ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে – অধ্যায় ১ – মৃত্যু

নূপুর খবরটা পায় সকালে। সারাদিন কাউকে জানায় না। কাকেই বা জানাবে! কে তার পাশে এ সময়ে দাঁড়াবে! আত্মীয়দের মধ্যে এম??

নূপুর খবরটা পায় সকালে। সারাদিন কাউকে জানায় না। কাকেই বা জানাবে! কে তার পাশে এ সময়ে দাঁড়াবে! আত্মীয়দের মধ্যে এমন কেউ নেই যে কিনা খবরটা শুনে বিচলিত হবে, মুষড়ে পড়বে, বা চোখের জল ফেলবে। উপদেশ হয়তো কেউ কেউ দেবে। কিন্তু যাদের কোনও কিছু যায় আসে না যমুনার-কী-হল-না-হল’য়, তাদের উপদেশ শোনার চেয়ে, নূপুর ভাবে, তার নিজের যা ভালো মনে হয় তাই করা উচিত। ভেবেও নূপুর জব্বার চৌধুরীকে ফোন করে সন্ধ্যের দিকে। জব্বার চৌধুরীর বয়স প্রায় পঁচাত্তর। খবরটা শুনে জানতে চাইলেন যমুনা আমেরিকায় থাকতো কিনা। ভারতে থাকতো শুনে তাঁর রাগ হয় খুব। বললেন, ‘ইণ্ডিয়ায় কেন থাকতে গেছে? ও কি জানে না ইণ্ডিয়া বাংলাদেশকে পানি দিচ্ছে না? ইণ্ডিয়াকে বয়কট করা উচিত ছিল যমুনার’। জব্বার কাকার কথা এরপর আর শুনতে ইচ্ছে করেনি। সুলেখাকে জানায় নূপুর। সুলেখা খালাতো বোন। যমুনার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ছিল দেশে থাকাকালীন। খবরটি যে কোনও খবর শোনার মতোই শুনলো, বললো, ‘সবাইকেই যেতে হবে নূপুর। নিজে কী পূণ্য কামাই করলে, সেটা দেখ। সবাই ইয়া নবসি ইয়া নবসি করবে। যমুনা আজ গেছে, কাল আমরা যাবো’। আহ, সবাইকে যে যেতে হবে, যেন নূপুর এ কথা আগে জানতো না!

রাত দশটার দিকে নূপুর নাইমকে ফোন করে। এ ফোনটি করার কোনও মানে হয় না জেনেও ফোনটি করে। জানে যমুনার যদি বাধা দেওয়ার কোনও সুযোগ থাকতো, এই ফোনটি করতে সে বাধা দিতই। জেনেও সে খবরটা জানায় নাইমকে। পরিবারের লোক হিসেবে জানার অধিকার তার আছে বলেই জানায়, এ ছাড়া আর কোনও কারণ নেই। ফোনটি করার আগে নূপুর নিজেকে বার বারই কথা দেয়, সে কাঁদবে না। কারণ আর যার কাছেই হাহাকার করা মানায়, নাইমের কাছে মানায় না।

ফোন ধরেছিল নাইমই।

–দাদা, তপু ফোন করেছিল।

–তপু কে?

–বুবুর মেয়ে।

–যমুনার মেয়ে?

–তোমার তো জানার কথা যে বুবুর মেয়ের নাম তপু। তপু এখন আমেরিকায় পিএইচডি করছে। হারভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। ফিজিক্সে।

–এই তপুই সেই তপু তা জানবো কী করে? তা ফোন করেছে বলে আমার হয়েছেটা কী? আমার কী করার আছে। এ বাড়ি আমার। তুই কোনও অপু তপুর হয়ে তদবির করবি না, আগেই বলে দিয়েছি। কোন বাস্টার্ড কী করলো, ফোন করলো কী করলো না, আই ডোন্ট কেয়ার।

–আমি জানি তুমি কেয়ার করো না। বুবুর ফ্ল্যাটটায় তুমি আজ প্রায় , কত বছর হল, পঁচিশ বছর, আছো। লোকে এখন ওটাকে তোমার ফ্ল্যাট বলেই জানে, এ কথা তুমিও জানো। এ নিয়ে কথা বলার জন্য আমি ফোন করিনি। তপুও আমাকে ফ্ল্যাট নিয়ে কথা বলতে ফোন করেনি। আসলে দেশের বাড়িঘর নিয়ে তপুর কোনও আগ্রহ নেই।

–তাহলে কে ফোন করেছে না করেছে তা শোনাতে গভীর রাতে আমাকে ঘুম থেকে তুলছিস কেন?

–ও, তুমি এই দশটাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলে? তাহলে কাল ফোন করি। বরং কালই কথা বলি। তুমি ঘুমোও।

–কাল আমার সময় নেই। আজই বল যা বলার। ফ্যামিলির পেছনে সব এনার্জি খরচ করেছি। আর আমি পারবো না। আমার একটা লাইফ আছে, নাকি নেই?

–এনার্জি যদি খরচ করে থাকো, সে তোমার নিজের ফ্যামিলির পেছনে করেছো। আমার আর বুবুর জন্য তোমার পকেটের দু’পয়সাও খরচ হয়নি কোনোদিন। কোনও এনার্জিও খরচ হয়নি। যদি কখনও এনার্জি খরচ করে থাকো, সে আমাদের ঠকাবার ফন্দি আঁটার এনার্জি, আর কিছুর নয়।

–কী বলতে চাস তুই?

–তুমি ভালো করে জানো কী বলতে চাই।

–এত রাতে ফোন করেছিস কেন?

–খুব বেশি রাত হয়নি। রাত দশটায় তুমি ঘুমোওনা। দশটার পরে তোমার মদ খাওয়া শুরু হবে। রাত দুটো তিনটেয় ঘুমোবে তুমি।

–তাতে তোর কী! আমার পয়সায় আমি মদ খাই। তোর পয়সায় মদ তো খাই না।

–হিসেব করে দেখো, আমার আর বুবুর পয়সায় অনেক খাচ্ছো। বাবার জমিজমা টাকা পয়সা একা আত্মসাৎ না করলে, তিনজনের মধ্যে


Rx Munna

447 Blog posts

Comments