অতলে অন্তরীণ – ৩২

জুলাই, মঙ্গলবার

গতকালের পত্রিকায় ছাপা খবর ইচ্ছে করেই পড়িনি। আজ হাতে

জুলাই, মঙ্গলবার

 

গতকালের পত্রিকায় ছাপা খবর ইচ্ছে করেই পড়িনি। আজ হাতে নিয়েই দেখি বিশাল মিছিলের ছবি। সন্ত্রাসী নৈরাজ্যবাদীদের গ্রেফতার ও বিচার, দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন সংবাদপষেন হামলাকারীদের শাস্তি প্রদান ও ব্লাসফেমী আইন প্রণয়নের দাবিতে জাতীয় যুব কমাণ্ড কেন্দ্রীয় কমিটি গতকাল রাজধানীতে যে বিশাল মিছিল করেছে, তার ছবি।

 

তসলিমা পালালে সরকারকে জনতার আদালতে যেতে হবে। জাতীয় যুব কমাণ্ড ঘোষণা করেছে যে তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বক্তব্য সংবাদপষেন প্রচারকারী ইউসিসএর প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা না হলে যুব কমাণ্ড বাংলাদেশের মার্কিন তথ্য কেন্দ্র ঘেরাও করবে। গতকাল দৈনিক বাংলার মোড়ে আয়োজিত এক সমাবেশে যুব কমাণ্ড নেতারা এ ঘোষণা দেন। বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কুখ্যাত মুরতাদ তসলিমা নাসরিনের ফাঁসি কার্যকর করা হবে। তারা সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোকে ফাঁকি দিয়ে তসলিমা যদি পালিয়ে যায়, তাহলে ক্ষমতাসীনদের জনতার আদালতে দাঁড় করানো হবে। বক্তারা অবিলম্বে তসলিমা নাসরিনকে গ্রেফতারের দাবি জানান। যুব কমাণ্ড সভাপতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের উদ্দেশে বলেন, তসলিমার প্রতি তোমার ভালবাসা থাকতে পারে, কিন্তু এটি আমেরিকা নয়, এটি বাংলাদেশ। ওলামা মাশায়েখের এ দেশে ইসলামের অবমাননা করা হলে জনতা চুপ করে থাকবে না। তসলিমাকে এ দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নরওয়ের কূটনীতিক কোনও ভূমিকা রাখলে বাংলাদেশ জ্বলে উঠবে।

 

ইনকিলাবের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো হচ্ছে গ্রামে গঞ্জে, দেশের আনাচে কানাচে তৌহিদী জনতা ফুঁসে উঠছে আমার ফাঁিসর দাবিতে। গ্রাম গঞ্জে হরতাল সফল হয়েছে। হরতাল সফল হওয়া মানেই মনে প্রাণে এ দেশের জনগণ তসলিমার ফাঁসি চাইছে, ব্লাসফেমি আইন চাইছে। চারদিকে সভা হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মানুষের। তারা একটি কথাই বার বার বলছে, ধর্মদ্রোহী তসলিমার মুক্তি নেই, সরকার যদি তসলিমার পক্ষ নেয়, তবে সরকারকেও তারা দেখে ছাড়বে। গ্রামে গঞ্জে নাস্তিক মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ঈশ্বরগঞ্জে, যে ছোট্ট শহরটিতে আমার ছোটবেলার একটি সময় কেটেছে, যেখানে ইয়াসমিনের জন্ম হয়েছে, সে শহরের লোকেরা তসলিমার ফাঁসি চাই লেখা ব্যানার নিয়ে মিছিল করছে। জমিয়াতুল মোদ−র্রছিনের ঈশ্বরগঞ্জ শাখা এই বিক্ষোভ মিছিলটি করেছে। বিরাট বিক্ষোভ মিছিল। ছবি দেখেই অনুমান করা যায়, কত শত লোক নেমেছিল সেই মিছিলে। সভায় মাদ্রাসার বড় বড় শিক্ষকরা বলেছেন, ইহুদি খ্রিস্টান ও ব্রাহ্মণ্যবাদের পদলেহী ইসলাম ও দেশদ্রোহী এক অশুভ শক্তি আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল ও পবিত্র কোরানের আয়াতের বিকৃত তরজমা করে তা নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছে। কুলাঙ্গার তসলিমা নারী স্বাধীনতার নামে পবিত্র কোরানের আমূল পরিবর্তন দাবি করছে। যার ফলে বিশ্বাসী মানুষ সারা দেশে প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে এবং তসলিমাসহ সকল মুরতাদদের ফাঁসি দাবি করছে।

 

আমেরিকা ও বিবিসির ডবল স্ট্যাণ্ডার্ড নিয়ে ইনকিলাবের প্রতিবেদন — ৯৯ ভাগ মানুষ নয়, এক তসলিমার পক্ষ নিয়েছে খ্রিস্টান দুনিয়া। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে তসলিমা নাসরিন চরমভাবে ধিকৃত ও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তার উদ্ধার ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে আমেরিকা ও ভারতসহ খ্রিস্টান দুনিয়া। তাদের এই কাজে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে উৎকটভাবে মুসলিমবিরোধী, প্রবলভাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বিরোধী এবং নির্লজ্জভাবে ভারতপন্থী ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা বিবিসি। এই স্ব আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এসব শক্তি অনেক অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার সুমহান নীতি চরমভাবে লঙ্ঘন ও পদদলিত করেছে। তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে রবাহুত দরদ ও একাত্মতা প্রকাশ করতে যেয়ে ভারত, আমেরিকা, পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিবিসি মত প্রকাশের স্বাধীনতার আবরণে যে সব কথাবার্তা বলছে, তার ফলে তাদের অজ্ঞাতে তাদের ডবল স্ট্যান্ডার্ড রূপটি উৎকট হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি গেছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থিত পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক আইন এবং এ দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে, নিশ্চয়ই তারা তসলিমাকে অবৈধভাবে কোনও দূতাবাসে কোনও আশ্রয় দেয়নি।

 

ইনকিলাবের খবর, তসলিমা সম্পর্কে পশ্চিমা অনুরাগীদের বাড়াবাড়ি এক ভয়ানক বিকৃতি। বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের অনুরাগী পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও কর্তৃপক্ষের বাড়াবাড়ি এশীয় গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে এক ভয়ানক বিকৃতি বলে চিহ্নিত হয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ব্যাংকক পোস্ট এর পয়লা জুলাই সংখ্যায় ধর্মীয় সতর্কতার ক্ষেষেন অস্বস্তিকর ঘাটতি শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধে ধর্মের সুস্থ প্রভাব উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেক্যুলারিজমের নামে ধর্মকে অস্বীকার করার প্রবণতা এক ধরনের উগ্রতা। পত্রিকাটিতে বলা হয় এই উগ্রতা সেক্যুলারিজম শব্দটিকেই বিকৃতিতে পর্যবসিত করেছে। ভারতীয় সাংবাদিক খুশবন্ত সিংএর উদ্ধৃতি দিয়ে তসলিমা নাসরিনের মত দ্বিতীয় শ্রেণীর কাল্পনিক উপন্যাস লেখিকার ব্যাপারে কিছু করাটা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই ঝুঁকি দেখা দিয়েছে সেক্যুলার ফান্ডামেন্টালিস্ট অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতাপন্থী মৌলবাদীদের তরফ থেকে। কেননা, এরা তাদের অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে দিচ্ছে যদিও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে, আসলে তা পরিণামে সকল ধর্মেরই মূলে আঘাত হানছে। রুশদি সৃষ্ট যন্ত্রণাদায়ক


Rx Munna

447 Blog posts

Comments