জুন, শুক্রবার
–তসলিমা, ঘুমিয়েছো রাতে?
–না।
–ঘুম আসছে না?
–নাহ!
–তুমি জানো আজ তোমার বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে গণবিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে!
–জানি।
–জানো আজ মিছিল তোমার বাড়ির দিকে যাবে! তোমার বাড়ি ঘেরাওএর কর্মসূচি আছে, জানো?
–জানি।
–তুমি জানো যে ৩০ তারিখ তোমার ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে হরতাল ডাকা হয়েছে?
–জানি।
–তুমি জানো যে তোমার ঠিকানায় বিদেশ থেকে আসা চিঠিপত্র পত্রপত্রিকার পার্সেল কাস্টমসএ আটক করা হয়েছে?
–না।
–আজ পত্রিকা পড়েছো?
–না।
–কেন পড়নি? ভয় হয় বুঝি! আবার যদি দেখ তোমার পক্ষে কোনও বিবৃতি কেউ দেয়নি! তোমার বাক স্বাধীনতার পক্ষে কেউ কথা বলেনি! ভয় কেন! মানুষের সত্যিকার চেহারাটা এবার একটু চিনে নাও। ওঠো। দেখ। পড়। বোঝো।
–কেউ কি লিখেছে কিছু আজ?
–তোমার মত বোকা আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। আজও সব পত্রিকায় বিবৃতি গেছে, গতকাল কুলিয়ে উঠতে পারেনি ছেপে। আজও বিবৃতিতে ভরে আছে পত্রিকা! কেউ বলেনি তোমার কথা। তোমার কথা বলবে কেন? তুমি কে? তুমি কিμছু না। তুমি একটা ঘোড়ার ডিম। তুমি বোকার মত একা বসে বসে কেবল লিখেছো, সমাজের সমস্ত অন্ধকার দূর করার জন্য লিখেছো। কি লাভ হয়েছে লিখে? আজ সবাই জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের মুক্তি চেয়েছে, তাদের মামলা হুলিয়া তুলে নেওয়ার দাবি করেছে। একটা কথা কি জানো? ধর্মের সমালোচনা তো অনেকেই করে, কিন্তু মৌলবাদীরা তোমাকে টার্গেট করেছে কারণ তারা জানে যে তুমি একা, তুমি অসহায়, এ দেশে তোমার পক্ষে দাঁড়াবার মত কোনও ব্যক্তি নেই, সংগঠন নেই, কোনও রাজনৈতিক দল নেই। মৌলবাদীদের এই উত্থানে মদত দিচ্ছে কারা, তা জানো? দিচ্ছে তাবৎ রাজনৈতিক দল, প্রগতিশীল ব্যক্তি, সংগঠন, আর বুদ্ধিজীবী – বিবৃতিঅলাদের নীরবতা। তোমাকে ফাঁসি দিচ্ছে আসলে মৌলবাদীরা নয়, ফাঁসি দিচ্ছে প্রগতিশীলরা। আজও মৌলবাদীদের পত্রিকা ছাড়া আর সব পত্রিকায়, বাংলা বল ইংরেজি বল সব পত্রিকায় জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সরকারের মামলা দায়েরের নিন্দা করে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে, উপসম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। কলাম ছাপা হয়েছে। কোথাও কেউ ভুলেও যোগ করছে না তোমার নাম। কেউ ভুলেও প্রতিবাদ করছে না তোমার মামলার।
–কেউই আমার কথা উল্লেখ করেনি