আচ্ছা নিবেদিতা, কেমন হতো যদি আমি হতাম একটি প্রেমের উপন্যাস?
রাত জেগে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফোনের স্বল্প আলোতে আমাকে পড়তে। গভীর মনযোগ দিয়ে পড়তে। মাঝখানের এক-দুইটা লাইন বাদ দিয়ে অন্য লাইনে চলে যেতে। বেশকিছু লাইন পড়ার পরে বুঝতে পাড়তে দুটো লাইন বাদ পরেছে। বিরক্তির সাথে আবার ফিরে যেতে সেই দুই লাইনে।
সপ্তম পৃষ্ঠার সবচেয়ে আবেগী লাইনটা পড়ে তোমার চোখে নোনা জলের ছোট খাটো ঝর্ণার সৃষ্টি হতো। এক ফোটা নোনা জল তোমার গাল গড়িয়ে পরত লাইনটির একটি শব্দের উপর। তুমি জল মুছতে গিয়ে শব্দটাই মুছে দিতে! নীল হয়ে পরে থাকত মুছে যাওয়া শব্দটির স্থানটি। ঠিক সেভাবে যেভাবে তোমার চোখের জল নীল করেছে একটি কিশোরকে।
ছাব্বিশতম পৃষ্ঠায় রয়েছে উপন্যাসটির সবচেয়ে সুন্দর লাইনটি। এই লাইনটিতে আশ্রয় নেই কোন আবেগের। বাস্তব ধর্মী একটি লাইন। তোমার জীবনধারার বহিঃপ্রকাশ করে এই একটা লাইন। একটি কিশোরের দেওয়া হলদে রাঙ্গা নোটবুকটায় যত্ন করে লিখে রাখতে লাইনটি।
প্রত্যেকটি লাইন তুমি আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়তে। আমি অনুভব করতাম তোমার উষ্ণ স্পর্শ। ভালোই হতো যদি হতাম একটি উপন্যাস! আঙ্গুল দিয়ে মার্ক করে পড়তে পড়তে ছিষট্টিতম পৃষ্ঠায় এসে বাচ্চা মেয়েটার মতো খিল খিল করে হাসতে। এই পৃষ্ঠাটি সার্থক। তোমার অপরূপ হাসি দেখে আমি হতাম মুগ্ধ।
এভাবেই হাসি কান্না আর তোমার স্পর্শের মাঝে একটা সময় শেষ হয়ে যেত উপন্যাসটি। তুমি চোখে জল নিয়ে বলতে ইস! উপন্যাসটি যদি আরো একটু বড় হতো।
বইটি তুমি অবহেলায় এককোণে রেখে ঘুমিয়ে যেতে। ঠিক সাত দিন পরে বইটিকে গ্রাস করত শহরের যতো ধূলাবালি। নীল স্থানের শব্দটি তেমনই রয়ে যাবে। যেমন রেয়ে গেছে সেই কিশোর ছেলেটি! অনেক দিন পর তুমি বইটি হাতে নিবে। যত্ন করে ধূলাবালি সরিয়ে পড়া শুরু করবে। সপ্তম পৃষ্ঠার সাত নম্বর লাইনের মুছে যাওয়া নীল শব্দটিতে এসে থেমে যাবে। মনে করতে চাবে শব্দটি। কিন্তু মনে পরবে না! মনে করতে না পারার বিরক্তিতে বইটিকে আবার ছুড়ে ফেলে দিবে।
জী ধন্যবাদ
বেঞ্চটাতে বসেন কেন ?
---বিকাল বেলাটা আমার কাছে খুবই প্রিয় একটা মুহূর্ত। এখানে এসে চোখ দুটো বন্ধ করে অনুভূতির কান দিয়ে কারো পায়ের শব্দ অনুভব করি। পার্কের এই জায়গাটা কিন্তু একটু নির্জন। তাই না?
