বীর রাখাল

এক বীর রাখালের উহুদ যুদ্ধে শহীদ হওয়ার গল্প


পেশায় তিনি একজন রাখাল।

মদীনার এক গ্রামে থাকেন। সরল সাদাসি

এক বীর রাখালের উহুদ যুদ্ধে শহীদ হওয়ার গল্প 

 

 

পেশায় তিনি একজন রাখাল।

 

মদীনার এক গ্রামে থাকেন। সরল সাদাসিধা জীবন। তেমন পরিচিত কেউ নন। সবাই তাঁকে ভালো করে চিনেও না। বড় বড় কাজে অন্যদের যেমন ডাক পড়ে, তেমনভাবে তাঁকে খোঁজও করা হয় না। 

 

দিনের বেলায় ছাগল চরান। সামান্য ফসলের জমি চাষবাস করেন। দূরে পাহাড়ী ঢালে, মাঠে-প্রান্তরে যাতায়াত করেন। তার সাথে থাকে একপাল ছাগল। কখনো কখনো সেই ছাগলের রশি হাতে নিয়েই দিন পার করে দেন। কারো সাতে-পাঁচে থাকেন না। হৈ-হট্টগোল ঝামেলা থেকে দূরে দূরেই থাকেন।

 

তিনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর একজন সাহাবী। তার নাম ওহাব ইবনে কাবুস। ওহাব ইবনে কাবুস (রাঃ) এভাবেই তার সরল জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। 

 

উহুদ যুদ্ধের দিন।

 

ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়েছেন ওহাব (রাঃ)। তার সঙ্গে একপাল ছাগল। একটি রশিতে ছাগল গুলো বাঁধা। মদীনার দিকে রওয়ানা দিলেন। মদীনা শহরের কাছাকাছি একটি মাঠে ছাগলগুলো চরাবেন, এটাই তার ইচ্ছা। উহুদ প্রান্তরে যে যুদ্ধ হচ্ছে, এ সম্পর্কে তিনি জানেন না।

 

ছাগলের পাল নিয়ে ওহাব (রাঃ) যখন মদীনায় এসে পৌঁছলেন, তখন মদীনা শহরে থমথমে ভাব। লোকজন কম। পথ-ঘাট ফাঁকা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও কি কোথাও চলে গেলেন?

 

ওহাব ইবনে কাবুস (রাঃ) পথে একজনকে পেয়েছিলেন। মনের ভাবনাটা তাঁকে বলেই ফেললেন—ভাই! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এখন কোথায় বলতে পারেন?

 

সাহাবীগণ-কে সঙ্গে নিয়ে রাসূলে করীম (সাঃ) উহুদ প্রান্তরে গিয়েছেন। সেখানে মুশরিকদের সাথে আজ মুসলমানদের যুদ্ধ হবে।

 

ওহাব (রাঃ) আর দেরী করতে পারলেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যুদ্ধে চলে গেছেন আর তিনি মদীনায় বসে বসে ছাগল চরাবেন, এটা তিনি ভাবতেই পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গেই উহুদের দিকে রওয়ানা দিলেন।

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওহাব (রা) উহুদ প্রান্তরের পাশে হাজির হলেন। দেখলেন হাজার খানেক সাহাবী কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে যাচ্ছেন। যুদ্ধের তখন এক কঠিন অবস্থা। মুসলমানদেরকে শত্রুরা ছত্রভঙ্গ করে ফেলেছে। চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। ওহাব নিজেও প্রান্তরে ঢুকে পড়লেন। দূরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলেন। রাসূলের খুব কাছে পৌঁছে গেলেন তিনি।

 

ঠিক এই মুহূর্তে একদল কাফের মুসলমানদেরকে আক্রমণ করতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দিকে এগিয়ে এল। কাফেরদের মতলব ভয়ংকর। তাঁরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রাসূলের উপর আক্রমণ করতে চায়। মুসলমানদের কাউকে শহীদ করে দিয়ে আর কাউকে আহত করে কাফেররা দ্রুত এগিয়ে আসছে।

 

কাফেরদের এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ওহাব (রাঃ) ভিতরে ভিতরে চঞ্চল হয়ে উঠলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন , “যে ব্যক্তি এই কাফেরদের কে ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারবে, বেহেশতে সে আমার সাথী হবে।”

 

রাসূলের কথা শেষ হতেই ওহাব (রাঃ) যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। খোলা তলোয়ার হাতে আল্লাহর রাসূলের শত্রুদের ধাওয়া করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাফেরদের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে গেল।

 

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দারুণ খুশী হলেন। ওহাব (রাঃ)-কে বেহেশতের সুসংবাদ শোনালেন।

 

বেহেশতের সুসংবাদ পেয়ে ওহাব (রাঃ) খুশীতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। একেবারে সোজা শত্রুদের মাঝে গিয়ে ঢুকে পড়লেন। যুদ্ধ করতে লাগলেন। অসম সাহসী বীরের মত যুদ্ধ করে অনেক কাফের ধরাশায়ী করে দিলেন । যুদ্ধ করতে করতে এক সময় ওহাব ইবনে কাবুস (রাঃ) নিজেও শহীদ হয়ে গেলেন।

 

যুদ্ধ শেষে দেখা গেলো, রাখাল ওহাব এক মহান বীরের মত শুয়ে আছেন রক্তের গালিচায়।

 

সাহসী বীর ওহাব (রাঃ)-এর মাথার কাছে রাসূলে করীম (সাঃ) এসে দাঁড়ালেন। কান্না মাখানো গলায় বললেন—ওহাব!আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান।

 

ওহাব (রাঃ)-কে দাফন করলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। দ্বীনের পথে এ বীর শহীদের মর্যাদা উপলন্ধি করলেন সব সাহাবী।

 

আপনি পড়ছেনঃ সাহাবায়ে কেরামের গল্প বই থেকে।


Bablu islam

204 Blog posts

Comments