বদলে যাচ্ছে

বদলে যাচ্ছে

অবকাশের চেহারাটি খুব পাল্টো গেছে। ইয়াসমিন মেট্রিক পাশ করেছে। পাশ করেছে প্রথম

বদলে যাচ্ছে

 

অবকাশের চেহারাটি খুব পাল্টো গেছে। ইয়াসমিন মেট্রিক পাশ করেছে। পাশ করেছে প্রথম বিভাগে। রসায়নে একটি লেটার আছে তার। এই লেটারের কারণে ইয়াসমিন আমার চেয়ে বেটার ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে সংসারে। বাবা,ওকেও, স্বপ্ন দেখেন ডাক্তারি পড়াবেন। ওর আনন্দমোহনে ভর্তি হওয়ায় বাবা আপত্তি করেননি। ইয়াসমিন হঠাৎ করে যেন অনেক বড় হয়ে গেছে। আগের ছোট্ট বাচ্চাজ্ঞট নেই আর। আমরা দুবোন কোথাও গেলে, অনেকে, যারা ইয়াসমিনকে চেনে না, ভাবে যে ও আমার বড় বোন, গায়ে গতরে আমার চেয়ে বেশি বেড়ে উঠেছে বলেই। আমি যে বয়সে ওড়না পরতে শুরু করেছি, অবশ্য ঘরে নয়, বাইরে, ইয়াসমিনকে তার আগেই পরতে হয়েছে। বুকের বেঢপ বেড়ে ওঠার কারণে ও কুঁজো হয়ে হাঁটতে শুরু করেছে আমার মতই, ওড়না না পরার মাশুল এভাবেই দিতে হয় কি না। মা ওর কুঁজো পিঠেও কিল দিয়ে বলেন, সোজা হ। ওড়না পইরা আয়, তবু সোজা হইয়া হাঁট। বড় হইছে মেয়ে ওড়না পরতে শরম কেন? বয়সে না হয় বড় লাগে আমার চেয়ে ওকে, দুজনের মধ্যে দেখতে কে সুন্দর এই প্রশ্ন উঠলে, আমার দিকে পাল্লা ভারি হয়। ইয়াসমিন নিজের চেহারা, বয়সের চেয়ে বেশি বয়স দেখতে লাগা শরীরটি নিয়ে ভোগে মনে মনে। অথচ চোখের তুলনা করলে ও যদি হরিণ হয়, আমি হাতি,ওর ঘন কালো চুলের সামনে আমার চুল নিতান্তই ফিনফিনে, কিন্তু ছোট নাক, ছোট চিবুক, পুরু ঠোঁট নিয়ে ইয়াসমিনের খুঁতখুঁতুনির শেষ নেই। ওর ভেতরে গোপনে গোপনে একটি ঈর্ষার জন্ম হয়। আমার কোনও ঈর্ষা হয় না, বরং ওকে বাইরের সকল প্রলোভন থেকে, ভুল থেকে মিথ্যে থেকে সরিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়। আমি কিছুতেই চাই না আমি যে দুঃখ বাবাকে দেব, সেরকম কোনও দুঃখ ইয়াসমিনও দিক। আমার চোখের ওপর একটি স্বপ্নের প্রজাপতি এসে বসে, বলে, ইয়াসমিন মেডিকেল কলেজে পড়বে, আমি যত বড় ডাক্তার হব, তার চেয়ে বড় হবে ইয়াসমিন। ডাক্তারি পাশ করে হাবিবুল্লাহর মত কোনও সুদর্শন ডাক্তার ছেলেকে বিয়ে করবে। এতে যদি আমার দেওয়া দুঃখ খানিক লাঘব হয় বাবা মার। ইয়াসমিনের ঈর্ষা আমাকে ব্যথিত করে। লক্ষ করি ও দূরে সরছে। আমার গায়ে গায়ে লেগে থাকা ইয়াসমিন এখন দাদার বউএর গায়ে গায়ে বেশি লেগে থাকে। কলেজে যায় আসে, বাকিটা সময় দাদার বউএর সঙ্গে হাস্যরসের ঢলে সাঁতার কাটে। যদি ওর পড়াশোনার খবর নিতে যাই, ও এমন চোখ করে তাকায় আমার দিকে যেন আমি ওর সবচেয়ে বড় শত্রু। ছোটদা নেই অবকাশে। সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আমার মেতে থাকা নেই। ছোটদা যেহেতু লেখাপড়া না করা, অকালে বিয়ে করা, টইটই করে ঘুরে বেড়ানো বখাটে ছেলে ছিলেন, তার সঙ্গে, নাচ গান কবিতা নাটকের অনূষ্ঠানে বাবাকে লুকিয়ে মাকে নিমরাজি করিয়ে আমার আর যাওয়া হয় না। ছোটদাও এখন পাল্টো গেছেন। তাঁকে এখন এ বাড়িতে বড় পিঁড়িটি দেওয়া হয়, টুডাইল্যা নামটি তাঁর ঘুচেছে, তিনি আর খবর রাখেন না শহরে কোথায় কি হচ্ছে, কোথায় নাটক, কোথায় নাচ গান। দাদা আছেন, তবে থেকেও নেই। এ বাড়ির মানুষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বদলে গেছেন দাদা। তিনি আর সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে মাথা ঘামান না। সেঁজুতির প্রসঙ্গ এলে তিনি আর বলেন না, যা আমি ছাপাইয়া দিয়াম নে। সংসারের অন্য কারও কিছু নিয়ে মাথা ঘামান না। গান শোনা, ছবি তোলা, নিজের সুটবুট কেনা, দামি সগু ন্ধি মাখা এসব ব্যাপারেও তাঁর আগ্রহ নেই আর। তিনি বউএর জন্য শাড়ি গয়না কেনায় ব্যস্ত। প্রায়ই শাড়ি কিনে নিয়ে আসেন, আমাদের দেখান শাড়ি কেমন হয়েছে, আমরা বলি খুব ভাল শাড়ি, খুব মানাবে বউকে। বউএর আত্মীয়ের বাড়িতে নিমনণ্ত্র খেতে ব্যস্ত দাদা। বাড়িতে অতিথি এখন বেশির ভাগই হাসিনার বোন, বোনজামাই, ভাই, ভাইবউ ইত্যাদি। আত্মীয়ের মধ্যে কে ভাল, কে মন্দ, কে বেশি কথা বলে, কে কম, কে দেখতে সুন্দর, কে নয়, কার কত ধন আছে, কার কত দারিদ্র এসব নিয়ে আলোচনা করতে তিনি পছন্দ করেন বেশি। বাঁশের কঞ্চির মত শরীর হাসিনার। মা প্রতিদিন ভাল ভাল রান্না করে তাকে খাওয়াচ্ছেন। হাসিনা দাদার সঙ্গে প্রায় বিকেলে বেড়াতে যায়, বাকিটা সময় মুখে কাঁচা হলুদ মেখে দুপুরবেলা বারান্দায় বসে থাকে, অনেকক্ষণ সময় নিয়ে গোসল করে, পাঁচ ছ বেলা খায়, আর ঘুমোয়। তবু সে একটি নতুন জিনিস বাড়িতে, আমাদের উৎসাহ কমে না। বিশেষ করে ইয়াসমিনের। ইয়াসমিন হাসিনার সঙ্গে লেপ্টে থাকে, এমনকি হাসিনার ব্লাউজ খুলে স্তন মুঠোয় নিয়ে মায়ের দুদু খাওয়া বাচ্চার


Rx Munna

447 Blog posts

Comments