অন্ধকারের সেই আওয়াজ

রফিকদের গ্রামের বাড়ি দুর্গম এক অজপাড়াগায়ের শেষ সীমান্তে অবস্থিত। ইলেক্ট্রিসিটির আলো এখনো ওই গ্রামকে আলোকিত

রফিকদের গ্রামের বাড়ি দুর্গম এক অজপাড়াগায়ের শেষ সীমান্তে অবস্থিত। ইলেক্ট্রিসিটির আলো এখনো ওই গ্রামকে আলোকিত করতে পারেনি। হাওর এলাকায় রফিকদের বাড়ি। বাড়ির চারপাশে অসংখ্য হাওর আর খালবিল। বর্ষার পানিতে হাওড়গুলো থই থই করছে ! আর সেই থই থই করা পানিতে দিনে দুপুরে অসংখ্য জিওল মাছ লাফালাফি করে। গতকাল রাতে এই বিলের পানিতেই ডুবে মরেছে রফিকের মা আছিয়া বানু। কিভাবে মারা গেছে, কেন মারা গেছে এই নিয়ে গ্রামের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। হাওর এলাকায় অসংখ্য পিশাচের আনাগোনা নাকি গ্রামের মানুষ বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করেছে। অন্ধকার চাঁদহীন রাতে হাওরের পারে বসে ওরা নাকি কচকচ করে কাচা মাছ চিবিয়ে খায়। এই সময় কেউ যদি তাদের আশেপাশে হেটে যায়, গলা ধরে বিলের পানিতে তাকে চুবিয়ে মারে পিশাচের দল, গ্রামের অশিক্ষিত মানুষগুলো প্রবল ভাবে এসব কথা বিশ্বাস করে। কাচারি ঘরের চৌকিতে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে রফিক। মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে সকালেই ঢাকা থেকে গ্রামে এসেছে সে। মায়ের জানাজা শেষ করে সারাটাদিন এই চৌকিতে পরে রইল সে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা আসল, সন্ধার পরে আসল ঝিঝিডাকা রাত। শুয়ে শুয়ে মায়ের কথা ভাবছে সে। কান্নাটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করছেনা সে। নিরবে, সবার অগোচরে বহু দুর্গম এক গ্রামের এক ঘরে এক যুবক তার সদ্যমৃত মায়ের জন্য কাঁদছে। কাদুক। মায়ের মৃত্যুর কারণটা নিয়ে অনেক ভেবেছে সে। তার মা তো সাতার জানে, তাহলে পানিতে ডুবল কিভাবে ? অবশ্য গ্রামের মানুষদের মত কুসংস্কারে বিশ্বাস করেনা সে। কিন্তু অজানা এক আতঙ্কে কেন যেন রফিক বার দুয়েক কেঁপে উঠল। সাত পাচ ভাবতে ভাবতে রফিক ঘুমের রহস্যময় জগতে ডুবে গেল। রফিকেরা দুই ভাই। রফিকের ছোট ভাই পড়াশুনায় খুব মেধাবি ছিল। মনোবসু স্কলারশিপ নিয়ে জাপানে পড়ছে সে। হুট করে জাপান থেকে চলে আসা যায় না, তাই ভাইকে ছাড়াই মায়ের জানাজা দিল রফিক। সন্ধ্যার পরেই গ্রামটাকে প্রাগৈতিহাসিক কালের রহস্যঘেরা আঁধার তার কাল চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়। গ্রামের ভয়ার্ত মানুষগুলো সন্ধ্যার পর দরজায় খিল লাগিয়ে ঘুম দেয়। প্রাচীন, ঝিঝিডাকা, নিকষকালো রাতে ওই গ্রামে নেমে আসে যেন মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা। কখনো কখনো পিছের ওই বাঁশঝাড় থেকে ভেসে আসা রাত জাগা পাখির কর্কশ গর্জনে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়। গভীর রাতে খুব ঠাণ্ডা কিছুর স্পর্শে রফিকের ঘুম ভাঙ্গে। অজানা আতঙ্কে রফিকের মেরুদণ্ড দিয়ে যেন ঠাণ্ডা পানি বয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু কেন যেন রফিকের অনুভুতিগুলো ভাবলেশহীন হয়ে গেছে ! অশরীরী কোন কিছুর উপস্থিতি তার বাস্তব জ্ঞান কেড়ে নিয়েছে ! তাকে করেছে সম্মোহিত ! চাদের আবছা আলোয় রফিক দেখল তার চৌকিতে তার মা বসে আছে। অশরীরী জিনিসটা আজ আছিয়া বেগমের ছদ্মবেশ নিয়ে এসেছে রফিকের কাছে ! জীবন দরকার তার ! অনেক জীবন !! রফিকের একবারও মনে পড়ল না গতকাল তার মা মারা গিয়েছে। গতকাল তার জানাজা হয়ে গেছে !! একদৃষ্টিতে রফিকের চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আছিয়া বেগম। আছিয়া বেগম ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলেন। সম্মোহিতের মত মা রূপী অশরীরী আত্মাটার পিছে পিছে হাঁটছে রফিক। যেতে যেতে ওরা উত্তরের জলার পাড়ে গিয়ে থামল। পরের দিন বাড়ির উত্তরের জলায় গ্রামবাসী রফিকের লাশ ভেসে থাকতে দেখল। 

