এনি হাঁটছে। গন্তব্য আপাদত হৃদয়ের বাসা
পর্যন্ত তারপর কোথায় যাবে সে জানেনা।
তিন বছর সম্পর্কের খুঁটিনাটি সব চোখে
ভাসছে। হৃদয়ের সাথে ফোনে কথা
হয়েছে তার। সে শেষ বারের মত দেখা
করবে। এরপর সে বিয়ে করে বৌ নিয়ে
জার্মানে চলে যাবে। ঠিক এই প্রতিশ্রুতিই
দিত এনিকে হৃদয় সবসময়। সারাজীবন
একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছিল হৃদয়।
.
হৃদয় সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এনির চোখ
দিয়ে পানি পরছে। যে হৃদয় তার মন
খারাপের মুখ দেখতে পারতনা সে
হৃদয়ের চোখে আজ এনির চোখের পানিও
পরছেনা। হৃদয়ের হাতে একটা বড় ব্যাগ।
এনিকে দিয়ে বলল।
.
- এখানে তোমার দেয়া সব গিফট আছে।
- আমি গিফট ফেরত নিতে আসিনি হৃদয়।
এতটা ছোট মনের মেয়ে আমি নই। কেন তিন
বছর আমার সঙ্গে রিলেশন করলে?
- লিসেন রিলেশন করলেই যে বিয়ে করতে
হবে এটা কোথায় লেখা আছে? তুমিও মজা
করেছ আমিও মজা করেছি দ্যাটস ইট। দেখ
আমি চাইনা আর এটা নিয়ে কথা হোক।
আজকের পর থেকে আমার সাথে আর
যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা।
- আমি তোমাকে ছাড়া যে কিছু ভাবতে
পারিনা।
- হা-হা-হা। মনে আছে দুই বছর ঘুরেছি
তোমার পিছনে। তোমার ইগো তোমার ঢঙ সব
আমার মনে আছে। শীতের রাতে তিনটা
বাজেও গিয়ে আইসক্রিম দিয়ে আসতে
হয়েছে।
- ছিঃ অগুলা না ভালবাসা ছিল? জনম জনম
পাশে থাকার ভালবাসা?
- ওয়েট সিনেমার ডায়লগ দেয়া অফ কর।
তুমিও একটা ভাল ছেলেকে দেখে বিয়ে
করে নাওনা মানা করেছে কে?
.
এনি চুপ করে আছে চোখের পানিও ফুরিয়ে
আসছে। চোখ দিয়ে পানিও আসছেনা। মনে
ভেজা আকাশের মেঘ নিয়ে বলল আমি
তোমার মত এত ভাল না তো তাই তোমার
খারাপ কামনা করতে পারছিনা। দোয়া
করি বিয়ে করে সুখি হও বলেই হাঁটা শুরু
করল আবার। উদ্দেশ্য একবার বাবার কবরটা
দেখে আসবে। এই পৃথিবীতে আর এক মুহুর্তও
থাকতে ইচ্ছে করছেনা।
.
ট্রেন চলছে। বিকেলের ট্রেন। এনি
জানালার পাশে বসেছে। ভাবছে
বাংলাদেশটা কত সুন্দর না? সবুজ আর সবুজ।
ঢাকা শহরটায় অতিরিক্ত মানুষ এসে
জায়গাটাকে নোংরা করে ফেলেছে।
হৃদয়ের কথা মনে আসতেই পুরুষজাতির
প্রতি তার ঘৃণা হচ্ছে।
.
