ধর্ম

মসজিদ থেকে শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে এলে পকেটে বাতাসা থাকত নানার। খেজুরের গুড় দিয়ে

মসজিদ থেকে শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে এলে পকেটে বাতাসা থাকত নানার। খেজুরের গুড় দিয়ে বানানো হলুদ চাকতি। জুম্মার পর মসজিদে বাতাসার দেওয়ার নিয়ম। পুকুর ঘাটের কাছে নানাকে দেখে বাড়ির ছোটরা, আমি ফেলু মামা, ছটকু ইয়াসমিন নানার কাছে দৌড়ে গিয়ে বাতাসা নিয়ে আসতাম। নানা বাড়ির ছোটদের প্রতি সদয় হলেও বড়দের প্রতি নন। আমাদের বাতাসা বিলিয়ে বাড়ি গিয়ে তিনি বড়দের হাড় মাংস জ্বালাতেন। জ্বালাতেন শব্দটিই নানি ব্যবহার করেন, যখন এই লাডি লইয়া আয়, কেডা কেডা মসজিদে যাস নাই ক। পিডাইয়া শ্যাষ কইরা ফালাইয়াম–বলে বাড়ি মাথায় তুলতেন নানা। ছেলেদের অন্তত জুম্মা পড়তে মসজিদে যেতে হবে, মেয়েদের যেহেতু মসজিদে যাওয়ার বিধান নেই, নামাজ পড়বে ঘরে। মেয়েরা ঘরের বাইরে যাক, ক্ষতি নেই, যেতে হবে বোরখা পরে। নানা জুম্মার দিন খানিকটা আলস্য করেন, এ তাঁর চিরকালের স্বভাব। মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে দুপুরের ভাতঘুমটি দেওয়ার আগে তাঁর হিশেব করা চাই কে কে ফাঁকি দিল, কোন ছেলে মসজিদে যায়নি এবং কোন মেয়ে বাড়িতে নেই, বাইরে সে মেয়ে বোরখা পরে গিয়েছে কি না। এত প্রশ্নে নানি অতিষ্ঠ হতেন। ঘুমিয়ে ওঠার পর নানা আবার ভাল মানুষ। লুঙ্গি কষে বেঁধে ডান হাত লুঙ্গির তলে রেখে বাঁ হাত নেড়ে নেড়ে যেন বাতাস সরাতে সরাতে, হেঁটে চলে যান নতুন বাজার। কে বাড়ি নেই, কে আছে, খোঁজ আর করেন না। বিকেলে রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলে সাত লোকের সঙ্গে কথা হবে, ওই আকর্ষণ নানাকে আর বাড়িতে রাখে না। এক নানি ছাড়া বাড়ির কোনও বয়ষ্ক মেয়ে স্বেচ্ছায় বোরখা পরেন না। রুনু খালা ঝুনু খালা বোরখা হাত ব্যাগে ভরে বাইরে বেরোন, পুকুরঘাট থেকে ছটকু বা কাউকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন নানা বাড়ি আছেন কি না, নেই জানলে তো ঢুকে গেলেন বাড়ি, আর থাকলে পড়শি কারও বাড়িতে অপেক্ষা করেন, নানা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে খবর পাঠানো হয়, খালারা বাড়ি ঢোকেন; অপেক্ষা না সইলে ব্যাগের বোরখা গায়ে চাপিয়ে আসেন।

 

নানা এক বড়মামাকেই মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন, বাকি ছেলেমেয়েদের ইস্কুল কলেজে। নানার কড়া আদেশ ছিল, অবশ্য কেবল ছেলেদের বেলায়, বিদ্যা অমূল্য ধন, পড়ালেখায় যেন গাফিলতি না হয় কারও। মেয়েদের বেলায় মাইয়া মানষের অত নেকাপড়া করন লাগব না। রুনু খালা বিএ অবদি পড়েছেন, নানা ক’দিন পরপরই তাঁর বিয়ের ঘর আনেন, রুনু খালা মুখে ধুলো কালি মেখে চুল উস্কোখুস্কো বানিয়ে ছেলে পক্ষের সামনে আসেন যেন কারও তাঁকে পছন্দ না হয়। সুলেখার মা প্রায়ই নানির খাটে বসে শাদা পাতা মুখে পুরে বলেন–রুনুরে কি বাড়ির খুঁডি বানাইবাইন? বিয়া দেইন না কেন এহনও? ঈদুন আর ফজলির ত কি সুন্দর বিয়া হইয়া গেল।

