অধিকাংশ বাঙালি-হিন্দু, এমনকী যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেছে, রাজনীতি অর্থনীতির জ্ঞানও যাদের বেশ প্রখর, মনে করে যে বাঙালি বলতে বাঙালি- হিন্দু বোঝায়। বাঙালি-মুসলমান, বাঙালি-খ্রিস্টান, বাঙালি-বৌদ্ধ, বাঙালি-নাস্তিকও যে ‘বাঙালি’ তা তারা জানে না। বাঙালি হিন্দুর এই অজ্ঞানতা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পূর্ববাংলা বা বাংলাদেশের বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ বলে ডাকার চল এ দেশে খুব। বাংলাদেশি গরু, বাংলাদেশি আইন হতে পারে, কিন্তু মানুষ কী করে বাংলাদেশি হয়! বাঙালি জাতি তো একাণ্ডরে বাংলাদেশ নামের একটি দেশ জন্ম নেওয়ার সময় জন্ম নেয়নি। বাঙালি তার দীর্ঘশতাব্দীর ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বাঙালিই আছে, দেশের নাম শুধু রাজনৈতিক কারণে বারবার বদলে যাচ্ছে। সে বদলে যাওয়ার দায় জাতি নেবে কেন! যে ধর্মবাদীরা সমৃদ্ধ এবং সেকুলার বাঙালি-সংস্কৃতিকে বিনাশ করে ইসলামী-সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেশের সর্বনাশ করতে চেয়েছিল, তারা সংবিধান বদলে ফেলেছে বাঙালি-জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাংলাদেশি-জাতীয়তাবাদ ঢুকিয়ে। এই তারাই একই উদ্দেশ্য নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিদেয় করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছে।
বাঙালি-মুসলমানের সংখ্যা বাঙালি-হিন্দুর চেয়ে বেশি, সুতরাং বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতিই শেষ অবধি বাঙালি-সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাঙালি-মুসলমানের সংস্কৃতি অবাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন। এবং অনেক মিল থাকলেও বাঙালি-হিন্দুর সংস্কৃতির সঙ্গেও এর তফাৎ আছে। বাঙালি-মুসলমানের ভাষা ও সংস্কৃতি ঐতিহাসিক কারণে নানা বিদেশি ধর্ম-সংস্কৃতি ও ভাষার প্রভাবে সমৃদ্ধতর।
বাঙালি নারী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইসলাম যে কোনও ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে, অবিশ্বাসীও হতে পারে। বাঙালি নারী কেমন আছে বাংলায়, কেমন তাদের দিন রাত্তির— এই প্রশ্নটি যখন নিজের কাছে করি আমি, বড় বেদনায় নুয়ে আসি। যেসমাজে ধর্ম জাঁকিয়ে বসা, সে সমাজে কোনও নারী কি মানুষের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে? ধর্ম জাঁকিয়ে বসলে পুরুষতন্ত্র জাঁকিয়ে বসে। ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্রের যেখানে জয়জয়কার, সেখানে নারীর পরিচয় দাসী বা যৌনবস্তু বা সন্তান-উৎপাদনের যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। বাঙালি নারী এই পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকে, বেঁচে ছিল। অনেকে পরিবর্তনের কথা বলে। গ্রামগুলো মফস্বল হচ্ছে, মফস্বলগুলো শহর, শহরগুলো নগর। নগরে উঁচু উঁচু দালান। ইস্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। যে বাঙালি-নারীর ঘরবার হওয়া, লেখাপড়া করা