তুমি ছুঁয়ো না আমাকে

প্রতি রাতে যতই আমি আলতাফকে বলি যে তুমি ছুঁয়ো না আমাকে, সে ছোঁবেই। সে ছুঁতে চাইবেই, না ছুঁলে তার স্বস্তি নেই। ছু

রাতে যতই আমি আলতাফকে বলি যে তুমি ছুঁয়ো না আমাকে, সে ছোঁবেই। সে ছুঁতে চাইবেই, না ছুঁলে তার স্বস্তি নেই। ছুঁলে আমার অস্থিরতা, না ছুঁলে তার অস্থিরতা। ভীষণ এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। যখন ও শোবার জন্য বিছানায় যায়, আমি ড্রইং রুমের সোফায় আধশোয়া হয়ে বই বা ম্যাগাজিন পড়ি। শুতে না যাবার ছুতো করি। আলতাফ অনেকক্ষণ বিছানায় অপেক্ষা করে ড্রইং রুমে আসে।

 

–’কী তুমি শুতে যাবে না?’ ওর পরনে একটি কেবল লুঙ্গি থাকে। ওর খালি গা দেখলে আমার কেমন ঘেন্না ধরে। বলেছি কত ঘুমোবার সময় ট্রাউজার পড়, আর টি শার্ট না হোক স্যাণ্ডা গেঞ্জি হলেও পড়। তা না, আলতাফের লুঙ্গি না হলে চলবে না। আর থাকতে হবে খালি গায়ে। বুকে হাত বুলাবে আর আমাকে আড়চোখে দেখবে। দূর থেকে একগাদা মাংস দেখে কুকুর যেমন জিভ চাটে, আলতাফও মনে মনে বোধহয় নিজের লালা নিজে গিলে খায়। সেও বোধহয় তার লোভের লাল জিভখানা বারবারই চাটে।

 

আমি বিরক্ত হই আলতাফের ডাকাডাকিতে। বলি–আমি এখনই শোব না। ঘুম পাচ্ছে না।

 

–বিছানায় এস, ঘুম পাবে।

 

আলতাফ দাঁত বের করে হাসে। যেন বিছানায় আজ খুব মজার জিনিস আছে, ঘুম না পেয়ে যায়ই না।

 

–তুমি শোও। আমি পরে আসব। আমি বই থেকে মুখ না তুলেই বলি।

 

আলতাফ চলে যায় বেডরুমে। আমি তার ঘুমিয়ে যাবার অপেক্ষা করি। ঘুমিয়ে গেলে বিড়ালের মত নিঃশব্দে হেঁটে শুতে যাব। যেন সে না জাগতে পারে, জেগে যেন সে আমাকে সারারাত জাগিয়ে না রাখতে পারে। রাত প্রায় দুটো বাজলে আমি শুতে যাই। আলতাফ না ঘুমিয়ে শুয়ে ছিল। আমাকে দেখেই বলে–এখন আর শুতে এলে কেন? রাত তো শেষ করেই এলে।

 

ওর রাগের কারণ আমি বুঝি। কিন্তু আমার ইচ্ছে না করলে কী করব আমি। আমার ভেতরে সে আগুন কেবল জ্বালিয়ে দেবে, নেভাবে না–এ কী করে মেনে নেব? নেভাবার নিয়ম তো আমার জানা নেই, জানা থাকলে হয়ত নিজেই কিছু চেষ্টা করতাম। আমি উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ি। আলতাফের কথার কোনও উত্তর দিই না।

 

–কী ব্যাপার কথা বলছ না যে!