 

নানি পানের খিলি বানাতে বানাতে বলেন–লেহাপড়া আরও করুক। নিজে চাকরি বাকরি করব। বিয়া পরে বইব নে। আইজকাইলকার যুগে মেয়েগোরেও টেকা কামাইতে অইব। জামাইয়ের উপরে নির্ভর থাহন ভালা না, কহন কি অয়, ঠিক আছে!

 

ঝুনু খালা ফর্সা বলে তাঁর বিয়ের ঘর আসে বেশি। নানি কড়া গলায় বলে দেন– মেয়ে আরও লেহাপড়া করব। এত তাড়াতাড়ি বিয়া কিয়ের! আর বড় বইনের বিয়া না হইলে ছুডু বইনের আবার বিয়া অয় কেমনে!

 

বড় মামা মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষায় এম এ পড়ে ঢাকাতেই একটি চাকরি জুটিয়ে নিয়েছেন। শাদা বউটি তাঁর সঙ্গে থাকেন। আজও কোনও ছেলেপুলে হয়নি। লোকে বলে শাদা হইলে কী হইব, বউ ত বাঁজা। বউএর মাজায় বাঁধার জন্য পাড়ার লোকেরা অনেক তাবিজ কবজ নিয়ে এসে বড় মামাকে দেন। লোক চলে গেলে ওসব তিনি ছুঁড়ে ফেলে দেন কুয়োয়। বড় মামা ছুটিছাটায় বাড়ি আসেন, কখনও বউ নিয়ে, কখনও একাই। এ বাড়িতে এসে তিনি পায়ে খড়ম পরে যখন উঠোনে হাঁটেন, মনে হয় না যে কেবল ক’ সপ্তাহের জন্য তিনি এসেছেন, মনে হয় হাজার বছর ধরে এখানেই ছিলেন তিনি।

 

হাশেম মামা ইস্কুল কামাই করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বেড়াতেন। মেট্রিক পরীক্ষায় দু’তিনবার ফেল দিয়ে আর পড়ালেখা করেননি। ঝুনু খালাকে বড় মামা ঢাকায় নিয়ে ইডেন কলেজে ভর্তি করে দেবেন, এ রকম সিদ্ধান্ত। বাকিরা, ফকরুল, টুটু, শরাফ, ফেলু ইস্কুলের পড়ালেখাও যেমন আধাখেচড়া, নামাজ রোজাতেও। বন্ধু বাড়ছে, আড্ডা বাড়ছে। রাত করে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফেরেন, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে টুটু মামা সিগারেট ধরেছেন। নানা সবকটিকে প্রায়ই থামে বেঁধে পেটান। গাধা পিটিয়ে মানুষ করার মত। মানুষ হওয়ার লক্ষণ তবু কারও মধ্যে নেই। পরীক্ষায় ভাল ফল করছেন না কেউ। বড় মামার সঙ্গে পরামর্শ করেন নানি, এদেরও এক এক করে ঢাকায় নিয়ে ইস্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে, অন্তত মানুষ হবে।

 

