জুলাই, শনিবার
ইসলাম কায়েম না হওয়া পর্যন্ত এই গণজাগরণ থামবে না–বলেছেন শায়খুল হাদিস। গতকাল ৩০ জুনের হরতালে পুলিশের গুলিতে কিশোরগঞ্জের শহীদ আরমানের রুহের মাগফেরাত কামনা ও নাস্তিক মুরতাদ এনজিও এজেন্টদের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে দোয়া ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এনজিও তৎপরতা ও নাস্তিক মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের আহবায়ক এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস বলেছেন, রক্তের বিনিময়ে হলেও এ দেশে ইসলাম চাই। আজ দালাল চিহ্নিত হয়ে গেছে। এ দালাল-আসামীরা ছুটে গেলে সরকারকেই আসামী চিহ্নিত করা হবে। ন্যায়ের অগ্রাভিযান দেখে বাতিলের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তাতে কোনও ভয় নেই। সত্য তুলে ধরার জন্য ইনকিলাব সম্পাদকের প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। মুসলমানরা অসত্যের কাছে মাথা নত করতে জানে না।
আরমানকে নিজের দলের সদস্য দাবি করে অন্য কোনও দলই মিছিলে নামছে না। এমনিতে পুলিশের গুলিতে কেউ মারা গেলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাড়াকাড়ি বাঁধে নিহতকে নিজের দলের লোক বলে দাবি করতে। এবার আওয়ামী লীগের কোনও দাবি নেই। সুতরাং এ ছেলে খুব স্বাভাবিকভাবেই শায়খুল হাদিসের দলের ছেলে।
এদিকে গতকাল সিলেটে মৌলবাদীরা পাটমন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পাটমন্ত্রী হান্নান শাহ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি যখন সার্কিট হাউজ থেকে লাকাতুরা গলফ ক্লাবে যাচ্ছিলেন, তখন পৌর পয়েণ্টে নাস্তিক মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভা থেকে ধর ধর মুক্তিযোদ্ধা ধর, চিৎকার করে মন্ত্রীর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। গাড়ি ভেঙে যায়। মন্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত পুলিশেরা সার্কিট হাউজে ফেরত গেছেন। পুলিশ আর মৌলবাদীতে একটা সংঘর্ষ হয়ে যায়, ১৫ জন আহত হয় ইট পাটকেলের আক্রমণে। মৌলবাদীদের হামলায় বিএনপিকর্মীরা ক্ষুব্ধ হওয়ায় শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর শহরে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে, এবং মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জে আরমানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। জানাজায় কুড়ি হাজারেরও বেশি লোক অংশ নেয়। কিশোরগঞ্জ শহরে এখনও উত্তেজনাকর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ সুপার ছ জন পুলিশকে সাসপেণ্ড করেছেন। শহরে ১৪৪ ধারার মেয়াদ আরও ৪৮ ঘন্টা বাড়ানো হয়েছে। ভোরের কাগজের একটি ছোট্ট খবর সবকিছুর আড়ালে পড়ে আছে, খবরটির শিরোনাম তসলিমার ছোট বোনকে টেলিফোনে হুমকি। তসলিমা নাসরিনের পারিবারিক সূষেন জানা যায় গত দুদিন থেকে টেলিফোনে কে বা কারা তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তসলিমার ছোট বোন ইয়াসমিন জানায়, গত কয়েকদিন ধরে টেলিফোনে তাকে রাস্তায় বেরোলে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
আজকের কাগজের খবর, ধর্মব্যবসায়ী শিবির সন্ত্রাসীদের হাতে ব্যাংক কর্মকর্তা লাঞ্ছিত। গালিব রেজা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা ইসলামি শিবিরের সশস্ত্র লোকদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচলেও শরীরে আটটি শেলাই ও ভাঙা হাত নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। গত বৃহস্পতিবার সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্র সমাজ আহুত হরতাল চলাকালে গালিব রেজা হেঁটে মতিঝিলে যাচ্ছিলেন। শিবিরের ক্যাডাররা তাকে নির্মূল কমিটির লোক ভেবে পেটাতে শুরু করে। আশেপাশে সহকর্মীরা শেষ পর্যন্ত গালিবকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। হরতালের দিন নিরীহ পথচারীদের তো আছেই, বিভিন্ন দৈনিকের সাংবাদিকদেরও মৌলবাদীরা লাঞ্ছিত করেছে।
বাসদের নেতা খালেকুজ্জামান তোপখানা রোডে মৌলবাদীদের বোমাবাজির নিন্দা করেছেন। বলেছেন, দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে এরা আজ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। দেশের অসংখ্য মানুষ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করছেন, এর জন্য বোমার দরকার হচ্ছে না। কিন্তু মৌলবাদী শক্তির নজর পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কাঁচা টাকার দিকে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এরা কোটি কোটি টাকা নিচ্ছে আর দেশের সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ধর্মকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। ধর্মের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য দেশের মানুষকে সচেতন থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসির সঙ্গে ডঃ কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে। কামাল হোসেন বলেছেন, মৌলবাদী শক্তিগুলো বুঝতে পেরেছে যে দেশে যদি গণতন্ত্র সুসংহত হয়, সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তাদের রাজনীতির অবসান ঘটবে। মৌলবাদীরা তাই কখনও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে দেবে না। তারা চায় না যে গণতন্ত্র সুংহত হোক। তারা আজকে একটা অদ্ভুত রকমের কৌশল নিয়েছে, তা হল একদিকে তারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে, আঁতাত করেছে, পার্লামেণ্টে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করেছে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে মৌলবাদীরা বিরোধী দলের সঙ্গে আঁতাত করে পার্লামেন্ট ত্যাগ করছে লাগাতারভাবে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল, তারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে একটা অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করছে। পার্লামেন্টকে অকার্যকর করার ব্যাপারে তারা একটা ভূমিকা রাখছে। পার্লামেণ্টের বাইরে তারা বিভিন্ন অজুহাতে একটা উত্তপ্ত অবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
প্রয়োজনে মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করা হবে– এ কথাটি তাহাফফুজে হারমাইন কমিটির সভাপতি মাওলানা সাদেক আহমেদ বলেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আমার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন, এ কারণেই মূলত প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাদেক আহমেদ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের তসলিমাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে গড়িমসি রহস্যজনক এবং মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে। এমতাবস্থায় প্রয়োজনে আমেরিকার দূতাবাস অবরোধ