বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতি সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি শিল্প হল মাটির তৈজসপত্র। হাজার বছরের পুরনো এই শিল্পকলা আজও জীবন্ত গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে যার ছোঁয়া পাওয়া যায়। মাটি থেকে গৃহস্থালির উপযোগী জিনিসপত্র তৈরি করার প্রক্রিয়া শুধু একটি পেশা নয় এটি এক ধরনের শিল্পকর্ম যা গ্রামের মানুষের সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ।
মাটির তৈজসপত্রের ইতিহাস:
বাংলার মাটি তৈজসপত্র ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। আমাদের ইতিহাসে উল্লেখ্য রয়েছে যে মুঘল আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসনের আমলেও এই শিল্পের চাহিদা ছিল প্রচুর। গ্রামের মাটির শিল্পীরা তাদের নিপুন হাতে তৈরি করতেন মাটির হাড়ি কলসি পাতিল প্রদীপ ফুলদানি ইত্যাদি।
তৈজসপত্র তৈরির প্রক্রিয়া :
মাটির তৈজসপত্র তৈরীর প্রক্রিয়া বেশ পরিশ্রমী এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। প্রথমে সাদা বা লাল মাটি সংগ্রহ করা হয় যা নরম এবং আঠালো হয়। এরপর সেই মাটি কাদা করে বিভিন্ন আকৃতি তৈরি করা হয়। তৈজসপত্রের গঠন সম্পন্ন হলে সেগুলো রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়ে থাকে। পরে খড় পাতা বা কাঠ দিয়ে বিশেষ চুল্লিতে জ্বালিয়ে শক্ত করা হয়। এরপর কিছু কিছু পাত্রে রং বা পালিশ দেওয়া হয় যা তাদের আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলে।
মাটির তৈজসপত্রের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
মাটির তৈজসপত্র শুধু গৃহস্থালির জিনিস নয় এটি বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ। বিভিন্ন উৎসব এবং পূজা পার্বণে মাটির তৈরি প্রদীপ ঘড় এবং অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার করা হয়। গ্রাম্য মেলাগুলিতেও মাটির পণ্য বিক্রির ধুম পড়ে যায়। এগুলো কেবলমাত্র দৈনন্দিন জীবনের অংশ নয় বরং বাংলার শিল্প ও সাংস্কৃতির একটি প্রতীক।