ছেলেমেয়েরাও না আবার লেখাপড়া না করে বাউন্ডুলে হয়ে যায় এই দুশ্চিন্তায় নানির যখন চুল পাকতে বসেছে, নানা ঘোষণা করলেন তিনি হজ্বে যাবেন। হজ্বে যাওয়ার টেকা পাইবেন কই? নানি ক্ষেপে গেলেন! টেকা আল্লাহই দিব! নানার হেঁয়ালি উত্তর। টাকা শেষ অবদি আল্লাহ দেননি, দিয়েছিলেন বাবা। কথা, নানা হজ্ব থেকে ফিরে এসে সে টাকা শোধ করে দেবেন। বড় এক টিনের সুটকেসে কাপড় চোপড় মুড়িমুড়কি ভরে সুটকেসের গায়ে শাদা কালিতে মোহাম্মদ মনিরুদ্দিন আহমেদ, ঠিকানা আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার, ময়মনসিংহ লিখিয়ে যে বছর নানা জাহাজে করে হজ্বে চলে গেলেন, সে বছরই নীল আর্মস্টং চাঁদে গেলেন। নানা হজ্বে, নীল আর্মস্টং চাঁদে।

 

চাঁদ নিয়ে বাড়ির সবারই আবেগ প্রচন্ড। বাচ্চা কোলে নিয়ে উঠোনে চাঁদনি রাতে মায়েরা গান করেন আয় আয় চাঁদ মামা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা। চাঁদনি নামলে উঠোনে বসে কিচ্ছা শোনা চাই সবার। কানা মামুর কিচ্ছাই, বাড়ির লোকেরা বলে জমে খুব। রুনুখালা গান করেন আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে। ঈদের আগে চাঁদ দেখার ধুম পড়ে, চাঁদ দেখতে পেলে নানি বলেন–আসসালামু আলায়কুম।

 

সেবারও বলেছেন, আর ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসা বড় মামা নানিকে ফস করে বললেন–মা, নীল আর্মস্ট্রং পেশাব কইরা আইছে চান্দে। খ্রিস্টানের পেশাব পড়া চান্দেরে সালাম দেন ক্যা?

 

ফজলি খালার জ্বিন ছাড়ানো হলে, পেট খারাপ করলে, গায়ে জ্বর জ্বর লাগলে আর মাথাব্যথা হলে বাপের বাড়ি গিয়ে ক’দিন থাকার অনুমতি পান আব্বাজির কাছ থেকে। সেবার ফজলিখালা এসেছিলেন মাথাব্যথার কারণে, বড় মামার মন্তব্য শুনে বললেন– আব্বাজি বলেছেন আসলে চাঁদে কেউ যায়নি। আল্লাহই চাঁদ সূর্য্যর স্রষ্টা। আল্লাহতায়ালা চাঁদ সুর্যকে উদয় করেন, অস্ত যাওয়ান। চাঁদ পবিত্র, চাঁদ দেখে মুসলমান ঈদ করে, রোজা করে। চাঁদে মানুষ গেছে, এসব খিস্টানদের রটনা।

 

বড় মামা ঠা ঠা করে হেসে বলেন–ফজলি, তরে ত আমি ছোডবেলায় বিজ্ঞান পড়াইছিলাম। পড়াই নাই পৃথিবী কি কইরা সৃষ্টি হইল! সব ভুইলা গেছস?

 

ফজলিখালা কুয়ো থেকে অযু করার পানি তুলতে তুলতে বললেন–বিজ্ঞানীরা কি আল্লাহর চেয়ে বেশি জ্ঞানী? কি বলতে চাও তুমি মিয়াভাই! আল্লাহ যা বলেছেন তাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা।

 

পানি ভরা বালতি উঠোনে নামিয়ে তিনি আবার বলেন–তরে ত আর জিনে আছড় করে না, করে তর শ্বশুরে!

 

