই জারা ছাড় তো আমাকে বলে হাত ছাড়িতে নিয়ে পিছন দিকে ঘুরেই আমাকে দেখতে পেলো,হঠাৎ আমালে দেখে কিছুসময় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো,

 

তারপর আমাকে অনেক জোড়ে জড়িয়ে ধরে কান্না খুশিতে করে দিলো,

 

আম্মু,তুই কি জানিস যে আমি কতো অপেক্ষা করতেছিলাম তোর জন্য,তুই বললি একমাস পর আসবি,একবার আমাকে জানিয়ে আসবি না..?

 

মাহফুজ,তাহলে এই সারপ্রাইজ টা কেমন করে দিতাম?

 

আম্মু,হইছে এখন ভিতরে চল,অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছিস,

 

মাহফুজ,জারা কোথায়..?

 

আম্মু,কলেজে গেছে জারা,একটু পরেই চলে আসবে,

 

তারপর আমরা ভিতরে গেলাম,রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম,পুরো ঘরে সব জায়গায় আমার ছবি রাখা,পাগলিটা মনে হয় আমার কথায় সারাদিন ভাবতো? যাই হোক ওকে আজ এই সারপ্রাইজটা দিবো,

 

তারপর নিচে গিয়ে খেয়ে আসলাম,রুমে বসে বসে ফেসবুকিং করতেছিলাম,তখনই কারো পায়ের শব্দ পেলাম,নিশ্চয় রুমে কেউ আসতেছে,

 

তখনই রুমে জারা প্রবেশ করলো,আর হঠাৎ আমাকে দেখে যেন বিশ্বাস এই করতে পারতেছিলো না,প্রচন্ড গতিতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো,

 

জারা,তুমি জানো আমি কতো খুশি হইছি?

 

মাহফুজ,সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো?

 

জারা,খুব ভালো,

 

তারপর জারা ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলো,দুজন বসে গল্প করতে করতে বিকাল হয়ে গেলো,বিকালে বাইরে থেকে ঘুরে আসলাম,প্রায় রাতের দিকে বাসায় ফিরলাম,

 

সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম,তারপর জারাকে নিয়ে রুমে আসতেই দেখি পুরো ঘর ফুল দিয়ে সাজা

নো,ঠিক যেনো বাসর রাত?

 

মাহফুজ,এই রকম করে কে সাজালো,

 

জারা,কেনো আমি সাজিয়েছি,আজ আমরা বাসর রাত করবো বলেই, মাহফুজকে বিছানায় ফেলে দেয়,

 

পাঠকরা চলেন আমরা এখান থেকে চলে যায়,এখানে এখন জয় বাংলা কনসার্ট হবে?আমাদের এখানে থাকাটা ঠিক হবে না।

 

*সমাপ্ত*

ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।


Tanvir Arafat

93 Blog posts

Comments