মেয়েরা কেন তাদের অত্যাচারী ব্যভিচারী স্বামীদের ডিভোর্স

পৃথিবীতে ডিভোর্স সবচেয়ে কম ঘটে ভারতে। প্রতি এক হাজার দম্পতিতে মাত্র এগারো। রাশিয়ায় ডিভোর্স শতকরা ৬৫, সুইডেনে

পৃথিবীতে ডিভোর্স সবচেয়ে কম ঘটে ভারতে। প্রতি এক হাজার দম্পতিতে মাত্র এগারো। রাশিয়ায় ডিভোর্স শতকরা ৬৫, সুইডেনে ৬৪,বেলজিয়ামে ৫৬, যুক্তরাজ্যে ৫৩, যুক্তরাষ্ট্রে ৫০, আর ভারতে ১·১ ভাগ। সভ্য দেশগুলোয় যেখানে নারী শিক্ষিত, সচেতন এবং স্বনির্ভর, সেখানে ডিভোর্সের সংখ্যা বেশি। এই সত্য বারবারই প্রমাণিত। পশ্চিমের জরিপে দেখা গেছে প্রথমবারের বিয়েতে শতকরা পত্তাশ ভাগ ডিভোর্স ঘটে, আর পুনর্বিবাহে শতকরা ষাট ভাগ। প্রশ্ন হল, ভারতে ডিভোর্সের সংখ্যা এত কম কেন? এর উত্তর খুব সহজ। পুরুষতন্ত্রের জয়জয়কার এখানে বেশি। নারীকে এখানে শিক্ষিত হতে দিলেও সচেতন হতে দেওয়া হয় না, সচেতন হতে দিলেও স্বনির্ভর হতে দেওয়া হয় না, স্বনির্ভর হতে দিলেও স্বাধীনতা দেওয়া হয় না। নারীর জিনিস নারীকে আবার দেয় কে? দেওয়ার মালিকটি কে? এই প্রশ্নটি উঠতে পারে। এর উত্তরও খুব সহজ। দেওয়ার মালিক হল পুরুষ এবং নারীবিরোধী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। পুরুষ এবং তার তন্ত্র ইচ্ছে হলে নারীকে স্বাধীনতা দেয়, ইচ্ছে না হলে দেয় না। নারীর স্বাধীনতা নারীর কাছে থাকে না, থাকে পুরুষের সার্ট বা পাত্তাবির পকেটে, থাকে তাদের হাতের মুঠোয়।

 

