কলকাতা আছে কলকাতাতেই

কলকাতা আছে কলকাতাতেই

প্রত্যেকের জন্য কলকাতার রাস্তা, ফুটপাত, এঁদো গলি নিজের ঘরের মতো, যেখানে সে বসতে পারে, ??

প্রত্যেকের জন্য কলকাতার রাস্তা, ফুটপাত, এঁদো গলি নিজের ঘরের মতো, যেখানে সে বসতে পারে, ঘুমোতে পারে, এমনকী পচা আবর্জনার স্তূপ থেকে নিজের খাবার তুলে খেতে পারে।

—ক্লদ লেভি স্ত্রস

 

কলকাতাকে যেমন রেখে গিয়েছিল নীলা, কলকাতা ঠিক তেমনি আছে। তবু তার মনে হয়, কলকাতা দেখতে মলিন হয়েছে আরও, ফুটপাতে নোংরা জমেছে আগের চেয়ে বেশি, ধুলো উড়ছে প্রচণ্ড, গাড়িঘোড়ার জটলা বেশি, আগেও ভেঁপু বাজত, এত তারস্বরে না, বাড়িঘরগুলো আগের চেয়ে রংওঠা, আস্তরখসা, দোকানপাটগুলো ছোট, ঘিঞ্জি, স্যাঁতসেঁতে, রাস্তাগুলো হঠাৎ সরু হয়ে গেছে, মানুষগুলো আরও কালো, মাঠে ঘাস আগের চেয়ে কম। ঘাসের রং গাছের পাতার রং আগের চেয়ে কালচে। নীলা দমদম থেকে গাড়ি করে বালিগঞ্জে আসতে আসতে নিখিলকে থেকে থেকে বলে, খুব বদলে গেছে কলকাতা।

 

নিখিল কলকাতার বদলে যাওয়া খোঁজে এদিক ওদিক। আর চালক রামকিরণ ময়লা রুমালে ঘাড়ের ঘাম মুছে বলে, দিদি, আপনি বদলেছেন, কলকাতা যেমন ছিল, তেমনই আছে।

 

বালিগঞ্জে বাড়িতে ঢুকে নীলার মনে হয়, বাড়িটিও অনেক ছোট হয়ে গেছে। নীলা বড় হয়ে তার ছোটবেলার বিশাল ইস্কুলবাড়িটি দেখতে গিয়েছিল একদিন, দেখে চিনতে পারেনি, ইস্কুলের যে বিশাল মাঠে নীলা দৌড়ে খেলত, সেই মাঠে দাঁড়িয়েই মাঠ খুঁজেছে, নদীর মতো বড় ইস্কুলের পুকুরটিকেও লেগেছিল ডোবা মতো।

 

মলিনার কী হয়েছে, কী অসুখ, নীলা কাউকে জিজ্ঞেস করেনি পথে, না নিখিলকে, না রামকিরণকে।

 

নীলাকে দেখে চিত্রা দৌড়ে খবর দিয়ে আসে মলিনাকে, দিদি এসেছে দিদি।

 

 চিত্রার এমনই নিয়ম, নীলা দেরি করে বাড়ি ফিরলেই এমন খবর নিয়ে দৌড়োত। নীলার হঠাৎ মনে হয়, সে আজ দেরি করে বাড়ি ফিরেছে। পথে যানজট ছিল, তাই দেরি। নন্দনে অপর্ণার নতুন ছবি দেখতে গিয়েছিল, তাই দেরি।

 

নীলা যা করে ফিরে, মা মা বলে ডাকে।

 

মলিনাকে শোবার ঘরে না পেলে রান্নাঘরে ঢোকে, রান্নাঘরে না পেলে পুজোর ঘরে, পুজোর ঘরে না পেলে উঠোনের সবজিবাগানে, ওতেও না পেলে নীলা বেশ জানত, মলিনা এখন বাড়ির ছাদে, রোদে কাপড় শুকোতে দিচ্ছেন।

 

নীলা মা মা ডেকে আজও শোবার ঘরে ঢোকে। শোবার ঘরে মলিনা। বোঁ বোঁ শব্দে পাখা চলছে, পাখার তলে মলিনা ঘামছেন। মলিনা ঘুমোচ্ছেন।

 

মা ঘুমোচ্ছ এই অসময়ে? ওঠো। আমি এসেছি।

 

নীলা এসেছে। মলিনা ওঠো। নীলাকে খেতে দাও। নীলাকে ঠাণ্ডা জল দাও। নীলাকে পাশে বসিয়ে গল্প শোনো, অনেক গল্প জমেছে ওর। গল্প বলতে বলতে ওর যদি গলা বুজে আসে, কোলে ওর মাথাটা নিয়ে, গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ওকে বোলো, চোখের আড়ালে আর যাসনে মা। ঘুমপাড়ানি গান শোনাও নীলাকে, অনেকদিন পর তোমার পাশে তোমাকে জড়িয়ে ও ঘুমোবে, ওঠো।

 

নীলা শিয়রের কাছে বসে দেখছে মলিনার এক মাথা ঘন কালো চুল হাওয়ায় উড়ে গেছে, আর আস্ত একটি হাড়ের কঙ্কাল বোঁ বোঁ পাখার নীচে দুলছে। নীলা দোলে, নীলার ইফেল টাওয়ার দোলে।

 

চা দেব দিদি?

 

দিদি তার হ্যাঁ বলে না।


Rx Munna

447 blog messaggi

Commenti