---হুমম। সেই জন্য তো আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম এতো বেঞ্চ থাকতে এই নির্জন জায়গায় এসে কেন বসেন? মানুষের ভিড়ের মাঝে আপনার থাকতে ভালো লাগেনা?
---একা থাকতে খুব ভালোবাসি।অভ্যাসহয়ে গেছে। দেখুন না আপনি ছাড়া কিন্তু এখানে আমার সাথে অন্য কেউ কথা বলতে আসেনি। আমি কিন্তু তাতে একটু মন খারাপ বা কখনো নিঃসঙ্গ অনুভব করিনি।
---সত্যি বলতে আপনার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছে। আপনার কথাগুলোর শুনতে খুবই ভালো লাগে। আচ্ছা আপনি মুখটাকে সবসময় গম্ভীর করে রাখেন কেন? আপনি যদি হেসে কথা বলতেন তাহলে আরো ভালো লাগতো আপনাকে।
---সব হাসিই কি লোক চক্ষুতে ধরা দিতে হবে? সব কষ্টেই কি চোখের জলে সেই কষ্টটার প্রমাণ মেলাতে হবে?
হৃদয়ের মাঝেও তো হাসির বাণ বয়ে যেতে পারে। নেমে আসতে পারে অশ্রুর ঝর্ণা।
সেটা দৃষ্টিগোচর হওয়া কি খুব জরুরি?
---বাহ্! আপনি তো কবিদের মতো করে কথা বলেন দেখছি। আপনি কি কবিতা লিখেন?
---একসময় শব্দের মায়াজালে মনের কথাগুলো দিয়ে প্রতিটি পাতায় অনুভূতিতে ছেয়ে দিতাম। কিন্তু এখন সব এলোমেলো লাগে।
---কেন? আমাকে কি বলা যেতে পারে?
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
---এক কাপ কফি হয়ে যাক!
--হুমম। মন্দ হয়না। চলুন হাটতে হাটতে আপনার কথা শুনা যাক।
---আপনার অনেক ধৈর্য আছে বলতে হবে।
---কেন?
---এই যে, আমার সাথে বসে আমার বকবকানি শুনছেন।
---আরে নাহ্। আপনার কথাগুলো শুনতে আমার খুবই ভালো লাগছে। আজকের বিকালটা আমার কাছে অনেক অনেক ভালো লাগছে।
---জানেন আমাদের ভালো লাগার,ভালোবাসার জিনিসগুলোকে আমরা সবসময় আঁকড়ে ধরে রাখতে পারিনা।অদৃশ্য বুলেটের আঘাতে কোনো একসময় সব ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আর আস্তে আস্তে একাকীত্বের চারদেয়ালে আমরা বন্ধিভাবে জীবন কাটায়।
---আপনার কথাগুলো খুবই রহস্যময়।
---আমরা প্রতিটি মানুষই একটা জটিল ধাধায় বেড়ে উঠি। সেখানে আমাদের কথাগুলো তো খুবই সাধারণ কিছু শব্দের বন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের চিন্তাধারাই সেগুলোকে রহস্যময় করে তুলে।
---হুম! সেটা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
---চলুন কফি খাওয়া যাক।
---ও! হ্যা চলুন।
কিছুক্ষণ পর.....
---আমি কিন্তু আপনার কথার প্রেমে পড়ে গেছি।আপনি সত্যিই খুব সুন্দরভাবে কথা বলেন।
---আর কিছুক্ষণ আমার সাথে থাকুন,আমার প্রেমে পড়ে যাবেন। সত্যি বলতে কাউকে ভালো লাগা যখন শুরু হয়,তাকে ভালোবাসার হৃদয়ে একটা জায়গা আপনাআপনি সৃষ্টি হয়। শুধু অপেক্ষা থাকে কিছু অনুভূতির, প্রত্যাশা থাকে সঠিক সময়ের।
---হঠাৎ করে পাওয়া জিনিসগুলো খুব সহজেই মনের অজান্তেই হারিয়ে যায়। সেটা জানেন তো?
