হৃদয়ের একূল ওকূল
কাগজে সই নিয়ে যাবার মাস দুই পর রুদ্র চিঠি লেখে, বউ সম্বোধন করে। সম্বোধনটি পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কেমন অদ্ভুত আর অচেনা এই ডাকটি। আমি তবে কারও বউ! ওই সইটি তবে কি সত্যি সত্যি বিয়ে ঘটিয়ে দিয়েছে! অবিশ্বাস্য একটি কাণ্ড। নিজের বিয়ে, কোনওদিন কল্পনাও করিনি ওভাবে হবে, হবে যে কোনওদিন, সে বিশ্বাসই ছিল না। জানুয়ারির ছাব্বিশ তারিখে কাগজে সই করলাম, আর কাগজটি উকিলের কাছে দিয়ে আসার পর উকিল তাঁর নিজের সই আর সীল বসালেন উনত্রিশ তারিখে। শাদামাটা চিঠিতে রুদ্র জানিয়েছে, উনত্রিশ তারিখটি আমাদের বিয়ের তারিখ। উনত্রিশ তারিখে আমি কি করছিলাম, ভাবি, সারাদিন কি একবারও রুদ্রর কথা ভেবেছি? না ভাবিনি, সময় পাইনি, মরা মানুষ কেটেছি, ছোটখাট একটি পরীক্ষা ছিল, প্রচুর পড়তে হয়েছে, পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে আর দিনের মতই টেলিভিশন দেখেছি, ভাই বোনের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতেছি, আর দিনের মতই কবিতা পড়েছি, গান শুনেছি, খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়েছি। রুদ্রর চিঠি পেয়ে যতই আমি নিজেকে বলি, দেখ তুই এখন আর অবিবাহিত নস, রীতিমত এক লোকের বউ। বিয়ে করলে তো বউই হতে হয়। এরকমই তো নিয়ম, তুই চাস বা না চাস কাগজের ওই সইটিই তোর বিয়ে ঘটিয়েছে, ওই বলাই সার, ব্যাপারটিকে আমার বোধ ও বিশ্বাসের অনগ্তর্ ত করতে পারি না। আমি সত্যি করে অনুভব করতে পারি না যে আমি আর আগের আমি নই, আমি এখন নানি,মা, ফজলিখালা,রুনখুালার মত বিবাহিতা। চন্দনাও বিবাহিতা। বিয়ের পর চন্দনা লিখেছে আমি এখন ভয়শূন্য এক মানুষ। জীবন বাজি রেখে স্বপ্নের হাত ছুঁয়েছি। আমি খুব গভীর করে স্বপ্ন দেখতে জানি এখন। জীবন তো আমার একটাই। আমি ভুল করিনি। আমি এখন হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারি রক্তগোলাপ। বিবাহিতা চন্দনার আবেগ চাইলেও আমার ভেতর সঞ্চারিত হচ্ছে না। আমার বোধের সীমানায় নেই পুরুষের স্পর্শ নারীর শরীরে কিরকম কাপঁ ন তোলে, আর সেই কাপঁ ন কি রকম তৃষ্ণা জাগায়। কলেজে পুরুষ বন্ধু যা আছে, তা কেবলই বন্ধু। চন্দনা যেমন। কোনও পুরুষকে আজও আমার চুমু খাওয়া হয়নি। কারও জন্য শরীরে কোনও তৃষ্ণা অনুভব করি না। তৃষ্ণা বলে যে একটি জিনিস আছে তা আমার নেহাতই জলের বা চায়ের বা খুব গরমে লেবুর শরবতের।
বউ সম্বোধন করে লেখা রুদ্রর দ্বিতীয় চিঠিটি বাবার হাতে পড়ে। ডাকপিয়ন বাড়িতে চিঠি দিয়ে গেছে, আর পড়বি পড় মালির ঘাড়ে, বাবার হাতে। বাবার যেহেতু অন্যের চিঠি খুলে পড়ার প্রচণ্ড শখ, তিনি পড়েন। তার মেয়েকে কেউ বউ বলে ডাকছে, তিনি তা খালি চোখে, চশমা চোখে সব চোখেই দেখেন। ঘরময় পায়চারি শুরু হয় বাবার, আমার পড়ার টেবিলের বইখাতা তছনছ করেন আরও তথ্য পেতে। ঘন ঘন তিনি চশমা খুলতে থাকেন, চেয়ারে বসতে থাকেন, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে থাকেন, একসময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান, রোগী দেখায় মন বসে না, আবার বাড়ি ফেরেন। এবার