আগস্ট, বৃহস্পতিবার
কাল রাতেই ঠ আমাকে জিজ্ঞেস করে গেছেন সকালে নাস্তা কি খেতে চাই। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলাম, যা হয় তাই। ঠ সকালে ট্রেতে করে চা তো আছেই, ঘি এ ভাজা পরোটা, মাংস, ডিম ভাজা, ফল ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে এলেন। আমাকে নটার মধ্যে তৈরি হয়ে নিতে বললেন। চা ছাড়া আর কিছু আমার খেতে ইচ্ছে হয় না। একটি শাড়ি বের করে দিলেন ঠ। খেয়ে দেয়ে গোসল করে শাড়িটি পরে নিতে বললেন। আমি গোসল করে শাড়ি পরে নিই। একটি কালো চশমা দেন আমাকে পরতে। তাঁর নিজের একটি ওড়না আমার মাথায় পরিয়ে দেন। ঘড়ির দিকে তাকাই, ঘড়ির কাঁটা এত দ্রুত আগে আর চলেনি। আমার বুক কাঁপে। কাঁপনের শব্দ শুনি । ফাঁসিকাঠে ঝোলার আগে বুঝি এই হয় আসামীর। ওড়না-মাথার আমাকে কুৎসিত দেখতে লাগে। কিন্তু বোধবুদ্ধিহীন আমি মূর্তির মত নিশ্চুপ। ওড়নায় মাথা ঢাকার বিরুদ্ধে, এসব অর্থহীন পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে লিখছি আমি, মেয়েদের মনে মন্ত্র দিচ্ছি নির্যাতনের প্রতীকটিকে মাথা পেতে বরণ না করার জন্য, অথচ আজ আমিই এটিকে মাথায় তুলে নিচ্ছি, আজ আমাকেই পরতে হচ্ছে ওড়না। এবার আর লুকিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাওয়ার জন্য নয়। নিজের পরিচয়খানি ওড়নায় আড়াল করে নয়। পর্দাবিরোধী তসলিমা আজ পর্দানশীন নারী হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে যাবে, জনসমক্ষে যাবে, নিজের তসলিমা পরিচয়টি নিয়েই সে যাবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলি, তুমি কি তসলিমা? না। আমাকে আমিই চিনতে পারি না। মুখখানা এতদিনে শুকিয়ে লম্বাটে লাগছে। চোখদুটোর তলায় কালি পড়েছে। কালো চশমায় চোখ ঢাকা পড়লে নিজেকে আরও অচেনা লাগে। অচেনা লাগে লাগুক, তবু তো জানি যে এ আমি। এ আমি বলেই আমার রাগ হয়। এ আমি কী করছি! এ কি আমি করছি! আমি কি নিজেকে লুকোচ্ছি এভাবে! না। আমি কিছুই করছি না। তসলিমা মরে গেছে। তসলিমার শরীরে এ এক শক্তিহীন সাহসহীন বোধহীন মেয়েমানুষ কেবল। এ আমি অন্য কেউ। এই অন্য কেউটিকে আমার শরীরে ধারণ করতে আমার ঘৃণা হয়। যন্ত্রণার মত একটি অনুভব আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আমাকে অস্থির করে মারে। একবার আমি আয়নার সামনে যাই, আরেকবার বিছানায় এসে বসি। দাঁড়িয়ে থাকি মাঝপথে দরজা ধরে, ঘরময় হাঁটি, শ্বাস কষ্ট অনুভব করে জানালার কাছে যাই, জানালার পর্দা সরিয়ে ইচ্ছে করে হাট করে জানালা খুলে শ্বাস নিই। কিন্তু পারি না। হাত শক্ত করে চেপে রাখি হাতে। এ হাত কি আমার হাত? না এ হাত আমার হাত নয়। এ হাত সেই অন্য কেউটির হাত। মনে