আলতাফ বাড়িতে ঘোষণা করে দিয়েছে আমার ফোন ধরা নিষেধ। বাড়ির বাইরে। যাওয়া নিষেধ। আমার কোনও আত্মীয় স্বজন যেন বাড়িতে আসতে না পারে। আলতাফের কোনও বন্ধু বান্ধবের সামনে যাওয়া নিষেধ। ছাদে ওঠাও নিষেধ। আমি বলেছি–তোমার এই নিষেধ আমি মানব না।
–না মানলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।
–তুমি আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলছ!
–হ্যাঁ বলছি।
আলতাফ দিন দিন দড়ি ঘেঁড়া হিংস্র সঁড়ের মত হয়ে উঠছে। সে আমাকে ছিঁড়ে ফেলতে চায়। দাঁতে কামরাতে চায়। আমি দিতে চাই না। কিন্তু শক্তিতে পেরে উঠি না। বাবা মা দু’জন আসেন একদিন। তাঁদের খবর দিয়ে আনানো হয়। আমি বাবা মাকে কোনও রাখঢাক না করে বলি–আমি কিন্তু এখানে থাকব না।
মা চমকে ওঠেন। বলেন-পাগল হয়েছিস? ছোট আছিস নাকি এখনও? বড় হয়েছিস, বুদ্ধি হয়েছে। পাগলামি করিস না মা।
–আমি থাকব না। থাকব না।
–কেন থাকবি না?
–আলতাফ আমার গায়ে হাত তোলে।
–গায়ে হাত তোলে? বাবা মা দুজনই খানিক অপ্রস্তুত হন।
–হ্যাঁ। আমি স্পষ্ট কণ্ঠে বলি।
–বলিস কী! বাবা মা দুজনেই গম্ভীর হন।
আলতাফ আসে। বাবা মার পা ছুঁয়ে সালাম করে। বলে–শরীর ভাল তো আব্বা? আম্মা আপনার ডায়বেটিস ধরা পড়েছে শুনেছিলাম।
–হ্যাঁ বাবা। শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।
–আমার এক বন্ধু ডায়বেটিক হাসপাতালের ডাক্তার। আমি কাল সকালে গাড়ি পাঠিয়ে দেব। আপনি কাইলি চলে আসবেন। আমি নিজে আপনাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব।
-–আচ্ছা বাবা। মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
কথা শুরু করে আলতাফই। বলে–হীরার কি হয়েছে ওকে জিজ্ঞাসা করুন। ওতো যাচ্ছেতাই সব কাজ করছে। এখন আপনারাই শুনুন সব, যা ভাল বুঝুন, করুন।
–তুমি বল। তোমার স্ত্রী সে। মা মিনমিন করে বলেন।
–আমার স্ত্রী হলে কী হবে? স্ত্রীর কোনও দায়িত্ব কী সে পালন করে? তাকে জিজ্ঞাসা করুন।
মা বলেন–কী হীরা, আলতাফ কী বলছে, শুনছিস?
–শুনব না কেন? কানে খাটো না যখন……
–দায়িত্ব পালন করিস না। কেন করিস না বল। মা বলেন।
–আমার বুড়ো মা বাবা থাকেন এই বাড়িতে। জিজ্ঞাসা করুন আপনার মেয়েকে, সে কোনও খবর রাখে কিনা তাঁদের! তাঁরা কী খায়, কখন খায়, কোন খোঁজ রাখে সে?
–আমার খোঁজও তো কেউ রাখে না। আমি দাঁতে নখ কাটতে কাটতে বলি।
–তার মানে? তুমি কি চাও আমার মা তোমার খোঁজ নেবে? আর তুমি রাজরাণীর মত পালঙ্কে পা তুলে বসে থাকবে?