জুন। শনিবার
ফোন এল। একটি কণ্ঠস্বর। কণ্ঠস্বরটি অচেনা।
–আপনার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট হয়েছে। আপনি বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে।
–আপনি কে বলছেন?
–আমাকে আপনি চিনবেন না।
–নাম বলেন।
–আমার নাম শহিদ। আমি আপনার শুভাকাঙ্খী। আপনার বাড়িতে পুলিশ যাচ্ছে, আপনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। দেরি করবেন না।
কি কারণে হুলিয়া জারি এসবের কিছুই না বলে ফোন রেখে দিল লোকটি। শহিদ নামের কোনও লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। ভাবি, কী কারণ থাকতে পারে এই ফোনের! লোকটি যে ই হোক, লোকটি চাইছে আমি যেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। কোনও ষড়যন্ত্র এর পেছনে লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই। ভাবতে ভাবতে আমি বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখতে থাকি সামনের রাস্তায় কোথাও কেউ সন্দেহজনক দাঁড়িয়ে আছে কি না। সম্ভবত আশে পাশের কোথাও থেকে লোকটি ফোনটি করেছে, আমি বেরিয়ে গেলে সে তার দলের লোক নিয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। কৌশলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে আমাকে মেরে ফেলার ফন্দি এঁটেছে লোক। বাইরে বেরোবার দরজা দুটো একবার দেখে নিই খিল আঁটা আছে কি না। কদিন আগে একটি ফোন এসেছিল এরকম, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সোজা বলল, আপনার বাড়িতে পুলিশ আসছে। কেন পুলিশ আসছে, কি করতে আসছে কিছুই জানায়নি সেই সাংবাদিক। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় বসে ছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে যাদুকর জুয়েল আইচ ফোন করলে পুলিশ আসছে এই খবরটি দিই। জুয়েল আইচ তক্ষুনি ভীত উত্তেজিত স্বরে বললেন, তসলিমা আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে।
–কোথায় যাবো এ সময়?
–কোথাও কারও বাড়িতে চলে যান। আপনি বুঝতে পাচ্ছেন না, কি ভয়ংকর কাণ্ড যে হয়ে যেতে পারে। পুলিশের ওপর কোনও বিশ্বাস নেই।
–এ সময়ে কার বাড়িতে যাবো! রাত হয়ে গেছে..। মিনমিন করি।
–রাত হয়েছে তাতে কি! আশে পাশের ফ্ল্যাটে কোথাও চলে যান।
–কাউকে তো চিনি না।
–আমার এক চেনা লোক আছে দু নম্বর বিল্ডিংএ। আমি তাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। আপাতত তার বাড়িতে চলে যান।
–কিন্তু গিয়েই বা কি লাভ। ফিরে তো আসতেই হবে নিজের বাড়িতে। কারও বাড়িতে লুকিয়ে থেকে কি আর অ্যারেস্ট এড়ানো যাবে। পুলিশ আজ না হোক কাল আমাকে খুঁজে পাবেই। তার চেয়ে যেখানে আছি সেখানেই থাকা ভাল।
জুয়েল আইচ আরও কয়েকবার আমাকে বাড়ি ছাড়ার জন্য অনুরোধ করে ফোন রাখলেন দু নম্বরের চেনা লোককে ফোন করতে। আমি যাইনি বাড়ি ছেড়ে। পুলিশও আসেনি আমার বাড়িতে।
এ ধরনের কোনও ফোনের খবরকে বিশ্বাস করার কোনও মানে হয় না। এটি নেহাত ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। ফোনে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়, গলা কেটে রাস্তায় ফেলে রাখবে, মুণ্ডু উড়িয়ে দেবে, কিন্তু বলাই সার, হাতে নাতে আততায়ীরা আমাকে