আমি আবির। এখন যে experience শেয়ার করব তা আমার সাথে এবং আমাদের বাসার প্রতিটি ফ্যামেলি মেম্বারদের সাথে ঘটা। আমি তখন ক্লাশ এইটে পড়ি। সাল: ২০০৮ আমাদের এক মহিলা ভাড়াটিয়া মারা যায়। সবকিছু ভালভাবে হলো কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত কারনে তার জানাযা উল্টা পড়ানো হয়। মানে, যেদিকে পা থাকবে সেদিকে বসানো হয়েছিলো মাথা। পরে ব্যাপারটা বুঝতে পারলে ভুলভাবেই কবর দেয়া হয়। কবরটি দেয়া হয় তার শ্বশুড় বাড়ি, খুলনার খালিশপুর নামক জায়গার কোথাও। আর এখানেই কাহিনী শুরু— ঐদিন রাতেই তার স্বামী টয়লেটে যায় এবং সে মুহূর্তে ক্যারেন্ট চলে যায়। ১০-১৫ সেকেন্ডের ভেতর তার বউয়ের গলায় কেউ একজন বলে মোমটা নাও। সে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। এইভাবে চলে কিছুদিন। কিন্তু এতে ভয় আরো বেড়ে যায়। হুজুর বলে আপনারা লাশটা তুলে গোসল করিয়ে আবার জানাযা পড়ান। তখন কেবল ৮দিন সে মারা গেছে। দুপুরে লাশ উঠানোর জন্য গেলে কবরের মাটি উঠানোর পর আমি এবং সবাই যা দেখলাম তা আর কোনদিন দেখতে চাই না। দেখলাম যে কবরে ঐ মহিলা হেলান দিয়ে বসে আছে। আর কাফনের কাপড়ের অনেকখানি কাপড় তার মুখের ভেতরে। এরপর তিন হুজুর মিলে কবরে নামলেন এবং দোয়া দরুদ পড়ে কাপড়টা টেনে বের করতে থাকলেন। একসময় কাপড়টা বের হয়ে আসলে মহিলার লাশটি শুয়ে পড়ে। তাকে আবার গোসল করানো হয় এবং জানাযা পড়ানো হয়। তারপর, কবর দেয়া হয়। তার কিছুদিন পর তার স্বামী আবার বিয়ে করেন। কিছুদিন পর লোকটি বাসায় রাতে একা ছিলেন। পরদিন সকালে তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরে পাওয়া যায় বাসা থেকে ১ কি.মি দূরে। তাকে জিঞ্জাসা করলে তিনি ব যে রাতে তার বউয়ের মত এক মহিলা তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তাকে বিয়ে করার কথা বলে। লোকটা আবার বিয়ে করেছে। সেই কারনে থাপ্পর দেয়। সেই থাপ্পরের দাগটা স্পষ্ট দেখেছি আমরা। তার দুইদিন পর লোকটি মারা যায়। কিন্তু এখনও তাকে আমাদের বাসার আশেপাশে কাদতে দেখা যায়। 