হঠাৎ করে তাড়াহুড়োর মধ্যে একটা ছেলে
এসে সামনে বসল। এনির এখন কোন পুরুষ
মানুষকেই সহ্য হচ্ছেনা। টাই শার্ট পরে আছে
তবুও গ্রাম্যতা রয়েই গিয়েছে। হঠাৎ
ছেলেটা বলল এইযে আপনি কয়টা বাজে
বলতে পারবেন? এনি রেগে বলল হাতে
ঘড়ি রাখতে পারেন না? চাকরী করতে
বলে কে আপনাদের যত্তসব এনি কথাগুলো
বলার পর হুঁশ হল। নিজের অজান্তে কথাগুলো
বলে ফেলেছে। এরকম ঝাড়ি খেয়ে
ছেলেটা মুখ কালো করে বসে আছে।
.
এনি খুব চেষ্টা করে নিজের মন নিয়ন্ত্রণ
করে বলল সরি আসলে মেজাজটা খারাপ
তো তাই খারাপ ব্যাবহার করে ফেলেছি।
মাফ করবেন ছেলেটা দাঁত ক্যালিয়ে
হাসি দিয়ে বলল সমস্যা নেই বুঝতে
পেরেছি
.
টাকা শহরে মানুষ চেনা বড় দ্বায়।
ছেলেটাকে সহজ সরল মনে হচ্ছে কিন্তু মনের
ভিতরে কি আছে কে জানে। এনি একটু
ব্যাবহারটা ঠিক করতে চেয়ে বলল আচ্ছা
আপনি কোথায় যাবেন? ছেলেটা এনির
দিকে কেমন করে তাকাল। তারপর বলল
আমার নাম মহসীন
.
এনির রাগ হল আবার। বলল কানে কম শুনেন
নাকি? আমি আপনার নাম জিজ্ঞেস
করেছি? ছেলেটা অসহায় চোখে
তাকিয়ে বলল আপনি মরতে যাচ্ছেন না?
বাবার কবর দেখতে যাচ্ছেন তাইনা? এনির
বুকে ঝড় বয়ে গেল। আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইল
কতক্ষণ। তারপর বলল আপনি কে বলুন তো?
সত্যি করে বলুন আপনি কে? আপনি তো
হাবাবুবা না।
.
মহসিন আবারো অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল
এটাই আমার সমস্যা। মানুষের চোখ দেখে
মনের কথা বলে দিতে পারি। এরজন্য আমার
জীবনটাই তেজ পাতা। কথা শুনে এনির
মাথায় হাত। এনি বলল আপনার ব্যাগটা দেন
আমার হাতে দেখি ব্যাগে কি আছে
তাহলেই বুঝব আপনি কে আর যদি না দেন
তাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করব
.
মহসীন না দিলেও এনি জোর করে মহসীনের
ব্যাগ নিয়ে ব্যাগটা খুলল। দেখল একটা
ডায়েরী আর কিছু মেয়ের ছবি। এনি বলল
আপনি আসলে করেন টা কি? এত মেয়েদের
ছবি কেন আপনার ব্যাগে?
.
মহসীন দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল দেখলেন আমি
আপনার মনের কথা বলে কি বিপদে পরলাম?
নাহলে কি আপনি আমার ব্যাগ ধরার সাহস
পেতেন? আর এই ছবির মেয়েগুলোর সাথে
আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। একটা একটা
করে আমার সব বিয়েই ভেঙেছে আমারি
দোষে। আমি মেয়েগুলোর অতীত বলে
দিয়েছিলাম! এনি ঝাড়ি দিয়ে বলল এত
কথা আপনাকে কে বলতে বলেছে?
.
মহসীন হাসল। তারপর বলল আমি আসলে একটা
পাগল। এইযে আমার গলায় টাই ঝুলানো এই
টাই ঝুলানোর কোন যোগ্যতা কিন্তু আমার
নেই। দুদিন পরপর নিজের লেবেজ মানে
ড্রেস বদলাই এনি কপালে হাত দিয়ে বলল
আমার মাথা ব্যাথা করছে। মহসীন বলল
আমাকে বিনা ভ্যাটে একটু ঝাড়ি দিয়ে
দেন দেখবেন মাথা ব্যাথা পালিয়েছে।
.
