সাত জুলাই, বৃহস্পতিবার
ট তাঁর বৈঠক ঘরের দরজা বন্ধ করে কথা বলেন। একা তিনি, কথা কার সঙ্গে বলেন তবে! অনুমান করি তিনি ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। ফোন বাজেনি, কিন্তু কথা বলছেন ফোনে। এর অর্থ চাবি দিয়ে তালাটি খুলে তিনি কথা বলছেন। ট যে আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেছেন ফোনের চাবি হারিয়ে গেছে, সেটি বলে তাঁকে লজ্জা দিতে ইচ্ছে করে না। আমি যেন শুনিনি ফোনে তিনি কথা বলছেন, যেন বুঝতে পারিনি কিছু, এমন ভাব করে থাকি যখন তিনি দরজাটি খুলে আমাকে ডাকেন ওই ঘরে, এবং আমি যাই। তিনি আমাকে বলেন, একা একা বসে থাকতে খারাপ লাগলে আমি যেন এ ঘরে এসে বই টই পড়ি। আমাকে ও ঘরে বসিয়ে তিনি কতগুলো ছবি তুললেন। ছবি তোলা তাঁর শখ। বেশ ভাল ছবি তোলেন। বড় বড় ক্যামেরা আছে তাঁর। ট মানুষটি খুব আধুনিক। ঘরে তাঁর একটি কমপিউটার আছে, ওতে তিনি ইলেকট্রনিক মেইলএর একটি ব্যবস্থা করতে চাইছেন। লন্ডনে তাঁর বান্ধবীর কাছে সেকেণ্ডের মধ্যে তিনি চিঠি পাঠিয়ে দিতে পারেন। আবার পৃথিবীর যে কোনও দেশ থেকেও তাঁর কাছে এক সেকেণ্ডেই কোনও খবর বা চিঠি চলে আসতে পারে। আজকাল নাকি মানুষের মধ্যে যোগাযোগের পথ আশ্চর্য রকম সহজ হয়ে যাচ্ছে।
দুপুরে ভাত নিয়ে নীলাম্বরী রুমানা আসেন। রুমানা টর বান্ধবীর বান্ধবী, আবার করও বান্ধবী। রুমানা খুব অসংকোচে নিজের জীবনের কথা বলেন। বিয়ে করেছিলেন, স্বামী তাঁকে আরও লেখাপড়া করতে দিতে চায়নি, চাকরি করতে দিতে চায়নি। স্বামী চাইত তার আদেশমত স্ত্রী চলবে। শেষে তিনি স্বামীকে তালাক দিয়ে নিজে এখন একা থাকেন। একটি ইশকুলে পড়ান। বেশ ভাল আছেন। কিন্তু মাঝে মাঝে নিঃসঙ্গতা তাঁকে অস্থির করে, কিন্তু তবুও তো তিনি কারওর দাসী বাদি হয়ে জীবন যাপন করছেন না, এটিই অনেক বড় তৃপ্তি তাঁর। একটি জিনিস লক্ষ করেছি আমার জীবনের কোনও গল্প শুনতে কেউ ইচ্ছে প্রকাশ করে না। সম্ভবত এ কারণেই করে না যে তারা পত্র পত্রিকায় পড়েছে আমার ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনী অথবা কারও মুখে শুনেছে, সুতরাং তাদের জানার আর কোনও আগ্রহ নেই। কিন্তু যা পড়েছে বা শুনেছে তা সত্য কি না, তাও কেউ একবার যাচাই করতে চায় না। আমার মনে হয় চায় না এই জন্য যে মনে করে আমি অস্বস্তি বোধ করব, যেহেতু আমার জীবনে একাধিক সম্পর্কের ঘটনা আছে। অনেকে, যারা আমার পক্ষের লোক, তারাও আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে এমনই অস্বস্তিতে পড়ে যে তারা আমার পক্ষে তর্ক করতে গিয়ে বলে, ব্যক্তিজীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির দরকার কি, ব্যক্তিচরিত্র যেমনই হোক, এক জন লেখকের বিচার হবে কেমন সে লেখে তা দিয়ে। ব্যক্তি জীবনে, যেহেতু আমি একাধিক বিয়ে করেছি, তাই আমার চরিত্র ভাল নয়, এ ব্যাপারটি মনে মনে আমার অনেক পক্ষের লোকেরাও মানেন। চরিত্র খারাপ হলেই একটি মেয়ে একাধিক বিয়ে করে এই ধারণাটি আমাদের বড় বড় প্রগতিশীলদের মস্তিষ্কের একটি গোপন কোণে