কালাচাঁদ আর তার গরু
এক গ্রামে বাস করতো কালাচাঁদ নামে এক কৃপণ ব্যক্তি। সে খুব ধনী হলেও কারও উপকার করা তো দূরের কথা, নিজের টাকাও ঠিকঠাক খরচ করতে চাইতো না। তার একটাই নীতি—যত কম খরচ, তত ভালো।
একদিন কালাচাঁদ ভাবলো, "সবার বাড়িতে গরু আছে, দুধ দেয়, আর বিক্রি করে টাকা রোজগার করে। আমারও একটা গরু থাকা দরকার। গরুর দুধ বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবো।"
এই ভেবে সে গ্রামের হাটে গেলো। কিন্তু গরুর দাম শুনে তার মাথা ঘুরে গেলো। একেকটা গরুর দাম এত বেশি যে তার কৃপণ মন সেটা মানতে পারছিলো না। সে খুঁজতে লাগলো সবচেয়ে সস্তা গরু। অনেক ঘোরাঘুরির পর সে এক বৃদ্ধ গরু পেলো, যার দুধ দেওয়ার ক্ষমতা প্রায় শেষ।
গরুর মালিক তাকে বললো,
"ভাই, এই গরু কিন্তু দুধ দেয় না। শুধু ঘাস খায়।"
কালাচাঁদ হেসে বললো,
"দুধ দিক বা না দিক, দাম তো কম। গরু শুধু দেখানোর জন্য থাকলেই হবে।"
কালাচাঁদ গরু কিনে বাড়ি ফিরলো। গরু দেখে গ্রামের লোকজন জানতে চাইল,
"গরু এনেছো ভালো কথা, কিন্তু দুধ কবে খাওয়াবে?"
কালাচাঁদ বললো,
"শিগগিরই তোমাদের দুধ খাওয়াবো।"
কৃপণতার ফল
কালাচাঁদ বাজার থেকে দুধ কিনে আনতো আর সেটা গরুর পাশে রেখে বলতো, "আমার গরুই এই দুধ দিয়েছে।" গ্রামের কিছু লোক তার কথা বিশ্বাস করলো, কিন্তু বাকিরা হাসতে হাসতে বলতো,
"এটা দুধ নয়, তোমার চালাকি!"
কালাচাঁদের ব্যবসা ভালো চলছিলো, কিন্তু একদিন সে বুঝতে পারলো, দুধ কেনার খরচ এত বেশি যে তার লাভের বদলে টাকা উল্টো কমছে। তখন তার এক বন্ধু বললো,
"দোস্ত, গরুকে ভালো খাওয়াও। ঘাস আর খাবার খেয়ে গরু দুধ দেবে। তখন আর বাইরে দুধ কিনতে হবে না।"
কিন্তু কৃপণ কালাচাঁদ গরুর জন্য ভালো খাবার কেনার বদলে শুকনো খড় আর মাঠের মরা ঘাস তুলে এনে গরুকে খাওয়াতে লাগলো। দিন দিন গরুটা আরও দুর্বল হয়ে পড়লো।
গরু হারানোর দিন
একদিন সকালে কালাচাঁদ ঘুম থেকে উঠে দেখে, গরুটা খুঁটি থেকে দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে গেছে। সে শুধু রেখে গেছে কিছু শুকনো গোবর।
গ্রামের লোকজন এ ঘটনা শুনে হেসে হেসে বললো,
"কালাচাঁদ, তোমার গরু দুধ না দিলেও 'উপহার' দিয়ে গেছে। এবার এই গোবর বিক্রি করে দেখো, টাকা কামানো যায় কিনা!"
কালাচাঁদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। সে ভাবলো,
"যদি গরুকে ঠিকমতো খাবার দিতাম আর সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতাম, তাহলে এই লজ্জার মুখ দেখতে হতো না।"
শিক্ষা
কৃপণতার কারণে শুধু টাকাই নয়, সম্মানও হারাতে হয়। বিনি
য়োগে সঠিক চিন্তা না করলে সফলতা আসে না।