এনি রেগে সত্যিই ঝাড়ি দিয়ে দিল আর
সত্যিই মাথা ব্যাথা নেই! যত সময় যাচ্ছে
এনির আগ্রহ বাড়ছে মহসীনের প্রতি। মসসীন
বলল সামনের ষ্টেশনে আমি নেমে যাব।
আমার ব্যাগটা দিবেন কি না দিবেন সেটা
আপনার ইচ্ছে। এনি ঝাড়ি দিয়েই বলল
আপনার ব্যাগটা রেখে দেয়ার জন্য নিলাম
নাকি?
.
ষ্টেশনের কাছে এসে পরেছে। মহসীন উঠে
গিয়ে ট্রেন থেকে নামল। ব্যাগটা দিয়ে
দিয়েছে। ট্রেন ছেড়ে দিল। হঠাৎ মহসীন
পিছনে ফিরতেই দেখল এনি দাঁড়িয়ে আছে
এনি। মহসীন বুঝেছে হয়ত পিছন পিছন
নেমেছে এনি। মহসীন বলল আপনার তো
সামনের ষ্টেশনে নামার কথা। এনি বলল
ইচ্ছে হয়েছে নেমেছি আপনার সমস্যা?
.
বাদাম_বাদাম করে একটা ছেলে বাদাম
বিক্রি করছে। দশ টাকার বাদাম নিল।
তারপর এনিকে বলল দশ টাকা দিন এনি
এবার ঝাড়ি না দিয়ে দশ টাকা দিয়ে দিল।
মহসীন বলল তিন ঘণ্টার ভিতরে আর ট্রেন
আসবেনা। এনি চুপ করে রইল। সে জানেনা
কেন এই ছেলেটার সাথে সময় কাটাতে
ইচ্ছে করছে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এনি
বলল আমি কি আপনার আপন কেউ? আমকে
নিয়ে আপনার এত মাথাব্যথা কেন?
.
মহসীন হঠাৎ বলল পাশে একটা কাজী
অফিস আছে। এনি বলল তো আমি কি করব?
মহসীন বলল হৃদয় তো কালকে বিয়ে
করবে না? হৃদয়ের কথা শুনে এনির মন
খারাপ হয়ে গেল আরো। বলল আপনি এত
কিছু জানেন কিভাবে একটু বলবেন? এটুকু
জানার জন্য এই ষ্টেশনে নেমেছি। মহসীন
অনেক্ষণ কিছু বললনা । চুপ করে বসে আছে।
এনির রাগ হচ্ছে আবার। মহসীন উত্তর
দিচ্ছেনা।
.
হঠাৎ মহসীন বলল চল এনি আগ্রহ নিয়ে বলল
কোথায়? মহসীন বলল কাজী অফিস। বিয়ে
করব আমরা এনি লক্ষ করল মহসীন তাকে
তুমি করে বলে ফেলেছে। বলল ওয়েট আপনি
তুমি করে বলার সাহস কই পেলেন? মহসীন
এনির হাতটা ধরে বলল কারণ তুমি আমার হবু
স্ত্রী। দেখ আমি একজন গোয়েন্দা তাই
একেক ক্যারেক্টারে চলি। কিন্তু তোমার
চোখে আমি আমার মরণ দেখেছি আমি
এটাও বুঝে গিয়েছি তোমাকেই আমার জন্য
পাঠিয়েছে আল্লাহ। অতীত ভুলে যাও।
.
এনি কিছু বুঝতে পারছেনা শুধু এটুকু বুঝতে
পারছে এই ছেলেটার হাতদুটো অবহেলা
করার ক্ষমতা তার নেই। মহসীন এনির শব্দ
শুনতে পাচ্ছে। এনি অনেক্ষণ চুপ করে থেকে
বলল আইস্ক্রিম না নিলে বাসর ঘরে ঢুকতে
দিবনা কিন্তু হুঁ !!