বাবা বলছেন–আলতাফ ভাল ছেলে। ও কেন তোকে মারবে?
মা বলছেন–মেরেছে যখন কোনও কারণ আছে নিশ্চয়।
আমি অবাক হই ওঁদের নির্বুদ্ধিতায়। প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হয় না। তবু মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়–দোষ ওরই।
বাবা, মা, এমন কী দাদাও আমাকে বলছেন–কোন কারণ ছাড়া আলতাফ মারবে কেন? দোষ না করলে কেউ মারধোর করে? আলতাফ তো আর অশিক্ষিত ছেলে নয়।
রাতেই টেলিফোন করে আলতাফ, বাবাকে বলে–কেমন আছেন আব্বা। আপনার মত আদর্শবান মানুষের মেয়ে যে কেন এমন হল আমি ভাবতে পারছি না। আমার ফ্রেণ্ড সারকেল সব জেনে গেছে ব্যাপারটা। সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে। তো আমি বলে যাচ্ছি এসব ঠিক নয় আর আমার স্ত্রীর ব্যাপার আমি বুঝব। আর কতদিন এভাবে সামাল দেব জানি না। মানুষ তো আমি, কী বলেন? লতিফের সঙ্গে সে শুয়েছে। কী করে পারল সে আমি বুঝি না।
বাবা মা মুখ চুন করে বসে থাকেন। অনেক রাত পর্যন্ত বাড়িতে মিটিং চলে। মামারা আসেন, কাকারা আসেন, তারা সবাই একটি সিদ্ধান্তে আসেন, সে হল আমার মাপ চাইতে হবে আলতাফের কাছে। সিদ্ধান্তটি আমাকে জানানো হলে আমি বলে দিই, মাপ আমি চাইব না।
কেন আমি মাপ চাইব না? এত সাহস আমি কোথায় পেলাম? এইসব জানতে চাওয়া হয় আমার কাছে। আমি বলি–জানি না কোথায় পেলাম সাহস। তবে সাহর্স পেয়েছি। সাহস থাকা তো ভাল।
বাড়ির সবাই অবাক হয়, ভালই তো ছিল মেয়েটি, কোনও ‘ব্যাড রেকর্ড’ ছিল না, তার এমন চরিত্র খারাপ হল কবে? চরিত্র যে আমার খারাপ হয়েছে এ ব্যাপারে ওরা নিশ্চিত। কপালে আমার সুখ সইল না–এ নিয়ে ওরা দুঃখ টুখও করে।
আমি কাউকে বোঝাতে পারি না আলতাফের প্রবলেমের কথা। মাকে হয়ত বলা যেতে পারত, কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছে হয় না। তিনি ভেবেই নিয়েছেন দোষ আমার। যে মানুষ আমাকে এতটা অবিশ্বাস করতে পারেন, তাঁকে আমার গভীর গোপন সমস্যার কথা বলতে রুচি হয় না, হয়ত সব শুনে বলেও বসতে পারেন, দোষ আমারই। তাকে তো আর একজন অক্ষম পুরুষের সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়নি, রাতের পর রাত নিঘুম কাটাতে হয়নি। তিনি কী করে বুঝবেন শরীরের যন্ত্রণা এক সোমখ নারীকে কতটা উন্মাদ করে। শরীর ভরে কী ভীষণ তৃষ্ণা থাকে অতৃপ্ত নারীর, তা পরিতৃপ্ত নারীরা বুঝবে কেন। আমি সারাদিন এ বাড়িতেও একটি নিঝুম ঘরে বসে থাকি। এখানেও আমার বড় একা লাগে।
ফুপুও আগের মতন তেমন কেয়ার করে কথা বলেন না। কণ্ঠস্বরে তাচ্ছিল্য টের পাই। একদিন বলেন–তোমার ভবিষ্যত ভেবে দুঃখই