নিষেধের বেড়া

নিষেধের বেড়া

নিষেধ কেন! শুদ্ধ সুন্দর থাকার জন্যই তো

নিষেধের বেড়া

 

নিষেধ কেন! শুদ্ধ সুন্দর থাকার জন্যই তো! এ ব্যাপারটির সঙ্গে সম্পর্কে আমার জন্মের মত চুকেছে। আর তবে কি কারণে আমার ওপর আদেশ নিষেধ! কিসের জন্য আমি বাবা মার আদেশ নিষেধ পালন করতে যাব। ওঁদের তো আর ভয়ের কিছু নেই। যে কারণে ভয় তার চেয়ে অনেক বড় কিছু ঘটে গেছে আমার জীবনে। আমার জন্য আর সতর্কে থাকার কিছু নেই। নিষেধ আরোপ করেই বা লাভ কি!নিষেধের বেড়া আমি পার হই। বেড়া ডিঙিয়ে ঘাস না খাই, বেড়া ডিঙিয়ে রুদ্রকে অবকাশে নিয়ে যাই। সবাই দেখুক কাকে আমি ভালবাসি, সবাই জানুক যখন জানতেই হবে একদিন, যখন ডাক্তারি পাশ করে তার কাছে যেতেই হবে সারাজীবনের জন্য! রুদ্রর সঙ্গে কারও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেও রুদ্রকে নিয়ে যাওয়া নয় বাড়িতে। অবকাশে হরদম আমার ক্লাসের বন্ধুরা আসছে। কেবল বন্ধুরাই নয়, বড় ক্লাসের ভাইরা জ্ঞান দিতে আসেন, ছোট ক্লাসের ভাইরা জ্ঞান নিতে আসে। কারও জন্য বাধা নয় আর অবকাশ, বাবা হয়ত অনেককে দেখে আড়ালে দাঁতে দাঁত ঘঁত্রে, কিন্তু সামনে কখনও নয়, তিনি নিস্পৃহতা দেখান, দেখিয়েছেন কিন্তু কাউকে তাড়িয়ে দিতে পারেননি, কাউকে মুখের ওপর বলতে পারেননি চলে যাও, ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কটিই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃতিত্ব আমারও আছে, আমিই সেই মেডিকেলের প্রথম বর্ষ থেকে একটু একটু করে এ বাড়িতে চোখ সওয়া করেছি ছেলেপিলেদের উপস্থিতির, কেবল রুদ্রর জন্যই অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল, রুদ্রর জন্যই ভয় ছিল আমার, এই ভয়টি আমার হঠাৎ করেই উবে গেছে, তাই নিষেধাজ্ঞাটি ডিঙোতে আমার বুক ধুকপুক করে না। ইয়াসমিন বাড়িতে ছিল। মাও ছিলেন। কিন্তু রুদ্রর সামনে কারও যাওয়া হয়নি। তার চা খাওয়া হয়নি। চা খেতে খেতে বাড়িতে আসা আর ছেলেরা যেমন গল্প করে আমার সঙ্গে, তেমন করা হয়নি। কারণ বাবা এসেছেন। এই দুপুরবেলার সাড়ে বারোটায় চরম অসময়ে বাবার বাড়ি আসার কোনও কারণ নেই তবওু এসেছেন তিনি। আমরা দুজন তখন কেবল বাড়িতে ঢুকেছি। বাইরের দরজা তখনো হাট করে খোলা। রুদ্র কেবল সোফায় বসেছে। আমি কেবল বৈঠকঘর পার হয়ে ভেতর বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাএর কথা বলতে যাবো লিলিকে বা নার্গিসকে বা সুফিকে বা মাকে, তখন কালো ফটক খোলার শব্দ শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি বাবা হেঁটে আসছেন মাঠ পেরিয়ে সিঁড়ি পেরিয়ে বারান্দাঘর পেরিয়ে বৈঠকঘরের দিকে। রুদ্রকে দেখলেন তিনি,বিস্ফারিত দু চোখ রুদ্রর দিকে ফেলে, তর্জনি কালো ফটকের দিকে তুলে, সারা বাড়ি কাঁপিয়ে তিনি বললেন, গেট আউট। বাবার চিৎকারে রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন মা, শোবার ঘর থেকে ইয়াসমিন। রুদ্র কালো ফটকের বাইরে অদৃশ্য হতেই আমি সকলকে হতবাক করে দিয়ে ফটকের দিকে হেঁটে যাই। পেছনে বাবার রক্ত চোখ, পেছনে তর্জনি, পেছনে মার আর্তচিৎকার নাসরিন যাইস না, ফিইরা আয়, পেছনে ইয়াসমিনের বুবু বুবু বলে আমাকে ফেরাতে চাওয়া।

 

পিচ গলছে রাস্তায়। গোলপুকুর পাড়ের দিকে হাঁটতে থাকা রুদ্রর কাছে পৌঁছোই আমি, রুদ্র ফুঁসছে রাগে। আমি যে নিষেধের এই বেড়া ডিঙিয়ে তার কাছে চলে এলাম, আমি যে একদিকে বাবা মা বোন আরেক দিকে রুদ্র এ দুজনের মধ্যে রুদ্রকে বেছে নিলাম, এ যে কত বড় একটি পদক্ষেপ আমার, এ সম্ভবত তার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি। আমি যে সবল অস্বীকার করলাম তাঁকে যাকে আমি সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি, যিনি আমার জীবনটি গড়ে তুলতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছেন, তাঁরই আদেশ জীবনে এই প্রথম আমি অমান্য করার সাহস করেছি, তাঁরই রক্তচক্ষুকে জীবনে এই প্রথম আমি পরোয়া করিনি, তাঁরই অহঙ্কার আমি চুড়ো থেকে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়েছি মাটিতে, তাঁরই সম্মান আমি আজ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি, তাঁরই স্বপ্ন আমি আজ ভেঙে টুকরো করেছি, বোঝা সম্ভব নয় বলেই রুদ্র বলে, আমাকে অপমান করতে বাড়িতে নিয়েছিলে তুমি! না অপমান করতে নয়। আমি তো জানতাম না বাবা অমন হঠাৎ বাড়ি আসবেন! তুমিই তো চাইতে অবকাশে যেতে, বাবার সঙ্গে দেখা করতে! চাইতে তো! চাইতে না! গোলপুকুর পাড়ের আগুনে রাস্তা থেকে একটি রিক্সা নিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ডের দিকে দুজন। কোনও প্রস্তুতি নেই আমার ঢাকা যাওয়ার কিন্তু বাসে চড়ি। বাড়ি থেকে অনুমতি তো নেওয়া হয়ইনি, এমন কি কাউকে না জানিয়ে, যে, আমি ঢাকা যাচ্ছি, আমি বাসে চড়ি। সকলে ভাববে কোথায় আমি, আমি কেন বাড়ি ফিরছি না, বিকেল হবে রাত হবে দুশ্চিন্তা বাড়বে তা জেনেও আমি বাসে চড়ি। বাস যেতে থাকে


Rx Munna

447 Blog posts

Comments