ছেলেটির সঙ্গে আগে আমার পরিচয় ছিল। মিতুল নামে আমার এক বন্ধুর চাচাতো ভাই টাই হবে। তাকে হঠাৎই একদিন দেখি হোস্টেলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্রথম নাম মনে করতে পারিনি তার। দেখেই জিজ্ঞেস করলাম–কী ব্যাপার আপনি এখানে?
–হ্যাঁ। তুমি এখানে কেন? বলল ছেলেটি।
–আমি থাকি এখানে।
–ও তাই বল। মিতুলকে সেদিনও জিজ্ঞেস করেছি হীরা এখন থাকে কোথায়। বলল জানে না। আর আমিও অনেকদিন ভেবেছি তোমার কথা।
কথা বলতে বলতে নাম মনে হল। কায়সার। সাদামাটা চেহারা। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কিন্তু চোখদুটো তাকিয়ে থাকবার মত সুন্দর। সেই চোখ থেকে আমি চোখ ফেরাতে পারি না। কায়সারের সঙ্গে মিতুলের বাড়িতে দেখা হত। দুএকবার কথা হয়েছে। মনে রাখবার মত এমন কিছু নয়।
–আপনি এখানে কেন? জিজ্ঞেস করি।
–আমার বোন থাকে এই হোস্টেলে।
–আপনি কি মহসিন হলেই আছেন?
বাহ মনে রেখেছ কোন হলে থাকি? মনে মনে বলি মনে আর রেখেছিল। সবই তো ভুলে বসে আছি। নামটাও মনে পড়েনি। অল্প চেনা ছেলেকেই বড় আপন মনে হয় আমার। ছেলেটি আমাকে যে পছন্দ করত তা মিতুলও কথায় কথায় আমাকে বলেছিল। আমার সঙ্গে পরিচিত হবার আশায় সে মিতুলের জন্মদিনে গিয়েছিল। কায়সার পলটিক্যাল সায়েন্সে ফাঁইনাল ইয়ারে পড়ে। আমি গেটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, বলল–চল হেঁটে হেঁটে কথা বলি।
কী আর কথা। মিতুলের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, সেদিনের কথা মনে পড়ে মিতুলের বাড়িতে যেদিন লজ্জায় কথাই বলিনি তার সঙ্গে, তার বড় বোন ব্যাংকে চাকরি করে এইসব। আমি ছোট চাকরি করি বলাতে কায়সার অবাক হয়ে বলে–এই বয়সে চাকরি করছ? পারো চাকরি করতে? তুমি তো সেদিনের বাচ্চা মেয়ে। কায়সার হেসে ওঠে।
আমিও হেসে উঠি-আমি বোকা মেয়ে?
কায়সারের বোন গেটে এসে দাঁড়ায়। আমরা আবার দেখা হবে জাতীয় কিছু বলবার : আগেই বিচ্ছিন্ন হই। কায়সারকে এরপর প্রায়ই দেখি গেটে দাঁড়ানো। একদিন বলল–আজ তোমার জন্য এলাম।
–আমার জন্য? আমি বিস্মিত হই।
–তোমার জন্য বুঝি আসতে নেই? তোমার সঙ্গে কথা আছে। কথাটি হচ্ছে–তোমার চাকরি করা এখন উচিত নয়। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির দরখাস্ত চাওয়া হয়েছে। এপ্লাই কর।
–আমার চাকরি না করলে চলবে কেন?
–টিউশনি কর। তবু ভর্তি হও।
–আপনি এত করছেন কেন আমার জন্য? আমি তো বলিনি।
কায়সার চুপ হয়ে যায়। বলে–সরি।
সেদিন আর কথা হয় না।