 

–বলতে ইচ্ছে করছে না।

 

ওর গলা যত উঁচু, আমার গলা তত খাদে। আমি বিছানার এক কিনারে আলতাফের শরীরে যেন আমার শরীর না লাগে এমন আলগোছে শুয়ে থাকি।

 

–তোমার হয়েছে কী বল তো? আলতাফ ভারি গলায় জিজ্ঞেস করে।

 

–কিছুনা।

 

–কিছু না বললেই হবে? তোমার কিছু একটা হয়েছে। তুমি আমাকে লুকোচ্ছ। আমাকে কিন্তু অবহেলা করছ তুমি।

 

–বোধ হয় করছিই।

 

–আমি সারাদিন কার জন্য পরিশ্রম করি বল, এই সংসারের জন্য, তোমার জন্য। তোমার জন্য, আর বাড়ি ফিরে যদি তোমার বিশ্ন মুখ দেখতে হয়, ভাল লাগে? কি এত দুঃখ তোমার?

 

এর কোনও উত্তর আমি দিতে পারি না। লজ্জা হয়, সংকোচ হয়। কেন মন বিষণ্ণ থাকে, বুঝি, দুঃখ কেন, বুঝি; কিন্তু বোঝাতে পারি না। আলতাফ অভিমান করে, রাগ করে। এপাশ-ওপাশ করে। আমার স্থির শান্ত শরীরের দিকে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকায়। আমি নিজেকে সংবরণ করি। জলের লোভে লোভে সমুদ্রের কাছে যাব আর সে আমাকে সমুদ্রের উতল নোনা জোয়ারে একলা রেখে চলে যাবে, আমি সাঁতার জানি না, ভাসব ডুবব, আমার কষ্ট হবে, ভীষণ কষ্ট হবে আমার–এই ভেবেই আমি। সংবরণ করি। তৃষ্ণা গুলো সংযত করি।

 

আমি ধীরে খুব শান্ত কণ্ঠে বলি–কাল থেকে আমি অন্য ঘরে ঘুমোব।

 

–কেন?

 

–আমার ইচ্ছে।

 

এক বিছানায় ঘুমোলে আমি টের পাই আলতাফের নিশ্বাসের হলকা আমার গায়ে লাগছে, আমার গা গরম হচ্ছে। গা কেন গরম হয়? না হলেও তো পারে। না হলে চমৎকার যুবকটিকে আমি আরও বেশি ভালবাসতে পারতাম। আরও বেশি তার কাছে আসতে পারতাম, শরীরের না হোক, মনের কাছে।

 

মনের কাছে আসতে গেলে কোনও বাধা তো থাকা উচিত নয়। মনই তো সব থেকে বড়। মনের কাছে শরীর বড় তুচ্ছ। তবু আমি জানি না কেন আমি বলি–আমার ইচ্ছে হয় না তোমার সঙ্গে ঘুমোতে। আমার প্রব্লেম হয়।

 

আলতাফ চুপ হয়ে থাকে।

 

ওর জন্য মায়াও হয় আমার। মায়া হয় বলে যদি আমি ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিতে যাই, আমাকে সে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে। অন্ধকারে একটি ভালবাসার স্পর্শ ধীরে ধীরে শিথিল করবে আমার শরীর। আলতাফকে আমি ভালবাসতে চাই, কিন্তু এসবের জন্যই পারি না। এই জড়িয়ে ধরা এই চুমু খাওয়া এসব আজকাল বড় বিব্রত করে আমাকে। বড় অবিন্যস্ত করে।

 

অনেকক্ষণ চুপ থেকে আলতাফ আমার গা ধাক্কা দিয়ে বলে–তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছ, হীরা।

 

–কিরকম বাড়বাড়ি? ওর ধাক্কায় মোটেও না চমকে বলি।

 

–খুব সেক্স ক্রেজি হয়ে উঠছ।

 

–তাই নাকি? যদি তা-ই হই অসুবিধে কী?

 

–অল্পে তোমার মন ভরছে না। তোমার অনেক বেশি চাই।

 

–সে তো তোমার চাই। আমি তো চাইছি না কিছুই। আমি দিব্যি পাশ ফিরে ঘুমিয়ে থাকতে চাই। তুমি আমাকে ডিসটার্ব না করলেই পারো।

 

–আমি তোমাকে ছুঁলে তুমি


Rx Munna

447 مدونة المشاركات

التعليقات