আমি ঠিক বুঝে পাই না কার কথা সত্য। বড়মামার নাকি ফজলিখালার! এ বাড়িতে দু’পক্ষেরই আদর বেশি। বড়মামা বাড়ি এলে যেমন পোলাও মাংস রান্না হয়, ফজলিখালা এলে তা না হলেও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোক এলে এলাহি কারবার শুরু হয়। বড়মামাকে যেমন দূরের মানুষ মনে হয়, ফজলিখালাকেও, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকদের তো আরও। ওঁরা বেড়াতে এলে আমার মত রোদে পোড়া নাক বেয়ে সর্দি ঝরা মেয়ের চলাচলের সীমানা কুয়োর পাড় পর্যন্ত। কুয়োর পাড় ছাড়ালেই নানি বলেন–এইদিকে ঘূরঘুর করিস না। মেমান গেলে পরে আইস। দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম ঘরের বিছানায় তোষক যা গুটিয়ে রাখা হয় দিনের বেলা সেটি পেতে দিয়েছেন নানি, তার ওপর নতুন চাদর, ওতে বসে ফজলিখালার শ্বশুর আর স্বামী খাচ্ছেন। নানি পাকঘর থেকে গরম গরম তরকারি বাটি ভরে দিয়ে আসছেন, ফজলিখালা ঘোমটা লম্বা করে বাটি থেকে তরকারি তুলে দিচ্ছেন ওঁদের পাতে। ওদের খাওয়া শেষ হলে ওঁরা পান চিবোতে চিবোতে বিছানায় গড়াতেন। খেতে বসতেন ফজলিখালা, তাঁর শাশুড়ি, ননদ, মেয়েরা, হুমায়রা, সুফায়রা, মুবাশ্বেরা। নানি খেতেন সবার পরে, মেহমান চলে গেলে, বাড়ির লোকদের খাইয়ে। তখন আমার সীমান্ত খুলে যেত। আমাদের আর নানির উঠোনের মাঝখানে যে কুয়োর বেড়া, তা আমি অনায়াসে ডিঙোতে পারি।

 

বড়মামা পাকা উঠোনে খড়মের ঠকঠক শব্দ তুলে হাঁটতে হাঁটতে বলেন–ঠিক আছে আল্লাহর কথাই সত্যি, তাইলে আল্লাহ যেমনে কইছেন অমনে চল। তর জামাইয়ে তগোর বাড়ির দাসীর সাথে থাকতে পারব, অসুবিধা নাই। কারণ আল্লাহ কইছে, লা এহেল্লু লাকান্নিসাউ মিন বায়াদু ওলা আল তাবাদাল্লা বিহিন্না মিনা আযোআযেউ ওলাও আয়যাবকা হুসনু হুন্না ইল্লামা মালাকাতু ইয়ামিনুকা। মানে দাসীরা সঙ্গমের জন্য বৈধ। বালতির পানি বালতিতেই থেকে যায়। ফজলিখালার আর অযু করা হয় না, তিনি শব্দ করে পা ফেলে ঘরে ঢুকে আলনা থেকে একটানে বোরখাখানা নিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। কাঁদলে ফজলিখালার গাল হয়ে যায় পাকা আমের মত লাল। দেখতে বেশ লাগে। পটে আঁকা ছবির মত।

 

–মা, আমি যাচ্ছি। এই বাড়িতে আর এক মুহূর্ত থাকা সম্ভব না আমার। এত অপমান আমার সহ্য হয় না। ফজলিখালা চেঁচিয়ে বলেন।

 

নানি শুনে উঠোন থেকে দৌড়ে ঘরে গিয়ে ফজলিখালার হাত থেকে বোরখা ছিনিয়ে বলেন–কান্নাকাটির কি হইছে তর! সিদ্দিকের মুহের লাগাম নাই। দু’একটা আবোল তাবোল কথা কয়। এইল্লিগা তর রওনা হইতে হইব, এই রাইতেবেলা? শ্বশুরবাড়ির মাইনষে খারাপ কইব। যাইবি যা, ঈদটা কইরা যা।

 

বোরখাখানা নানির হাত থেকে এক ঝটকায় টেনে গায়ে পরতে পরতে ফজলিখালা বলেন–আর এক মুহূর্ত না। আমি কি শখে আসি এখানে। বাড়িতে এত লোকের শব্দে আমার মাথাব্যথা হয়, সে কারণেই তো আসি। এলে যদি ভাইরা অপমান করে, তাহলে আর কেন! ভেবেছিলাম বাপের বাড়িতে ঈদ করব। তাও হল না। হুমায়রার আব্বাকে নিয়ে কথা বলল মিয়াভাই। উনার মত পবিত্র মানুষ দুনিয়াতে আর কজন আছে!