 ঘটনাটি বলতে যাচ্ছি তা আমার নানীর মুখে শোনা। ঘটনায় আসি। আমার নানারা ছিলেন ২ ভাই। পুরান ঢাকায় নিজেদের পৈতৃক বাড়িতে তারা তাদের পরিবার নিয়ে যৌথভাবে বাস করতেন। তাদের বৃদ্ধ মা তাদের সাথে থাকতেন। ঘটনাটি ঘটে আমার বড় নানার সাথে। নানারা যে বাড়িতে থাকতেন তার পূর্ব-দহ্মিণ বরাবর টয়লেট ছিল, এর পাশেই ছিল এক বেলগাছ। বাড়িতে একটি মাত্র টয়লেট থাকায় এবং অনেক মানুষ তা ব্যবহার করার কারনে স্বাভাবিকভাবেই তা নোংরা হত। বড় নানা প্রতিদিন ফজরের ওয়াক্তে উঠে টয়লেট পরিষ্কার করতেন। ঘটনাটি যেদিন ঘটে সেদিন ছিল পূর্নিমা। 

 

চাঁদের আলোয় চারদিক ভেসে যাচ্ছিল। হঠাত্‍ কোন কারনে নানার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি বাইরে তাকিয়ে দেখেন চারদিক ফর্সা হয়ে আছে। তিনি মনে করেছিলেন ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। তো একটি ঝাড়ু, এক বালতি পানি ও একটি হারিকেন নিয়ে টয়লেট পরিষ্কার করতে গেলেন। চোখে ঘুম থাকার কারনে তিনি বুঝতেই পারেননি তখনও ভোর হতে অনেক দেরি। টয়লেটের কাছাকাছি গিয়ে তিনি দেখেন তার মা টয়লেটের সামনে বসে আছে আর গোঙাচ্ছে। তিনি বললেন, মা এত রাতে এখানে কি কর? তার মা বলল, বাবা আমি টয়লেটে এসেছিলাম, ফেরার পথে পরে গেছি। হারিকেনটা রেখে আমার কাছে এসে আমাকে টেনে তোল। নানা হারিকেন রেখে তার মার দিকে যেতে লাগলেন। হঠাত্‍ পেছনদিক থেকে তার মা তাকে ডাক দিল, ইউসুফ কার সাথে কথা বলছিস? এত রাতে টয়লেট পরিষ্কার করতে এসেছিস কেন? কেবল রাত ২টা বাজে। তিনি পিছনদিকে ঘুরে দেখেন তার মা হারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। টয়লেটের দিকে তত্‍হ্মনাত্‍ ঘুরে দেখেন সেখানে কেউ নেই। সাথে সাথে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। তার অনেক জ্বর আসে। ৩ দিন পর তার জ্বর কমে যায়। এরপর একজন হুজুর ডেকে আনা হয়। তিনি বাড়িতে ঢুকেই বলেন এখানে খারাপ একটা জিনিস আছে। টয়লেটের পাশের বেলগাছটাই ওটার আস্তানা। সেদিন রাতে নানার মা যদি নানাকে না থামাতেন তাহলে জিনিসটার কাছে গেলেই তা নানাকে মেরে ফেলত। এরপর তিনি বাড়িটা বন্ধক করে দেন এবং বেলগাছটি কেটে ফেলতে বলেন। বেলগাছটি তার কথা অনুযায়ী কেটে ফেলা হয়। এরপর আর কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। 

 

বিঃদ্রঃ এটি একটি সত্য ঘটনা। বিশ্বাস করা না করা আপনাদের ব্যাপার।


Tanvir Arafat

93 Blog posts

Comments