সাতাশ জুলাই, বুধবার
সরকার ও বিরোধী দলকে এই দায় সুদে আসলে শুধতে হবে। আবদুল মান্নান লিখেছেন ইনকিলাবে — জানতে পারলাম, তসলিমা নাসরিনের লজ্জার ইংরেজি ভার্সান একদিনেই ২০,০০০ (বিশ হাজার) কপি বিক্রি হয়ে গেছে। তসলিমাকে নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও ভারতে যে ক্রেজ এর সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মনে হয়, তসলিমার বই ইংরেজি ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হবে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে যাবে। আর সঙ্গে সঙ্গে এই সর্বৈব মিথ্যা কথাটিই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে যে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চলছে, বাংলাদেশ উগ্র ফতোয়াবাজ ধর্ম ব্যবসায়ীদের দেশ। বাংলাদেশের এই যে ইমেজ সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে, এটা কি কারও জন্যই কল্যাণকর? এই মিথ্যার প্রতিষ্ঠা থেকে কী কল্যাণলাভ করবেন প্রগতিবাদী বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা? কী কল্যাণ লাভ করবে সরকার? কী কল্যাণ লাভ করবে বিরোধী দল, বিশেষত আওয়ামী লীগ? আগামী নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায়ও যায়, তারা কেমন করে মুছবে এই মিথ্যা ইমেজ? তাদেরও কি এর দায় বহন করতে হবে না?
অথচ দেশ ও রাজনীতির যাঁরা হর্তাকর্তা তাঁদের কারও মধ্যে কোন সুবুদ্ধি কাজ করছে বলে মনে হয় না। যে সরকার ইসলামের দোহাই পেড়েই ক্ষমতায় গেছেন, সেই সরকারও পরম নির্বিকারচিত্তে তসলিমা নাসরিনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ঔদ্ধত্য অবলোকন করলেন এবং ওর মিশন নির্বিবাদে সম্পন্ন হওয়ার পর একটি কার্যকারিতাহীন নিরর্থক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ, বিশেষত এর নেত্রী শেখ হাসিনা ভারত গোস্বা করবে এবং এখনকার ভারতীয় এজেন্ট, ধর্মদ্রোহী বুদ্ধিজীবীগণ ও তাঁর নিজ দলীয় ব্রাহ্মণ্যবাদপন্থীরা বিগড়ে যাবে–এই ভয়ে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করলেন না। মনে মনে হয়ত তিনি এই আশাও পুষেছিলেন যে, তসলিমাকে নিয়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হলে তাঁর ক্ষমতা দখলের পথই সুগম হবে।
প্রথমত, তসলিমা নাসরিনের লজ্জার বক্তব্যের মধ্যে কি বিন্দুমাত্রও সত্যতা আছে? বাংলাদেশে কি হিন্দুদের ওপর সত্যিই কোনও অত্যাচার হচ্ছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে এই মিথ্যা প্রপাগাণ্ডাকে অজুহাত হিসাবে ধরে নিয়ে আজ সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদ-ব্রাহ্মণ্যবাদ যে ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর তীব্রতর আঘাত হানতে উদ্যত হয়েছে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করছে –এটাকে কিভাবে বিচার করা হবে! সরকার ও বিরোধী দলের যেসব নেতা নেত্রী পরমানন্দে তামশা দেখছেন, তাঁদের কতটুকু দেশপ্রেমিক বলা যাবে? বস্তুত ক্ষমতা রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের লোভে অন্ধ উন্মত্ত যেসব ব্যক্তি-গোষ্ঠী তসলিমাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন করলো এবং মুসলমানদের ওপর আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি করলো, জাতি ও ইতিহাস তাদের কোনওদিনই ক্ষমা করবে না। এই দায় তাদের একদিন সুদে আসলে শুধতে হবে।