লতিফ আবারও আসে একদিন। হঠাৎ বিকেলে। বলে–ভাবী, আপনার সঙ্গে গল্প করতে এলাম।
–আমার সঙ্গে? আমি অবাক হয়ে বলি–আমার সঙ্গে কী গল্প?
–খুব খালি খালি লাগছিল তো, তাই।
–খালি খালি কেন। বন্ধু বান্ধব নেই?
–সবসময় বন্ধু বান্ধব ভাল লাগে না। লতিফ সোফায় আরাম করে বসে বলে।
আমি কি কথা বলব খুঁজে পাই না। শাশুড়ি একবার উঁকি দিয়ে দেখে গেছেন কে এসেছে; কার সঙ্গে কথা বলছি। আমি পড়েছি মুশকিলে। লতিফ হৈ হৈ করে ঢোকে। ভাবী ভাবী বলে ডাকে, আমাকে সামনে আসতেই হয় অগত্যা। কিছু একটা বলতে হয় বলেই বলা–বিয়ে করছেন না কেন? বিয়ে করে নিলেই তো পারেন! বউ নিয়ে বেড়াবেন। ঘুরবেন। একা একা লাগবে না।
–বিয়ে? পাত্রী কোথায় বিয়ে করার? আমার কী আর আলতাফের ভাগ্য? চাইলাম, আর সুন্দরী বউ পেয়ে গেলাম!
লতিফের কথাগুলো আমার ভাল লাগে না। আলতাফ যে বলেছিল একদিন লতিফ একটা লোফার। লতিফ একটা লোলুপ লুম্পেন। লতিফ হয়ত তাই। তা নয়ত সে আমাকে কেন বলছে তার খালি খালি লাগে! সে কি তার শূন্যতা ভরাট করতে এসেছে আমার কাছে? লতিফ আলতাফের মত লম্বা নয়, অমন সুন্দর স্বাস্থ্য আর চেহারা নেই তার। তবু দেখতে মন্দ লাগে না। হাসিতে উজ্জ্বলতা আছে তার। কামানো গালের সবুজ আভা তাকে অন্যরকম দীপ্তি দেয়। আলতাফ যে এত সুদর্শন পুরুষ, আলতাফের মধ্যে এই পৌরুষ যেন অনুপস্থিত। লতিফের দিকে আমি অপলক তাকিয়ে থাকি। লতিফও আমার চোখের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকায়। আমি ভুলেই যাই আলতাফ আমাকে নিষেধ করেছে লতিফের সঙ্গে কথা বলতে, লতিফের সামনে আসতে। কেন আমি তার সামনে আসব না? আমি কি অন্যায় করেছি? আলতাফ আমাকে কিনে নিয়েছে? আমি তার দাসী বাদি কিছু?
–কী ভাবী, মন খারাপ নাকি? লতিফ মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি–না মন খারাপ হবে কেন!
–আপনি কি এরকমই কম কথা বলেন?
–বোধহয়।
–হেঁয়ালি করছেন কিন্তু।
–লতিফ ভাই, আসলে শরীরটা আমার ভাল লাগছে না। জ্বর জ্বর লাগছে। আমি বরং শুয়ে থাকি গিয়ে। আসলে যত না শরীর খারাপ লাগা, মন খারাপ লাগা তার চেয়ে বেশি।
হঠাৎ লতিফ উঠে এসে আমার কপালে হাত রাখে–কই জ্বর? জ্বর তো নেই।
আমি কপাল সরিয়ে নিই না। লতিফ বলে–ও আপনার মনের জ্বর।
গে থাকে। ওর উষ্ণ করতলের নিবিড় স্পর্শ। আলতাফ তো কত ঘেঁয় আমাকে, গা এমন কেঁপে ওঠে না তো কখনও! আমি উঠে দাঁড়াই। বলি–আপনি বসুন, আলতাফ এসে যাবে এক্ষুণি। আমি বরং উঠি, একটু বিশ্রাম নেব।
আলতাফ দেখলে গালাগাল করবে এরকম কোনও ভয় আমার মনে কাজ করেনি। লতিফের আচরণই আমাকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। আমি