গভীর রাত। চারিদিকে শুনশান প্রকৃতি। হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ। এমনই একদিনে খাটের উপরে আমি শুয়ে আছি। সাথে একটা মাত্র বাটন ফোন। সেই সময় স্মার্টফোন কেনার সক্ষমতা ছিল না। সালটা ছিল 2017-18 মানে করোনার আগে।
এমনই এক বৃষ্টি স্নাত রাতে ঘুম আসতেছে না। কি করবো বুঝতেও পারতেছি না। আনমনে ফোনটি হাতে নিলাম। অ্যাপস গুলো দেখতে দেখতে করে হঠাৎ কি মনে করে এফএম রেডিও অন করলাম। এফএম এর কানেকশন ঠিকঠাকভাবে পাওয়ার জন্য আবার ইয়ারফোন গুজলাম।তারপর সিগন্যালের জন্য খাটের এপাশ-ওপাশ করতে লাগলাম। একসময় সিগনাল পেলাম।
বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা চ্যানেলের ভয়েস খুব ভালো লেগে গেল। দিকে তাকিয়ে দেখলাম চ্যানেলটি হলো ১০৭.০। আকাশবাণী এফএম রেইনবো বাংলা। কি যেন একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল তখন নাম জানতে পারিনি। কিন্তু নিজেদের অস্থির ভয়েস আর কলে মানুষের কথাবার্তা শুনে ভালো লেগে গেল। পরে জানতে পারলাম অনুষ্ঠানটির নাম সব কথা ছিল।
আসলে এইসব কথা অনুষ্ঠানের কোন স্ক্রিপ্ট ছিল না। এখানে যারা হোস্ট করতেন তারাও কোন কিছু আগে থেকে প্রিপারেশন নিয়ে আসলেন না। অনুষ্ঠানটি শুরুই হত রাত দুইটার সময়। মানুষ স্টুডিওতে ফোন দিয়ে তাদের মনের কথাগুলো শেয়ার করতো।যে কথাগুলো কাউকে বলতে পারতো না সে কথাগুলো তারা এখানে বলতো। কি বিচিত্র অভিজ্ঞতা! কি বিচিত্র বিচিত্র কাহিনী! শুনতে শুনতে গায়ের লোম খাড়া হয় যেত, অথবা খুব ভালো লাগা কাজ করত, অথবা খুব কষ্টের সাগরে ভেসে যেতাম। এই অনুষ্ঠানটি একদিন শুনে আমার অনেক প্রিয় হয়ে উঠলো।
তারপর আরো একদিন শুনতে পেয়েছিলাম। গভীর রাতে হতো বলে এই অনুষ্ঠানটি শোনা হত না। তারপর অনেক খুঁজেছি, অনেক খুঁজেছি। কিন্তু করোনার পর এই অনুষ্ঠানটি আর ওই এফএম এ প্রচার হয় না। ইউটিউবে সার্চ দিচ্ছি,গুগলে সার্চ দিচ্ছি, কিন্তু কোথাও এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোন তথ্য খুঁজে পাইনি। অদ্ভুত এক ভালোলাগার অসমাপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়েই আজও বেঁচে আছি।হয়তো এই অনুষ্ঠানটি আর কখনোই শুনতে পাবো না। কিন্তু স্মৃতি আজীবন মনে থেকে যাবে।