 

নানি বেঁধে রাখতে পারেন না ফজলিখালাকে। তিনি যাবেনই। হাশেমমামা যান ফজলিখালাকে শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে। বাড়িটি থমথম করে সে রাতের জন্য। আমি নীরবে বসে আকাশের চাঁদের দিকে অবাক তাকিয়ে ভাবি কি করে চাঁদে মানুষ গেল, ওই টুকুন ছোট চাঁদে। মা বলতেন চাঁদে এক বুড়ি আছে, চাঁদের বুড়ি, ও বসে চরকা কাটছে। কিন্তু বড়মামা বলেন চাঁদে কোনও বুড়ি টুড়ি নেই, গাছপালা নেই, পানি নেই। চাঁদের দিকে তাকালে ওই যে বুড়ির মত দেখতে, আসলে ও অন্য কিছু, গর্তের ছায়া। চাঁদ যেমনই হোক, চাঁদের সঙ্গে আমার গোপন সখ্য গড়ে ওঠে। আমি যেখানে যাই, আকাশের হেঁটে চাঁদটিও যায় সেখানে। আমি খানাখন্দো হাঁটি, পুকুরঘাটে দাঁড়াই, সেও হাঁটে, দাঁড়ায়। নানির উঠোনে খানিক জিরোই, সেও জিরোয়। শর্মিলাদের বাড়ি থেকে দিব্যি এ বাড়িতে চলে এল।

 

নানির উঠোন থেকে আমার পেছন পেছন আমাদের উঠোনেও। বাঁশঝাড়ে গেলে ওখানেও।

 

ঈদের সকালে কলপাড়ে এক এক করে বাড়ির সবাই লাল কসকো সাবান মেখে ঠান্ডা জলে গোসল সারেন। আমাকে নতুন জামা জুতো পরিয়ে দেওয়া হয়, লাল ফিতেয় চুল বেঁধে দেওয়া হয়, গায়ে আতর মেখে কানে আতরের তুলো গুঁজে দেওয়া হয়। বাড়ির ছেলেরা শাদা পাজামা পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি পরে নেন। তাঁদের কানেও আতরের তুলো। সারা বাড়ি সুগন্ধে ছেয়ে যায়। বাড়ির পুরুষদের সঙ্গে আমিও রওনা দিই ঈদের মাঠে। সে কি বিশাল মাঠ! বড় বড় বিছানার চাদর ঘাসে বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ান বাবা, দাদা ছোটদা, আর সব মামারা, বড় মামা ছাড়া। মাঠে মানুষ গিজ গিজ করছে। নামাজ শুরু হলে যখন সবাই উবু হন, দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে দেখি সেই দৃশ্য। অনেকটা আমাদের ইস্কুলের এসেম্বলিতে পিটি করার মত, উবু হয়ে পায়ের আঙুল ছুঁই যখন, এরকম লাগে হয়ত দেখতে। নামাজ সেরে বাবারা চেনা মানুষের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। কোলাকুলি করার নিয়ম কেবল ছেলেদের। বাড়ি ফিরে মা’কে বলেছিলাম চল ঈদের কোলাকুলি করি। মা মাথা নেড়ে বলেছেন মেয়েদের করতে হয় না। ক্যান করতে হয় না? প্রশ্ন করলে বলেছেন নিয়ম নাই। কেন নিয়ম নেই? প্রশ্নটি চুলবুল করে মনে। মাঠে গরু কোরবানি দেওয়ার আয়োজন শুরু হয়। তিন দিন আগের কেনা কালো ষাঁড়টি বাঁধা কড়ইগাছে, কালো চোখ দুটো থেকে জল গড়াচ্ছে। দেখে বুকের ভেতর হু হু করে ওঠে আমার, কী জীবন্ত একটি প্রাণী জাবর কাটছে লেজ নাড়ছে, আর কিছুক্ষণ পরই হয়ে


Rx Munna

447 Blog posts

Comments