---পাওয়ার আগেই যদি সংশয় মনে থাকে তাহলে সেটা কাছে টেনে নিয়ে হারানোর ভয়ে কেন হৃদয় অস্থির হয়ে উঠবে?
কি প্রয়োজন ক্ষনিকের তরে কাউকে আপন করার?
---সারাজীবন পাশে থাকতে পারবেন তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে? যতক্ষণ বেঁচে আছেন ততক্ষণ তো সেই মানুষটার পাশে থাকা যায়। নিজের মতো করে ভালোবাসা যায়। রাখা যায়না কি বিশ্বস্ততা দুটি হাত,যেখানে এসে সব দু:খ-কষ্ট বিলীন হয়ে যায়।
---খামখেয়ালি মনে ভালোবাসাই বা থাকে কি করে? প্রতিটি মুহূর্তে যেখানে নিঃশ্বাসের দ্বার বন্ধ হয়ে আসে।
---আচ্ছা যদি বলি আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাহলে কি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন?
---সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাকে বাসায় ফিরতে হবে। আর আকাশটাও কালোমেঘে ঢেকে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে।চলুন যাওয়া যাক।
---আপনি কিন্তু কথাটাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।আসলে আপনার মুখোমুখি উত্তর দেওয়ার সাহস নেই। তাই চলে যেতে চাইছেন।
---সময়টা এখন খুবই বেমানান।প্রশ্নগুলোকে ফ্রেমে বন্ধি করে রাখাই ভালো।হয়তো কোনো অসময়ে একটিবারের জন্য আবারো স্মৃতিতে ফিরে আসা যাবে।
---আপনি আসলে যতোটা রহস্যময় ঠিক ততোটাই ভিতুর ডিম।
---নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা সত্তাটাকে মাঝেমাঝে লুকিয়ে রাখা খুব বড় অন্যায় নয়।
এখন আর থাকা সম্ভব হচ্ছেনা। আমাকে যে এবার যেতেই হবে।বাই।
--উহু...বাই না বলুন আসি। বিদায়ের মুহূর্তগুলো খুব যন্ত্রণাদায়ক। আরঅপেক্ষা সেটা তো চিরন্তন। চাইলে এসে হাতের মুঠোতে ধরা দেয়।
আচ্ছা আবার কবে দেখা ?
---হয়তো কাল বা পরশু, হয়তো কোনো একদিন।
---অপেক্ষায় থাকবো কিন্ত। আসবেন তো?
---কথা দিতে পারছি না। তবে অভ্যাসগুলো তো সহজে বদলানো যায়না।
ভালো থাকবেন..
---আপনিও ভালো থাকবেন
আর নিজের খেয়াল রাখবেন।
---------
পথদুটো আলাদা হয়ে গেছে। বদলে গেছে গন্তব্য। হয়তো শেষটায় গিয়ে সন্ধি হবে।যেখান থেকে শেষটার শুরু।
কি ব্যাপার! আজো আপনি এখানে?
---জানেন তো। সময় বদলে গেলেও প্রিয় অভ্যাসগুলো আগের মতোই রয়ে যায়।
---তার মানে আপনি প্রতিদিনই এখানে আসেন। তাই তো?
---জ্বি!
---পার্কে তো আরো অনেক বেঞ্চ রয়েছে। কিন্তু আপনি শুধু এই বেঞ্চটাতে বসেন কেন ?
---বিকাল বেলাটা আমার কাছে খুবই প্রিয় একটা মুহূর্ত। এখানে এসে চোখ দুটো বন্ধ করে অনুভূতির কান দিয়ে কারো পায়ের শব্দ অনুভব করি। পার্কের এই জায়গাটা কিন্তু একটু নির্জন। তাই না?
- ---হুমম। সেই জন্য তো আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম এতো বেঞ্চ থাকতে এই নির্জন জায়গায় এসে কেন বসেন? মানুষের ভিড়ের মাঝে আপনার থাকতে ভালো