ভারত সেই দুর্ভাগা নারীদের দেশ, যে দেশে স্বামীকে ডিভোর্স করার ক্ষমতা অন্য যে কোনও দেশের নারীদের চেয়ে কম। এত বিশাল দেশ, এত ধর্মের এত সংস্কৃতির মানুষ, এত মতের এত পথের মানুষ, এত রঙের এত ঢংএর, এত ধনের এত অধনের মানুষ এ দেশে, এখানে মানুষে মানুষে দাত্তা হাত্তামা, হিংসে দ্বেষ, বিরোধ বিদ্বেষ লেগেই আছে, সংশয়, সন্দেহ ঘাপটি মেরে বসে থাকে মনে, নারী পুরুষে আকাশ পাতাল বৈষম্য । তারপরও, ডিভোর্সের জন্য এত উর্বর জমি থাকা সত্বেও ডিভোর্স কেন ফলছে না! উত্তর সহজ। নারী এখানে শিক্ষিত নয়, সচেতন নয়, স্বনির্ভর নয়, স্বাধীন নয়। অনেকে দাবি করে নারী ‘সব পেয়েছির দেশে’ আছে। কিন্তু যে শিক্ষা নারী পাচ্ছে অ্যাকাডেমিতে, সেই শিক্ষার মধ্যে কি নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কোনও শিক্ষা আছে? নারীর যে মানুষ হিসেবে, পৃথক অস্তিত্ব হিসেবে সম্মান পাওয়ার কথা এবং তা পাচ্ছে না, তার কোনও তথ্য আছে? নেই। নারীর সচেতনতা কোথায়? নারী যে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, নারী যে নিজের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঙ্গিত এবং নারীর যে এইসব নির্যাতন সহ্য করা উচিত নয়, মাথা উঁচু করে বাঁচতে যে তাকে হবে, পাছে লোকে কিছু বলে ভেবে তার যে পিছুহটা উচিত নয়, কেউ পথরোধ করতে এলে যে তাকে লাঙ্গি দিয়ে সরিয়ে দিতে হয় সেই সচেতনতা কি নারীর আছে! থাকলে ক’জন নারীর আছে? নারী স্বনির্ভর হচ্ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা তাদের কি আদৌ কোনও আত্ববিশ্বাস দিচ্ছে? তারা কি নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারছে? নারীর স্বনির্ভরতা কি নারীকে একা বাস করার মতো দৃঢ়তা যোগাতে পারছে? স্বামীর হাতে টাকা পয়সা ঢেলে দিয়ে শ্বশুর বাড়ির খানিকটা খাতির পাবার জন্য যদি স্বনির্ভরতাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে সেই স্বনির্ভরতার সত্যিকার নাম কিন্তু পরনির্ভরতা। স্বাধীনতার অর্থ ভারতের বেশির ভাগ নারী জানে না। মদ সিগারেট খাওয়া, ছোট ছোট পোশাক পরে তন্ত্রে মন্ত্রে নাচা আর পর-পুরুষের সঙ্গে শুয়ে বেড়ানোর নাম তাদের কাছে নারী-স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ যে তা নয়, এবং একেবারেই তা নয়, তা বোঝার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই আছে। ঘোর পুরুষতন্ত্রের মধ্যে থেকে যে ওসব করা হয়, ওই নাচা শোয়াগুলো, পুরুষের পণ্য হয়ে, পুরুষের সুখভোগের বস্তু হয়ে, তা বোঝে ক’জন? মদ সিগারেট না খেয়ে, ছোট কোনও পোশাক না পরে, তন্ত্রে মন্ত্রে না নেচে এবং কোনও পুরুষের সঙ্গে না শুয়েও যে চূড়ান্ত নারী স্বাধীনতা ভোগ করা যায় তা জানা প্রয়োজন। আজ নারীর কোনও স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা নেই। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দীর্ঘ শতাব্দী বাস করতে করতে মাথা তাদের ভোঁতা। নারীর অন্য কিছু তত পুরুষের প্রার্থনীয় নয়, যত প্রার্থণীয় ভোঁতা মাথা। ‘স্বাধীনতা’ মানে মন্দ জিনিস তা নারীর মাথায় খোঁপায় গুঁজে দেওয়া গোলাপের মতো গুঁজে দিয়েছে পুরুষ। নারীরা সেইটুকু স্বাধীনতা পায় বা পেতে চায়, যেটুকু পুরুষেরা তাদের দেবে বা দিতে চায়। নারীর সহায় সম্পত্তি যেমন পুরুষের হেফাজতে থাকে, তাদের স্বাধীনতাও অমন থাকে পুরুষের হেফাজতে। অনেকটা নাটাই-ঘুড়ির মতো। পুরুষের হাতে নাটাই। পুরুষ সুতো ছাড়লে ঘুড়ি বা নারী উড়বে, সুতো না ছাড়লে নারী বা ঘুড়ি উড়বে না, মুখ থুবড়ে পড়বে মাটিতে। সুতো কতটুকু ছাড়বে, কতটা আকাশ নারী পাবে, তাও নির্ধারণ করবে পুরুষ। নারী কি জানে নাটাই কেড়ে নিতে? শেখায় তাকে কেউ? হাজার বছর ধরে পরাধীন নারী স্বাধীনতা ভোগ তো করতে জানেই না, স্বাধীনতার


Rx Munna

447 Blog posts

Comments